সফল ব্লগার নয়, সত্যবাদী ব্লগার হওয়াই হোক আমাদের লক্ষ্য। গত ৫ ফেব্রুয়ারী থেকে প্রজন্ম চত্ত্বর শাহবাগে যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের ফাসির দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবক, প্রৌঢ়-বৃদ্ধ এমনকি শিশু কোলে মায়েরা্ও যোগ দিয়েছে এই আন্দোলনে। ৪২ বছর আগে পাকিস্থানী হায়েনা ও তাদের দোসর এদেশীয় শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল-বদর. আল-শামস এবং দালালরা বাংলার মানুষের উপর যে নির্মম অত্যাচার চালিয়েছিলো আজ তার বিচারের দাবিতে একত্রিত হয়েছে বাংলার মানুষ। এই আন্দোলনের সূচনা ব্লগার এবং ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের হাত ধরে।
৫ ফেব্রুয়ারীর আগে এদেশের মানুষ ফেইসবুক-টুইটার মোটামোটি চিনলেও ব্লগ সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিলো খুবই কম। ব্লগ কি, ব্লগে কি থাকে, কারা লেখে এই সব তথ্য এই লেখার পাঠক হিসাবে আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। ফেইসবুক-টুইটার নিয়েও বিস্তারিত বলার প্রয়োজন দেখছি না। কিন্তু সাধারণ জনগণ যাদের সিংহভাগই ব্লগ তো দূরে থাক ইন্টারনেট সম্পর্কেই ভালোমতো জানে না তারা গত বেশ কয়েক দিন ধরে ব্লগ এবং ব্লগারদের সম্পর্কে নানা রকম অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে অনলাইন জগতের এই শক্তিশালী মাধ্যম সম্পর্কে নানা রকম মন্তব্য করছে। একাত্তরের ঘাতক দালালদের বিভিন্ন মুখপাত্র যারা মিডিয়ার মুখোশ পরে পাকিস্থানী ষড়যন্ত্র কায়েম করার জন্য অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারাই ব্লগ এবং ব্লগারদেরকে সাধারণ মানুষের সামনে কলঙ্কিত করার জন্য নানা ধরণের অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
সাধারণ মানুষদের অনেকেই তাদের এই নোংরা প্রচারণায় বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছে! আর ব্লগারদের পক্ষেও কোন মিডিয়া শক্ত ভূমিকা রাখছে না নাস্তিক ট্যাগের ভয়ে!
ব্লগারদের নিয়ে এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র দেখে একজন ব্লগার হিসাবে চুপ করে বসে থাকতে পারি না। অনেক সহব্লগারকে দেখছি হতাশাজনক পোস্ট দিচ্ছেন, কেউ ছাগুদের হুমকিতে ভয় পেয়ে পোস্ট করা ছেড়ে দিয়েছেন, কেউ বা পরিবারের চাপে নেট ইউজ করাই ছেড়ে দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ শাহবাগের আন্দোলনের উপসংহার টেনে পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মিলাতে বসে গেছেন! আর এই সুযোগে জামাত-শিবিরের ছাগুরা সমানে ব্লগ, ফেইসবুক সহ সবখানে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, বিভ্রান্ত করছে দেশের সহজ-সরল সাধারন মানুষকে! সাথে যোগ দিয়েছেন তথাকথিত সুশীল জাতীয়বাদীরা! আওয়ামী ব্লগাররাও তাদের দলের মতো মৌন ব্রত পালন করছে! আর যে সকল সাধারণ ব্লগার রাজাকারদের বিরুদ্ধে লিখছে তাদের গায়ে আওয়ামী ট্যাগ জুড়ে দেওয়া হচ্ছে! এটা আমাদের সকলের জন্যই লজ্জাজনক! আমরা কেন বুঝতে পারছি না যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আওয়ামীলীগ-বিএনপির ব্যাক্তিগত দ্বন্দ নয়। এটা ১৬ কোটি বাঙালীর জাতীয় বিষয়, এখানে রাজনৈতিক বিভেদ বা অমিলের সুযোগ নাই। রাজনৈতিক দলগুলোও এখানে পক্ষ বিপক্ষ নয়, সুতরাং কাদা ছোড়াছুড়ি করে নিজেদের পশ্চাদদেশ উন্মুক্ত করলে লাভটা কি? যারা এই দেশের জন্ম চায়নি, এই দেশের মানুষের রক্তে নিজের হাত রাঙিয়েছে তাদের বিচার করতে যদি আপনারা একত্রিত হতে না পারেন তাহলে সব ছেড়েছুড়ে ঘরে বসে থাকেন। কারণ বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেয়ে চুপ থাকা শ্রেয়।
ব্লগার হিসাবে আমি তেমন কেউকেটা টাইপ কেউ নয়, কারণ জামাত-শিবিরের হিটলিস্টে আমার নাম উঠেছে বলে কোথা্ও শুনিনি। আর তাছাড়া কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের চামচামী করি না বলে বিশেষ অনুসারী দলও নেই আমার। সাধারণ পাঠকদের কৌতুহলী ক্লিকই আমার ভরসা। ধন্যবাদ সবাইকে যারা এই লেখা পড়ছেন এবং আগেও আমার লেখা গুলো পড়েছেন। ব্লগে পোস্ট দেওয়ার আগে পোস্টের বিষয়বস্তু গুলো সম্পর্কে ভালো মত পড়ে এবং সত্যতা যাচাই করে তারপর প্রকাশ করি।
কোন তথ্য অসম্পূর্ণ মনে হলে অথবা সত্যতা যাচাই না করতে পারলে পোস্ট দিই না। আর এর পেছনে কিছু কারণ আছে। ব্লগে লেখক হিসাবে আমার খুব বেশী দিন না হলেও পাঠক হিসাবে কিন্তু আমি সেই বাংলা ব্লগের শুরু থেকেই আছি। পেশাগত কারণে কম্পিউটারই জীবন-জীবিকা হওয়াই সারাদিন অনলাইনে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের খোজ করতে হয়। আর এই সার্চ করতে যেয়ে আগে যে জিনিসটার অভাববোধ করতাম সেটা হলো পর্যাপ্ত বাংলা তথ্যের অভাব।
কিন্তু ক্রমশই বাংলা ব্লগ গুলোর বিকাশের সাথে সাথে ইন্টারনেটে বাংলা তথ্য ভান্ডার এখন অনেকটাই সমৃদ্ধ। অনলাইনে বাংলা ওয়েবসাইটের চেয়ে বাংলায় লেখা ব্লগারের সংখ্যা বেশী। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার বাংলা ব্লগারের রকমারী পোস্টই আজ অনলাইনে বাংলা তথ্যের অন্যতম উৎস এ কথা ব্লগ সংশ্লিষ্ট সকলেই জানেন। ব্লগাররা বিশ্ব নাগরিক। কারণ বিশ্বের যে কোন স্থান থেকেই ব্লগাররা যে কোন বিষয় নিয়ে লিখতে পারে।
আবার বিশ্বের যে কোন স্থান থেকেই যে কোন পাঠক ব্লগ পড়তে পারেন। তাই তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে ব্লগারদের যে ভূমিকা সেটাকে কেউ অপপ্রচার চালিয়ে ক্ষুন্ন করতে চাইলে সকল ব্লগারের সেটা একসাথে প্রতিহত করা উচিত। আরেকটা বিষয় না বললেই নয়, প্রায় প্রতিটি ব্লগেই ব্লগারদের পোস্টের নিচে ডিফল্ট হিসাবে লেখা থাকে, “এই ব্লগের সমস্ত লেখার দায়-দ্বায়িত্ব এবং স্বত্ত্ব প্রকাশকারীর”। যেমন আমাদের সামুতে লেখা আছে:
সর্বস্বত্ব সংরক্ষণ ও দায়বদ্ধতা:
সামহোয়্যার ইন...ব্লগ বাঁধ ভাঙার আওয়াজ, মাতৃভাষা বাংলায় একটি উন্মুক্ত ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুবিধা প্রদানকারী প্ল্যাটফমর্। এখানে প্রকাশিত লেখা, মন্তব্য, ছবি, অডিও, ভিডিও বা যাবতীয় কার্যকলাপের সম্পূর্ণ দায় শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট প্রকাশকারীর।
স্ব-স্ব পোস্টের এবং মন্তব্যের সর্বস্বত্ব সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট ব্লগারের বা মন্তব্যকারী কর্তৃক সংরক্ষিত থাকবে। এ ক্ষেত্রে ব্লগার অথবা মন্তব্যকারীর অনুমতি ব্যতিরেকে পোস্টের অথবা মন্তব্যের আংশিক বা পুরোটা কোন মিডিয়ায় পুনঃপ্রকাশ করা যাবে না।
কথাটি বুঝতে অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন কোন মানুষের নিশ্চয় বেগ পেতে হয় না? একটা ব্লগারের কোন এক বা একাধিক পোস্ট দিয়ে সকল ব্লগারকে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। আবার কোন ব্লগারের অনুমতি ছাড়া সেই পোস্ট অন্য কোথাও প্রকাশ করাও বেআইনি। আর ব্লগারের পোস্টের বা কমেন্টের সমস্ত দায়ভার ব্লগারের উপর বর্তায়।
তাহলে কোন অধিকারবলে মিডিয়া ব্লগারদের পোস্ট নিয়ে বিতর্ক শুরু করার সাহস দেখায়? এ ব্যাপারে মডারেটরদের কাছেও ব্যাখা দাবি করছি। আপনারা নিজেরাই এই আইন বানিয়েছেন, অথচ এই আইনের প্রয়োগ নিয়ে আপনাদের কোন মাথা ব্যাথা নাই কেন?
মুষ্টিমেয় কিছু ব্লগারের নাস্তিকতা বিষয়ক বা ধর্ম বিদ্বেষী পোস্টের কারণে যদি সকল ব্লগারকে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে নাস্তিক অপবাদ শুনতে হয়, ব্লগারদের জীবনের প্রতি হুমকি আসে, সামাজিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, হামলা শিকার হয় তাহলে তো এর দায়ভার পুরো বাঙালীকেই নিতে হবে। এমনকি পুরো বিশ্বের মানুষকেও নিতে হবে বললে ভুল বলা হয় না। কারণ সবার আগে ব্লগাররা মানুষ। একজন মানুষের ভুলের জন্য যদি পুরো মানব সমাজকে দোষী না করা হয় তাহলে একজন ব্লগারের নাস্তিকতার জন্য সকল ব্লগারদের কেন নাস্তিক বলা হবে?
আপনারা লক্ষ্য করলেই দেখবেন প্রতিদিন ব্লগের হাজারো রকমারী পোস্টের মধ্যে বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে অনেক ভালো ভালো পোস্ট আসছে।
জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-সাহিত্য, প্রযুক্তি, রাজনীতিসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে ভালো, তথ্যসম্পন্ন পোস্টের অভাব নেই। সেই সব পোস্ট কি আমার দেশ এর মতো পত্রিকার চোখে পড়ে না? যারা আমার দেশ পড়েন তারা কি বলেন? নাস্তিক ব্লগার হাতে গোনা কয়েক জন। আর এমন না যে ব্লগ থেকে্ই নাস্তিকতা জিনিসটা আবিষ্কার হয়েছে। নাস্তিকতা ঈশ্বরে বিশ্বাস করা বা আস্তিকতার মতোই একটি প্রাচীন বিষয়। ইতিহাস বলে কেউ কেউ তো স্বয়ং নিজেকেই খোদা হিসাবে দাবি করেছিলো! কিন্তু তারা কেউ টিকে থাকতে পারেনি।
পৃথিবীর সব দেশেই নাস্তিক আছে। কেউ প্রকাশ্যে ঘোষনা দেয়, কেউ দেয় না। সুতরাং এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করার বিশেষ কিছু নাই। আপনি যদি ধর্ম অনুরাগী হন তাহলে আপনার ধর্মের মহিমান্মিত গুণ দিয়ে নাস্তিকদের ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করুন। ধর্ম সম্পর্কে সঠিক তথ্য ও আলোচনাবহুল পোস্ট করুন যেন সবাই ধর্মকে জানতে পারে।
তা না করে হিংসা-বিদ্বেষমূলক পোস্ট, হুমকি-ধামকি, হত্যা-নির্যাতন দিয়ে আপনারা কোন ধর্মের বানী প্রচার করছেন? এটা তো নাস্তিকদের আরো লাইম-লাইটে নিয়ে আসছে!! আর এখন তো রাজাকারদের বিরুদ্ধে লিখলেই নাস্তিক ট্যাগ জুড়ে দেওয়া হচ্ছে!!
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর গত ৪২ বছরে ঠিক কত গুলো বই বেরিয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান আমার জানা নাই। অনলাইনেও দুই একটা ওয়েবসাইট ছাড়া সেরকম কোন তথ্য পাওয়া যায় না। আর যেটুকুও বা পাওয়া যায় পর্যাপ্ত তথ্য ও সূত্রের অভাবে সেটাকে ব্যবহার করা যায় না বা অন্য কারো সে ব্যাপারে বিস্তারিত অনুসন্ধান করার উপায় থাকে না। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে সব বই এ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে তার একটা বিশাল অংশ ইতিহাস এবং স্মৃতিকথামূলক। এইসব ইতিহাস এবং স্মৃতিকথার মধ্যে বেশীর ভাগই রাজনৈতিক ঘটনাবলীর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং যুদ্ধের বিবরণ।
কোন কোনটা আবার রাজনৈতিক ভাবে পক্ষপাতদুষ্ট! কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় সহচরদের নারকীয় গণহত্যা, নারী নির্যাতন, লুঠতরাজ ও অন্যান্য ধ্বংসযজ্ঞের বিবরণ বই আকারে খুব কমই প্রকাশিত হয়েছে। অনলাইনে এ ধরণের তথ্য পাওয়া তো আরো দুর্লভ! তাই বর্তমানে একাত্তরের পরাজিত শক্তি স্বাধীণতা বিরোধীদের তৎপরতা লক্ষ্য করে মুক্তিযুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পোস্ট দিয়ে যাচ্ছি। আমার কিছু পোস্টঃ
* পাক বাহিনী, শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল বদর, আল শামস এর গঠন ও কার্যপদ্ধতি
* সাঈদীর ছেলেরা কিন্তু তাদের বাবার জন্য প্রাণ দেয়নি! মরেছে ব্রেইনওয়াশড কিছু সাধারণ মানুষ।
* ইতিহাস সাক্ষী যারাই ইসলামকে নিয়ে খেলতে চেয়েছে তারাই ধ্বংস হয়েছে।
* জামাত-শিবিরের বর্তমান ক্যাডারদের ধরণ, রিক্রুট পদ্ধতি এবং শিবিরের দেশ বিরোধী নীতির কারণ
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালী জাতির জন্য এক গর্বিত ইতিহাস।
নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, ৩০ লক্ষ শহীদ, সাড়ে ৪ লক্ষ নির্যাতিত মা-বোন, এক কোটি শরনার্থী এবং হাজার হাজার গৃহহীন মানুষের ত্যাগ ও কষ্টের ফসল আমাদের এই দেশ, আমাদের স্বাধীণতা। তাই সহজেই আমরা একে ভুলে যেতে পারি না। আর যারা আমাদের এই পবিত্র মাতৃভূমি নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তাদেরকেও বাংলার মাটিতে থাকতে দিতে পারি না। মুক্তিযুদ্ধে যারা পাক হানাদার বাহিনীর সহযোগীর ভূমিকা পালন করে তারা ছিলো তৎকালীন সরকার ও সামরিক বাহিনীর পা চাটা দালাল। এই দালালরা মূলত ধর্মকে বর্ম হিসাবে ব্যবহার করে তাদের স্বার্থসিদ্ধি করতো।
যেটা জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান কার্যক্রম লক্ষ্য করলেই বোঝা যায়। শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসের মতো বাহিনী গুলো গড়ে তোলা হয় প্রধাণত জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামী, ইসলামী ছাত্র সংঘ(বর্তমানে ছাত্র শিবির) প্রভৃতি দলগুলোর কর্মীদের নিয়ে। এছাড়াও দলবিহীন বিভিন্ন হিংস্র দালালরা্ও এগুলোর সাথে যুক্ত ছিলেন যারা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে হয় পাকিস্থান পালিয়েছে অথবা এদেশে্ই ধর্মের লেবাস পরে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকারদের অনেকে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর নৃশংসতা সহ্য করতে না পেরে সপক্ষ ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো। রাজাকাররা কিভাবে পাকিস্থানীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে তার একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে।
কুমারখালী বাটিয়ামারা গ্রামের খন্দকার নূরুল ইসলাম তার জবানবন্দিতে বলেছেন-
“একদিন দু’জন মিলিটারি একটা রাজাকারকে বলছে, আচ্ছা দোস্ত, আওরাত মিলিয়ে দাও না। তখন রাজাকারটা তাদেরকে একটা বাড়িতে নিয়ে যায়। মিলিটারিদের খবর পেয়ে উক্ত বাড়ির পুরুষ মহিলা সবাই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। রাজাকার ও মিলিটারি দুটি উক্ত বড়ির মধ্যে ঢুকে আর কোন লোক খুজে পায় না। তখন মিলিটারি দুটি রাজাকারকে বলে, আচ্ছা দোস্ত, তোমার ডেরা কোথায়? তখন রাজাকারটা তাদেরকে সাথে নিয়ে নিজ বাড়ি যায় এবং পাকসেনারা তার বাড়ি গিয়েই ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
তারা দেখতে পায়, ঘরের মধ্যে উক্ত রাজাকারের মাতা বসে আছে। তারপর একজন পাকসেনা ঘরের বাইরে চলে আসে এবং উক্ত রাজাকারের বুকে রাইফেল ধরে রাখে। আর একজন পাকসেনা তার বৃদ্ধা মাতার উপর পাশবিক অত্যাচার চালায়। তারপর দ্বিতীয় জন গিয়ে পাশবিক অত্যাচার করে। প্রথম জন এসে রাজাকারকে পাহারা দিতে থাকে।
তারপর তাদের কাজ শেষ হলে তারা ক্যাম্পে চলে আসে। পরে এই সংবাদ রাজাকার ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়লে উক্ত রাজাকার আর ক্যাম্পে না গিয়ে কোথায় যে চলে গেল তার আর কোন খোজ পাওয়া গেল না। "
সূত্র: প্রাগুক্ত, পৃষ্ঠা ২৮৮
একাত্তরের দু:সহ স্মৃতি, পৃষ্ঠা ২৯
উক্ত ঘটনা হতে জানা যায় যে পাক সেনাদের হাত থেকে তাদের পরম আত্মীয় বা বন্ধুদের স্ত্রী, মা, বোন ও মেয়েরা রেহাই পায়নি। এমনকি শান্তি কমিটি, জামায়াতে ইসলামী বা মুসলিম লীগের লোকেরাও নয়।
এ ধরণের অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে যে গুলো মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে চাপা পড়ে গেছে।
রাজাকাররা কতটা নির্বোধ ছিলো তা এ ঘটনা দ্বারা সহজেই বোঝা যায়। তারা নিজ দেশ ও জাতির সাথে বেঈমানী করে পাক সেনাদের সাথে হাত মিলিয়েছিলো। কিন্তু সেই পাক সেনারা তাদের মা-বোনদেরও ছাড়েনি। তারপরও তারা আজও মনে পাকিস্থান থাকলেই ভালো হতো। করুণা হয় এই সব ছাগুদের প্রতি! নিজ দেশের মানুষের রক্তে হাত লাল করে তারা যে হত্যাযজ্ঞে মেতেছিলো তা ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণ্য হত্যাকান্ড হিসাবে আজও সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত।
অথচ যে পাকিস্থানীদের দোসর হিসাবে তারা এই কাজ করেছিলো তারা পরবর্তীকালে তাদেরকে পাকিস্থানে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এছাড়াও আমার আগের কিছু পোস্টেও বলেছি যে রাজাকারদের বিচার নিয়ে আমাদের দেশে বর্তমানে যে প্রক্রিয়া চলছে পাকিস্থান সে ব্যাপারেও পুরা নিশ্চুপ! এটা পাকিস্থানীদের চির পরিচিত বেঈমান প্রবৃত্তিকেই ফুটিয়ে তোলে। পাকিস্থান দেশটা নামেই শুধু পাকিস্থান, কিন্তু কাজ-কর্ম, আচার-আচরণে পুরাই নাপাক-স্থান! (চলতেই থাকবে…..)
আজ এই পর্যন্তই। এটা একটা ভূমিকা পোস্টও বলতে পারেন। পোস্টের শেষ অংশটুকুই মূল পোস্ট।
পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় সহচরদের নারকীয় গণহত্যা, নারী নির্যাতন, লুঠতরাজ ও অন্যান্য ধ্বংসযজ্ঞের বিবরণ জানানোর চেষ্টা করবো। আশা করি আপনারা বরাবরের মতোই সাথে থাকবেন। আর সবার কাছে অনুরোধ, তথ্য সমৃদ্ধ, সূ্ত্রসহ, সত্য এবং কল্যাণমূলক পোস্ট দিন। সফল ব্লগার নয়, সত্যবাদী ব্লগার হ্ওয়াই হোক আমাদের লক্ষ্য। ছাগুরা যতই চেষ্টা করুক সত্য প্রকাশে কেউ বাধা দিতে পারবে না।
সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন, সাথে থাকবেন।
এই সিরিজের অন্যান্য পোস্ট:
* মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১: বাঙালী নারীদের উপর পাকবাহিনীর নির্যাতন!
* মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১: রাজশাহীর বধ্যভূমি (১ম পর্ব), একশটি গণকবর থেকে দশ হাজার মানুষের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়!
[পোস্টের বিষয়বস্তুর বাইরে কেউ কোন মন্তব্য করবেন না। তর্কের খাতিরে, সম্পূর্ণ পোস্ট না পড়ে বা অহেতুক তেনা পেচানোর জন্য মন্তব্য করলে কঠোর ভাবে প্রতি উত্তর দেওয়া হবে। অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য মুছে ফেলতেও আপত্তি নাই]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।