আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কে হতে চায় কোটিপতি একটি প্রতিক্রিয়া।

অনেক ঘটা করে প্রচারণার পর অবশেষে গত ১০ই জুলাই দেশটিভিতে শুরু হয়েছে মেধাভিত্তিক (!) রিয়েলিটি শো ‘কে হতে চায় কোটিপতি’। আমাদের দেশে এ ধরনের অনুষ্ঠান এই প্রথম, তার ওপর পার্শ্ববর্তী দেশে এ অনুষ্ঠানের সে দেশীয় সংস্করণের জনপ্রিয়তা তদুপরি আমাদের নিজের এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ইচ্ছা- সব মিলিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছিল অনুষ্ঠানটিকে ঘিরে। এখানে জানিয়ে রাখি, ঢাকা বিভাগের অডিশন রাউন্ড পর্যন্ত যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল এবং অডিশনে ১৫টি প্রশ্নের ১১টির সঠিক জবাবও দিয়েছিলাম, তথাপি মূল অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচিত হতে পারিনি। এ নিয়ে কোন দুঃখবোধও ছিল না। ভেবেছিলাম আমার চেয়ে বেশি সঠিক উত্তর দিয়ে আরও মেধাবীরা মূল অনুষ্ঠানে জায়গা করে নিয়েছেন।

কিন্তু অনুষ্ঠানের দু’একজন প্রতিযোগী ছাড়া বাকি প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণ ও তাদের সাধারণ জ্ঞানের দক্ষতা দেখে মনে প্রশ্ন জেগেছে। দু’একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা খোলাসা হবে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম একজন প্রতিযোগী, যিনি সম্ভবত ‘কে হতে চায় কোটিপতি’ (যে কোন দেশের) অনুষ্ঠানের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত একমাত্র প্রতিযোগী হিসেবে শূন্য হাতে ফেরত গেছেন। ৩টি প্রশ্নের মধ্যে ১টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর তিনি নিজে থেকে দিতে পেরেছিলেন। দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল ‘চিচিং ফাঁক’ শব্দটি আরব্য রজনীর কোন গল্পে ছিল? এ প্রশ্নের উত্তরটি তিনি দিয়েছেন দর্শক মতামত নিয়ে (দেখে মনে হচ্ছিল শব্দ দু’টি তিনি জীবনে প্রথম শুনলেন)।

তৃতীয় প্রশ্নটি ছিল দাবা খেলায় ক’টি ‘অশ্ব’ থাকে? এ প্রশ্নের উত্তর তার জানা ছিল না; তাই তিনি তার এক বন্ধুকে ফোন করেছিলেন এবং তার বন্ধুটিও সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তিনি ভুল উত্তর দিয়ে খালি হাতে ফিরেছেন। আরেক প্রতিযোগী যিনি ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র হয়েও প্লেনের পাইলট হওয়া থেকে শুরু করে বিজ্ঞানী (!!!) হওয়ার স্বপ্ন দেখেন (এখন পর্যন্ত যে ক’টি পর্ব দেখেছি তাতে মনে হয়েছে, যে যত অদ্ভুত স্বপ্ন দেখতে জানেন অনুষ্ঠানে তার কদর তত বেশি), তিনি ট্রাফিক সিগন্যালের সবুজ বাতি কি নির্দেশ করে এরকম একটি বালখিল্য প্রশ্নের উত্তর দিতে আটকে গেছেন এবং পরবর্তীতে ‘লাইফ লাইন’ ব্যবহার করে পার পেয়েছেন। এমনকি লবণ উৎপাদনে কোন উৎসের পানি ব্যবহৃত হয় এই প্রশ্নের উত্তর দিতেও এক প্রতিযোগী ভাবনায় পড়ে গিয়েছিলেন (তিনি কনফিউজ ছিলেন সাগরের নাকি হাওরের)! দেশটিভিতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে যারা অবগত নন তাদের কাছে মনে হতে পারে এরকম একটি অনুষ্ঠানের ‘হট সিটে’ বসার পর স্নায়ুচাপের কারণে অনেক সহজ প্রশ্নও অনেকে কঠিন মনে হতে পারে। ব্যাপারটিকে পুরোপুরি হেলা করা যায় না, তথাপি সবার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের কয়েকটি ধাপের একটি ছিল তাৎক্ষণিক সঠিক উত্তর দেয়ার প্রতিযোগিতা অর্থাৎ কম্পিউটারে রেন্ডমাইজেশন পদ্ধতিতে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদেরকে একটি বিশেষ নম্বর থেকে ফোন করে ৩টি করে প্রশ্ন করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রথম দুটি প্রশ্নের উত্তরে ৪টি করে অপশন দেয়া হলেও তৃতীয় প্রশ্নটির উত্তর প্রতিযোগীকে সরাসরি দিতে হয়েছে অর্থাৎ কোন অপশন দেয়া হয়নি।

প্রশ্নগুলোও কিন্তু কোন সহজ ছিল না। দু’একটি নমুনা দেই- # কোন প্রাণীর মগজ নেই? # ইউরোপের সবচেয়ে বড় নদী কোনটি? # চীনের দুঃখ বলা হয় কাকে? উল্লিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তরে চারটি করে অপশন থাকলেও শেষের যে প্রশ্নগুলো করা হয়েছে সেগুলোর কোন অপশন ছিল না। সে রকম দু’-একটি প্রশ্নের নমুনা- # তাজিনডং-এর উচ্চতা কত মিটার? # কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য কত? # বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দৈর্ঘ্য কত? এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, যখন ফোনে পরিচয় দিয়ে নির্বাচিতদের এ প্রশ্নগুলো করা হয় তখন প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য তাদের জন্য নির্ধারিত সময় ছিল মাত্র দশ সেকেন্ড; দিতে হয়েছে তিনটিরই সঠিক উত্তর, কোন লাইফ লাইন সাপোর্ট ছাড়াই। আর মূল অনুষ্ঠানে একটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট সময় বাঁধা নেই; বরং সাহায্য পাওয়ার সুযোগ আছে তিনটি। সচেতন পাঠক মূল অনুষ্ঠানে করা প্রশ্ন আর প্রাথমিক বাছাই পর্বে করা প্রশ্নগুলোর মধ্যে তুলনা এবং সেই সঙ্গে সময়ের ধরা-বাঁধার ব্যাপারটি লক্ষ্য করলে কোথায় স্নায়ুচাপ বেশি তা সহজেই বুঝতে পারবেন।

যারা ট্রাফিক সিগন্যালের লাল-হলুদ-সবুজ বাতির অর্থ জানে না, তারা প্রাথমিক পর্ব ও অডিশন পর্বে আরও কঠিন প্রশ্নের পরীক্ষা পাস করে মূল অনুষ্ঠানে গেছেন একথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বরং এটা অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য যে, প্রতিযোগী বাছাইয়ে কম মেধাবীদেরই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, যাতে আয়োজকদের পকেট থেকে বেশি টাকা বের না হয়ে যায়। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আসাদুজ্জামান নূর শুরু থেকেই ‘এ অনুষ্ঠান কোন ভাগ্য পরীক্ষার নয় মেধা পরীক্ষার, মেধাবীদের অনুষ্ঠান’ বলে প্রচার করছেন। উদাহরণ দিচ্ছি : টেলিভিশনে প্রশ্ন দেখে যারা রেজিস্ট্রেশন করতে উত্তর পাঠিয়েছেন, তাদের মধ্যে থেকে অনেকেই সঠিক উত্তর দিয়েও বাদ পড়েছেন কম্পিউটারের রেন্ডমাইজেশন পদ্ধতিতে বাছাইয়ে না আসতে পারায় অর্থাৎ কম্পিউটার সাহেব তাদের ভাগ্য খোলেননি। মেধা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হবে বললেও অডিশনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে একটি কাগজে কিছু ব্যক্তিগত অনুভূতির কথাও জানতে চাওয়া হয়েছে, এর সঙ্গে ছিল ভিডিও স্ক্রিনিং টেস্ট অর্থাৎ ক্যামেরার সামনে আপনি কতটা সপ্রতিভ।

অডিশন অনুষ্ঠানে দায়িত্বরত লোকজন বারবার বলেছেন, এই দুটো টেস্ট খুব ইম্পরটেন্ট। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, একজন মেধাবী লোক তার ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশে কিংবা ক্যামেরার সামনে খুব বেশি সপ্রতিভ নাও হতে পারেন, তাই বলে কি তার মেধার মূল্যায়ন হবে না? তাহলে কেন গলা ফাটিয়ে বারবার বলা হচ্ছে এটা মেধাভিত্তিক অনুষ্ঠান? যারা অডিশন রাউন্ডে গেছেন তাদের সবাইকে বাধ্যতামূলক শর্তযুক্ত একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে হয়েছে। যেখানে একটি শর্ত ছিল- ‘অডিশন পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না’। কেন এই শর্ত? কার স্বার্থে? লেখাটা মানবজমিন থেকে শেয়ার করা.। লিখেছেন.. মজুমদার নাহিদ ১০৬, গুলশান এভিনিউ গুলশান, ঢাকা।

লিনক..http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&view=article&id=16890:2011-08-15-14-23-20&catid=36:local&Itemid=68 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।