আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বই রিভিওঃ the 3 mistakes of my life

The only person u should try to be better than, is the person u were yesterday. চেতন ভগতকে চিনেন ? ওকে না চিনলেও আমার বিশ্বাস ওর লেখা আপনারা সচক্ষে উপভোগ করেছেন খুব ভালোভাবেই। আর তা হচ্ছে 3 idiots চলচিত্রটি যা কিনা তার লেখা Five point someone এর উপর ভিত্তি করে বানানো। যা পরবর্তীতে তিনশত কোটি রুপির রেকর্ড গড়েছিল। যে চলচিত্রের রেকর্ড এখন পর্যন্ত অন্য কোন ভারতীয় চলচিত্র টপকাতে পারেনি। অবশ্য এই সাফল্যের পুরোটাই তাকে দেওয়া ঠিক হবে না বরং কারও কারও কাছে তা হাস্যকর ঠেকাবে! কারণ তার লেখা উপন্যাস এর উপর ভিত্তি করে বলিউডে আরো একটি চলচিত্র রিলিজ হয়েছিল।

সেটা হচ্ছে ‘Hello’, যেটা আলোর সাফল্য দেখিনি পরবর্তীতে। তবে এ বছর the 3 mistakes of my life এর উপর ভিত্তি করে ‘Kai Po Che!’ নামে যে চলচিত্রটি রিলিজ হয়েছে, তা সমালোচকদের ভালো নজর কেড়েছে। চলচিত্রটি এখনো আমার দেখা হয়নি, তবে বইটি অনেক আগেই পড়ে ফেলেছিলাম। তাই আপাতত কাচা হাতে এই বইয়ের রিভিউটা লিখে ফেলার জন্য বসেছি আজ। চলচিত্রটি না হয় পড়ে দেখা যাবে।

(শুরুতেই একটা কথা বলে রাখা ভালো, আর তা হচ্ছে আমি এই বইয়ের টুইষ্ট নষ্ট করবো না। তাই স্পয়লার হওয়ার কোনো চান্সই নেই। ) 3 mistakes of my life হচ্ছে চেতন ভগতের লেখা ৩য় উপন্যাস, যা ২০০৮ সালের বেস্টসেলিং বই গুলোর একটি। উপন্যাসের গল্প গড়ে উঠেছে ভারতের আহমেদাবাদ শহরে বেড়ে উঠা ৩ বন্ধুকে নিয়ে। তাদের প্রত্যেকের জীবনের উদ্দেশ্যই একে অপরের থেকে আলাদা: ‘গোবিন্দের’ লক্ষ্য টাকা বানানো; ‘ইশানের’ লক্ষ্য যে করেই হোক ক্রিকেটের সাথে নিজেকে জড়িয়ে রাখা আর গল্পের ক্ষুদে প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান আলীকে সেরা ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তোলা; আর ৩য় প্রধান চরিত্র ‘অমি’ এর নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্য নেই, সে শুধু চায় তার বাকি দুই বন্ধুদের সাথে যেকোন উপায়ে থাকতে।

নামকরণ : বইটির নামকরণ আমি বলবো পুরোপুরি ভাবেই সার্থক। চট করে সার্থক বলিনি আমি,অনেক ভেবেচিন্তে বলছি। যদিও এই বইটি আমার পড়া সেরা বইয়ের মধ্যে পড়বে না, তারপরও জোড় গলায় বলবো অনেক উপন্যাসগুলোর চাইতেও এর নামকরণ অনেক ক্ষেত্রেই সার্থক। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি হূমাওয়ন আহমেদের কথা। অন্যান্য অনেকের মতো আমিও আমি হুমায়ূন আহমেদের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলাম এককালে (এখনো তার কিছু কিছু বইয়ের বিশাল মাপের ভক্ত)।

তার বেশিরভাগ লেখা আমি গ্রেগার্ছে গিলেছিলাম একসময়। এবং আমি এখনো স্বীকার করি তার কিছু লেখার কাছে শুধু বাংলাদেশেরই নয় বরং বিশ্বের নামকরা কিছু লেখকও কখনো যেতে পারবেনা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য অধিকাংশ বইয়ের নামকরণের ক্ষেত্রে হুমায়ূন আহমেদ খুব একটা ছাপ রেখে যেতে পারেননি। আমার ধারণা নামকরণ নিয়ে হূমায়ন আহমেদের কোনো মাথা ব্যাথাও ছিলো না কোনোদিন। কিন্তু চেতন ভগতের বিষয়টা ভিন্ন।

তার প্রত্যেকটা বই এর নাম ই পাঠকের মনে কৌতহল জাগাতে সক্ষম। ‘the 3 mistakes of my life’ বইটার ক্ষেত্রেও একথাটি খুব ভালোভাবে প্রযোজ্য। আপনি যদি কোনো একটা বুক স্টলে যেয়ে শুধু এর কভার পেজটি দেখেন, আপনার ইচ্ছে করবে বইটি একটু উল্টে পাল্টে দেখার। আর আপনি যখন উল্টে পাল্টে দেখতে থাকবেন তখনই আপনার মনে বইটি কিনে ফেলার একটা সূক্ষ আগ্রহ জন্মাবে। আর আমি মনে করি যেকোন লেখকের জন্য এটাই হচ্ছে ‘প্রাথমিক সাফল্য অর্জন’।

আর তা হচ্ছে আগে থেকে কোনো ধারণা না রেখেও একজন পাঠক যখন মনের অজান্তে কোন একটি অপরিচিত বই সর্ম্পকে কৌতূহলী হয়ে উঠে। আপনি যখন The 3 mistakes of my life এর পেপারবুক ভার্সনটি হাতে নিবেন, দেখবেন টাইটেল এর Mistakes এর উপর কাটা দাগ রয়েছে। অর্থাৎ আপনি যদি ‘Mistakes’ ছাড়া লাইনটি পড়েন তাহলে তা দাঁড়ায়, ‘the 3 of my life’. এই টাইটেলটি যখন পাঠকের মাথায় আসবে, সে তখন বুঝতে পারবে এখানে 3 mistakes ছাড়াও গল্পকথকের ৩ জন কাছের মানুষের কথা বুঝানো হয়েছে। তাই গল্পকথকের জীবনের কাছের তিনজনকে এই টাইটেলে বুঝানো হয়েছে বলে মেনে নিতে পারেন। আবার পুরো উপন্যাস জুড়ে তিনটি বিষয়ই প্রাধান্য পেয়েছে সবথেকে বেশী, আর তা হচ্ছে 'ক্রিকেট, ধর্ম, আর বিজনেস'।

তাই চাইলে আপনি এই তিনটি বিষয়ও যে টাইটেলকে ‘রিপ্রেজেন্ট’ করছে, তা ও মানতে পারেন। আবার আপনি যদি Mistakes সহ টাইটেলটি ধরেন, তাহলে মনে হবে গল্পকথক তার জীবণের করা তিনটি ভুলের কথা বলেছে। তাই নামকরণের সার্থকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন অবকাশ নেই। সারসংক্ষেপঃ ‘গোবিন্দ’ হচ্ছে এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র আর একইসাথে গল্পকথক। নিতান্তই সাধারণ গোছের একজন যার মাঝে যে কেউ নিজের ছায়া খুজে পেতে পারেন।

তার আকাংখা বলতে গেলে একেবারেই কম, কিন্তু এক বিষয়ে সে অত্যন্ত লোভী। আর তা হচ্ছে নিজেকে সফল বিজনেসম্যান হিসেবে গড়ে তোলার এক অদম্য লোভ। যদিও সে ম্যাথমেটিক্সে ভালো রেজাল্ট করেছে সব সময় তারপর ও সে মনে করে গুজরাটী হিসেবে ‘বিজনেস’ তার রক্তের সাথে মিশে আছে। তাই এ ব্যাপারে সে দৃড় প্রতিজ্ঞ। বিজনেসে আসার আরেকটি কারণ হচ্ছে তার পরিবারের দারিদ্রতা।

পরিবারের সদস্য বলতে যদিও আছে শুধুমাত্র তার মা, তারপরও সংসারের হাল সামলাতে তার মায়ের ‘পিঠা’ সাপ্লাইয়ের ব্যাবসায়ের পাশাপাশি করতে হয় তাকে ম্যাথমেটিকসের টিউশনি। আর মনে মনে বুনতে থাকে তার ব্যাবসায়ের পরিকল্পনা। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা হচ্ছে ‘ইশান’ আর ‘অমি’। যাদের সাথে তার একটি দিন না কাটালে নয়। তাই এই দুই বন্ধুকে নিয়েই সে একসময় শুরু করে ‘ক্রিকেট শপ’।

পাশাপাশি চালিয়ে যেতে থাকে তার টিউশনি। এভাবে এগিয়ে যেতে থাকে তিন বন্ধুর গল্প সামনের দিকে, আসতে থাকে ধর্মীয় গোড়ামী, রাজনীতি বা নিঃস্ব হউয়ার দীর্ঘশ্বাস...আর গল্পের পরিক্রমায় একসময় আপনি গোবিন্দকে বিদ্যার প্রেমেও পড়তে দেখবেন যে কিনা তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইশানের ছোট বোন। অষ্টাদশী বিদ্যা হচ্ছে ইশানের ছোট বোন, যাকে ইশান সব সময় আগলে রাখে অন্যান্য ছেলেদের থেকে। আর এই বিদ্যাকেই কিনা একসময় পড়ানোর দায়িত্ব এসে পরে গোবিন্দর ঘাড়ে। গোবিন্দও পড়ায়, বিদ্যাও ‘পরে’... পা বাড়াতে থাকে ভুল এর দিকে... জীবনের করা তিনটি ভুলের একটি ভুলের দিকে... উপন্যাসের বেশীরভাগ ফ্রেম আপনি দেখতে পাবেন গোবিন্দর চোখ দিয়ে অর্থাৎ তার দেখা আর উপলব্ধি করা বিষয়গুলোই আমরা উপন্যাসের বেশিরভাগ জুড়েই দেখতে পাবো।

অর্থাৎ তার চোখ দিয়েই উপন্যাসের বাকি ক্যারেক্টার গুলো ফুটে উঠেছে, সেটা ইশানের জীবণই হোক, অমিরটাই হোক,বা বিদ্যারই গল্প হোক না কেন। উপন্যাসের প্রতিটা পেজ আপনাকে নিয়ে যেতে থাকবে সামনের দিকে... ........................................................................................................................... পেপারবুক ভার্সনঃ পেপারবুক ভার্সন পেতে পারেন ‘বলাকা’ সিনেমা হলের পাশের মার্কেট ‘ফ্রেন্ডস বুক কর্ণার’ থেকে। দাম রাখবে ৩০০ টাকার মধ্যে। ই-বুক ডাউনলোড লিঙ্কঃ Click This Link ....................................................................................................... আজ এ পর্যন্তই... দেখা হবে আবার যদি কিনা আমরা একই পথে থাকি... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।