ঢাকা শহরে যদি ঘরে বসে সব কাজ করা যেত, তাহলে হয়তো যানজটটা একটু এড়ানো যেত। এমন ভাবনা অনেককেই এখন ভাবতে হচ্ছে। এমন একটি সুবিধা পাওয়া যাবে অনলাইন কেনাকাটায়। আগে আমরা শুধু শুনতাম, বিদেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে পছন্দমতো কেনাকাটা করা যায়। সেই সুবিধা এখন আমাদের হাতের নাগালে।
এখন ঘরে বসে দেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা করা যায় পছন্দমতো। দেশি কয়েকটি অনলাইন দোকান বা কেনাকাটার ওয়েবসাইট চালু হয়েছে, যেগুলোতে অনেক ধরনের পণ্য পাওয়া যায়। আর ঈদ বাজারের হাওয়াও লেগেছে অনলাইন দোকানগুলোতে।
অনলাইন কেনাকাটা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সব শ্রেণীর মানুষের কাছে। খুব সহজে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারা যাবে অনলাইনে, যদি সঙ্গে থাকে কম্পিউটার আর ইন্টারনেট সংযোগ।
কম্পিউটার, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে ঝামেলা ছাড়াই কেনাকাটা করা যায় ঘরে বসে। প্রয়োজনীয় নীতিমালা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন হয়ে যাওয়ায় অনলাইন লেনদেন (ট্রানজেকশন) করা যাচ্ছে এখন। নির্দিষ্ট ব্যাংকিং সময়ের বাইরে টাকা তোলার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে তৈরি হয়েছে এটিএম বুথ। আর টাকা না থাকলে রয়েছে ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা। ফলে, নগদ টাকা বহনের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে গেছে।
শুধু আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কেনাকাটা করা যেত ইন্টারনেটে। ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক অনলাইনে কেনাকাটার অনুমতি দেয়। এর পর থেকেই ব্যাংকগুলো এ নিয়ে কাজ শুরু করে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এই সুবিধা চালু করে। পরবর্তী সময়ে পূর্ণাঙ্গরূপে এই সুবিধা দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড।
ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড ও ভিসা সম্মিলিতভাবে দেশে একটি ই-কমার্স ব্যবস্থা চালু করেছে। ফলে, সাধারণ গ্রাহক ব্র্যাক ব্যাংক বা অন্য ব্যাংকের ইস্যু করা ভিসা লোগো-সংবলিত যেকোনো কার্ড ব্যবহার করে অনলাইনে পছন্দের পণ্য কেনার সুযোগ পাবেন।
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আলী বলেন, এটাই হবে বাংলাদেশে অনলাইন বাণিজ্য-বিপ্লবের সূচনা, যার মাধ্যমে এ দেশের অনলাইন ব্যবসায় নিত্যনতুন পণ্যসেবা উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে চলতে সক্ষম হবে।
এই সেবা ভোক্তাদের যেকোনো ধরনের পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে যেমন সময় ও অর্থ বাঁচিয়ে দেবে, তেমনি ঝক্কিঝামেলাও কমাবে বলে মনে করেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাকাটার জন্য গেটওয়ে প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এসএসএল কমার্স।
এ পর্যন্ত তারা ৩০টিরও বেশি ওয়েবসাইটকে অনলাইনে কেনাকাটা করার প্রযুক্তিগত সুবিধা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এয়ারলাইনস, শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট, সেবাপ্রদানকারী বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও কেনাকাটার ওয়েবসাইটগুলোই মুখ্য। কী পরিমাণ কেনাকাটা হয়—এর জবাবে এসএসএল কমার্সের মহাব্যবস্থাপক আনিস উল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দেশে লোকজনের মধ্যে এখনো অনলাইনে কেনাকাচার প্রবণতা খুব বেশি বাড়েনি। এর প্রধান কারণ বিশ্বাসের অভাব। এর পাশাপাশি জানারও অভাববোধ আছে।
তবে এ হার দিন দিন বাড়ছে। যেমন আমাদের এয়ারলাইনসগুলোতে অনলাইনের মাধ্যমে টিকিট বিক্রির হার বেশ ভালো। এর পাশাপাশি বিডি জবসেও অনলাইন লেনদেন ট্রানজেকশন ভালো হচ্ছে। ধীরে ধীরে আস্থার জায়গাটা গড়ে উঠলে এ হার আরও বাড়বে। আর ব্যাপারটাকে জনপ্রিয় করতে আমরা সামনে থেকে কোডভিত্তিক সেবা কেনাকাটার ব্যবস্থা করছি।
যেমন মোবাইল ফোনের টক টাইম। এটা হাতে ধরে দেখার কিছু নেই। এর সাংকেতিক নম্বরটাই আসল। ফলে, এ ধরনের কেনাকাটা অনলাইনে দিন দিন বাড়বে বলে আশা করছি। এখন আমাদের আওতাধীন হচ্ছে ভিসা, মাস্টার কার্ড ও ডিবিবিএল নেক্সাস কার্ড।
আর দিন দিন আমরা চেষ্টা করছি সব ব্যাংকের কার্ডগুলো আমাদের একই সেবায় নিয়ে আসতে। তাতে এ ধরনের সেবার মান আরও বেশি বিস্তৃত হবে। ’
অনলাইনে কেনাকাটার সেবা প্রদান করছে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ও আমার দেশ ই-শপ। মাত্র ছয় মাসে বেশ আশাব্যঞ্জক সাড়া পেয়েছে সাইট দুটি। একই সঙ্গে দেশে ও বিদেশে একই সঙ্গে যাত্রা শুরু করার প্রথম দিনই বিদেশের চেয়ে দেশে বেশি অর্ডার পেয়েছে সাইট দুটি।
ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করলেও এখন সাইট দুটির নিবন্ধিত ক্রেতার সংখ্যা দুই হাজারের ওপরে। যারা প্রতিদিনই কিছ না কিছু কিনছেন বলে জানালেন সাইট দুটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিকা হাসান। বললেন, ‘আমরা প্রতি সপ্তাহে প্রায় দুই টন সবজি ক্রেতাদের সরবরাহ করছি। এর পাশাপাশি অন্যান্য পণ্য তো রয়েছে। আর এই পুরো কেনাকাটাই হচ্ছে অনলাইনে দেশীয় কার্ড দ্বারা।
কিন্তু একটা বড় সমস্যা হচ্ছে, আমরা যত অর্ডার পাই, তাঁর বড় অংশ বাতিল হয় অন্য ব্যাংকের কার্ড গ্রহণ করতে না পারার জন্য। একটা জাতীয় গেটওয়ে থাকলেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ’
কেনাকাটা করা যাবে দেশীয় এই রকম কিছু ওয়েব সাইট হচ্ছে—
http://www.ekhoni.com
http://www.bangladeshbrand.com, http://www.amardesheshop.com
http://www.ryansbooks.com
http://www.shurjomukhi.com.bd, http://www.technobd.com, http://www.bdjobs.com, http://www.gmgairlines.com, http://www.champs21.com
http://www.onlineshopdiamondworldltd.com, http://www.ekushey.com.bd
http://www.boi-mela.com, http://www.24-7kenakata.com http://www.a2zflexi.com,
http://www.cityshopbd.com, http://www.bestwaybazaar.com,
এই ওয়েবসাইটগুলোতে পাওয়া যাবে সুই থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছু। এখন ঈদের বাজারে দেশি প্রায় সব ব্র্যান্ডের পোশাকই পাওযা পাওয়া যাবে অনলাইনে।
এখনই ডট কমে সৌন্দর্য সেবায় ছাড়ও দেওয়া হচ্ছে।
আরও আছে নানা আয়োজন। দৈনন্দিন কেনাকাটার জন্য রয়েছে আমাদের ই-শপ, সুর্যমুখী, একুশে, কেনাকাটা, সিটিশপ, বেস্টওয়ে বাজারসহ বিভিন্ন সাাইট। এখানে পাওয়া যাবে আধুনিক জীবনধারা থেকে শুরু করে কাঁচাবাজার ও ঘর-গৃহস্থালির সব সামগ্রী। শুধু আপনি অর্ডার দেওয়া মাত্র যত দ্রুত সম্ভব সব কিছু পৌঁছে দেওয়া হবে আপনার দোরগোড়ায়। এসবের পাশাপাশি রয়েছে বইপত্র, বাচ্চাদের অনলাইন স্কুল, বিমানের টিকেটসহ প্রয়োজনীয় সেবা কেনার সুবিধা।
ফলে ঘরে বসেই হাতের কাছে পেয়ে যাচ্ছেন সব পণ্য। ঘরে বসে আরাম করে সব কেনাকাটা করুন কিংবা প্রিয়জনদের উপহার দিন। অর্ডার দেওয়া মাত্র প্রিয়জনদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হবে আপনার উপহার।
ক্রেডিট কার্ডে কেনার প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ। এ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য ব্যাংকে একটি কম্পিউটার সার্ভার থাকে এবং যে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে কেনাবেচা করবে তারা একটি সার্ভার ব্যবস্থাপনা রাখে।
বিশেষভাবে তৈরি সফটওয়্যারের মাধ্যমে পুরো কার্যক্রমটি পরিচালনা করা হয়। কোনো ক্রেতা যখন ওয়েবসাইটে ঢুকে পণ্য পছন্দ করবেন এবং এর জন্য অর্থ পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে ক্লিক করবেন, তখন সে নির্দিষ্ট ব্যাংকের সার্ভারে চলে যাবে। ব্যাংকের সার্ভার থেকে পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে ব্যাংক গ্রাহকের হিসাব পরীক্ষা করে নির্দিষ্ট অর্থ কেটে নেবে। ওই ব্যাংক দেশি না হলে পেমেন্ট গেটওয়ে থেকে নম্বরটি ভিসা কিংবা মাস্টার কার্ড নেটওয়ার্কে যাবে। এখান থেকে নির্দিষ্ট ব্যাংকের অনুমতিক্রমে অনুমোদিত হবে।
ব্যাংক ক্রেতার হিসাব থেকে অর্থ কেটে নিয়ে বিক্রেতার হিসাবে জমা করে দেবে। যেকোনো ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেই অর্থ পরিশোধ করা যাবে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে মিনিট খানেক সময় লাগবে। আর ক্রেতার তথ্য যেন সহজে যে কেউ সংগ্রহ করতে না পারে সে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে অনলাইন লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো https (hyper text transfer protocol secured) প্রযুক্তি ব্যবহার করছে যা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অনেক নিরাপদ। তবে অনলাইনে কেনাকাটার সময় অবশ্যই কিছু বিষয় মাথায় রাখতে উছিত।
এর মধ্যে অনেক ভুয়া ওয়েবসাইট রয়েছে। প্রতারণা এড়াতে ওয়েবসাইট সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে তারপর কেনাকাটা করা উছিত। আর কোনো ওয়েবসাইটের লোভনীয় অফার দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। পণ্য কেনার সময় ভালোমতো যাচাই-বাছাই করে কিনুন। পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু দেওয়া না থাকলে কিনতে যাবেন না।
আর একই পাসওয়ার্ড বেশিদিন ব্যবহার না করাই ভালো।
ফলে শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা এখন কোনোই ব্যাপার না। যখন দরকার তখনই হাতের নাগালে পাওয়া যাবে সবকিছু। সেই দিন আর বেশি দূরে না যেই দিন কোথাও না গিয়ে কম্পিউটারই হয়ে উঠবে আমাদের আধুনিক জীবনযাত্রার সহায়ক। সূত্রঃ প্রথম আলো ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।