বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
ছোটবেলায় পড়া খড়গোশ ও কচ্ছপের দৌড় প্রতিযোগিতার গল্পটি যাদের মনে আছে তারা নিশ্চয় কচ্ছপগতি সম্পর্কে অবগত। বিশেষ করে মন্থর গতির কারণে চার পেয়ে এই সরিসৃপটি বিশ্বজুড়ে খ্যাতিমান। আর কচ্ছপের দৌড়কে ধারণ করেই তো প্রচলন ঘটেছে সেই প্রবাদ বাক্যের- স্লো অ্যান্ড স্টেডি উইন্স দ্য রেস।
আজকাল দুনিয়ার অনেক দেশেই বাণিজ্যিকভাবে কচ্ছপের চাষ হচ্ছে। আমাদের দেশে প্রতিকূল পরিবেশের কারণে এদের সংখ্যা দিন দিন কমে আসলেও চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি মাজারের পুকুরের কচ্ছপগুলো বংশানুক্রমে যুগ যুগ ধরে ধরে মহাসমারোহে টিকে আছে মানুষের ভালোবাসায় আর যত্নে।
তবে কচ্ছপ মহাশয়দের প্রতি ভালোবাসা আর যতেœর দৌড়ে আমেরিকানরাও যে কম যায় না তার প্রমাণ নিউ ইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে কচ্ছপের কারণে বারবার ফ্লাইট বিলম্বিত হওয়ার ঘটনা। গত ২৯ জুন কচ্ছপদের ধীর গতির কারণে ডজনখানেক বিমানের উড্ডয়ন (ফ্লাইট) বিলম্বিত হয়েছে এখানে।
এদিন স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ৭টার দিকে ১৫০টি কচ্ছপের একটি দল মিছিল করে জেএফকে এয়ারপোর্টের এক প্রান্তন্ত থেকে অন্য প্রান্ত অতিক্রম শুরু করে। এসময় জেট ব্লুবিমান সংস্থার একটি ৭৪৭ বোয়িং উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত ছিল।
ব্যাপারটি প্রথম নজরে আসে ডমিনিকান রিপাবলিকের উদ্দেশ্যে টেক অফ করা আমেরিকান এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৬৭ এর পাইলটের।
কন্ট্রোল টাওয়ারকে তিনি জানান, বিমানবন্দরের ৪এল নম্বরের রানওয়েতে তিনি ১টি কচ্ছপ দেখতে পেয়েছেন।
এরপর ফোর্ট লডারডেলের উদ্দেশ্যে রওনা করতে যাওয়া ৭৩৭ বোয়িং বিমানের ক্রুরা দেখতে পান তাদের জন্য নির্দিষ্ট রানওয়ে ৪এল এর ওপর দিয়ে ৩টি কচ্ছপ অতি ধীর গতিতে হেঁটে (বা দৌড়ে) যাচ্ছে। খবর পেয়ে গ্রাউন্ড ক্রুরা ছুটে এসে কচ্ছপগুলোকে সরিয়ে নেয় এবং উড়োজাহাজটিকে উড্ডয়নের ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই দলে দলে আরও কচ্ছপ এসে দখল করে নেয় রানওয়েটি।
নিউ ইয়র্ক এবং নিউজার্সি এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র রন মার্সিকো জানান, কচ্ছপরা যাতে নিরাপদে রানওয়ে পার হতে পারে এ জন্য ৭৪৭ উড়োজাহাজটির নির্ধারিত ফ্লাইটটি ৩০মিনিট বিলম্বিত হয়েছে।
তবে পরবর্তী ৩ঘণ্টায় একে একে মোট দেড়শ’ কচ্ছপ রানওয়ে ও পাশের ট্যাক্সিওয়েতে হাজির হয়। এর ফলে বেশ কয়েকটি ফ্লাইটকে উপায়ান্তর না দেখে অন্য রানওয়েতে স্থানান্তর করা হয়।
অপরদিকে, কাছিমগুলো এত ধীরগতিতে চলছিল যে শেষ পর্যন্ত বিমানবন্দর ও যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের কর্মীরা তাদের তুলে নিয়ে তাদের ডিমপাড়ার স্থানে ছেড়ে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে জেট ব্লুু এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ রসিকতা করে বলে- আগামীতে আমরা রানওয়েতে আরও দ্রুতগতির প্রাণী আশা করি। তারা আরও বলে- কচ্ছপগুলোর ওপর দিয়ে বিমান চালিয়ে যাওয়া প্রাণীগুলোর জন্য যেমন সুখপ্রদ হতো না, একইভাবে তা আমাদের উড়োজাহাজের টায়ারগুলোর জন্যও শুভ হতো না।
অপরদিকে, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র রন মার্সিকো কিছুটা অপরাধীর সুরে বলেন, ‘আমরা এমন জায়গায় বিমানবন্দর নির্মাণ করেছি যেখানে এ কচ্ছপেরা বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছিল। সুতরাং, এ ধরনের পরিস্থিতিতে তাদের নিরাপদে সরিয়ে দেওয়াটা আমাদের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। ’
রন মজা করে বলেন, ‘প্রকৃতি মায়ের ইচ্ছার কাছে আমরা অসহায়। ’
তিনি জানান, এ ঘটনা এয়ারপোর্টের জন্য কোনও বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। এমনটি প্রায় প্রতি বছরই ঘটে এখানে।
২০০৯ এর জুলাইয়ে ৭৮টি কচ্ছপের একটি দল জেএফকে’র রানওয়ে পেরনোর ঘটনায় ফ্লাইট শিডিউল চরমভাবে বিঘ্নিত হয়। এ ঘটনা সেবার ২ ঘণ্টার মত বিলম্ব ঘটায় বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে।
প্রাণী বিষেশজ্ঞদের মতে, জুনের শেষ ও জুলাইয়ের শুরুর দিকের কয়েকটা দিন ডটেড ডায়মন্ডব্যাক টেরাপিন প্রজাতির কচ্ছপদের ডিম পাড়ার মৌসুম। এরই ধারাবাহিকতায় কচ্ছপগুলো ১৮৫ একর জুড়ে বিস্তৃত জেএফকে এয়ারপোর্টের সীমানালগ্ন জ্যামাইকা উপসাগরের বালুকাময় সৈকতে ডিম পাড়ার জন্য যাচ্ছিল। ডিম পাড়ার জন্য ডায়মন্ডব্যাক টেরাপিনদের কাছে এ অঞ্চলটি আদর্শ।
আহ্, কচ্ছপদের জন্য জেএফকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও যুক্তরাষ্ট্র কৃষি বিভাগের কর্মীদের যে দরদ, তার সিকিভাগও যদি আমাদের দেশের গাড়িচালক আর সড়ক কর্তৃপক্ষের থাকতো তাহলে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় নির্মম আর অসহায় মৃত্যুর মিছিল যেভাবে দীর্ঘতর হচ্ছে- তার গতি অন্তত কিছুটা হলেও মন্থর হত। এমনকি, হয়তো ঘটতো না মিরসরাই ট্রাজেডির মত ঘটনাও!
আসাদুল হক খোকন, বাংলানিউজ পাঠক
বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, ১৫ জুলাই, ২০১১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।