কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! প্রথম পর্ব
দ্বিতীয় পর্ব
(এই লেখাটা ফেসবুকে প্রকাশের পর অনেকের ভালবাসামাখা কমেন্ট পেয়েছিলাম। সেই সাহসে ব্লগে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশের পর এই তৃতীয় পর্ব পোস্ট করলাম। আপনাদের উৎসাহই আমাকে এর পরের, মানে শেষ পর্ব পোস্ট করতে স্পর্ধা যোগাবে। ধন্যবাদ। )
পেমেন্টটা কবে দেয়া হবে স্যার?
এক্সপেরিমেন্টের ফান্ড এলেই পেমেন্ট দেয়া হবে।
কত পর্যন্ত পেমেন্ট দিয়েছেন আপনারা?
পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়েছি, মাই বয়। বুঝতেই পারছ, মানুষের জীবন নিয়ে কথা।
যখন এরকম কোন টেস্ট সাবজেক্ট স্বেচ্ছায় আসে, তখন কি তাকে এটা শপথ করতে হয় যে এই কাজে তার মৃত্যু হলে কেউ দায়ী নয়?
হ্যাঁ, অবশ্যই। ভলানটিয়ারদের মৃত্যুর দায় আমরা নেব কেন?
গুড। স্যার, এটা আমার নাম্বার।
ফিজিক্যাল এক্সামিনেশন না কি সব যেন বললেন, যখন করতে ইচ্ছা বা সুযোগ হয়, এই নাম্বারে ফোন করবেন।
ওকে মাই বয়। আর একটা কথা, ইউ আর রিয়েলি এ গ্রেট ম্যান। মে বি ইউ আর দি কজ অফ এ নিউ ইরা ইন জেনেটিক সায়েন্স। মে বি ওয়ান ডে ইউর নেইম উইল এনলাইটেন ইউর কান্ট্রি, ইউর নেশন ইন ফ্রন্ট অফ দি হোল ওয়ার্ল্ড।
মে বি। স্যার থ্যাংকস।
ক্রুইফের অফিস থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে এল সে। পাঁচ লাখ? একটা জীবনের মূল্য পাঁচ লাখ?
পাঁচ লাখ আটষট্টি হাজার, ভাবল সে, এই হচ্ছে এখন পর্যন্ত আমার জীবনের দাম”।
-হয়েছে পছন্দ?
-হ্যাঁ ভালোই।
তবে ইয়োহান ক্রুইফ ব্যাটা ফুটবলার, ওর নাম আপনি জেনেটিক্সে ঢুকালেন কি মনে করে?
-এই তো, ঢুকালাম। সমস্যা হলে চেঞ্জ করে দিচ্ছি।
-না থাক পরে করবেন। এখন বলুন, আর কি কি চ্যাপ্টার বাকি আছে?
-রাইটারের সাথে দেখা হওয়া বাকি আছে। খুন বাকি আছে।
-রাইটারেরটা পড়েন দেখি।
“অতঃপর সে গেল বিখ্যাত এক রাইটারের কাছে। অনেক বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে রাইটারের অফিসে পৌছুতে সক্ষম হল সে।
লেখক তাকে বললেন, কি চাই?
সে বলল, স্যার, তেমন কিছু না। আমার জীবনের বর্তমান সময়টাতে কিছু অসাধারণ কাহিনী ঘটছে।
আমি সেগুলো আপনার সাথে শেয়ার করতে চাই।
এবং তারপর চান সেটা নিয়ে আমি যেন একটা গল্প লিখে ফেলি?
একদম ঠিক। অবশ্য পছন্দ হলে লিখবেন, নাহলে নাই।
কত বড় কাহিনী?
ছোট কাহিনী। এক ঘণ্টায় হয়ে যাবে।
আচ্ছা ধরুন আমি গল্পটা লিখে দিলাম। বিনিময়ে আপনি কি চান? উপন্যাসের উৎসর্গে আপনার নাম? আপনার নামে দেয়া একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস? বইয়ের ব্যাক কাভারের ইনসেটে আপনার আমার যুগলবন্দী ছবি? নাকি অন্য কিছু?
আমি যে কি চাই, সেটা আমার গল্প শুনেই আপনি বুঝবেন।
আচ্ছা বসুন, আমি চা দিতে বলছি। আপনাকে বেশ ইন্টেরেস্টিঙ মনে হচ্ছে।
চা খেতে খেতে শুরু হল তার গল্প।
একে একে নিজের অতীত থেকে শুরু করে কিভাবে সবমিলিয়ে তার জীবনের দাম পাঁচ লাখের উপর চলে গেল সেটা সংক্ষেপে লেখককে বর্ণনা করল সে। লেখক পুরো সময়টাতে গভীর মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনলেন।
সে তার গল্প শেষ করল। বলল, ভালো মনে হচ্ছে?
লেখক বললেন, চমৎকার। অসাধারণ।
অসাধারণ একটা গল্প হবে এই প্লট নিয়ে।
আমি তো আপনাকে খালি স্টার্টিঙ বললাম। ফিনিশিং তো এখনও বলিই নি।
ফিনিশিং? ওটা ব্যাপার না, সেরকম চমৎকার ফিনিশিং দেয়া যাবে এই গল্পে সেটা নিয়ে আপনি একদম টেনশন করবেন না।
আচ্ছা আপনি কি বুঝতে পেরেছেন আমি আপনার কাছে কি চাই?
হ্যাঁ, মনে হয় বুঝতে পেরেছি।
আপনার জীবনটা এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যেখানে আর কারো কাছে আপনার কোন দাম নেই। আপনি বেঁচে থাকলে বা মরে গেলে আর কারো কিছু আসে যায় না। তাই আপনি এমনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করলেন যাতে করে আপনি হঠাৎ করে পৃথিবীর কিছু মানুষের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েন। এমনভাবে সেটআপ করলেন যে আপনার মৃত্যুতে ওদের প্রত্যেকেরই লাভ। এমনকি আপনার মৃত্যুর বিনিময়ে তারা আপনাকে অর্থ দেবারও প্রস্তাব দিল, এবং সেটা সবমিলিয়ে পাঁচ লাখ আটষট্টি হাজার, কম তো নয়ই, অনেক বেশি।
অথচ জীবিত থাকতে ওদের কাছে আপনার কানাকড়িও দাম থাকবে না। আসলে আপনি এভাবে নিজের মৃত্যুকে বিক্রি করলেন। প্রকৃতপক্ষে, আপনি একজন মৃত্যু বিক্রেতা।
মৃত্যু বিক্রেতা? হুম, নামটা পছন্দ হয়েছে। কিন্তু আপনার কাছে আমি কি চাই সেটা তো বললেন না।
আপনি আপনার মৃত্যু বিক্রির গল্প খুব সম্ভবত আমার কাছে বিক্রি করতে চান। অর্থাৎ, টাকার অ্যামাউন্টে কিছু একটা চান। অ্যাম আই রাইট?
বলতে পারেন। কত দিতে পারবেন?
টাকা দিলে কিন্তু আপনার নাম গল্পে দেব না।
দরকার নেই।
দশ হাজার। হবে?
এটা আপনি কি বললেন? বালছাল কিছু একটা যাই লেখেন না কেন কমপক্ষে এক লাখ ইনকাম থাকে আপনার, আমি জানি না ভেবেছেন?
পনের। এর চেয়ে বেশি দিতে পারব না।
পঞ্চাশ তো দেবেন।
পঁচিশ।
ওকে পঁচিশ। তার মানে আমার মৃত্যু বিক্রির গল্প পঁচিশ হাজারে বিক্রি করলাম। গুড গুড। তা ফিনিশিং ভেবেছেন কিছু?
হ্যাঁ, একটা ফিনিশিং আমার মাথায় এসেছে।
কি সেটা?
পরের মাসের একটি নির্দিষ্ট দিনে অ্যানাটমির কর্মচারী বোনস ব্যবসায়ী রব মামা আপনার মৃত্যুর আশায় আরও কিছু টাকা নিয়ে আপনার বাসায় পৌঁছে যাবেন।
আপনি তখন বিছানায় শুয়ে আছেন, প্রচণ্ড অসুস্থতার ছাপ আপনার চোখেমুখে। ঠিক সেদিনই আপনার বড় ভাই আর আকরাম গ্রুপের অকস্মাৎ মারামারি বেঁধে গেছে, এই দিনটা অবশ্য আপনিই ঠিক করতে বলেছিলেন। আপনার মৃতদেহ নিয়ে মিছিল করার মত পর্যাপ্ত লোক, আপনি মরার পর যথেষ্ট চোখের পানি ফেলার উপযোগী গ্লিসারিন এবং সেরকম আবেগঘন একটা বক্তৃতা এরই মধ্যে আকরাম ম্যানেজ করে ফেলেছে। আপনি কখন কোথায় কিভাবে মারা যাবেন সেটা তো ঠিক হয়েছে আগেই। এমনকি আপনার বউয়ের ঠিকানা, ফোন নম্বর, কিসে সে বেশি সুখ পাবে সব আপনিই আগে থেকে বলে দিয়েছেন তাকে।
আর কি আশ্চর্য ব্যাপার, মানবাধিকার সংস্থাটি আপনার কথা বলে আগেই বাগিয়ে ফেলেছে লাখ লাখ টাকার ফান্ড। টিভি ক্যামেরা রেডি, পত্রিকা রেডি। মানবাধিকার সংস্থার নেতা ইতোমধ্যে আপনার অনশন ও মৃত্যুতে একটা বিশাল শোকগাঁথা লিখিয়েছেন এবং ক্রন্দন উপযোগী অনেক মানুষ ম্যানেজ করেছেন। টাকার হিসাব পার আওয়ারে। যত কান্না তত টাকা।
ওদিকে মিস্টার ইয়োহান ক্রুইফ? তিনি কি বসে আছেন? না। তিনিও বিদেশি ডোনারের কাছ থেকে বড় একটা প্রজেক্টের ফান্ড বাগিয়েছেন। সেন্ট্রাল অ্যাকাডেমি তাকে নতুন একটা এক্সপেরিমেন্ট, যেটায় টেস্ট সাবজেক্টের মরার সম্ভাবনা প্রায় ১০০ শতাংশের কাছাকাছি, অনুমোদন করেছে। এই এক্সপেরিমেন্ট সফল হলে জেনেটিক্সের ইতিহাসে বিপ্লব ঘটে যাবে। এমনকি ইয়োহান সাহেবের পকেটে একটা নোবেল ঢোকাও অসম্ভব কিছু না।
এক্সপেরিমেন্টের পরে টাকার ব্যাপারটা? হুহ, আপনি তো এমনিই মরে যাবেন, না গেলেও একটা সায়ানাইড ইনজেকশন দিয়ে দিলেই হবে। ব্যস, তারপর সব দায় অস্বীকার করে ফলস একটা ফরেনসিক রিপোর্ট দেখিয়ে দিলেই পাঁচ লাখ টাকা লাভ। ওহ, ম্যান!
ইয়োহান ডি ক্রুইফ আপনাকে পাগলের মত খুঁজছেন। আজকেই শুরু হবে এক্সপেরিমেন্ট। আজকেই।
৭ মার্চ, সকাল দশটা। পৃথিবীর বেশ কয়েকজন মানুষ আপনাকে খুঁজছে। পাগলের মত খুঁজছে। কারণ আপনার মৃত্যুটা তাদের খুব দরকার। খুবই দরকার”।
সে বলল, ভালোই তো ফিনিশিং দিলেন।
লেখক বললেন, ধন্যবাদ।
তাহলে গল্পটা লিখে ফেলবেন কবে?
এই তো, আজকে রাতেই।
আজকে রাতেই!! এত তাড়াতাড়ি!!
উপন্যাস সাইজ হতে দুই তিন দিন রাত টানা কাজ করলেই হবে। তারপর ফেসবুকে পরীক্ষামূলক একটা পোস্ট দিব, পাঠক রিঅ্যাকশন পাবার জন্য।
তা আমার পেমেন্টটা পাচ্ছি কখন?
আগে বইটা বের হোক।
সত্যি বলুন, কাহিনী পছন্দ হয়েছে তো?
হ্যাঁ হয়েছে। উপন্যাস লিখলে জোস হবে। আর সিনেমা বানিয়ে ফেললে তো Quentin Tarantino ফেল।
কে?
সে কি, আপনি Quentin Tarantino কে চেনেন না?
না তো।
আচ্ছা বাদ দেন, চেনা লাগবে না। একটা শেষ কথা, আসলে তো আপনার ক্যান্সার হয় নাই, তাই না?
না।
তাইলে আপনি এতসব কেন করলেন?
এমনি।
আর...আপনি তো বিয়েও করেন নি, তাই না?
না। করি নাই।
তাহলে টাকাগুলো চেয়েছেন কার জন্য?
সেটার উত্তর আপনিই দিয়ে দিন।
আপনার মৃত্যুর মূল্য জানার জন্য, অ্যাম আই রাইট?
ইয়েস।
আপনি দেখতে চাইলেন জীবিত আপনার তো কেউ দাম দিল না, মৃত আপনার দাম কত, রাইট?
রাইট।
দাম কত যেন উঠল?
পাঁচ লাখ আটষট্টি হাজার যোগ পঁচিশ হাজার, টোটাল পাঁচ লাখ তেরানব্বই হাজার”।
-কেমন হল?
-আসলেই, অতি চমৎকার।
তো এইবার শেষ অংশটুকু পড়ে ফেলুন।
“এরপর সে ঠিক করল, তার চমৎকার প্ল্যানের শেষ অংশ অনুযায়ী সে একটা খুন করবে।
খুনটা হবে অসাধারণ একটি খুন। পুলিশের ঘাম ছুটে যাবে খুনিকে ধরতে। আর যতদিনে তারা খুনিকে শনাক্ত করতে পারবে, ততদিনে সে চলে যাবে হাতের নাগালের বাইরে।
পুলিশ তখন তার নামে হুলিয়া জারি করবে, তার মাথার উপর পুরষ্কার ঘোষণা করা হবে অন্তত কয়েকদিনের জন্য।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, খুনটা সে কাকে করবে? অবশ্যই খুব জনপ্রিয় কাউকে। যাকে খুন করলে সারা দেশ নাড়া খেয়ে যাবে। নাহলে তো পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে সুখ পাওয়া যাবে না, মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে থাকা যাবে না।
সুতরাং অনেক ভেবে সে একটা প্ল্যান করল।
খুব প্রথিতযশা একজন মানুষের সাথে খাতির জমিয়ে ওঠানোর মাধ্যমে শুরু হবে তার মাস্টারপ্ল্যান। সে মানুষটাকে নিজের ভুয়া ক্যান্সার সম্বন্ধে বলবে, মানুষটা তার প্রতি দয়ায় আর্দ্র হবে। সে জেনে নেবে মানুষটার সবচেয়ে বড় শত্রুর নাম ঠিকানা।
সে একটা ডায়েরিতে তার খুন করতে যাবার কারণ, প্রথিতযশা ব্যক্তিটির মদ্যপ অবস্থার কথোপকথন ইত্যাদি নোট করে আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখবে। অতঃপর নির্দিষ্ট দিনে প্রথিতযশা ব্যক্তিটির লোকজনের সহায়তায় তার সবচেয়ে বড় শত্রুকে খুন করে ফেলবে সে।
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।