হারারে টেস্টের ৫ম দিনে বাংলাদেশকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টটি জিততে হলে আরো ২৬৩ রান করতে হবে। হাতে আছে ৭ উইকেট। ক্রিজে বহু বহু দিন পর জেগে ওঠা মোহাম্মদ আশরাফুল আর নাইট ওয়াচম্যান (?!) মুশফিকুর রহিম। প্রথম ইনিংসে সবাইকে অবাক করে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরার আশরাফুল (১৫৮ বলে ১০টি চারের বদৌলতে ৭৩ রান)। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ১৯ রান নিয়ে খেলছেন।
তাঁর খেলা দেখে মনে হচ্ছে ছন্দেই আছেন তিনি। বড়ো ইনিংসের নয়নশোভন মারগুলো দেখতে পাচ্ছি।
কিন্তু জয়ের সুবাস কি মিলছে ?
চতুর্থ ইনিংসে ৩৭৫ রান করে জিততে হলে বাংলাদেশী রেকর্ডতো লাগবেই। বিশ্ব পর্যায়েও এতো রান করে জেতার ইতিহাস খুবই অল্প। বাংলাদেশ দলে ব্যাটসম্যান আছেন ৭ জন।
৩ জন আউট। ২ জন মাঠে। রিয়াদ আর সাকিব ড্রেসিং রুমে। আরেক জন আছেন শফিউল। চট্টগ্রামে বিশ্বকাপ ম্যাচে ইংল্যাণ্ডের সাথে অবিশ্বাস্য ব্যাটিংটা এখনো চোখে ভাসে।
কিন্তু এটা যে টেস্ট। তাও আবার টেস্টের ভয়ঙ্করতম দিন তথা শেষ দিন।
পিচ যদিও ফেটে চৌচির হয়ে যায়নি কিন্তু বল যেভাবে হঠাৎ বাঁক নিচ্ছে সেটার জবাবতো আমাদের ব্যাটারদের জানা নেই বলেই মনে হচ্ছে। তামিম ছেড়ে দেয়া বলে বোল্ড। শাহরিয়ার বেঁকে যাওয়া বল পড়তে না পেরে লাইন মিস করে বোল্ড।
তাঁর লেগ স্ট্যাম্পতো এক শ' মিটারের একটা স্প্রিন্টই দিয়ে ফেলেছে ! বেঁকে ভেতরে ঢোকা বলে পরাস্ত হলেন ভালো খেলতে থাকা ইমরুলও।
তৃতীয় দিন শেষ বেলায় বাংলাদেশের বোলিং জিম্বাবুয়ের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিলো। চতুর্থ দিনে হারিয়ে গেলো বোলিংয়ের সেই ধার।
ফলে জিম্বাবুয়ে ইনিংস ঘোষনার বিলাসিতাও করতে পারলো। আমাদের টার্গেট হয়ে গেলো ৩৭৫ !
আমাদের এখনো হাফ সেঞ্চুরীই হয়নি।
ম্যাচ জিততে হলে অন্তত একটি সেঞ্চুরী, গোটা দুই হাফ সেঞ্চুরী দরকার। দরকার দু'তিনটি লম্বা পার্টনারশিপ। প্রস্তুতি ম্যাচে যে ব্যাটিং দীনতা দেখলাম মূল মাঠে তারচেয়ে পরিস্থিতি ভালো হলেও জেতার জন্য সেটা যথেষ্ট নয়। মাঠের কৌশলটাও ঠিক বুঝলাম না। কাল যে পরিস্থিতিতে মুশফিক নামলেন অন্য দল সে পরিস্থিতিতে একজন খানিকটা ব্যাটিং জানা বোলার পাঠায় নাইট ওয়াচম্যান হিসাবে।
আমরা পাঠালাম একজন ব্যাটসম্যানকে ! আমিতো ভেবেছিলাম শফিউর বা রাজ্জাক নামবেন। আমাদের ভাগ্য ভালো মুশফিক কাল কোন বিপর্যয়ে পড়েননি। পড়লে কালই ম্যাচের ফল চূড়ান্ত হয়ে যেতো !
জেমি সিডন্স আমলের ফাঁড়া কাটিয়ে ফেরা আশরাফুল যদি তাঁর ষষ্ঠ টেস্ট শতকটির জন্য চেষ্টা করেন, সাথে মুশফিক আর রিয়াদ হাফ সেঞ্চুরী করতে পারেন তাহলে বাকি কাজ ক্যাপ্টেন সাকিব করতে পারবেন। যদিও তাঁর ব্যাটের খবর ভালো যাচ্ছে না আইপিএল আর কাউন্টি আমল থেকেই। তবে আমার বিবেচনায় এই ম্যাচে আমাদের প্রকৃত বিপদ শুরু হয়েছে সাকিবের টসে জিতে ফিল্ডিং নেয়া থেকে।
জিম্বাবুয়ের ক্যাপ্টেন টেইলর যদিও বলেছেন টসে জিতলে তিনিও বোলিং নিতেন। তার বোলাররা যে বোলিং করেছেন বা করছেন সে বিলাসিতা তাঁর সাজে সাকিবের সাজে কি ? স্বর্ণযুগের ওয়েস্ট ইণ্ডিজ বা অস্ট্রেলিয়া যে কোন অবস্থা থেকে ম্যাচ জিততে পারতো। চতুর্থ ইনিংসের চাপ নেয়ার মতো মনের জোর কিংবা মাটি কামড়ে মাঠে পড়ে থাকার ধৈর্য কি আমাদের তৈরী হয়েছে ? তাহলে আমরা কেন টসে জিতে ব্যাটিং নেবো না ? অন্তত চতুর্থ ইনিংস খেলার চাপ থেকে বাঁচার জন্য হলেও ব্যাটিং নেয়া উচিত ছিলো। ক্রিকেটের আদি গুরুদের একজন ইংলিশ ক্যাপ্টেন ড. ডব্লিউ. জি. গ্রেস টসে জিতলে সর্বাবস্থায় ব্যাটিং নেবার পরামর্শ দিয়ে গেছেন। সেটার পেছনে ড. গ্রেসের মতো পোক্ত লোকের পোক্ত ভাবনা নিশ্চয়ই ছিলো।
এই ম্যাচে আমাদের জেতার জন্য দরকার ওই চাপটুকু হজম করে ফেলা। এটা হলেই জিতবো। তা না হলে আরেকটা কষ্ট জুটবে আমাদের মনে।
তারপরও আশায় বুক বাঁধলাম। সাকিবদের জন্য রইলো শুভ কামনা।
খেলা দেখার লিঙ্ক-
http://www.hitcric.info/
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।