আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

না থেকেও সমান প্রাসঙ্গিক ৫০ পেরনো বার্লিন প্রাচীর

অদ্ভুত উটের পিঠে আজ থেকে ঠিক ৫০ বছর আগের কথা। ১৯৬১ সালের ১৩ অগস্ট। বার্লিনে কাঁটাতারের বেড়া বসাতে শুরু করেন কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির সেনারা। ১০০ মাইল দীর্ঘ বেড়া বসানো হয়। পরে তৈরি করা হয় পাকা প্রাচীর।

বার্লিন প্রাচীর। কমিউনিস্ট শাসনের এই ‘বেড়া’ টপকে কেউ যাতে পালাতে না পারে, সে দিকে নজর রাখতে বসানো হয় ৩০০টি নজরদারি চৌকি। প্রাচীর সংলগ্ন এলাকায় বসিয়ে দেওয়া হয় ল্যান্ডমাইন। পূর্ব জার্মানির শাসকরা মনে করতেন ‘ফ্যাসিস্ত পশ্চিম’ থেকে দূরত্ব রাখার প্রতীক এই প্রাচীর। এই প্রাচীর পেরিয়ে পালাতে গিয়ে প্রাণ হারান বহু মানুষ।

সরকারি হিসেবে মারা যান ১৩৬ জন। বেসরকারি মতে সংখ্যাটা সাতশোরও বেশি। প্রাচীর তৈরির ৫০ বছর পূর্তিতে বেয়ারনাউয়ার স্ট্রিটে আজ আয়োজন করা হয়েছিল বিশেষ অনুষ্ঠানের। এই রাস্তাটাই প্রাচীরের তৈরির জন্য ভাগ হয়ে গিয়েছিল। অনুষ্ঠানে বার্লিনের মেয়র ক্লাউস ভোভেরাইট বলেন, “প্রাচীর এখন ইতিহাস।

কিন্তু একে ভোলা সম্ভব নয়। প্রাচীর তৈরির দিনটি দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে দুঃখজনক দিন। ” প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান ভুলফ জানিয়েছেন, প্রাচীর ভেঙে জার্মানি যে আবার একত্রিত হয়েছে এটাই বড় কথা। শহর ছেড়ে পালাতে গিয়ে মারা যাওয়া মানুষদের স্মৃতির উদ্দেশে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন বার্লিনের নাগরিকরা। বার্লিন প্রাচীরের অবশিষ্ট অংশের সামনে দর্শকদের ভিড়।

এএফপি প্রাচীর টিকে ছিল মাত্রই ২৮ বছর। ১৯৮৯ সালে প্রাচীর ভেঙে দেন জনতাই। কিন্তু দেশের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের অর্থনৈতিক বৈষম্য কি বদলেছে? তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। বরাবরই পূর্ব জার্মানির বাসিন্দা, ব্রিগিতা হাইনরিখ নামের এক মহিলা মনে করেন, প্রাচীর থাকুক বা না থাকুক অর্থনৈতিক ফারাকের কারণে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির মধ্যে ‘দূরত্ব’ আগেও ছিল, এখনও আছে। গরিব-বড়লোক ভেদাভেদের অদৃশ্য ‘বার্লিন প্রাচীর’টা কিন্তু ভাঙেনি।

তিনি জানিয়েছেন, ইতালি বা ফিনল্যান্ডের মতো কাছাকাছি দেশে তাঁর অনেক বন্ধু আছে। কিন্তু পশ্চিম জার্মানির ‘নাকউঁচু’ লোকেরা তাঁর সঙ্গে মিশতে চায়নি। পাশাপাশি, কমিউনিস্ট শাসনে যে কঠিন সময় কাটাতে হয়েছে তা জানাতেও ভোলেননি তিনি। কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ক্লাইন-গ্লিনিকের এক স্কুলশিক্ষক জানিয়েছেন, তাঁর এক ছাত্র বাঁশের মই বেয়ে পাঁচিল পেরিয়ে পালিয়েছিল। কিন্তু তার বাবা-মা’কে চরম হেনস্থা করে কমিউনিস্ট সরকার।

তাঁদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। সেই প্রাচীর নেই। রয়ে গিয়েছে গল্পগুলো। ইতিহাসে এক মুহূর্তের জন্যও প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি ‘বার্লিন ওয়াল। ’ থেমে যায়নি বিতর্ক।

দীর্ঘ সেই প্রাচীরের অতি সামান্য অংশ এখনও রাখা হয়েছে স্মৃতি হিসেবে। এক ঝলক বার্লিন প্রাচীর দেখতে আজও ভিড় জমে যায় পর্যটকদের (আনন্দবাজার পত্রিকা: ২৮ শ্রাবণ ১৪১৮ রবিবার ১৪ অগস্ট ২০১১) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।