ভাওয়াল রাজ এস্টেট ও ঢাকা নওয়াব এস্টেটের বেদখল এসব জমি উদ্ধারের জন্য সংসদীয় কমিটি আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়কে।
তবে মন্ত্রণালয়ের তথ্যকে ‘ভিত্তিহীন’, ‘কল্পনাপ্রসূত’ ও মিথ্যা বলে নাকচ করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
বসুন্ধরা গ্রুপের সংবাদ মাধ্যম বিষয়ক উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব মন্ত্রণালয়ের তথ্যকে ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্ত্রণালয়ের তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। রাজ এস্টেটের বৈধ উত্তরাধিকারীদের কাছ থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় বসুন্ধরা গ্রুপ জমি কিনেছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য ভুয়া।
”
মন্ত্রণালয় বলছে, এসব সম্পত্তি পতিত এবং লিজবিহীন থাকায় আবাসন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যক্রমের শুরু থেকেই এগুলো গ্রাস করা শুরু করে।
বৃহস্পতিবার সংসদীয় কমিটির ৪৪তম বৈঠকে ভাওয়াল রাজ এস্টেট ও ঢাকা নওয়াব এস্টেটের ‘অবৈধ’ দখলে থাকা সম্পত্তি নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের আলোচ্যসূচির কার্যপত্রে দেখা যায়, ঢাকার বাড্ডা থানার জোয়ারসাহারার ১০টি এবং বড়ুয়া মৌজার দুটি দাগে বসুন্ধরা গ্রুপের ইস্ট-ওয়েষ্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড ২২৪ দশমিক ৩৩ একর জমি অবৈধ দখল করেছে। যাতে ৩/৫ কাঠার অসংখ্য প্লট তৈরি করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলছে, বসুন্ধরার দখলে থাকা ১৩১ একর জমি নিয়ে উচ্চ আদালতে সাতটি, দেওয়ানি আদালতে চারটি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালে ছয়টি মামলা বিচারাধীন আছে।
বসুন্ধরার আবু তৈয়ব বলেন, জমির বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিতে ভাওয়াল রাজ এস্টেটের ওপর উচ্চ আদালতের নির্দেশ রয়েছে।
কার্যপত্রে আরো বলা হয়েছে, ইস্টার্ণ হাউজিং লিমিটেড সাভারের কলমা মৌজায় ৬৫ একর এবং খাগান মৌজায় ছায়াকুঞ্জ হাউজিং ও আমিন মোহাম্মদ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর সঙ্গে যৌথভাবে ঢাকা নওয়াব এস্টেটের ৭২ দশমিক ৬০ একর জমি দখল করেছে।
এছাড়া সাভারের চৌবাড়িয়া মৌজায় স্যার সলিমুল্লাহ ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন ও আমিন মোহাম্মদ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ৪৫ দশমিক ৫৭ একর জমি দখল করেছে। দামপাড়া মৌজায় এই দুটি প্রতিষ্ঠান দখল করেছে ৯৪ দশমিক ৩৬ একর জমি।
আমিন মোহাম্মদ ল্যান্ড ডেভেলপমেন্টের সহকারী মহাব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মন্ত্রণালয়ের তথ্য মিথ্যা, কাল্পনিক।
বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিল নেই। ”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম যোগাযোগ করলে ইস্টার্ণ হাউজিংয়ের মহাব্যবস্থাপক মতিউর রহমান ‘পরে’ কথা বলবেন বলে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
সাভারে ঢাকা নওয়াব এস্টেটের ৫৩ দশমিক শূন্য ছয় একর জমি দখল করেছে পূর্ণিমা রিয়েল এস্টেট, ৫২ দশমিক ৪৮ একর জমি দখল করেছে কৃষিবিদ ওয়েস্টভিউ, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যাল ও আদনান হাউজিং দখল করেছে ৬৫ দশমিক ৩৮ একর জমি।
এসব জমির বিষয়ে বিভিন্ন আদালতে মামলা চলছে বলেও সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
বসুন্ধরা গ্রুপ ছাড়াও ভাওয়াল রাজ এস্টেটের ঢাকার পল্লবীতে ৫৭ দশমিক ৩৪ একর জমি দখল করেছে সাগুপ্তা হাউজিং, এনএম হাউজিং ও সূচনা হাউজিং।
ধানমন্ডির ১ দশমিক শূন্য তিন একর জমি দখল করেছে আদিত্য হাউজিং, রমনা ১ দশমিক শূন্য আট একর একর জমি দখল করেছে সেঞ্চুরি আর্কেড।
এই জমিতে সেঞ্চুরি আর্কেড বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
ঢাকার বাড্ডা থানার জোয়ার সাহারা মৌজার ২২ দশমিক ২৭ একর জমি দখল করেছে যমুনা সিটি আবাসিক প্রকল্প।
এসব জমি মাটি ভরাট করে দখল করা হয়েছে।
খিলক্ষেতের বরুয়া মৌজায় আশিয়ান সিটি দখল করেছে ১৫ দশমিক ৯৯ একর জমি।
যমুনা নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকার দশমিক ৫৫ একর জমি দখল করেছে।
ধানমন্ডিতে ট্রপিক্যাল হোমস দখল করেছে অর্ধ একর জমি। টঙ্গীর দত্তপাড়ায় নীলাচল হাউজিং দখল করেছে ৬ দশমিক ১১ একর জমি।
ভূমি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির আগামী বৈঠকে এসব অবৈধ দখল জমি নিয়ে আবারো আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দখলদার বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানির বিরুদ্ধে কমিটি আইনি ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে।
একইসঙ্গে চলমান মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে অ্যাটর্নি জেনারেল ও সলিসিটরের অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।