আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছোট না মাঝারি গল্প...... ডোন্ট ক্রাই রবি

আমি দেখিনি , আমি শুনিনি , আমি বলিনি অনেক কিছুই....। রবি ২২ বছরের টগবগে যুবক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র ,ফাইন্যান্স এর মতো রোবট সাবজেক্ট পড়ে । অনেক স্বপ্ন চোখে , গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে দেশের বাইরে যাবে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে বড় চাকরি করবে আরো কত কিছু। স্টুডেন্ট লাইফে অনেকে অনেক কিছু করে কিন্তু সে নিজে কিছুটা মাম্মিস সন কিনা তাই এইসব কাজ এড়িয়ে চলে গেছে শুধু চিন্তা করেছে নিজের ক্যারিয়ারের এমনকি কোনো মেয়ের দিকে ভালো লাগার দৃষ্টি নিয়েও তাকায়নি ।

তার এই মাম্মিস সন হয়ে থাকাটা আবার বাল্য কালের বন্ধু আবিরের পছন্দ না, সে প্রায়ই তাকে ক্ষ্যাপায় ফার্মের মুরগি বলে। ব্যাটা ফাজিল। শেষ সেমিস্টার চলে এসেছে রবির ব্যস্ততা বেড়ে গেছে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকেই বের হয় না , তারউপর আবিরের উৎপাততো আছেই , ইদানিং ফোন দিয়ে বলা শুরু করছে খোয়ারের মুরগি নাকি খোয়ারে ঢুকে পড়ছে। তবুও মাঝে মাঝে ছাদে যায় সন্ধ্যার আগে একটু । আজও গিয়েছিলো যদিও গিয়ে একটা ধাক্কামত খেল ।

একটা কিশোরী মেয়ে ছাদে দাড়িয়ে ছিলো। তাকে দেখে একটু হাসলো কিন্তু রবির মতো একজনের কাছে ব্যাপারটা সহজ না তাই সে একটু থতমত খেয়ে গেল । কিছু বললো না শুধু নেমে গেল ছাদ থেকে। গিয়েই ফোন দিলো তার বিপদের ত্রানকর্তা আবিরকে । আবিরতো ঘটনা শুনে হেসেই খুন।

বলে কিনা মেয়েটা নাকি রবিকে দেখেই প্রেমে পরে গেছে। যাকে নাকি আজকালকার ভাষায় বলে কাইৎ হইয়া যাওয়া। একমাস পরের কথা রবির সেমিস্টার শেষ। হাতে কিছুটা সময় আছে কিন্তু সে একটু দৌড়ের উপর আছে , কানাডার একটা ইউনিতে কন্ট্যাক্ট করার চেষ্টায় আছে। এর মধ্যে অনেক কিছু ঘটে গেছে ।

সেই মেয়েটা তাদের এপার্টম্যান্টে নতুন প্রতিবেশি নাম শিয়া । একদিন বিকালে সে তার মা সহ হাজির রবিদের বাসায় । রবির মাও যথেষ্ঠ নির্মমতার সাথে তাকে তাদের সাথে পরিচয় করায় দিছে। ফরচুনেটলি অথবা আনফরচুনেটলি আবির ছিলো সেই সময় তাদের বাসায়। সেতো আন্টি আন্টি বলতে শেষ।

ব্যাটা ফাজিল । হঠাৎ করেই সবকিছু হয়ে যায় রবির। রেজাল্টের কয়েকদিনের মধ্যেই কানাডা যাওয়ার সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যায় আর কি। এর মধ্যে শিয়াদের ফ্যামিলির সাথে রবিদের একটা ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে যদিও রবি কোনো আগ্রহবোধ করে না হয়তোবা শিয়ার বয়সটাই কারন , সে মাত্র ১৬ বছরের একটা মেয়ে। রবি কানাডা যাওয়ার মাত্র এক সপ্তাহ আগে তার জীবনে সুনামি বয়ে গেল।

শিয়া তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসলো সে কি করবে কিছু না বুঝে সময় চাইলো আর সাথে সাথেই ফোন করলো তার পুরান উদ্ধারকর্তা আবিরকে। আবির যতোই বলে প্রেম কর ততোই রবি বলে না মেয়েটার বয়স এখনো অনেক কম তাই হয়তো কিছু না বুঝেই এইসব করেছে। আর আবির কিনা তাকে উল্টা বলে সে নাকি একটা গাবর । এই যুগে সব ছেলে-মেয়েই নাকি ১০ বছরের পরেই ঝুনা নারিকেল হয়ে যায় আর শিয়ারতো বয়স ১৬। অবশেষে এক রাত নিজের সাথে গৃহযুদ্ধ করে নিজের সিদ্ধান্তেই স্থির থাকে রবি ।

না এখন কোনো প্রেম-ভালোবাসা নয় আগে ক্যারিয়ার তারপর সব কিন্তু সে নিজেও বুঝে তার মন একটু একটু প্রেমিক হতে চায়। সে তার সারা জীবনের সাহস একসাথে করে শিয়াকে বলে ফেলে তার সিদ্ধান্তের কথা। কি অবাক এই কথা শুনেও শিয়া কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না শুধু বললো '' ওকে ঠিক আছে , নো প্রবলেম '' । তারপর তারপর কানাডায় গিয়ে রবি ব্যস্ত হয়ে পরে পড়াশুনার চাপ , কাপড় ধোয়া , রান্না করা টয়লেট পরিষ্কার করা এইসব করতে করতে । জীবনে কখনো যে কিচেনে ঢুকে নি সে ছেলেই কিনা আজ সব করতে পারে , এর নামই জীবন ।

মাঝে মাঝে সে মাকে ফোন দিয়ে বলে '' মা , আমি সব করতে পারছি মা, আমি সব করতে পারছি '' । আবেগহীন পশ্চিমা দেশে এসে রবি যেন আরও আবেগি হয়ে পরে । তার কেমন জানি শিয়ার কথা মনে পরে , যদিও মায়ের কাছে জানতে চায় না । শুধু জানে শিয়ারা নিজেদের বাড়ীতে উঠে গেছে । আর আবিরও কেমন জানি তাকে এড়িয়ে চলে আজকাল , ফোন দিলে ব্যস্ততা দেখায়।

....................... ........................................ ................................................................................................. অবশেষে রবি নিজেকে তথাকথিত ফার্মের মুরগি থেকে দেশি মুরগিতে পরিনত করেছে আর শিয়াকে নিজের না বলা সত্যি কথাটা বলতে চায় । মায়ের কাছ থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে ফোন দেয় শিয়াকে। কিন্তু সে যা শুনে শিয়ার কাছ থেকে তা শুনে মন্ট্রিয়লের রাতের বৃষ্টি আর তার চোখের পানির কোনো তফাৎ থাকে না। শুধু কানে বাজে শিয়ার শেষ কথাটা। '' স্যরি রবি আমি এখন প্রেম করছি তোমার প্রিয় বন্ধু আবিরের সাথে '' ---------------------------------------------------------------------------------- অনেকদিন পর একটা প্রিয় গান শুনলাম Conway Twitty এর Dont Cry Joni এই গানটা প্রথম শুনি ব্যাচেলারে হাসান ভাইয়ের মুখে ।

গানটাকে টেনে একটু লম্বা করলাম আর চেষ্টা করলাম একটা কাহিনী দাড় করাতে। মেঘের দেশে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।