আমি ভাই ভীষন ক্রিকেট ফ্যা্ন তৃতীয় দিনে জিম্বাবুয়ের ৯২/৪ স্কোর নিয়ে রাতে যদি স্বপ্ন দেখে থাকেন বাংলাদেশ জিম্বাবুয়েকে ১৫০-২০০ রানে অলআউট করে দিবে,আর ২৫০/৩০০ রান তাড়া করে বড় দলের মত টেস্ট জিতে নিবে,তাহলে বিরাট ভুল করে ফেলেছেন। বড় দল কারন বাংলাদেশ প্রায়ই ইংল্যান্ড, পাকিস্তান,নিউজিল্যান্ড সাথে ৩ দিন ম্যাচে থাকার পর এক ইনিংসে খারাপ করে বা ভিট্টোরি ,ইনজামাম,বা শোয়েব আখতারের দুর্দান্ত কিছুতে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে। না, বাংলাদেশও বড় দল হয় নি,জিম্বাবুয়েও ছেড়ে দেওয়ার মত কোন দল না এখন। কারন তাদের আছে ব্র্যান্ডেন টেলরের মত একজন টেস্ট মেজাজের অধিনায়ক যিনি ৫০-৬০ করার পর হঠাৎ একটি উচ্চবিলাসী শট খেলে দলকে বিপদে ফেলে সাজঘরে ফিরেন না,যার উইকেট পাওয়ার জন্য বোলার কে পরিশ্র করতে হয়,মেধা খরচ করতে হয়। বাংলাদেশের বোলারদের সকালটা হতাশ করে দিয়ে তিনি টাটেন্ডা টাইবুকে নিয়ে গড়েন ১১৩ রানের এক পার্টনারশীপ।
৫৯ রানে থেমেছেন টাইবু,তবে থামেননি টেলর,অভিষিক্ত এরভাইনকে নিয়ে গড়েন ৮৬ রানের আরেকটি অপরাজিত জুটি। আর লিডটাকে নিয়ে গেলেন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের ধোরা ছোয়ার বাইরে। চা বিরতির সময়ই ডিক্লেয়ার করে ৩৭৫ রানের চতুর্থ ইনিংসের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন।
জিম্বাবুয়ে ৩৭০ ও ২৯১-৫ ডিক্লেয়ার
বাংলাদেশ ২৮৭ ও ১১২-৩ (তামিম ৪২,ইমরুল ৩১,নাফিস ৯,আশরাফুল ১৯ অপরাজিত, মুশফিকুর ৪ অপরাজিত)
হারারের পিচে বাংলাদেশের বোলারদের যখন নখদন্তহীন মনে হয়,ইনিংস শেষের ১০ মিনিট বিরতির পরই সেই পিচেই যেন ফুল ফোটান পেসার ভিটোরি আর জারভিস। স্যুইং,মুভমেন্ট দিয়ে ব্যাতিব্যাস্ত করে তলেন বাংলাদেশের ব্যাটস্ম্যান্দের।
এদিন শুরু থেকেই স্যুইং পাচ্ছিলেন দুজনই। সামনে ৩৭৫ রানের পাহাড়, আর বাংলাদেশের চতুরথ ইনিংসের কথা মনে রাখলে সেটা মনে হবে যেন আকাশ ছুয়েছে। এর মধ্যেই তামিম যেন বললেন ,"ছোবেন নাকি আকাশটাকে?"। প্রথম থেকেই স্বভাবচিত মারমুখী ব্যাটিং এ মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের স্কোর বুঝি বিনা উইকেটে ২০০। ভাবতে খারাপই লাগছিল দর্শনীয় শটগুলোয় তালি দেওয়ার মানুষের বড়ই অভাব হারারে স্পোর্টিং ক্লাব মাঠে।
তবে দর্শকরা কিন্তু ঠিকই উপভোগ করেছিলেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংটা। গান গেয়ে, নেচে গুটিকয়েক দর্শক ঠিকই উদযাপন করলেন টেলরের সেঞ্চুরিটা।
অনেক ভালো খেলতে খেলতে হঠাৎ করে আউট হয়ে যাওয়া বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের জন্মগত সমস্যা। তাই তো প্রথম ইনিংসে আশরাফুল আর সাকিবের মত হঠাৎ করেই আউট হয়ে গেলেন তামিম। এমপফুর ইনসুইঙ্গারে বোকা বনে বোল্ড হয়ে যান তামিম।
ওভার দ্য উইকেট বল করতে আসা এমপফুর ঐ বলটাকে ছেড়েই দিয়েছিলেন তামিম।
জিম্বাবুয়ের বোলারদের ইনস্যুইঙ্গার আউটস্যুইঙ্গারে কখোনই স্বস্তিতে ছিলেননা ইমরুল। বিশেষ করে জারভিসের বলে ইমরুলের আউট হওয়া মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। হলও তাই,জারভিসের দুরদান্ত এক বল ইমরুলের ব্যাট আলতো করে ছুয়ে টাইবুর গ্লাভসে জমা হলে পতন হয় দ্বিতীয় উইকেটের। পতন হয়েছে আরো একটি উইকেটেরও ।
এমপোফূর পর ওভার দ্য উইকেট বল করতে এসে নাফিসকে বোল্ড করেন জারভিস।
বাংলাদেশের জন্য আশার খবর হচ্ছে শেষ বিকেলে আশরাফুলকে অনসং আশরাফুলের মতই লাগছিল । ছিল রে প্রাইস নামে এক বুড়ো স্পিনারের সাথে তার চিরাচরিত অঙ্গভঙ্গিও। তবে টেস্ট জিততে হলে ব্যাটিং এ সেঞ্চুরি করতে হয়,বোলিং করে নিতে হয় ২০ উইকেট । নতুন দুই পেসারকে নিয়ে জিম্বাবুয়ের সেই সামর্থ ভালোই আছে মনে হচ্ছে।
ভিটরি আর জারভিস দুই জনই খুব ভাল স্যুইং বল করতে পারেন,গতিও রয়েছে পর্যাপ্ত,বাউন্স তো আছেই। ব্যাটিং ভালো করতে পারলে এই দল নিয়ে জিম্বাবুয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও ভাল প্রতিদ্বন্দিতা করবে বলেই মনে হচ্ছে। বাংলাদেশের ৭ উইকেট নেওয়া খুবই সম্ভব এদের দ্বারা। তাই এই টেস্টে বাংলাদেশের আদতে কোন সম্ভাবনা দেখছিনা।
৪র্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ম্যাচ জেতার রেকর্ড (৩৭৫ এর উপরে নজির আছে মাত্র পাঁচটি)
দল স্কোর প্রতিপক্ষ ভেন্যূ ও তারিখ
ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ৪১৮/৭ প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া সেন্ট জনস,২০০৩
সাউথ আফ্রিকা ৪১৪/৪ প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া পার্থ,২০০৮
ভারত ৪০৬/৪ প্রতিপক্ষ ওয়েষ্ট ইন্ডিজ পোরট অব স্পেন,১৯৭৬
অস্ট্রেলিয়া ৪০৪/৩ প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড লিডস,১৯৪৮
ভারত ৩৮৭/৪ প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড চেন্নাই,২০০৮
অস্ট্রেলিয়া ৩৬৯/৬ প্রতিপক্ষ পাকিস্তান হোবার্ট,১৯৯৯
৩৭৫ বা তার বেশি চেজ করে জিততে হলে দরকার দুই একটা সেঞ্চুরি বা বড় বড় কয়েকটি জুটি।
ড্রয়ের কোন সম্ভাবনা দেখছিনা। ৭ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ এই দল ৫ম দিন কাটিয়ে ফেলবে,এই কষ্ট কল্পনা করে কষ্ট না পাওয়াই মনে হয় ভালো। এই টেস্টে এখন পর্যন্ত ব্যাটিং,বোলিং,ফিল্ডিং এই সব ডিপার্টমেন্টেই ভালো খেলেছে জিম্বাবুয়ে। জয়টা তাদের প্রাপ্যই। এই ম্যাচে বাংলাদেশের জয় মানে জিম্বাবুয়ের মুখের খাবার কেড়ে নেবার মতই।
আর সেটা করার জন্য আশরাফুল বা সাকিব বা দুই জনকেই খেলতে হবে অসাধারন ইনিংস। অবশ্য ্যদি তারা বিশ্বাস করেন এই টেস্টে তাদের কিছু করার বাকি আছে এখনও । একই টেস্টের দুই ইনিংসেই ভালো খেলা তো আশরাফুলদের জন্য খুবই দুর্লভ ব্যাপার। দেখাই যাক না কি হয়। অন্য দলও তো কত সময় বাংলাদেশের মুখের খাবার কেড়ে নিয়েছে।
আর এটাই তো টেস্টের ৫ম দিনের মজা,বাংলাদেশের টেস্টে এটা পাওয়াও তো দুরলভ ব্যাপার!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।