আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রলাপ-৬

পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে দূর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন দেশটির প্রবীণ সমাজ কর্মী আন্না হাজারে, তার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন কারাপরিদর্শক কিরণ বেদী, ধর্মীয় গুরু রবি শঙ্কর সহ অনেকেই। আন্না'কে সমর্থন দিতে রাজপথে নেমেছে হাজার হাজার সাধারন জনতা। আমরা কি করবো? কিংবা আমাদের কি হবে? আমাদের ঘর নাই, ঘর থাকলে তাতে বিদ্যুৎ নাই, পানি নাই, গ্যাস নাই, চাকরী নাই, বাজারের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সাথে তাল মিলিয়ে উপার্জন নাই, চলার মতো রাস্তা নাই, অনুসরণ করার মতো একজন নেতা নাই, সবচেয়ে বড় কথা ঘরের বাইরে জীবনের কোনো নিরাপত্তা নাই। আমাদের জীবন'কে ঘিরে যখন 'নাই'য়ের আধিক্য অনেক বেশী, আমাদের চোখের পানি যখন প্রতিনিয়ত ঝরছে রাষ্ট্রের পাতা ফাঁদে প্রিয়জনের অপমৃত্যুতে_তখনো কি আমাদের কিচ্ছু করার থাকে না? আমাদের মহাসড়কগুলো একেকটা মৃত্যু ফাঁদ, বছরের পর বছর এগুলো একই হালে চললেও মন্ত্রী মহোদয়রা একে-অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়েই খালাস। রাষ্ট্রের জান-মাল রক্ষার দায়িত্বে থেকেও, এ ধরনের দায়িত্বহীনতায় তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয় না, অথচ তাদের সুবিধার্থে গঠন করা সংবিধান নিয়ে মন্তব্য করলে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হবে, সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী______আমাকে ফাঁসি দিন। রাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধি'দের বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা, ভণ্ডামি, প্রতারণার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললে যদি আমার নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেন, তবে করুন-আমি প্রস্তুত। এ দেশে দূর্নীতি প্রতিটা ক্ষেত্রে, প্রতিটা স্তরে ভয়ংকর ব্যধির মতো ছড়িয়ে রয়েছে। আমাদের এই ব্যধি থেকে কে পরিত্রান দিবে? সংবিধানে আল্লাহ'র নাম থাকলো কি না, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রইলো কি না, স্বাধীনতার ঘোষক কে, জাতির স্থপতি কে? পুত্র রক্ষা, বাড়ি রক্ষা___এসব নিয়ে যারা প্রতিনিয়ত মূর্খ বাকবিতণ্ডায় ব্যস্ত, তাদের দ্বারা দেশকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেওয়া কখনোই সম্ভব নয়। এরা নাকি মানুষের জন্য রাজনীতি করে! প্রতারকের দল, লোভীর দল, সব কাপুরুষ! ক্ষমতায় গেলে জনগণের টাকায় ব্যক্তিগত টাকার পাহাড় গড়ে তুলে প্রত্যেকেই।

এদের কোনো নীতি নাই, ধর্ম নাই, রাজনৈতিক মতাদর্শ নাই, দেশের জনগণের জন্য কোনো সুস্থ চিন্তা-ধারা নাই, বিবেক বর্জিত, বিকার গ্রস্থ অমানুষ এরা সবাই। ভয়ংকর খুনী এরা, প্রতিনিয়ত দেশ এবং জাতিকে ধর্ষিত করছে। জনগণের রক্ত শুষতে এরা রাজনীতি করছে, ক্ষমতার নেশা এদের মাদক দ্রব্যের মতোই প্রতিনিয়ত আকর্ষিত করছে। কাদের আমরা জনপ্রতিনিধি বলবো? কাদের রাষ্ট্রের রক্ষক বলবো? জনপ্রতিনিধিরা কব্জা করে রেখেছে পুলিশ-প্রশাসন, তথা সমগ্র জাতি। পুলিশের হাতে প্রাণ দিতে হচ্ছে দেশের সম্ভবনাময় তরুণদের।

এর বিচার করবে কে? বিচারপতি নিজেই যখন দলীয়করণের অন্তর্ভূক্ত! হাজার হাজার অবৈধ লাইসেন্সধারী বাস চালকের হাতে জিম্মি হয়ে আছে সাধারণ জনগণের প্রাণ, তাদের বেপরোয়া চালকীতে প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে জাতির গর্বীত সন্তান তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীর’দের কিংবা নিতান্তই সাধারণ কোনো মানুষের। যখন আগের দেয়া অবৈধ লাইসেন্সগুলোরই কোনো প্রতিকার নেই তখন আরো হাজার হাজার অবৈধ লাইসেন্স দিতে আমাদের পরিবহন মন্ত্রী সুপারিশ করছেন যোগাযোগ মন্ত্রীর কাছে। আবার এই পরিবহন মন্ত্রীই টেলিভিশনের টক শো গুলোতে গিয়ে বিরোধী দলীয় নেতাদের নীতির ভাষণ আওরাচ্ছেন। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে হরহামেশাই মন্ত্রীবর্গ বাণী দিচ্ছেন____‘কম খান’, ‘একদিন কেউ বাজারে যাবেন না’ কিংবা ‘পুঁজি বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টিকারীর কেউ প্রকৃত লগ্নিকারী না, এরা সব দাঙ্গাবাজ’!!! সত্যিই অবাক হই, কাদের মাঝে বাস করছি ভাবলে! সব স্বার্থপর, মিথ্যেবাদী, দূর্নীতিবাজ, প্রতারক, জানোয়ারে পরিণত হয়েছে। নিজেদের আখের গুছাতেই ব্যস্ত তারা।

বড় পরিতাপের বিষয়; এ দেশে কোনো যোগ্য নেতা নাই, যার হাত ধরে দেশ এগিয়ে যাবে, যার আদর্শে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হবে। ৪০ বছরেও এ দেশে কোনো নেতার জন্ম হয়নি। বাংলাদেশ টেলিভিশন খুললেই দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী তার পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে যাচ্ছেন! মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি কি জানেন আপনার পিতা বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাটি আসলে কেমন? আপনি তার এই ভাবনার তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারেন? ৭২’র সংবিধান ফিরিয়ে আনলেই, পিতার হত্যার বিচার করলেই, স্বাধীনতা বিরোধীদের শাস্তির আওতায় আনলেই, স্থাপনার নামকরন পিতার নামে করলেই, টাকা-পয়সার গায়ে পিতার প্রতিকৃতি ছাপলেই কেবল জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলা সম্ভব না। আর কতদিন পিতার দোহাই দিয়ে মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলবেন? ৪০ বছর আগে স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, সেই যুদ্ধ কিন্তু এখনো শেষ হয়ে যায় নি। প্রতিটি মানুষের চিন্তায়-চেতনায় সেই যুদ্ধ এখনো সংগঠিত হচ্ছে, তবে এবার শত্রুপক্ষ নিজ দেশেরই প্রতারকরা অর্থাৎ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী আপনারা।

৪০ বছর আগে মুক্তির জন্য যে যুদ্ধ হয়েছিল, সেই যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের যেমন বিচার হবে, ৪০ বছর পরের বিশ্বাসঘাতকদেরও কিন্তু জনগণের বিচারে মুক্তি নাই জেনে রাখবেন। বর্তমানের দূর্নীতিবাজদের-ঘাতকদের বিচার, অতীতের বিচারের অন্তরালে হারিয়ে যাবে না। কি লাভ হয় এসব করে বলতে পারবেন? এই যে বিভিন্ন স্থাপনায়, টাকা-পয়সায় জাতির জনকের নাম এবং প্রতিকৃতি ব্যবহার করছেন, পরবর্তীতে অন্য সরকার এসে তা পরিবর্তন করে ফেলবে। আর কেনোই বা করবে না? আপনারাও তো এসে তাই করেছেন। এটাতে কি জাতির জনককে অসন্মান-অপমান করা হচ্ছে না? আপনি কি কেবল পাঁচ বছরের জন্য তাকে প্রতিষ্ঠা করতে চান? তিনি তার কর্মের জন্য স্মরণীয় থাকবেন চিরকাল, আপনি এগুলো না করলেও।

আপনারা এসে নিজেদের নামে করা সব মামলা খারিজ করেছেন, বিরোধী দলের মামলাগুলো পুনর্জীবিত করেছেন, নতুন নতুন মামলা দিয়েছেন, বিরোধী দলীয় নেতাদের ধরে নিয়ে গুম করে ফেলেছেন। সম্প্রতি বিরোধী জোটের নেতা ফজলুল হক আমিনী বলেছে, তারা ক্ষমতায় গেলে ক্ষমতার প্রথম তিন বছর কেবল আপনার এবং আপনার পরিবারের নামে মামলা করবেন! আপনাদের আর কিছুতে মিল না থাকলেও, এসব বিষয়ে কেউ কারোর চেয়ে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। আপনাদের লক্ষীপুরের দলীয় নেতার সন্ত্রাসী পুত্রের হাতে নিহত সেখানকার আইনজীবি হত্যা মামলার রায়ে সেই সন্ত্রাসীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিলো কিন্তু আপনাদের নেতা মাননীয় রাষ্ট্রপতির কাছে পুত্রের প্রাণ ভিক্ষা চাইতেই রাষ্ট্রপতির নিজ দলের নেতার প্রতি দয়া পরবশত প্রাণ ভিক্ষা দেন। জনাব জিল্লুর রহমান, আপনি রাজনীতিতে প্রবীণ, সন্ত্রাসীর হাতে আপনার প্রিয়তম স্ত্রী আইভী রহমান প্রাণ হারিয়েছেন, পারবেন কি তার হত্যাকারীদের ক্ষমা করতে? প্রধানমন্ত্রী, আপনি পারবেন জাতির জনকের হত্যাকারীদের ক্ষমা করে দিতে? দলীয় বলেই কি এই ক্ষমা? নাকি যে নিহত হয়েছেন তিনি বিরোধী দলীয় ভাবাপন্নের একজন ছিলেন বলে? পারবেন তার স্ত্রী-সন্তানদের প্রশ্নের জবাব দিতে? তাদের আহাজারি থামাতে? পারবেন না, মানুষের জন্য আপনারা কিছুই পারবেন না, আপনাদের সকল কিছু অমানুষের পক্ষে। বিরোধী দলীয় নেত্রী, পুত্র-বাড়ি বাঁচাতে আপনার যত আকুতি-কাকুতি, তার এক বিন্দুও যদি আপনি ক্ষমতায় থাকতে সাধারণ মানুষের জন্য করতেন, সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ নাই কেনো এই নিয়ে যতবার আন্দোলন গড়ে তুলেছেন, রাজপথ গরম করেছেন, তার অল্পখানি যদি নিজ দলীয় নেতাদের দূর্নীতির বিরুদ্ধে করতেন, তবে ভাবতাম আপনি জন মানুষের নেত্রী।

কথায় কথায় রাস্তায় নেমেছেন, হরতাল ডেকেছেন, গাড়ি ভেঙ্গেছেন, মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলেছেন, অথচ সংসদে গিয়ে মানুষের জন্য কথা বলেননি, মানুষের দাবী তুলে ধরেন নি। রাজপথে নিজেদের দাবীগুলোকে জনগণের দাবী বলে চিৎকার করেছেন। জনগণ তো আপনাকে ক্ষমা করবেই না, ইতিহাস না, ধর্ম না, রাষ্ট্র না, জাতি না, কোনো কিছু থেকেই রেহাই পাবেন না আপনারা। আর কত মিথ্যাচার? কত অবহেলা? কত আর লোক ঠকানো? দেয়ালে পিঠ ঠেকে আছে, শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছে, এখুনি যদি এই সব অবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা না হয়, তবে এই দেশ প্রতিনিয়ত এইসব প্রতারক দ্বারা ধর্ষিত হবে। তথাকথিত এইসব খল চরিত্রের বিরুদ্ধে, নেতা নামক দানবদের বিরুদ্ধে, দূর্নীতিগ্রস্থ সকল কিছুর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই, ঐক্যবদ্ধ হই।

আসুন___এসকল নেতাদের রুখতে আমরা নিজেরাই, নিজেদের নেতা হয়ে উঠি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।