আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক মুঠো অন্নের হাহাকার নিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন- আসুন অন্তঃত একটি প্রাণকে বাঁচতে সাহায্য করি....

এক মুঠো অন্ন আর দু ফোঁটা পানির অভাবে অসহায় ভাবে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছে লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ আর অবোধ শিশু। শুধু কথার কথা নয়, আক্ষরিক অর্থেই এক মুঠো অন্ন আর দুফোঁটা বিশুদ্ধ পানির জন্য এই হাহাকার। গত ৬০ বছরের মধ্যে ভয়াবহতম দূর্ভিক্ষের শিকার পূর্ব আফ্রিকার কয়েকটি দেশ। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের রিলিফ পৌঁছে যায় আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে, তারপরও এই মঙ্গা, এই দূর্ভিক্ষের কারন গুটি কয়েক স্বার্থান্বেষী মহলের কূটকৌশল আর অমানবিকতা। তীব্র খরা, খাদ্যদ্রব্য মূল্যের অস্বাভাবিক উর্দ্ধগতি সেই সাথে বিভ্নি গ্রুপের সশস্ত্র সহিংস লড়াইকে প্রধানত দায়ী করা হচ্ছে..... এই ভয়াবহ আকালের অন্তর্নিহিত কারন যেমনটি হোক... বাস্তবতা হলো ভয়াবহ হাহাকারের রাহুগ্রাসে কোটি কোটি মানুষ, আর অসহায় শিশু আজ আর্তনাদ করা শক্তিটিও হারিয়ে ফেলেছে।

আমাদের দেশে হত দরিদ্রের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। খাদ্যাভাব, শীতবস্ত্রের কষ্ট, কর্মসংস্থানের অভাব আবার কোথাও বিশুদ্ধ পানির অভাবে নিত্য হাহাকার দেশ জুড়ে। আমাদের জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ বিলাস বসন, প্রাচুর্য আর অপব্যয়ের উৎসবে মত্ত ঠিক তখন- দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্ষুধার্ত হতদরিদ্র মানুষের হাহাকার। আমরা এসবে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছি, সবচেয়ে বেশী অভ্যস্থ এসব হতদরিদ্র মানুষের অন্নের নিশহচয়ট দেয়ার দায়িত্ব যাদের সেই শাসক গোষ্ঠী!! তারা নিয়মিত নিজের বিলাসবহূল অফিস বা আবাসে, পাঁচতারা হোটেলে ইফতার বা ডিনার পার্ট করে এসব হতভাগ্য মানুষের ভাগ্য পরবির্তনের জন্য গালভরা বুলি আুউড়ে দেশোদ্ধার করে চলেছে। এই চিত্রের বাইরে আরো একটি চিত্র আছে... আমাদের দেশের হতদারিদ্র মানুষের চেয়েও দুর্ভাগা পূর্বআফ্রিকার মঙ্গাগ্রস্থ মানুষ, শুধু বেঁচে থাকার জন্য প্রতিমুহুর্তে সংগ্রাম করে চলেছে.... নাহ্! তাঁরা তিন বেলা আহার, বস্ত্র বা বাসস্থানের নিশ্চয়তা চাইছেননা.... শুধু ধরে প্রাণটা টিকিয়ে রাখার জন্য নুন্যতম খাদ্য আর পানীয়ের সন্ধানে প্রচন্ড উত্তাপ, গ্রীস্মের প্রখর রৌদ্র উপেক্ষা করে শত শত মাইল পায়ে হেঁটে রিলিফ ক্যাম্পের দিকে ছুটে চলেছেন।

তাঁদের মাঝের গুটি কয়েক পরম সৌভাগ্যবান গন্তব্যে পৌঁছতে পারছেন, আরেকটি অংশ পথিমধ্যে ভাগ্যের কাছে আত্মসমর্পন করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে!! মা বাবা কে সন্তানদের মাঝ থেকে একজনকে বেছে নিতে হচ্ছে, দরিদ্রক্লিষ্ট শরীর যে এই দীর্ঘ পথে শুধু একজনের ভারই বহন করতে পারে.... অন্য সন্তানদের পথে ফেলে রেখে যেতে হচ্ছে নিশ্চিত মৃত্যুর অপেক্ষায়... বিশ্বের একদল শিশুর চিত্ত বনিোদনের জন্য যখন হাজার, লক্ষ কোটি টাকাও যথেষ্ট মনে হচ্ছে না, সে সময় পূর্ব আফ্রিকার একদল কঙ্কালসার শরীরের শিশু একফোটা পানি, এক ঢোক খাবারের জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষায় আছে, যাদের অথিকাংশজনের অ্পেক্ষার সমাধান হয় মৃত্যুর মাঝে!! আমাদের পরিবারের শিশুর শরীরের ফুলের টোকায় যখন পিতামাতার অণ্তরাত্মা কেঁপে উঠে, সেখানে পূর্ব আফ্রিকার অগুনিত পিতামাতা নিজ সন্তানকে শুধু দুফোটা পানী আর একমুঠো খাবারের অভাবে চোখের সামনে ধুঁকে ধুঁকে মরতে দেখছে প্রতিদিন!! খাদ্যাভাব আর অপুষ্টির এই সুযোগে আঘাত হানছে বিভিন্ন মরনব্যাধি.. ম্যালারিয়া, হাম- অক্টোবরে বর্ষা মৌসুম শুরু পর যা আরো ভয়াবহ আকার ধারন করবে বলে আশংকা করছে ইউনিসেফ। এই শিশুদের স্থানে একটি বার নিজের আদরের সন্তানের মুখটি ভেবে দেখুন, তাদের অসহায় পিতামাতার স্থানে নিজেদের অথবা নিজের মা বাবা'র মুখ...... গত ৬০ বছরের মাঝে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পূর্ব আফ্রিকার সোমালিয়া, কেনিয়া, ইথিওপিয়া আর জিবোটির কোটি মানুষ। যাঁদের মাঝে প্রায় ২০ লক্ষাধিক শিশু আক্রান্ত যাদের বয়স এখনও পাঁচ বছরের প্রান্তটি ছুঁতে পারেনি। তাঁদের এই নীভু নীভু প্রাণ প্রদীপকে জীবনে আলোয় প্রজ্জলিত করতে নুন্যতম মনুষত্ববোধ সম্পন্ন যেকোন মানুষের এগিয়ে আসা প্রয়োজন এবং অবশ্য কর্তব্য। আমরা নিজেদের সভ্য মনে করলে, নিজের মাঝে মনুষত্বের ছিঁটেফোঁটা আছে বিশ্বাস করলে এমন দৃশ্য দেখার পর নির্লিপ্ত হয়ে বসে থাকা সম্ভব নয়।

বিশ্বে মুসলমিদের পবিত্র রমজান মাস এখন, সামন্য একটি ভালো কাজের জন্য অনেক অনেক গুন বেশী প্রতিদানের আশা স্রষ্টার কাছে... পবিত্র লাইলাতুল ক্কদরের মহিমান্বিত রাতের সময়ক কাল শুরু হয়েছে.. আর এমন একটি মাসে এই হত দরিদ্র ক্ষুধার্ত মানুষ, শিশুদের মুখে খাবার পৌঁছে দেবার সৌভাগ্য হলে তা অবহেলা করে হারানো অনুচিত। আমরা প্রতিদিন মানবতার জয়গান গেয়ে হাজার হাজার শব্দরাশি সাজিয়ে পরিবেশন করছি বিভিন্ন মাধ্যমে, আজ আমাদের সুযোগ এই শব্দরাশিকে বাস্তবের রূপ দেবার। নিজ নিজ সাধ্যমতো হাত বাড়িয়ে দেই এই হতদরিদ্র দূর্ভিক্ষপিড়ীত মানুষের দিকে... আমাদের জাতি, ধর্ম পরিচয় যেমনই হোক.. শুধু মানবতার খাতিরে হলেও অন্তঃত একবেলার আহার পৌঁছে দিতে চেষ্টা করি পূর্ব আফ্রিকায়... বিশ্বের আর দশটি দুর্যোগের সাথে পূর্ব আফ্রিকার দূর্ভিক্ষে সাহায্য পৌঁছানোর মাঝে কিছু পার্থক্য আছে... সেখানে একপাল মানষরূপপী হায়না প্রতিনিয়ত লুট করছে সাহায্যের মালবাহী ট্রাক, হত্যা করছে ট্রাক চালককে.. অভাব গ্রস্থদের কাছে পৌঁছতে দিচ্ছেনা দুমুঠোো অন্ন বা জীবন রক্ষাকারী ঔষধ সামগ্রী... এসব প্রতিকূলতা কাটিয়ে দূর্ভিক্ষ পীড়িতের কাছে সাহায্য পৌঁছে দিতে পারে এমন যে কয়েকটি সংস্থা সম্পর্কে ঘরে বসেই একমুঠো খাবার পৌঁছে দেয়া যায় আফ্রিকার ভয়াবহ দূর্ভিক্ষ পিড়ীত মানুষের দ্বারে, বেশ কিছুদিন ধরেই সংস্থাটি দূর্ভিক্ষ পীড়িতদের কাছে খাবার ও চিকিৎসা পৌঁছে দিতে সফল ভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশের হতদরিদ্র মানুষের সাহায্যার্থে বিভিন্ন সময় কাজ করছে সংস্থাটি... জাতিসংঘের ইউনিসেফ খাদ্যাভাব আর অপুষ্টি রোধে আক্রান্ত শিশুদের মুখে বিশেষ ধরনের পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্যের বিশেষ পেস্ট পৌঁছে দেবার উদ্যোগ নিয়েছে, ইউনিসেফের ডোনেশন লিংক। -আজ আমাদের আদরের সন্তান মুখে তুলে ধন্য করবে ভেবে কতো টাকার খাবার নষ্ট করেছি? -আমরা যারা প্রবাসী, ডেট এক্সপায়ার হয়ে যাওয়া কতো হাজার টাকার খাবার নিয়মিত ভাবে ফেলে দেই ট্র্যাশক্যানে? -আজ আয়েশ করে কতো টাকা তামাকে মুড়ে ভস্ম করেছি? -বিলাসী রেস্তোঁরার বাফের অফুরন্ত খাবারের হাতছানীতে কতো টাকা বাজেট ভেবে রেখেছি সেখানে যাবার জন্য? ঘরের ছট্টি শিশুর মুখে একটু হাসি ফুটবে ভেবে, কতো হাজার লক্ষ্য টাকার খেলনা কিনে ভরে রেখেছি আমাদের ঘর? -এই ঈদে কতো সেট কাপড় হলে মনে হবে, আমার সন্তানের ঈদটা পূর্ণ হলো? -এবারের ঈদে ঠিক কয়টা পোশাক হলে মনে হবে যথেষ্ট হয়েছে? উপরের সকল প্রশ্নই জীবনের খুব সাধারন কিছু চিত্রের, যা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের স্বাভাবিক বাস্তবতা! দৈনন্দিন জীবনের তুচ্ছ নির্দিোষ অভ্যাস অথবা যে কোন পিতা মাতার স্বভাবগত স্বাভাবিক বাৎসল্য!! আজ এই অতি সাধরান নিরীহ বিষয়ে প্রশ্ন সামনে চলে আসছে... আমাদের যেকোন দুর্যোগ- বন্যা, খরা, সাইক্লোন, ঘূর্নিঝড়ের ছোবলের পর আমরা তাকিয়ে থাকি ধনাঢ্য দেশেগুলোর দিকে।

নিজেরা দরিদ্র দেশ হলেও.. পূর্ব আফ্রিকার এসবহত ভাগ্য মানুষের তুলনায় অনেক অবস্থাপন্ন, অনেক ভালো আছি আমরা... এক প্যাকেট সিগারেটের খরচ, একবেলার স্ন্যাক, প্রতিদিনের উচ্ছিষ্ট খাবারের সম অর্থ- যেকোন এ্যামাউন্টের জন্য আজ চাতকের মতো অপেক্ষা করে আছে লক্ষ লক্ষ শিশু নারী, পুরুষ। এই ঈদে আমরা একাধিক পোশাক না কিনে একটি নতুন পোশাক কিনলে ঈদের আনন্দ এতোটুকু মলিন হবেনা, বরং একাধিক পোশাক না কিনে সেই অর্থে এসব হতভাগ্য মানুষের অন্ন তুলে দিতে সক্ষম হলে, ঈদের আনন্দ বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে। শাড়ী জামার সাথে চূড়ি, মালা, গহনা, অনেকেরই আছে,- ঈদে নতুন করে না কিনলেও খুব ক্ষতি হবেনা। আমাদের শিশুদের জন্য একটি নতুন পোশাক বরাদ্দ করে, বাকি অর্থ সোমালিয়ার খাদ্যাভাব গ্রস্থ শিশুদেরজন্য দান করলে, আমাদের সন্তানরাই অধিক লাভবান হবে। প্রবাসীদের জন্য দান কাজটি সহজ, একটি ক্লিক বা একটি ফোনের মাধ্যমেই তা করা যায়... ধনাঢ্য, যথেষ্ট আর্থিক সঙ্গতি সম্পন্ন থেকে শুরু করে সংগ্রামী সাধারন ছাত্র সকলেই এগিয়ে আসতে পারেন।

আপনার সাধ্যমতো এ্যামাউন্ট দিয়ে এসব হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে... ১০০০ ডলারে, ইসলামিক রিলিফ ৭টি পরিবারের একমাসের অন্ন, আশ্রয় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে... ৫০০ ডলারে যোগান দিতে পারে এমনকি আপনার দেয়া ১০টি ডলার দিয়ে ইউনিসেফ “মাল্টিপল মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট পাউডারে” ৩২১টি প্যাকেট সরবরাহ করতে পারে , যা ছোট্ট শিশুদের অপুষ্টিজনিত রোগ ও মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষায় সহায়ক হতে পারে। আমরা যারা পৃথিবীরর যে প্রান্তেই বাস করছি, আসুন হাত বাড়িয়ে দেই এই হতভাগ্য মানুষের দিকে. ইসলামিক রিলিফের ডোনেশন লিংক ইউনিসেফের ডোনেশন লিংক বাংলাদেশ থেকে সাহায্য প্রেরণের জন্য- মুসলিমি এইড এর শাখা অফিস পূর্ব আফ্রিকার রদূর্ভিক্ষ পীড়িতদের সাহায্যার্থে নগদ অর্থ গ্রহনে সন্মত হয়েছে। অর্থ গ্রহনের সময় রিসিট প্রদান এবং তা যথাস্থানে পৌঁছে দেবার পর সাহায্য কিভাবে দেয়া হলো তাও জানাবেন। মুসলিম এইড এর ঠিকানা: - বাড়ি- ১৩ সড়ক- ২৭ ব্লক- জে(j) বনানী, ঢাকা। ফোন: ০১৮৪- ১২৪৬৩০২ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।