আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড, তারপরও লোডসেডিং এ রেকর্ড

দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত ভোররাত চারটায় পাঁচ হাজার ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। এটি এখন পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড। কয়েক মাস ধরেই বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন নতুন রেকর্ড হচ্ছে। গত ১৮ জুলাই সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড ছিল চার হাজার ৯৩৬ মেগাওয়াট।

এর আগে গত ১২ জুন রেকর্ড উৎপাদন ছিল চার হাজার ৮৯০ মেগাওয়াট। ধারাবাহিকভাবে বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব রেকর্ড হচ্ছে। আগামী মাসগুলোতেও হবে। কেননা, চলতি বছরের মধ্যে আরও প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। তবে, এসব রেকর্ডের পাশাপাশি দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা সম্পর্কে জনমনে কিছু বিভ্রান্তিও সৃষ্টি হচ্ছে।

একটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত একজন প্রকৌশলী গতকাল বুধবার টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের পক্ষে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) প্রতিদিন দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদন সম্পর্কে যে তথ্য সরবরাহ করে, তা বিভ্রান্তিকর। ওই প্রকৌশলী বলেন, পিডিবি জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত চারটায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে পাঁচ হাজার ২৫ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ এমন একটি শক্তি, যা চাহিদার চেয়ে বেশি উৎপাদন করা যায় না। চাহিদার চেয়ে কম উৎপাদিত হলে লোডশেডিং করা হয়। কিন্তু চাহিদার বেশি উৎপাদন করে সেটা কোথাও রাখা যায় না।

তার এ কথার অর্থ হচ্ছে, গত মঙ্গলবার দিবাগত ভোররাতে পাঁচ হাজার ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ গ্রাহকেরা ব্যবহার করেছেন। হয়তো সরবরাহ থাকলে আরও বেশিও করতেন। কিন্তু ওই ভোররাতে কোনো শিল্প-কারখানা, দোকানপাট, অফিস-আদালত কিছুই খোলা বা চালু ছিল না। বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়েছে শুধুই বাড়িঘরে। ওই ভোররাতে শুধু বাড়িঘরে যদি পাঁচ হাজার ২৫ মেগাওয়াট চাহিদা হয়, তাহলে যখন শিল্প-কারখানা, দোকানপাট, অফিস-আদালত সব চালু থাকে, তখন চাহিদা হওয়ার কথা আট হাজার মেগাওয়াট।

কিন্তু পিডিবি এখন পর্যন্ত কোনো দিন দেশে ছয় হাজার মেগাওয়াট চাহিদার কথাও বলেনি। ওই প্রকৌশলীর বক্তব্যের প্রতি কিছুটা সমর্থন মেলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভার একটি বক্তব্যে। গতকাল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই সভায় বলা হয়, সারা দেশে বিদ্যুতের বর্তমান চাহিদা সাত হাজার ৫০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ঢাকায়ই চাহিদা সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট। সরকারি খাতের একটি বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির একজন ব্যবস্থাপক বলেন, পিডিবি প্রতিদিন চাহিদার যে হিসাব দেয়, আর বিতরণ কোম্পানিগুলো যে চাহিদার কথা বলে, এই দুয়ের মধ্যে মিল থাকে না।

যেমন-বর্তমানে ঢাকায় ডিপিডিসির সর্বোচ্চ চাহিদা এক হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। ডেসকোর ৬০০ মেগাওয়াট। পশ্চিমাঞ্চল বিতরণ কোম্পানির (ওজোপাডিকো) ৫০০ মেগাওয়াট। পল্লী বিদ্যুতের তিন হাজার মেগাওয়াট। পিডিবির বিতরণ অঞ্চলে চাহিদা এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি।

এই মিলে মোট চাহিদা হয় সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট। কিন্তু পিডিবি এখন পর্যন্ত কোনো দিন দেশে ছয় হাজার মেগাওয়াট চাহিদার কথা বলেনি। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার পর্যবেক্ষণ—পিডিবির গত মাস খানেকের পূর্বাভাসে দেখা যায়, চাহিদা ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার থেকে পাঁচ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের মধ্যে। উৎপাদন চার হাজার ৪০০ থেকে চার হাজার ৯০০ মেগাওয়াটের কাছাকাছি। উৎপাদন যেদিন কিছুটা বাড়ে, সেদিন পিডিবি চাহিদাও একটু বেশি করে দেখায়।

যেদিন উৎপাদন কমে, সেদিন চাহিদাও দেখায় কম। মন্ত্রণালয় ও পিডিবির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা নির্ধারণের জন্য সারা দেশে যে ধরনের গ্রাহক জরিপ করা দরকার, তা কোনো দিনই করা হয়নি। একজন গ্রাহক পাঁচ-দশ বছর আগে দুই-তিন কিলোওয়াট লোড অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন। এখন ব্যবহার করছেন ১০ কিলোওয়াট বা তারও বেশি। কিন্তু পিডিবির খাতায় ওই তিন কিলোওয়াটই আছে।

তাই হিসাব সঠিক হওয়ার কোনো কারণ নেই। Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।