বড় হয়ে গেছি। আর তাই ঈদ আর আগের মতো লাগেনা। কিন্তু যখন ছোট ছোট শিশুদের ঈদের আনন্দে মাতামাতি করতে দেখি মনটা জুড়ায় যায়। কি সুন্দর পোষাক, সুন্দর সাজুগুজু, নতুন জুতা, ফিতা, আবার চোখে রংএর চশমা, নানা সাজে সাজে শিশুরা। কিন্তু এই সুন্দর মনের শিশুকে আমরা বড়রা নষ্ট করি।
ঈদে বা ঈদের আগেই আমরা সবাই শিশুদেরকে একটা কমন প্রশ্ন করি। আমার মতে সেটা একদমই করা উচিত নয়।
‘সুনাতা, এবার ঈদে তুমি কয় সেট জামা কিনেছো?’
‘সুনাতা, কে কে তোমাকে কয়টা করে জামা দিয়েছে?’
‘সুনাতা, তুমি কি শুধু জামা-ই কিনেছো, জুতা কিননি?’
ইত্যাদি ইত্যাদি…
আমার এই ধরনের লেখায় অনেকেই আমাকে আঁতেল বলবেন হয়তো, কিন্তু বিশ্বাস করুন আমি কোন শিশুকে এই ধরনের প্রশ্ন করিনা, করাটা পছন্দও করিনা। আমার মনে হয়, এই ধরনের প্রশ্ন (আমি ঈদকে কেন্দ্র করে বললেও আসলে বিভিন্ন সময়েই আমারা এই ধরনের কথা বলি) একটা শিশুকে ভোগ্য করে তোলে। তাকে এই শিক্ষা দেয় যে তার অনেক সেট জামা পাবার উচিত ছিলো।
আর তাই বড় হবার সাথে সাথে যেন এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে সেই প্রস্তুতি মনে মনে শিশুটি পালন করতে থাকে। আর তাই শিশু হতে যখন কিশোর-কিশোরী হয়, তখন মা-বাবাকে চাপ দেয় অধিক সেট ঈদ পোষাকের জন্য। ‘নানু কি দিয়েছে? দাদু কি দিয়েছে? মামা-খালা কি দিয়েছে? চাচা-চাচী কি দিয়েছে? মা-বাবা কি দিয়েছে?’ এই ধরনের প্রশ্ন করে একটা শিশুকে বুঝিয়ে দেই যে ওদের সবার কাছ থেকেই কিছু একটা পাওয়া ওর অবশ্যই উচিত ছিলো। আর এই ধরনের প্রতিযোগীতায় যখন একটা শিশু বড় হতে থাকে তখন যে মা-বাবারা পারেনা তার সন্তানকে সন্তুষ্ট করতে, তারা অনেক কষ্ট পায়। আশা করি পাঠক বুঝতে পেরেছেন আমার কথা।
আমি শুধু সমস্যা নিয়ে কথা বলা পছন্দ করিনা। সাথে বলতে চাই সমাধান কি হতে পারে। আমি অনেকটা এইভাবে একটা শিশুর সাথে কথা বলে থাকি:
আমি: সুনাতা, তোমাকে এই পোষাকে খুবি সুন্দর লাগছে! এটা কি তোমার পছন্দের ড্রেস?
সুনাতা: হা, আমার পছন্দের!
আমি: (তার কয়টা পোষাক সেদিকে না গিয়ে) তো, তুমি ঈদে কেমন করে মজা করলে?
সুনাতা: অনেক কিছু খেয়েছি। খালামনির বাসায় বেড়াতে গিয়েছি। খালামনি আমাকে একটা পিংকুশ জামা দিয়েছে।
আমি: (খালামনি দিয়েছে সেটা অবশ্যই ভালো কথা কিন্তু আমি জানতে চাইনা আর কে কে কি দিয়েছে। শুধু ‘তাই’ বলে ঐ বিষয়টা শেষ করি) তাই
আমি আবার: কি কি খেলা করেছো?
(এভাবে চলতে পারে কথাবার্তা)
যদি কোনভাবে এমনি-এমনি সুনাতা বলেই দেয় যে, সে ৫ সেট জামা পেয়েছে তবে সিম্প্লী সেটাকে ইগনোর করি। এভাবে প্রকাশ করিনা, “ও! তাই! পাঁ—চ সে—ট! তো কে কে কি দিলো সুনাতা?” বরং আমি ওর সাথে একটু অন্যভাবে কথা বলে প্রসংগ পাল্টাই। যেমন:
সুনাতা: আমি না ৫ সেট ড্রেস পেয়েছি!
আমি: আমি ছোট বেলায় ঈদে কি করতাম জানো?
সুনাত: কি করতেন?
আমি: অনেকের সাথে দেখা করতে যেতাম, বন্ধুদের সাথে খেলা করতাম, আর যখন বন্ধুদের বাসায় বেড়াতে যেতাম সেমাই খেতাম, এভাবে খুব্বি মজা করতাম।
সুনাতা: আপনি নতুন নতুন জামা পরতেন না।
আমি: পরতাম, তবে বন্ধুদের সাথে খেলা করেই আমরা বেশি মজা পেতাম। (এই কথাটা বলেও আমি আবারো পোষাকের উপর বা এর পরিমানের উপর গুরুত্ব দেইনা)
পরিশেষে বলি, আমি জানি আমরা সবাই আমাদের সন্তানকে প্রানের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। আর তাই সকল শ্রেণীর অর্থনৈতিক ক্ষমতা সম্পন মা-বাবারাই তার সন্তানকে উৎসবে অবশ্যই উপহার দেয়। সেটা ঠিকও আছে। সন্তানকে দিয়ে আসলে আমরাই খুশি হই, আনন্দ পাই।
কিন্তু আমি মনে করি একটা শিশুকে শুধুই ‘কয় সেট জামা পেয়েছো?’ এই ধরনের প্রশ্ন করে তাকে ভোগবাদী করে তোলার সুড়সুড়ি দেয়া অনেক বড় অন্যায়। প্রতিটি শিশুই সুন্দর, আসুন তাদেরকে সুন্দরই থাকতে দেই। আমাদের আচরন বা শুধুই একটা কথার দ্বারা তাকে নষ্ট না করি।
সর্ব শেষ কথা। যদি কোনভাবে বুঝেই যান যে ঐ শিশুটির পোষাক নতুন নয় ভুলেও তার পোষাক নিয়ে বেশি কথা বলবেন না।
‘তোমার ড্রেসটাতো নতুন মনে হচ্ছেনা’ 'ঈদে নতুন জামা কিননি?' – এই ধরনের প্রশ্নতো করবেনই না বরং তখনও বলুন যে তাকে সুন্দর লাগছে।
-----------------------------------------------------------
এই লেখাটি গতবছর পোষ্ট দিয়েছিলাম। আবার ঈদ আসছে, আর তাই, রি-পোষ্ট দিলাম যেন আমরা বিষয়টি ভুলে না যাই। শিশুর সাথে আচার আচরন বিষয়ক আরো লেখা পড়তে এখানে ক্লীক্ করুন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।