আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অলি-গলি-সড়ক-সমুদ্র-আকাশ দিয়েও কি ‘তিনবিঘা করিডোর’ নামে সরু রাস্তাটি দিবেনা "বন্ধু"?

দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলবাসী নানা আলাপ-আলোচনা, দেন-দরবার, উপটৌকন আর অনুরোধের পর আমাদের প্রভু!! ভারত যখন ‘তিনবিঘা করিডোর’ নামে সরু একটি রাস্তা বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ২৪ ঘণ্টা দিতে কিছুটা সম্মত হয়েছিল তখন এই সিন্ধান্তের প্রতিবাদে ভারতের কুচবিহার জেলাজুড়ে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। সর্বশক্তি দিয়ে ২৪ ঘণ্টা করিডোর খোলার রাখা প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে রাজ্যের ডান, বামসহ সব রাজনৈতিক দল। শুরু হয়েছে ব্যাপক মিটিং, মিছিল। দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল ও ‘তিনবিঘা করিডোর’: দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলে ঢুকতেই বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবির) নিরাপত্তা চৌকি। এরপর তিনবিঘা করিডর।

এরপর আবার বিজিবির চৌকি। মাঝখানের তিনবিঘা করিডর ভেদ করে চলে গেছে ভারতীয় সড়ক। সড়ক ও করিডরের নিয়ন্ত্রণ করে বিএসএফ। এই সড়কেই বিএসএফের গেট। তিনবিঘা করিডোরটি পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার কুচলিবাড়ী থানার অন্তর্গত।

এখন সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত এই করিডর খুলে রাখা হয়। ১৯৯২ সালের ২৬ জুন ভারত সরকার লিজের মাধ্যমে ১৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৮৫ মিটার প্রস্থের ‘তিনবিঘা করিডোর’ নামে সরু একটি রাস্তা বাংলাদেশিদের পারাপারের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেও শর্ত জুড়ে দেয়, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রতি ১ ঘণ্টা পর ১ ঘণ্টা বাংলাদেশিরা চলাচল করবে। এ ক্ষেত্রে ১ দিনে বাংলাদেশিরা ৬ ঘণ্টার জন্য চলাচলের সুবিধা পেত। এরপর দুদেশের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশিরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টা চলাচলের সুবিধা পেলেও রাতের বেলায় ছিটমহলবাসীর চলাচলের সুবিধার বিষয়টি আজও উপেক্ষিত রয়েছে। দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা দুটি ছিটমহল নিয়ে বাংলাদেশের একটি ইউনিয়ন।

প্রায় ২৩ হাজার জনগোষ্ঠীর এই ইউনিয়নে স্কুল থাকলেও কোনো কলেজ নেই। ছোট্ট একটা বাজার আছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও সার্বক্ষণিক চিকিৎসক সেখানে তেমন যায়না বললেই চলে। তাই চিকিৎসা এবং উচ্চশিক্ষার জন্য এখানকার লোকজনকে ছুটতে হয় পাটগ্রাম উপজেলা সদর অথবা লালমনিরহাটে। কিন্তু রাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকেনা কারন করিডোরের দরজা সকাল ৬ টায় খুলে সন্ধ্যা ৬টায় বন্ধ হইয়ে যায়।

দহগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও দহগ্রাম সংগ্রাম কমিটির নেতা সাইফুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, রাতের বেলা ছিটমহলের কোনো মানুষ অসুস্থ হলে তাকে দ্রুত চিকিত্সার জন্য হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। তাই অনেকেই বিনা চিকিত্সায় ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুবরণ করে। ইন্দিরা-গান্ধী কেউ কথা রাখেনিঃ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পর ’৭৪ সালে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে (মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি) ছিটমহল বিনিময় সক্রান্ত এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল-১১নং দক্ষিণ বেরুবাড়ি ভারতের কাছে হস্তান্তরের বিনিময়ে দহগ্রাম এবং আঙ্গরপোতা ছিটমহল দুটি বাংলাদেশের মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করতে ১৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৮৫ মিটার প্রস্থের একটি সরু রাস্তার তিন বিঘা পরিমাণ ভূমি ভারত স্থায়ী ইজারা দেবে বাংলাদেশকে। তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে সংসদে বিল পাস করে অতি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের পৌনে ২ বর্গমাইল আয়তনের দক্ষিণ বেরুবাড়ি ভারতের কাছে হস্তান্তর করে।

কিন্তু বিনিময় শর্তানুযায়ী তিনবিঘা করিডোরটি পায়নি বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে এরশাদ সরকারও একটি সংশোধিত চুক্তি করেছিল। রাজীব গান্ধীর সঙ্গে সম্পাদিত সে চুক্তিতে ওই তিনবিঘা করিডোরের ওপর ভারত সরকার ফ্লাইওভার ব্রিজ বা উড়াল সেতু তৈরি করে দেওয়ার শর্ত ছিল। যাতে করে ছিটমহলবাসী ২৪ ঘণ্টা অবাধে যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু চুক্তির সেই শর্তটি আজও বাস্তবায়িত হয়নি।

ফলে দীর্ঘ দেড় যুগেও বেশি সময়ের বন্দিত্বের অবসান ঘটেনি ছিটমহলবাসীর। (সুত্র- আরিফুর রশীদ,সকালের খবর) এবার সোনিয়া-মনমোহনের পালা: আধুনিক সভ্য দুনিয়ায় এক ইসরাঈল-প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র ছাড়া এমন বন্দীদশা আর কোথাও নেই। যেহেতু ভারতের সাথে আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক সেকারনে বাংলাদেশ অনেকবার এই করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার জন্য দেন দরবার করে আসছিল। আর এ কারনে ভারতের নানা যৌক্তিক-অযৌক্তিক অনেক দাবিই বাংলাদেশ পুরন করেছে। বাংলাদেশ ভারতকে সমুদ্র এবং সড়ক-রেল ট্রানজিট দিয়েছে।

এতসব দেয়ার পর গত বছরের নভেম্বরে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম ছিটমহলের মানুষের জন্য সুখবর দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক তিনবিঘা করিডোর নিয়ে অবশেষে বাংলাদেশের দাবি পূরণ হতে চলছে। কিন্তু সে দাবী আজো পুরন হয়নি। তবে এটা নিয়ে ভালোই অগ্রগতি হয়েছিল। কথাছিল সামনে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন বাংলাদেশে আসলে এটা নিয়ে চূড়ান্ত চুক্তি হবে। কিন্তু এবার বাধ সধেছে ভারতের সব রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনগুলো।

তারা যুক্তি দেখাচ্ছে যদি বাংলাদেশকে ২৪ ঘণ্টা করিডোর সুবিধা দেয়া হয় তাহলে নাকি বাংলাদেশ থেকে ভারতে জঙ্গিরা অনুপ্রবেশ করবে। তিনবিঘা সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক ও ফরওর্য়াড ব্লকে বিধায়ক পরেশচন্দ্র অধিকারী বাংলানিউজকে টেলিফোনে বলেছেন, ‘তিনবিঘা নিয়ে ভারত সরকারের দেশ ও জনস্বার্থ বিরোধী উদ্যোগ সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করা হবে। ’ অন্যদিকে তিনবিঘা করিডোর ২৪ ঘণ্টা খোলা রেখে বাংলাদেশিদের যাতায়াতের অনুমতি দিলে ভারতের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে, বাংলাদেশের মূল ভূখ- থেকে সন্ত্রাসীরা এই সুযোগে দহগ্রাম ছিটমহল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করবে, এই কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে ফ্যাক্স বার্তা পাঠিয়েছেন তৃণমূলের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। সিপিএমের নেতা ও কুচবিহারের সাংসদ তারিনী রায় বৃহস্পতিবার কলকাতায় বলেন, ‘আমরা এর বিরোধীতা করছি। ভারতীয়দের যাতায়াতে জন্য উড়ালপুল নির্মানের যে প্রস্তাব ভারত সরকার দিয়েছে তা মানছিনা।

বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে আমরা প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলব। ’ বিজেপির কুচবিহারের জেলা সভাপতি নিখিলকুমার দে বলেছেন,‘ এই পদক্ষেপ জনগণের স্বার্থ বিরোধী। এটা ২৪ ঘণ্টা খুলে রেখে ভারতীয় ভূখণ্ডে বাংলাদেশে আধিপত্য কায়েম হবে। ’ ভারতের সাধারণ মানুষও বাংলাদেশের সাথে এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধী। এই হল মাত্র ১৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৮৫ মিটার প্রস্থের ‘তিনবিঘা করিডোর’ নিয়ে ভারত, তার জনগণ এবং রাজনৈতিক দলের অবস্থান।

আর আমাদের আওয়ামীলীগ-বিএনপি পুরা দেশ বিক্রি হয়ে গেলেও আশা করি এক হতে পারবেনা। ধিক শতধিক আমাদের পলিটিসিয়ানদের। দাবী জানাই অবিলম্বে করিডোর ২৪ ঘণ্টা খুলে দিয়েদহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলবাসীর দীর্ঘদিনের এই বন্দিধশা থেকে মুক্ত করার। *লেখাটি প্রস্তুত করতে বাংলানিউজ২৪, আমারদেশ, প্রথমআলো, সকালের খবর এবং বিভিন্ন পুস্তক ও ওয়েবসাইটের সাহায্য নেয়া হয়েছে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।