আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৩. রাইট এন এসে অন এ জার্নি বাই ট্রেন

I often see flowers from a passing car That are gone before I can tell what they are Haven gives its glimpses only to those Not in position to look too close… আন্সার টু দি কোশ্চেন নাম্বার ১৩ এ জার্নি বাই ট্রেন ম্যান ইজ কিউরিয়াস বাই নেচার। হি ওয়ানটস টু নো দি আননোন অ্যান্ড সি দি আনসিন। অ্যান্ড এ জার্নি ক্যান সারভ দিস পারপাস টু এ গ্রেট এক্সটেন্ট। এস আই লাভ টু হ্যাভ সামথিং ডিফারেন্ট, আই মেড এ জার্নি বাই ট্রেন অন সানডে লাস্ট। ধুর ঘোড়া ছাতা মাথা... অত ঢং করতে পারব টারব না।

তারচাইতে বাংলাতেই লিখি। সেইটাই বরং ভালো। আচ্ছা,ভূমিকা তো লেখা শেষ, তাইনা?? আবার ট্রান্সলেশন করতে পারব না বাবা। থাকগে, বাদ। গত রবিবারে আমি ট্রেন জার্নি করলাম।

বলাই বাহুল্য, আমার জীবনে প্রথম বারের মতো। আমি আজকে আমার রচনায় সেই অভিজ্ঞতাই বর্ণনা করব। তার আগে ব্যাপক পরিমানে আফসোস, গত উনিশটা বছর আমার জীবন বৃথা। আগে কেন ট্রেন জার্নি করি নাই। (চিক্কুর পাইরা কান্দন+ব্যাপক হারে কপাল চাপড়ানোর ইমো) ঘটনা হল এমন- গত জুলাই মাস টা খুব একাডেমিক প্রেশার গেলো।

একে সেমিস্টারের শেষ, তাই আবার বিরোধীদলের হরতালের কারনে সব কোর্সের সিলেবাস বাকি, সিটি জমে আছে একগাদা, তিনটা কুইজ, সেন্ট্রাল র্যাকগ(সেন্ট্রাল ভাইভা, যাতে আমাদের এইচ ও ডি আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে চাইছে ), এক্সট্রা ক্লাস!!! প্রেশারে একেবারেই মরনাপন্ন অবস্থা!! তারপর আবার দুই সপ্তাহ-র পি এল এর পর দুইটা পরীক্ষা,ঈদের পর বাকি তিনটা। সব মিলিয়ে জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর- তিন মাস পরীক্ষার টেনশন- পেইন পেইন পেইন দেয়ার ইজ পেইন এভরিহয়ার। তো এহেন পেইনে যখন আমার অবস্থা পেইনফুল, তখন মনে হল রোজার ছুটিতে একটু চেঞ্জ দরকার। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, এবার বাসায় যাব প্রীতি আপুর সাথে ট্রেইনে। এমনিতে অবশ্য আমি বাড়ি যাই বাসে, কারণ আমার ডেরা থেকেও বাসস্ট্যান্ড কাছে, আবার বাড়ি থেকেও।

যাই হোক, যেই ভাবা সেই কাজ- আপু কে বললাম আমি এইবার আপুর সাথে যাব, আপু যেন টিকিট করার সময় আমার জন্যও করে। শনিবার আমার পরীক্ষা শেষ হলে শহরে গিয়ে মনমতো শপিং করে ডেরায় ফিরে শুনলাম টিকিট করা হয়ে গেছে। আমাদের ট্রেন ছিল বিকাল ৩টায়। সকাল ৯টায় ঘুম থেকে উঠে আরামসে সবকিছু গুছিয়ে দুপুর ২টায় রুপম ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বললাম দুইটা রিকশা পাঠাতে। ভাইয়া তো শুনে অবাক!!! আরে,দুইজন মানুষের জন্য দুইটা রিকশা??? তরা কি পুরা আস্তানা উঠাইয়া বাড়ি নিয়ে যাচ্ছিস নাকি??? যাই হোক, ভাইয়া রিকশা পাঠালে স্বর্ণা আর দারোয়ান মামার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা রওনা দিলাম ট্যাম্পু স্ট্যান্ড এর উদ্দেশ্যে।

কিন্তু ট্যাম্পু স্ট্যান্ড গিয়ে দেখি ভাইয়া তখনো আসেননি। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আকাশ বাতাস দেখতে লাগলাম আর প্রীতি আপু রুপম ভাইয়াকে ফোন দিতেই দেখলাম ভাইয়া এসে হাজির। ভাইয়াকে দেখে আমি একটু লজ্জা পেলাম কারণ তার লাগেজ বলতে একটা মাত্র ব্যাকপেক,আর আমার একটা ত্রলি,এক্তা হ্যান্ডব্যাগ,একটা ব্যাকপেক। প্রীতি আপুর অবস্থাও তথৈবচ। যাই হোক, তিনজন মিলে একটা ট্যাম্পু নিয়ে রওনা হলাম স্টেশনের উদ্দেশ্যে।

স্টেশনে পৌঁছালাম তিনটার দিকেই। জীবনে প্রথমবার আসা, তাই আমি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছিলাম সবকিছুই। এমন সময় ভাইয়া বলল, ট্রেন নাকি আসেনি। সেটা শুনে তো আপুর মাথায় হাত। কারণ আমি তখন আপুর প্রেস্টিজের খিচুড়ি রান্না শুরু করে দিয়েছি।

আপু সকালেই আমাকে বলেছিল রাজশাহীর ট্রেন নাকি লেট করে না। এইগুলা নিয়ে গো যোগ এষনা করতে করতেই শুনি ট্রেন এর হুইসেল। সাথে আপুর চিৎকার- দৌড়া। তারপর আমার বইভরতি ট্রলি নিয়ে রুপম ভাইয়ার ম্যারাথন, আর আমার ও প্রীতি আপুর স্প্রিন্ট। এবং অবশেষে অতি অতিশয় খাড়া সিঁড়ি বেয়ে ট্রেনএ উত্থান।

তারপর আমার বিস্ময়ের পালা। যা দেখি,তাতেই বিস্মিত হই। ট্রেন ছেড়ে দিলো, ওমা, বগি দেখি নৌকার মতো দুলে। আর কী আশ্চর্য, একটা বগি থেকে স্পষ্ট দেখা যায় আর একটা বগি নড়ছে। এর মধ্যে দিয়ে মানুষ আবার যাতায়াত করে!! কী আজীব!!!বড়ই আজীব!!! টিটি এল,তারপর শুনলাম আপু আর ভাইয়া চ বগিতেই থাকবে, আর আমার নাকি ছ বগিতে যেতে হবে স্টেশন আলাদা বলে।

আমি ভয়ে আধমরা হয়ে গেলাম। আমার শুকনা মুখ দেখে মনে হয় তার মনে দয়া হল- বলল কাছের স্টেশন তো, ঠিকাছে থাকেন। এরপর আমাকে আর আপুকে রেখে ভাইয়া পেছনে গিয়ে বসলো, আর আমি আপুর ফোনে গান শুনতে শুনতে আকাশ বাতাস দেখতে দেখতে ট্রেন জার্নি উপভোগ করতে লাগলাম। ট্রেন কখনো আস্তে যায়, কখনো জোরে যায়। আমি অবাক হয়ে ভাবি – কী আজীব! কী আজীব!!! এমনি করে দুইটা স্টেশন পার হয়ে আস্তে জোরে একসময় আমার ট্রেন আমাদের স্টেশনে চলে এলো।

আপুকে গুড বাই হাগ দিয়ে আমি ব্যাকপেক নিয়ে নামার প্রস্তুতি নিলাম, আর রুপম ভাইয়া নিল আমার বইভরতি লাগেজ। তারপর আমরা নেমে এলাম আমার ওই খাড়া খাড়া সিঁড়ি বেয়ে। কিন্তু এবারে একটা সমস্যা হয়ে গেলো। ট্রেন তো প্লাটফর্মের পাশে থামেনি, থেমেছে অন্য লাইনে। একমাথা সমান উঁচু প্লাটফর্মের উপর আমি এখন উথব কি করে??? আপু ট্রেন থেকে চিৎকার করে ভাইয়াকে বলল আমাকে তুলে দিতে।

আমি আবার একটু হেলদি কিনা, তাই আমাকে তুলতে গিয়ে ভাইয়ার অবস্থা পুরাই ফালুদা। আমার বইয়ের ব্যাগ আর ব্যাকপেক ভাইয়া বলছিল নাকি হালকা। পরে বলল- নাহ! ওজন আছে! স্টেশন থেকে বের হতে গিয়ে বাধল আর এক ঝামেলা। আমার টিকিট ছিল ভাইয়ার পকেটে। আমি নিয়ে আসি নাই।

এখন তাহলে বের হব কি করে??? ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বললাম, ভাইয়া বলল বগির কাছে যেতে। আমি বগির কাছে যেতেই উলটা দিক দিয়ে আর একটা ট্রেন এসে থামল। ওই ট্রেনের জন্য আর আমাদের ট্রেনের সাথে যোগাযোগ করা গেলো না, এর মধ্যে ট্রেনও ছেড়ে দিলো। আমি এখন কী করি!!! যত দোয়া কালাম জানা আছে সবগুলা পড়ে ফু দিয়ে গিয়ে চেকার কে সমস্যা খুলে বললাম। শুনে উনি হেসে দিয়ে বললেন,এই জন্যে তুমি এরকম পাগলের মতো ছোটাছুটি করছিলে!!! যাও, টিকিট লাগবে না।

ওফফফ!!! জানে পানি পেলাম। এরপর প্রায় তিনগুন ভাড়া দিয়ে একটা রিকশা পেলাম, এবং আমার প্রিয় শহর দেখতে দেখতে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। আহ!! কত দিন পর বাড়ি যাচ্ছি। যাওয়ার পথে অবশ্য একটু সমস্যা হল। এক সাইকেল এলোপাথাড়ি এসে রিকশায় মেরে দিলো।

থ্যাঙ্ক গড!! কারও কিছুই হয় নি। (এ ন্যারো স্কেপ ফ্রম কলিশন ) এরপর ঝুপ করেই বৃষ্টি শুরু হল, আর আমিও উদাস হয়ে ভাবতে থাকলাম আর একটা মন ভালো নেই মার্কা পোস্ট দেয়া দরকার। ওইটা তো দিসিলাম আগের নিম্নচাপটার সময়। এখন তো আর একটা, সো আর একটা পোস্ট দেয়া তো আমার কর্তব্য। (ট্রেন জার্নির সাথে রিকশা জার্নি ফ্রি ) অবশেষে যখন বাসায় এসে পৌঁছালাম,ততক্ষনে আমি কাক ভেজা, কোকিল ভেজা সব।

বাসায় আসার পরে আম্মু আমার মাথা মুছে দিতে দিতে বলল-রাইট এন এসে অন এ জার্নি বাই ট্রেন। হুম, তখন আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এতকাল জার্নি না করেই জার্নি বাই ট্রেন লিখেছি। আফসুস, জার্নি বাই ট্রেন এর পর আর কখনোই পরীক্ষার খাতায় আমাকে জার্নি বাই ট্রেন করতে হবে না। ইচ্ছে হল গ্যাস বেলুন হয়ে উড়ে যাই।

কী আছে জীবনে!! (শেষ লাইন দুইটা সরলতাপ্পির কাছ থেকে ধার করা। ব্যাপক পছন্দ হইছে আমার। ) (উৎসর্গঃ প্রিয় চাক্কু বাই কে, যার ইজ্জত দিয়ে ফালুদা বানাইয়া খাইয়া ফালাইতে মন চাইতেছে আজ দুই দিন ধরে। ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।