চারদিকে প্রকৃতি কাঁদে। গাছ কাঁদে, পাখি কাঁদে, বাতাস কাঁদে সর্বত্র ক্রন্দনরোল। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, ধর্ষণ, ধর্ষক দেশ জুড়িয়া। নরপিশাচ বললেও যাদের কম বলা হয়, ওদের দৌরাত্ম্যে প্রকৃতির এ অন্তঃক্রন্দন।
সাম্প্রতিক উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীঃ-
(ক) শিবগঞ্জে কলেজছাত্রী ধর্ষিত
বগুড়ার শিবগঞ্জ এক কলেজছাত্রীকে রাস্তা থেকে ধরে বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ ও ভিডিও করে মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
অভিযোগে জানা গেছে, শিবগঞ্জ চৌধুরী কলেজের ছাত্রী ২২ মার্চ সকাল ১০টার দিকে কলেজে যাচ্ছিলেন। পানাতেপাড়ার পাকা সড়কের মোড়ে পৌঁছলে শিবগঞ্জের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী শামসুল হুদার ছেলে রাসেল তার পথরোধ করে। জোরপূর্বক বাড়িতে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় তার অজ্ঞাত দুই বন্ধু জানালা দিয়ে ধর্ষণ চিত্র ভিডিও করে।
(খ) আশুলিয়ায় শিশুকে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ
পুলিশ ও ধর্ষণের শিকার শিশুটির পরিবার সূত্র জানায়, আশুলিয়ার শিমুলিয়া বাজারে ওই শিশুর বাবার একটি চায়ের দোকান আছে।
প্রায় ১৫ দিন আগে ওই দোকানে মেয়েটিকে দেখেন ইমরান। কয়েক দিন পর মেয়েটির বাড়ি গিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন তিনি। এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ইমরান গত বুধবার বিকেলে মেয়েটিকে বাজারে যাওয়ার পথে অপহরণ করেন। পরে আশুলিয়ার পলাশবাড়ী এলাকায় ওই বাড়িতে আটকে রেখে ধর্ষণ করেন।
(গ) মাদারীপুরে দুই শিশুকে ধর্ষণ
মাদারীপুর সদর ও রাজৈর উপজেলায় খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে ৫ ও ৪ বছরের দুই শিশুকে ধর্ষণ করেছে দুর্বৃত্তরা।
গতকাল এ পৃথক দুটি ঘটনা ঘটে। দুটি শিশুকেই মাদারীপুর সদর হাসপাতালে চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে।
(ঘ) সখীপুরে কিশোরীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ
সখীপুর পৌর এলাকার কাহারতা গ্রামের ওই মেয়েটি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নবম শ্রেণীতে পড়ে। গত ৫ই জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ি থেকে সখীপুর বাজারে আসে খাতা কেনার জন্য। বাড়ি ফেরার সময় উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুল্লাহ ইতিহাস ওরফে হাবিব, ছাত্রলীগ নেতা আরিফ, সখীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শওকত সিকদারের ভাগ্নে বাবুল ও তার নাতি আকাশ মোটরসাইকেলযোগে সখীপুর হাজিপাড়ায় আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন একটি ছাত্রাবাসে নিয়ে যায় তাকে।
পরে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুল্লাহ ইতিহাস তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় তার সহযোগীরা ধর্ষণের চিত্র ভিডিওতে ধারণ করে। পরে আরেকজন ধর্ষণ করতে গেলে সে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। তার ডাক-চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে ধর্ষণকারী ও তার সহযোগীরা পিছু হটে যায়।
(ঙ) এবার বাংলাদেশে চলন্ত বাসে তরুণীকে ধর্ষণ
দুপুর দেড়টার দিকে তিনি পাটুরিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে নবীনগর থেকে শুভযাত্রা পরিবহনের বাসে ওঠেন।
তিনি জানতেন না যে বাসটি পাটুরিয়া যাবে না। মানিকগঞ্জে পৌঁছার পর বাসের সব যাত্রী নেমে গেলেও ওই তরুণী বসে ছিলেন। তখন চালক ও হেলপার পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে বাসটি চালাতে থাকে বলে ওই তরুণী জানান। মামলায় বলা হয়, পথে চলন্ত গাড়িতে প্রথমে হেলপার কাশেম ধর্ষণ করে এবং পরে চালক দিপুও বাদীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। পরে বাস ঘুরিয়ে ওই তরুণীকে মানিকগঞ্জ সদরের মানরা সেতুর কাছে নামিয়ে দেয়া হয়।
তাছাড়া সাভারে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ, টাঙ্গাইলের মধুপুরে স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণ, চাঁদপুরের মতলবে শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা, বাগেরহাটে স্বামী ও মেয়ের সামনে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনা উল্লেখযোগ্য। এ থেকে স্বভাবতই যে প্রশ্নটি ওঠে তা হল, হঠাৎ করে দেশে এ ধরনের ঘটনা বেড়ে গেল কেন? নাকি এমন ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তা গণমাধ্যমে বেশি প্রকাশ পাচ্ছে?
বাস্তবতা হল, দেশে নারী নির্যাতন পরিণত হয়েছে নিত্যদিনের ঘটনায়। দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন, ধর্ষণ, যৌতুকের জন্য নারী হত্যা, নারী ও মেয়ে শিশুর প্রতি এসিড নিক্ষেপ, বলপূর্বক অসামাজিক কার্য়কলাপে লিপ্ত করা এবং অন্যান্য নারী নির্যাতনমূলক অপরাধ প্রতিনিয়তই ঘটছে। ঘরে বা ঘরের বাইরে নারী নির্যাতন, হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনাগুলোর যথাযথ বিচার না হওয়ায় মহিলাদের জীবন অত্যন্ত বিপদসংকুল ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবং এ পরিস্থিতি নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের পথে বাধা হিসেবে কাজ করছে। এর ফলে সামগ্রিকভাবে জাতীয় উন্নয়নের প্রচেষ্টা বিলম্বিত হচ্ছে।
ধর্ষণসহ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে দেশে যে আইন রয়েছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বল। বিদ্যমান আইনেরও যথাযথ বাস্তবায়ন হয় না। অনেকে সামাজিক লোক-লজ্জার ভয়ে আইনের আশ্রয় নিতেও দ্বিধান্বিত হয়। এ পরিস্থিতি নারী নির্যাতন প্রতিরোধের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে সবার আগে যা প্রয়োজন তা হল, নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনা।
কোন নারী নির্যাতিত হলে রাষ্ট্র ও সমাজের উচিত নিজ থেকেই তার পাশে এসে দাঁড়ানো। অপরাধীকে আইনের হাতে তুলে দিতে সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। আইনের সংস্কার, প্রয়োজনে নতুন আইন করে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি দেয়া জরুরি বলে মনে করি। অস্বীকার করার উপায় নেই, আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি, যেখানে মানুষ নিজেদের আর নিরাপদ ভাবতে পারছে না।
কিছুসংখ্যক মানুষের কারণে মানবাধিকার ভূলণ্ঠিত হতে দেয়া উচিত নয়। এ ব্যাপারে সরকারের অবশ্যই দায়িত্ব রয়েছে। সরকার এ ব্যাপারে আন্তরিকতার পরিচয় দিয়ে সমাজ থেকে ধর্ষণসহ অন্যান্য অনাচার ও অপরাধ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা। (সংগৃহীত)
কাজেই আসুন সোচ্চার হই। ধর্ষণ ও ধর্ষকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি।
সদিচ্ছা, আইনের যথার্থ প্রয়োগ, সরকারের আন্তরিকতা, আইন শৃংখলা বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতা, সচেতনতা বৃদ্ধি, দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির ব্যবস্থা ইত্যাদির মাধ্যমে এই অশুভ শক্তিকে রোধ করতে একাত্মতা জানাই, একযোগে কাজ করি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।