আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দাওয়াতে ঘটা আছে, তবে যোগদানের নিশ্চয়তা নেই--দুই নেত্রীর ইফতার আমারে কেউ দাওয়াত দেয় না, দিলে যাইতাম

তাশফী মাহমুদ দুই নেত্রী ঘটা করে একে অপরকে দলীয় ইফতার পার্টিতে দাওয়াত করলেও দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির হঠাৎ নাটকীয় কোন পরিবর্তন না হলে কেউ কারও অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না এটা প্রায় নিশ্চিত। তবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সবাইকে চমকে দিয়ে শেষ পর্যন্ত পরস্পরের দাওয়াত রক্ষা করবেন কিনা এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। আর যদি সবাইকে অবাক করে দিয়ে দুই নেত্রী একে অপরের দাওয়াত রক্ষা করেন তা হলে এটি হবে দেশের রাজনীতিতে একটি সাড়া জাগানো ঘটনা। যে ঘটনা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তনের পথ তৈরি করতে সক্ষম হবে। উলেখ্য, আগামী ৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু আত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্মানে জাঁকজমক ইফতার পার্টির আয়োজন করছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

এ উপলক্ষে গত ২৬ জুলাই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর ৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সম্মানে ইফতার পার্টির আয়োজন করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এ উপলক্ষে ২৭ জুলাই বিএনপি চেয়ারপারসনকে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আগেভাগে মিডিয়াকর্মীদের জানিয়ে দুই নেত্রী প্রতিনিধি পাঠিয়ে ঘটা করে পরস্পরকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর কারণে সংবাদ মাধ্যমেও তা ফলাও করে প্রচার করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই দুই নেত্রী পরস্পরকে ইফতার পার্টির আমন্ত্রণ জানান।

কিন্তু কখনও কারও ইফতার পার্টিতে অংশগ্রহণ করেন না তাঁরা। ঈদ ও নববর্ষে শুভেচ্ছা কার্ড বিনিময় করলেও ফোন করে কেউ কারও সঙ্গে কথা বলেন না। এমনকি রাষ্ট্রীয় কোন অনুষ্ঠানে কখনও দুই নেত্রী একসঙ্গে যোগ দিলেও কেউ কারও মুখের দিকে ফিরে তাকান না। সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে যোগ দিলেও দুই নেত্রী কেউ কারও সঙ্গে কথা বলেনই না বরং একজন বক্তব্য রাখার সময় আরেকজন অধিবেশন কক্ষের বাইরে চলে যান। এটা দেশের রাজনীতির দীর্ঘদিনের সংস্কৃতি।

তাই এবার রমজানে দুই নেত্রী এই সংস্কৃতির ইতি টানবেন কিনা তা দেখার জন্যই সারাদেশের মানুষ অপেক্ষা করছে। বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, দুই নেত্রী একে অপরের ইফতার পার্টিতে যাবে কিনা তা নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর। কারণ, ৪ জুলাই বিএনপির ইফতার পার্টি। সেদিন এই ইফতার পার্টিতে শেখ হাসিনা যোগ দিলে সঙ্গত কারণেই ২ দিন পর আওয়ামী লীগের ইফতার পার্টিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে যোগ দিতে হবে। আর ৪ জুলাই বিএনপির ইফতার পার্টিতে শেখ হাসিনার যোগ দেয়ার ব্যাপারে এখনও কেউ কিছু জানাননি।

তাই শেখ হাসিনার এই ইফতার পার্টিতে যোগদানের বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত। আর শেখ হাসিনা বিএনপির ইফতার পার্টিতে যোগ না দিলে ৬ জুলাই আওয়ামী লীগের ইফতার পার্টিতেও খালেদা জিয়ার যোগদান অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। জানা যায়, দুই নেত্রী পরষ্পরের ইফতার পার্টিতে যোগদানের সম্ভাবনা না থাকলেও পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এবার তাঁদের প্রতিনিধি উভয় দলের ইফতার পার্টিতে যোগ দিতে পারে। আর প্রতিনিধি পাঠালেও দুই দলের মধ্যে বিরাজমান চিরচেনা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসবে। উলেস্নখ্য, ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন দলের উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।

সেদিন বিএনপি তাঁকে সাদরে বরণ করে মঞ্চে নিয়ে বসায়। এক পর্যায়ে তাঁকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেয়া হয়। অসীম কুমার উকিল চমৎকার বক্তব্য প্রধান করলে বিএনপির নেতাকর্মীরা তাঁকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান। আর এই বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হওয়ার পর দেশের মানুষ তা ইতিবাচক হিসেবে নেয়। কিন্তু পরে আওয়ামী লীগের পৰ থেকে অসীম কুমার উকিলকে তিরস্কার করায় দেশবাসী হতাশ হয়।

তাই এই পরিস্থিতির আলোকে দুই নেত্রী না গেলেও পরস্পরের ইফতার পার্টিতে তাঁদের প্রতিনিধি যাবে কিনা তাও দেখার বিষয়। এদিকে ৪ আগস্ট বিএনপির এবং ৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের ইফতার পার্টি উপলৰে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোন দল কার চেয়ে বেশি দলের নেতাদের জড়ো করতে পারে এ নিয়ে দুই দলে প্রতিযোগিতা চলছে। বিএনপির পৰ থেকে আওয়ামী লীগসহ দেশের সব দলকে দাওয়াত করা হয়েছে। আর আওয়ামী লীগ জামাতসহ জঙ্গীবাদের দায়ে অভিযুক্ত ক'টি দলকে বাদ দিয়ে দেশের অধিকাংশ দলের শীর্ষ নেতাদের দাওয়াত করেছে।

আর এই ইফতার রাজনীতিকে কেন্দ্র করে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেই ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বা অন্য কেউ যাবে কিনা এ ব্যাপারে এখনও কোন সিদ্ধাত্ম হয়নি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা দাওয়াত পেলেও এখনও আওয়ামী লীগের ইফতার পার্টিতে যোগ দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধাত্ম নেইনি। এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধাত্ম হলে পরে জানানো হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।