এসো নীপবনে আজ অফিস যাইনি, তাই... পৃথিবীটাকে যান্ত্রিক মনে হচ্ছে না।
ঘড়ির কাটাটা বড়ই বেয়ারা, এমন মনে হচ্ছেনা, হুট করে
চলে আসা বৃষ্টিটাকে আপদ মনে হচ্ছে না। যাত্রীর জন্য
অপেক্ষমান রিক্সাওয়ালাকে দেখে বড় মায়া লাগচ্ছে। মাথায়
করে মাছ নিয়ে আসা লোকটা আমায় দেখে অবাক হয়ে
জিজ্ঞাস করে- আজ অফিস যান নাই?
আজ অফিস যাইনি, তাই... প্রতিদিনের মতো সূর্যের তেজটা
তেমন অসহ্য মনে হচ্ছেনা, উপরন্তু মনে হচ্ছে সোনা গলা রোদ
বহুদিন পর গায়ে মাখছি। আজও বাবা-মা এর সাথে ছোট ছোট
বাচ্চাগুলো কি ভারী ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে, এ দৃশ্যতো এর
আগেও দেখেছি প্রতিদিন, কই, অত মায়া লাগেনিতো এত দিন!
আজ অফিস যাইনি, তাই... বাজারে এলুম (ঠিক কতদিন পর
মনে নেই ), বাজারে এতো ভীড় কেনো? প্রতিদিনই কি এমন
ভীড় থাকে? সবাই কি আজ অফিস ছেড়ে বাজারে এলো নাকি?
দুহাত ভরে মানুষ বাজার নিয়ে বেরুচ্ছে এই বলতে বলতে যে-
বাজারে আগুন লেগেছে।
তবে অন্য বাজারে যাই।
আজ অফিস যাইনি, তাই... দুপুরে আকাশ এতো উপরে
উঠে যায় খেয়াল করা গেল। তুলোর মতো মোলায়েম
মেঘগুলো নীল আকাশের গায়ে ক্যামন যেনো লেপটে আছে,
যেন ঠিক একটা স্হির চিত্র। এমন রৌদ্দোজ্জ্বল দুপুরে
গোসল সেরে ব্যালকনিতে কবিতার বই নিয়ে বসবো,
উপায় নেই। প্রতিবেশী বাড়ির কাজ ধরেছেন।
আজ অফিস যাইনি, তাই... প্রতিদিন দুপুরের রুটিন করা
রুটি ভাজি খেতে হচ্ছে না। আজ দুপুরে ভাত খাব। আহা!
ভাত, গরম গরম ঝরঝরে ভাতে দু চামচ ঘি ছড়িয়ে শুধু
লবন দিয়েই পেট ভরে খাওয়া যায়, আর যদি আলু ভর্তা হয়,
দু একটা শুকনো মরিচ ভাজা, তবে তো কথাই নেই। ভাত আহা!
আজ অফিস যাইনি, তাই... ভাত ঘুম পেয়ে বসল। দক্ষিণের
জানালা খুলে ইজি চেয়ারটায় শরীর এলিয়ে দিতেই মনে হলো
এর চেয়ে শান্তি আর কি আছে! কতক্ষন ঘুম হলো কে জানে-
হঠাৎ ই মনে হলো আমার শৈশবের বিকেল- বুড়িগঙ্গার কোল
ঘেষে রাস্তায় দৌড় দৌড় খেলা; কখনো অনেক দূর এক
পরিত্যক্ত ফেরি ঘাটে বসে লঞ্চ আর ইস্টিমার গোনা...
আজ অফিস যাইনি, তাই... প্রকৃতি সন্ধ্যার আঁচলে মুখ
লুকানোর মুহুর্তে বাসায় ফেরার কোনো তাড়া নেই।
বাসের
জন্য লম্বা লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে
হাস্যকর সেই ভাবনাটা আর ভাবতে হবে না-'যদি আমার
একটা গাড়ি থাকতো!' অন্ততঃ এই একটা রাতে- কোরবানীর
আগে যেভাবে ট্রাকে করে গরু আনা হয়, তার চেয়েও করুন ভাবে-
গাদাগাদি করে ঝুলতে ঝুলতে, চলমান রাজনীতির গতি প্রকৃতি শুনতে
শুনতে, ধুলো ময়লা আর ঝবঝবে ঘামের দুর্গন্ধ শুকতে শুকতে, সারা
দিনের শ্রান্তি চোখে এসে ভর করলে ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে, ভুল করে দামী
জুতো কিনে ফেলায় শরীরের চেয়ে জুতোকে পাড়ানোর হাত থেকে কিভাবে
বাচানো যায় এই চিন্তায় দুলতে দুলতে, কোন ক্রমে বাস স্টপেজে এসে
পড়লে সোডিয়াম আলোর নিচে রিক্সা সমেত রিক্সাওয়ালাকে
পাথুরে মুর্তি মনে করতে হবে না।
আজ অফিসে যাইনি, তাই... প্রতিদিন মেইন রোড থেকে বড় বড়
দালানের মাঝে এই সরু গলি দিয়ে নামতে নামতে যে কথাটা আমার
মনে পড়ে, এখন ঠিক তাই মনে পড়ছে- 'কাল আবার অফিস যেতে হবে। ' ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।