কোনটা বেশি ভাল, মনে মনে এই হিসেব করতে গিয়ে অনেকদিন হাতছাড়া হয়ে গেছে সব কটাই। জানলার ধারের সিট। এখন তো চাকরি করি, করতে হয় বলে, সে কথায় পরে আসি। আগে যেরকম হতো, রোজই বিকেলবেলা উদ্দেশ্যহীনভাবে বেরিয়ে পড়তাম। কোথায় যাব কোনও ঠিক নেই।
সেই কারণেই উদ্দেশ্যহীন। কিন্তু সেই ‘ঠিক নেই’ ব্যাপারটাই যে আসল উদ্দেশ্য, সেটা ভেবেও বেশ মজা পেতাম আমি। উত্তরা থেকে মোটামুটি সব জায়গাতেই বাস যায়, হাতের কাছে যেটা পেতাম আগে, উঠে পড়তাম। আর উঠেই শুরু হতো সমস্যাটা। যাব তো এত খানি পথ।
ঠিক কোন সিটটায় বসে গেলে সব চাইতে ভাল করে দেখতে পাব বাসের বাইরের দৃশ্য? । চেষ্টা করো, ঠিকঠাক মিলে গেলে ভাল, নইলে আবার চেষ্টা করো, তারপর আবার …. এই ভাবে। তা, বাসে উঠেও ঠিক সেই ব্যাপারটাই শুরু করতাম আমি। স্ট্যান্ড থেকে ফাঁকা বাস বেছে নিয়ে উঠতাম, তাড়া তো নেই কোনও, তার পর শুরু করতাম বাছাইয়ের খেলা। প্রায় প্রত্যেকটা জানলার ধারে বসে বসে চেখে দেখতাম, বাইরেটা কত বেশি ভাল লাগত, সেইটায় নিশ্চিন্ত হয়ে বসে পড়তাম।
কিন্তু সব সময় যে খুব নিভৃতে সারতে পারতাম কাজটা, তা নয়। বাস তো আমার একার নয়, আস্তে আস্তে লোকজন উঠছেন, জানলা থেকে জানলায় আমার এই দৌঁড়ঝাঁপ দেখে আড়চোখে যে তাকাচ্ছেন না, এমন নয়। কিন্তু সব বুঝতে পেরেও আমি থাকতাম নিরুপায়। সব চাইতে ভাল জানলার দখলটা আমাকে নিতেই হবে। এই করতে গিয়ে অবশ্য, গোড়াতেই বলছিলাম যেটা, জানলা পাইনি একেবারে, এমনটাও হয়েছে।
অগত্যা নেমে গিয়ে পরের বাস।
আজ ভাবি, কেন করতাম এমনটা? কে জানে, হয় তো সব চাইতে ভাল জানলাটা দিয়ে সব চাইতে বেশি করে উড়িয়ে দিতে পারতাম মনটাকে।
এখন জানলার ধারে পাল্টে পাল্টে গেলেও, রুট একই থাকে। অফিস যাবার। কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই কানে গান পেঁচিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকি।
কেন এতটা পাল্টে গেল সিটগুলো? আজ মনে হয়, আমার ভেতরকার সেরা জানলাটা সেই সব দিনে খোলা ছিল, তার পর থেকে অনেক দিন খোলা হয়নি আর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।