১৯৯১ সালে মির্জাপুর উপজেলার তরফপুর গ্রামের আয়েশা আক্তারকে বিয়ে করে। প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে একই উপজেলার ভাদগ্রাম এলাকার নাসিমাকে বিয়ে করে। এর কিছুদিন পর পার্শ্ববর্তী মশাজান গ্রামের লাকীকে বিয়ে করে। সে পরবর্তীতে বিভিন্ন জেলায় একে একে বিয়ে করতে থাকে। তার শ্বশুরবাড়ির এলাকা যথাক্রমে শেরপুর, ভালুকা, কালিয়াকৈর, ভূঞাপুর, সিরাজগঞ্জ, সাভার, টঙ্গী, কোনাবাড়ী, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও ঢাকা।
বিয়েপাগল আজমত আলীর ১৬ নম্বর বিয়ে আর করা হলো না। এলাকাবাসীর গণধোলাইয়ের কারণে তার বিয়ে করার শখ আপাতত মিটে গেলেও সে ১০০টি বিয়ে করবে বলে জানিয়েছে। ঝামেলামুক্তভাবে আজমত আলী (৪২) এরই মধ্যে ১৫টি বিয়ে করেছে। শততম বিয়ের টার্গেট নিয়ে এগিয়ে চলা বিয়ে পাগল আজমত আলীর বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বানাইল ইউনিয়নের গল্লী গ্রামে। গত ২রা আগস্ট গাজীপুর জেলার চন্দ্রা গ্রামে ১৬তম বিয়ে করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয় সে।
গত ৬ই আগস্ট মির্জাপুরে গ্রাম্য সালিশে তাকে গ্রামছাড়া করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মির্জাপুর উপজেলার বানাইল ইউনিয়নের গল্লী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে আজমত আলী ছেলেবেলা থেকেই বাউণ্ডুলে ও একরোখা প্রকৃতির ছিল। স্কুলের ছাত্র হলেও সে কখনো নিয়মিত ক্লাস করতো না। এ কারণে সে এসএসসি পাস করতে পারেনি। নবম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর আজমত আলীর বাবার মৃত্যু হয়।
পরে বিভিন্ন বাড়িতে সে দিনমজুরের কাজ করতো। এরপর প্রথমবারের মতো ১৯৯১ সালে মির্জাপুর উপজেলার তরফপুর গ্রামের আবু সুফিয়ানের মেয়ে আয়েশা আক্তারকে বিয়ে করে। ওই ঘরে হাসান ওরফে রিমু এবং হোসেন ওরফে রিংকু নামের দুই ছেলে সন্তান হয়। বিয়ের কয়েক বছর ভালভাবে কাটালেও আজমতের ইচ্ছে হয় ১০০টি বিয়ে করে রেকর্ড স্থাপন করবে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে একই উপজেলার ভাদগ্রাম এলাকার কুদ্দুস মিয়ার কন্যা নাসিমাকে বিয়ে করে।
এর কিছুদিন পর পার্শ্ববর্তী মশাজান গ্রামের হোসেন আলীর মেয়ে লাকীকে সে প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে করে। এসব কাজ করতে আজমত আলী বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে নিজেকে পরিচয় দিত। প্রতিটি বিয়ের সময় কন্যাপক্ষ জানতো এটা তার প্রথম বিয়ে। বিয়ে করার বিষয়ে সে কন্যাপক্ষের কাছে এমনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতো যার কারণে তারা বুঝতেই পারতো না জামাই বাবাজি এর আগে একাধিক বিয়ে করেছে। আজমত আলীও তার নিজস্ব কৌশল মতো একের পর এক বিয়ে করতে থাকে।
৭-৮ বছর আগে বিয়ে করার মিশন ফাঁস হয়ে গেলে গল্লী গ্রামের লোকজন গ্রাম্য সালিশে প্রতারক আজমতকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এতে তার বিয়ে করার বাতিক আরো বেড়ে যায়। সে পরবর্তীতে বিভিন্ন জেলায় নাম-পরিচয় গোপন রেখে একে একে বিয়ে করতে থাকে। তার নতুন শ্বশুরবাড়ির এলাকা যথাক্রমে শেরপুর, ভালুকা, কালিয়াকৈর, ভূঞাপুর, সিরাজগঞ্জ, সাভার, টঙ্গী, কোনাবাড়ী, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও ঢাকা। শ্বশুরবাড়ির জামাই আদর গ্রহণ করার কিছুদিন পর এক সময় কৌশলে নতুন স্ত্রীকে ফেলে রেখে সে নিরুদ্দেশ হয়ে আরেকটি বিয়ের মিশনে চলে যেতো।
এভাবেই ১৫জন অসহায় মেয়ের জীবন সে নষ্ট করেছে। প্রায় প্রতিটি ঘরেই তার সন্তান হয়েছে। সেই সন্তানদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে তার আগের স্ত্রীরা। সর্বশেষ গত ২রা আগস্ট চন্দ্রা এলাকায় বিয়ে করতে গেলে তার অতীত কর্মকাণ্ড ফাঁস হয়ে যায়। এলাকাবাসী তাকে গণধোলাই দেয়।
গণধোলাইয়ের পর আগের এক স্ত্রীকে ২ সন্তানসহ বাড়ি নিয়ে এলে গ্রামবাসীর মধ্যে নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি হয়। গত শনিবার সকালে তার ১ম স্ত্রী আয়শা ও ২ সন্তান প্রতারক আজমতের বিচার চেয়ে গ্রামে সালিশ ডাকে। সালিশে ইউপি সদস্য জিয়ারত আলী খান, কামাল খান, হাতেম আলী মাতাব্বর, মোতালেব মাতাব্বরসহ শতাধিক লোকের উপস্থিতিতে তার বিচার হয়। বিচারে নারীলোলুপ প্রতারক আজমতকে পুনরায় গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এ ব্যাপারে আজমতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সে বলে, আমি এ পর্যন্ত ১৫টি বিয়ে করেছি এ কথা সত্য।
আমার ইচ্ছে ১০০ বিয়ে করে আমি ইতিহাস তৈরি করব। এটিই আমার টার্গেট। আমি ১০০ বিয়ে করে রেকর্ড করতে চাই। অসহায় মেয়েদের প্রতারণা করে বিয়ে করার প্রসঙ্গে সে বলে, আমি তাদের কাজ করে খাওয়াই না এটা সত্য। তারাই কাজ করে আমাকে ভাত দেয়।
আমার কোন বাড়ি-ঘরও নেই। যখন বিয়ে করি তখন শ্বশুরবাড়িই আমার বাড়ি-ঘর। এদিকে প্রথম স্ত্রী আয়শা আক্তারসহ তার দুই ছেলে রিমু ও রিংকু প্রতারক আজমতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে। গল্লী গ্রামের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার জিয়ারত আলীর সঙ্গে কথা বলার পর তিনি জানান, আজমত আলী নারীলোলুপ। আজমতদের কারণেই দেশ ও সমাজের অটুট বন্ধন নষ্ট হচ্ছে।
তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে সমাজে এ ধরনের আর কোন নতুন ঘটনা ঘটবে না বলে আমার ধারণা। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতারণার ফাঁদে পড়া আজমতের স্ত্রীরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। আইনের মাধ্যমে তাকে কঠোর শাস্তি প্রদান করার দাবিও জানান কেউ কেউ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।