যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশ স্থগিতের তিন সপ্তাহ পর এ বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওবামা প্রশাসন বলছে, সে দেশে বিনা শুল্কে পণ্য রপ্তানি করতে হলে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা যেন সহজে ইউনিয়ন করার অধিকার পায় ও নিরাপদ পরিবেশে কাজ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে সরকারকে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে গতকাল শুক্রবার এসব কথা বলা হয়।
রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১২৯ জন এবং তাজরীন ফ্যাশনস কারখানার অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বলা হয়, শ্রমিকের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষায় বাংলাদেশ তেমন কিছুই করছে না।
মূলত এ কারণেই ওবামা প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পোশাকের অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার (জিএসপি) স্থগিত রেখেছে।
ঘোষিত কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে শ্রম, আগুন ও ভবন পরিদর্শকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। শর্ত পূরণ করতে না পারলে ওবামা প্রশাসন পোশাক কারখানাগুলোর রপ্তানির অনুমোদনপত্র কেড়ে নেওয়ার মতো কঠিন শাস্তির বিধান আরোপের ওপর জোর দিয়েছে।
এর বাইরে প্রশাসন বাংলাদেশকে একটি তথ্যভান্ডার তৈরির পরামর্শ দিয়েছে। এই তথ্যভান্ডারে পোশাক কারখানার শ্রমিক, আগুন ও ভবন নিরাপত্তা বিষয়ে সব তথ্য থাকবে।
এমনকি কোন কোন কারখানায় আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেগুলোর নাম ও পরিদর্শকের নাম যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে ওই তথ্যভান্ডারে।
কর্মপরিকল্পনায় শ্রমিকদের অভিযোগ জানানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ও একটি হটলাইন চালুর কথা বলা হয়েছে। এতে করে অধিকার ও নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হলে নাম গোপন রেখে শ্রমিকেরা অভিযোগ জানাতে পারবেন।
পোশাকশিল্প সম্পর্কে ওবামা প্রশাসন বলছে, শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ হতে কারখানাগুলো যেন আর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়টি বাংলাদেশকে নিশ্চিত করতে হবে। ইউনিয়ন করলে শ্রমিকেরা যেন প্রতিহিংসার কবলে না পড়েন এবং আইনগত স্বীকৃতি পেতে যতগুলো স্বাক্ষর দরকার, সেগুলো সংগ্রহ করতে পারলে যেন দ্রুত ইউনিয়ন গঠনের অনুমতি পান, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য কারখানার মোট শ্রমিকের যে ৩০ শতাংশের স্বাক্ষর প্রয়োজন, সেটি সংগ্রহের পর তাঁরা যখন শ্রম বিভাগে যান, তখন ওই বিভাগের কর্মকর্তারা ট্রেড ইউনিয়নের সদস্যদের নাম কারখানার মালিকদের দিয়ে দেন। মালিকরা তখন সেসব শ্রমিকদের ছাঁটাই করেন অথবা আবেদনপত্র থেকে তাঁদের নাম প্রত্যাহারে বাধ্য করেন। শ্রমিকনেতারা বলছেন, দেশের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কারখানায় ৪০ লাখ শ্রমিক থাকলেও ট্রেড ইউনিয়নভুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা কম হওয়ার এটাই কারণ।
গত সোমবার বাংলাদেশ সরকার সংশোধিত শ্রম আইন পাস করেছে, এতে করে শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার পথ সুগম হবে। কিন্তু বাংলাদেশের শ্রমিকনেতারা বলছেন, সংশোধিত আইন আরও একধাপ পিছিয়ে গিয়ে ইউনিয়ন করার অধিকারকে খর্ব করেছে।
শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার প্রতিটি উদ্যোগ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রকাশের জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে ওবামা প্রশাসন। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দিয়েছে কি না, দরখাস্ত জমা দেওয়ার পর অনুমোদন পেতে কত দিন লেগেছে এবং অনুমোদন না দিলে কেন দেওয়া হয়নি, তা জনসম্মুখে প্রকাশ করতে বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে নিশ্চিত করতে হবে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় ইউনিয়ন করার পূর্ণ অধিকার শ্রমিকেরা পাবেন কি না।
শ্রমিকনেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে বাংলাদেশকে স্বচ্ছভাবে তদন্ত করার আহ্বানও জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এ শ্রমিকনেতার হত্যাকাণ্ডে প্রশাসন জড়িত আছে বলে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোয় খবর বেরিয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।