কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! প্রথম পর্ব
(এই লেখাটা ফেসবুকে প্রকাশের পর অনেকের ভালবাসামাখা কমেন্ট পেয়েছিলাম। সেই সাহসে ব্লগে প্রথম পর্ব প্রকাশের পর এই দ্বিতীয় পর্ব পোস্ট করলাম। আপনাদের উৎসাহই আমাকে এর পরের পর্ব পোস্ট করতে স্পর্ধা যোগাবে। ধন্যবাদ। )
আচ্ছা, নাহয় একহাজার কমায়েই দিলেন।
তুই কি এইটা টাকার জন্য করতেসিশ?
না ভাই, প্রতিশোধের জন্য করতেসি।
তাইলে তুই টাকার কথা তুললি কেন?
ভাই বউটা একা মানুষ, কিভাবে থাকবে, কে দেখবে, কি করবে - একটা টেনশন হয় না? একটু ব্যবস্থা করে দিয়েন ভাই বুঝেনই তো একা মানুষ ও বাঁচার জন্য কিছু টাকা তো লাগবে।
তোর বউ কই এখন?
আছে গ্রামের বাড়িতে।
তুই মরলে কান্নাকাটি করবে না?
কান্নাকাটি তো এমনিও করবে ভাই ব্রেনের অসুখে মরে গেলে।
হুম।
আচ্ছা তোর বউরে আমি বিশ হাজার টাকা নিজ দায়িত্বে পৌঁছাইয়া দিমু।
আরেকটা কথা ভাই।
কি কথা?
বউটা আমার একা একা থাকবে, বুঝেনই তো শরীরের একটা চাহিদা আছে, আপনি ভাই জোয়ান মানুষ...
তুই এইসব কি বলতেসিস?
না ভাই কিছু না। চলেন খেয়ে আসি।
আর ঠিক এভাবেই, আবারও সে তার জীবনের একটা মূল্য খুঁজে পেল - বিশ হাজার টাকা।
আগের আঠার এখনকার বিশ। টোটাল আটত্রিশ”।
-কেমন?
-এই অংশটা ভালোই লাগল। কিন্তু বউয়ের সাথে এটা আপনি কি করার ইঙ্গিত দিলেন?
-ঐটা হচ্ছে উপন্যাসের স্পাইস। খাবারদাবারের সাথে মশলা না হল যেমন খেয়ে মজা পাওয়া যায় না, উপন্যাসের মধ্যে টেকনিক্যালি সেক্স না ঢুকালেও সেটা পড়ে মজা পাওয়া যায় না।
-কিন্তু আমি তো চাই মানুষ আমার কাহিনী পড়ে মজা পাক, সেক্স পার্ট পড়ে নয়।
-তাহলে কি চেঞ্জ করে দিবো?
-অবশ্যই চেঞ্জ করে দিবেন।
-এখনই দিব?
-পরে দিয়েন। এখন নেক্সট চ্যাপ্টার থেকে পড়েন।
“এরপর তাকে দেখা গেল আন্তর্জাতিক একটা মানবাধিকার সংস্থার অফিসে।
অফিসের প্রধান তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার জন্য আমরা কি করতে পারি?
সে বলল, অনেক কিছু করতে পারেন।
কিরকম?
থাক, সেসব শুনে কাজ নেই। আপনারা খালি আমার একটা উপকার করুন।
কি উপকার?
বর্তমানে বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘন সবচেয়ে বেশি হচ্ছে কিসের মাধ্যমে?
এই তো, ধরুন যুদ্ধ, দাঙ্গা, মারামারি, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন...
মানুষ কোনটা সবচেয়ে বেশি খায়?
কি বলতে চান আপনি?
মানে কোনটার জন্য ফান্ড বেশি আসে?
কেন আপনি কি আমাদের ফান্ডে কিছু জমা দিতে চান?
হ্যাঁ চাই।
তাহলে শুনুন, শিশু আর নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের প্রচুর ফান্ড আসে।
আচ্ছা এমন যদি হয় যে কেউ একজন সারা পৃথিবীর সমস্ত ধর্ষণ আর নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ আমরণ অনশন করল? কেমন হয় ব্যাপারটা?
না না আমরণ অনশন কেন করবে? এতে তো অনশনকারীর নিজেরই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে।
তবুও ধরুন কেউ করল।
হ্যাঁ, এটা বড় একটা নিউজ হবে, অবশ্যই।
ধরুন সে হল কোন পুরুষ, সেক্ষেত্রে?
সেক্ষেত্রে ডেফিনিটলি আবেদনটা আরও একটু বেশি হবে।
পত্রিকার মাধ্যমে সেটা যদি ইন্টারন্যাশনাল কাভারেজ পেয়ে যায়?
তাহলে তো কথাই নেই।
এই একটা ঘটনায়ই আমাদের ফান্ডের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
আর যদি লোকটা অনশন করে মারাই যায়?
তাহলে তো লোকজন পাগলের মত ক্ষেপে উঠবে।
আর এমন যদি হয় যে এমন কেউ মারা যাবার পর পত্রিকার লোক আপনার সাক্ষাৎকার নিয়েছে, সেখানে লেখা হয়েছে আপনারা নাকি তাকে কিছু একটা খাওয়ানোর অনেক চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তিনি কিছুই খেতে রাজি হন নি, সেক্ষেত্রে?
সেক্ষেত্রে পত্রিকা যে যে দেশ কাভার করবে সব দেশের ডোনারদের সহানুভূতি আমাদের পক্ষে চলে আসবে।
আপনারা কি সেটা চান?
পেলে তো মন্দ হয় না। কিন্তু অনেস্টলি, এইসব অনশন টাইপ ব্যাপারগুলো আমরা কখনই সাপোর্ট করব না।
আমি টার্মিনাল ক্যান্সারের পেশেন্ট। ডাক্তার বলেছে টেনেটুনে আর বড়জোর দুমাস।
ইস।
ইস নয়, বলুন ইয়েস।
কেন?
বললামই তো।
আমি তো এমনিই মারা যাচ্ছি, তাহলে মৃত্যুকে বৃথা যেতে দেব কেন? ওর চেয়ে অনশন করে মরে যাই, অন্তত মৃত্যুর মাধ্যমে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে মানুষকে লজ্জিত, সচেতন ও সোচ্চার হতে একত্রিত করতে তো পারব। সেটাই বা কম কি?
আপনি...আপনি এগুলো কি বলছেন?
আপনি বিশ্বাস না করলে আই উইল ফাইন্ড সাম আদারস। যারা আমার কথা বিশ্বাস করবে। যারা আমাকে একটি মহিমান্বিত মৃত্যু লাভের সুযোগ করে দেবে। যারা ঘটনার পর প্রাপ্ত ফান্ড নিয়ে আসলেই সেবামূলক কাজে বিপ্লব ঘটিয়ে দেবে।
আমি বুঝতে পারছি না কি বলব।
আপনার কিছু বলা লাগবে না। আগামী মাসের ৭ তারিখ আমি শাপলা চত্ত্বরের সামনে বসে অনশন শুরু করব। ফান্ড যদি আপনারা সত্যিই পেতে চান তাহলে দয়া করে সংবাদপত্র বা টিভি চ্যানেলকে আপনারাই খবর দেবেন। তারপর দেখবেন কি হয়।
আমি...
এই রাখুন আমার ফোন নাম্বার। প্রয়োজন হলে কল দেবেন। ও, আর আরেকটা কথা।
কি?
আমি বিবাহিত। আমার এক স্ত্রী আছে, আমি ছাড়া ওর কেউ নেই।
দয়া করে আমার মৃত্যুর পর আপনারা ওকে ত্রিশ হাজার টাকা পাঠিয়ে দিবেন।
ত্রিশ হাজার টাকা! হোয়াট!
হ্যাঁ, আপনারা যদি দশ কোটি টাকা ফান্ড পান, সেখান থেকে ত্রিশ হাজার দিলে কি খুব বেশি দেয়া হবে?
এখনও তো পাই নি।
পান নি তো কি হয়েছে? পাবেন। সময় হলেই পাবেন। কথা দিন, দেবেন তো?
আচ্ছা, ঠিক আছে, আপনার স্ত্রীর দায়িত্ব আমরা নেব।
না না দায়িত্ব নিলে হবে না, ত্রিশ হাজার দিতেই হবে। এখনই।
পাগল নাকি আপনি?
আচ্ছা ঠিক আছে দিতে হবে না। বুঝেনই তো টার্মিনাল ক্যান্সার ব্রেনেও ধরেছে, মাঝে মাঝেই বেফাঁস কথা বলে ফেলি।
না না ঠিক আছে।
এই নিন আমার নাম্বার। শুধু বলুন, আমার স্ত্রীর সমস্ত ভরণপোষণের দায়িত্ব আপনারা নেবেন তো?
হ্যাঁ নিব।
সেটা যদি ত্রিশ হাজার টাকার উপরে হয় তবুও?
আবার!
সরি। আর হবে না। বুঝেনই তো, টার্মিনাল ক্যান্সার।
আর ঠিক এভাবেই, জীবনে তৃতীয়বারের মত সে তার জীবনের একটা মূল্য খুঁজে পেল - ত্রিশ হাজার টাকা। ত্রিশ আর আগের আটত্রিশ, টোটাল আটষট্টি”।
-এই পার্টটা শুনে মজা লাগলো।
-থ্যাংকস।
-এর পরের পার্টটা কি নিয়ে লেখা?
-এক্সপেরিমেন্টের সাবজেক্ট নিয়ে।
-ও আচ্ছা। পড়েন দেখি।
“এরপর তাকে যোগাযোগ করতে দেখা গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স বিভাগের প্রধান জনাব ইয়োহান ডি ক্রুইফের সাথে।
ক্রুইফ বিশুদ্ধ ইংরেজিতে বললেন, কি চাও?
সে বলল, স্যার আমি ব্লাড ক্যান্সারের পেশেন্ট।
ওহ মাই বয়, আই অ্যাম সো সরি।
না স্যার সরি হবার কিছু নেই এখানে।
আমি তোমার জন্য কি করতে পারি? হ্যাভ ইউ কাম টু কালেক্ট মানি ফর ইউর বেটার ট্রিটমেন্ট?
না স্যার, আমার কোন ট্রিটমেন্ট নেই। আই হ্যাভ অনলি টু মান্থস লেফট।
পুওর গাই, আই ফিল রিয়েলি সরি। দেন সে, হোয়াট ক্যান আই ডু ফর ইউ।
স্যার, আপনাদের তো অনেক রকম রিসার্চ আছে, আছে না?
ইয়েস মাই বয়।
কিসের উপর রিসার্চ করেন আপনারা?
সে তো অনেক কিছুর উপর রিসার্চ করা যায়। মিউটেশন আর রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ নিয়েই রিসার্চ হয় বেশি।
আপনারা কি টেস্ট সাবজেক্টের উপর এক্সপেরিমেন্ট করেন?
অফ কোর্স।
কিসের উপর স্যার, খরগোস?
গিনিপিগ আর ইঁদুরই বেশি।
মানুষের উপর? করেন না?
হয়, তবে খুবই কম।
কেন?
কে আর রিস্ক নিতে যাবে বল? উলটাপালটা কোন কিছু হয়ে মরে গেলে তো গেল পুরো প্রজেক্টের খতম হয়ে।
আচ্ছা, এমন যদি হয় যে একটা মানুষ স্বেচ্ছায় আপনাদের কাছে আসল টেস্ট সাবজেক্ট হিসেবে কাজ করতে, আপনারা কি তাকে একসেপ্ট করবেন?
হ্যাঁ করব। এটা অবশ্য খুবই রেয়ার, কিন্তু করব। আগে অবশ্য মানুষটা ফিজিক্যালি ও মেন্টালি ফিট কি না দেখতে হবে।
কিছু লিগাল ব্যাপার আছে ক্লিয়ার করতে হবে।
মানুষটা যদি ব্লাড ক্যান্সারের পেশেন্ট হয়?
উমম...সেক্ষেত্রে শ্বেত রক্তকণিকার নিউক্লিয়াসের উপর এক্সপেরিমেন্ট করা যেতে পারে। হ্যাঁ, এটা ভালোই হবে, কারণ ম্যালিগন্যান্ট সেলের বিভাজন এমনিতে অনেক অনেক বেশি হয়, মিউটেশন বা রিকম্বিনেন্ট ডিএনএ মেথডের রেজাল্ট অনেক তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে। আমরা আগে এ ধরণের এক্সপেরিমেন্ট করার আগ্রহ দেখিয়েছি, কিন্তু ইথিকাল কিছু কারণে আমরা পারমিশন পাই নি। ওয়েট ওয়েট, তুমি নিজে ব্লাড ক্যান্সারের রোগী, আমার মন বলছে তুমি নিজেই নিজেকে বিজ্ঞানের কাজে বিলিয়ে দিতে আমাদের কাছে এসেছ।
রাইট?
দ্যাটস রাইট, স্যার।
আই অ্যাম সরি ফর ইউ, পুওর গাই।
ইটস ওকে, স্যার। এখন বলুন, কি কি ইথিকাল কারণে আপনাদের পারমিশন পেতে ঝামেলা হয়েছে?
ব্লাড ক্যান্সারের পেশেন্ট দুদিন পরেই মারা যাবে। তার অন্তিম মুহূর্তে আমরা তাকে সান্ত্বনা না দিয়ে, তার জীবনের শেষ কয়েকটা দিন আনন্দে ভরিয়ে না দিয়ে তাকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছি, এই আইডিয়াটাই একটু কেমন যেন।
মানুষটা যদি স্বেচ্ছায় রাজি হয়?
হ্যাঁ, সেক্ষেত্রে মানুষটা ও তার পরিবারের রিটেন ডকুমেন্ট লাগবে। তারপর আমরা আগাতে পারব।
সেক্ষেত্রে মানুষটা কি কোন টাকাপয়সা পাবে?
হ্যাঁ পাবে, সেটা নির্ভর করে ফান্ড এর উপর। ফান্ড বেশি হলে তাকে বেশি দেয়া হবে, ফান্ড কম হলে কম।
আজকেই যদি আমি আপনাদের কাছে এরকম প্রস্তাব দিই তবে এক্সপেরিমেন্ট শুরু হতে কয় দিন লাগবে?
মাই বয়, একটা এক্সপেরিমেন্ট তো একদিনে হয় না।
আর একটা টেস্ট সাবজেক্ট দিয়েও এক্সপেরিমেন্ট হয় না। আমরা আরও টেস্ট সাবজেক্ট খুঁজব, কন্ট্রোল খুঁজব, যখন মোটামুটি কয়েকজন পাওয়া যাবে তখনই কাজ শুরু করা যাবে।
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।