আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্য ইকোনমিস্টের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

Click This Link কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করা ভারতের জন্য অদূরদর্শিতা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরে আসছেন। ওই সময়ে তাকে ব্যাপক অর্থেই সম্পর্ক উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে একদিন এসব অর্জন নস্যাৎ হতে পারে। গতকাল অনলাইন ইকোনমিস্ট-এ এক প্রতিবেদনে এসব মন্তব্য করা হয়।

এর শিরোনাম ছিল- ‘ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ : এমব্রেসঅ্যাবল ইউ’। এতে আরও বলা হয়েছে, বাইরের কারও চোখে তেমন পড়েনি বিষয়টি। দীর্ঘ সীমান্ত সংবলিত দুই প্রতিবেশীর মধ্যে দীর্ঘদিনের টানাপড়েন চলছে। সেই সম্পর্ক উন্নত করার যথেষ্ট উদ্যোগ দেখা দিয়েছে সমপ্রতি। ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিকশিত হয়ে উঠছে।

ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভারত অর্থ ও পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছিল। ভারতকে খুশি করতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন কট্টরপন্থি বা ভারতের অভ্যন্তরে বেড়ে ওঠা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো- ইন্ডিয়ান মুজাহিদীন এবং হট্টগোল সৃষ্টিকারী ইসলামপন্থি এবং ভারতবিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দমন-পীড়ন শুরু করে। এতে ভারত নিজেকে কিছুটা নিরাপদ মনে করতে থাকে। দুই দেশেই এখন বংশানুক্রমিক শাসনযন্ত্র দ্বারা পরিচালিত। তাদের মধ্যে এখন রাজনৈতিক বন্ধন দৃঢ় হচ্ছে।

গত ২৫শে জুলাই প্রথমবারের মতো সোনিয়া গান্ধী বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা সফর করেন। এ সময় ভারতের ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেস পার্টির প্রধান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একই সোফায় বসে তিনি যে গরিবদের সাহায্য করছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা তাদের পুরনো পারিবারিক বন্ধুও। সোনিয়া গান্ধীর প্রয়াত শাশুড়ি ইন্দিরা গান্ধীকে প্রতিদান হিসেবে মরণোত্তর একটি স্বর্ণপদক উপহার দেয় বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শাসকদের বর্বর শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করেন শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান।

এ যুদ্ধে বাংলাদেশীদের ভারতীয় সেনা সহায়তা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। তাকে সম্মানিত করায় এই সপ্তাহে কর্মকর্তাদের মুখে মুখে একটি কথাই ফিরেছে- এখন সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। এই সম্পর্ককে আরও ভাল করে তোলা উচিত। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এসময় স্পর্শকাতর কয়েকটি বিষয়ে চুক্তি সই হবে।

এর মধ্যে রয়েছে পানি বণ্টন, সীমান্তের এপাড়ে বিদ্যুৎ দেয়া, ৪০৯৫ কিলোমিটার সীমান্তে বিতর্কিত ছিটমহল সমস্যা, অভিবাসীদের ভারতের সীমান্ত রক্ষীদের হাতে প্রাণ হারানো এবং গরু চোরাচালানি বন্ধ করা। চোরাচালান বাদ দিয়ে বাণিজ্যে ভারত সুবিধাজনক অবস্থায় আছে, বাংলাদেশ তার থেকে পিছিয়ে আছে- এ বিষয়টি নিয়েও একটি বাণিজ্যিক চুক্তি করতে পারেন মনমোহন সিং। ভারতের উত্তর-পূর্বের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া দুর্গম রাজ্যগুলোতে যেতে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে বেশ কিছু ট্রানজিট পাওয়া নিয়ে চুক্তি হবে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এই রাজ্যগুলো সেভেন সিস্টার নামে পরিচিত। এ রাজ্যগুলো ভারতকে চীন থেকে আলাদা করেছে।

ভারতের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি থেকে কেটে নেয়া ১০০ কোটি ডলারের প্রকল্পে দরিদ্র এলাকাগুলোর উন্নয়ন করা হবে। এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক ও অন্যরা দেখছে বাংলাদেশ উন্নত সড়ক থেকে শুরু করে বন্দর, রেললাইন এমনকি অধিক দরকারি বাণিজ্য সুবিধা পাচ্ছে। ঢাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শতকরা প্রায় ৭ ভাগ। ভারতের সঙ্গে অধিকতর সম্পৃক্ততায় সেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শতকরা কয়েক পয়েন্ট বেড়ে যেতে পারে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য স্বল্প সুদের অর্ধেক অর্থ হস্তান্তর করেছে ভারত।

এসব অর্থ খরচ করা হচ্ছে নতুন নতুন নদী খনন ও ‘বেশি বুদ্ধিমান’! রেলগাড়ি চলাচলের উপযোগী করার কাজে। বাংলাদেশের শাসকরা সেটা ছিল। এর আগে দেশটি একটি অবকাঠামোগত বড় ধরনের সুবিধা হাতছাড়া করেছে অতি বুদ্ধির দোষে। সেটা ছিল মিয়ানমার থেকে ভারতে গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনায় অংশ নিতে পারলে বাংলাদেশ খুবই লাভবান হতো।

কিন্তু ওই গ্যাস পাইপলাইনের কাজ পেয়েছে চীন। নতুন যে ট্রানজিট প্রজেক্টের কথা বলা হচ্ছে তা হতে পারে উন্নয়নের চেয়েও বেশি কিছু। ঢাকার অনেকে, বিশেষ করে সামরিক মহলের কিছু লোকজন সন্দেহ করছে, এর অর্থ হবে ভারতের জন্য একটি নিরাপদ করিডোর তৈরি করা। গেরিলা হামলার ভয়ে পাহাড়ি সড়কগুলোর পরিবর্তে সামরিক সরঞ্জাম বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে পরিবহন করা হতে পারে- যাতে ভারত সহজেই নাগাল্যান্ড ও মণিপুরের বিদ্রোহীদের দমন করতে পারে। সামরিক মহলের আতঙ্ক, বাংলাদেশের একই রকম গ্রুপকে তাতে প্রত্যাঘাতে প্ররোচনা দেবে।

অধিকন্তু চীন সীমান্তের কাছে অরুণাচল প্রদেশে ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অবস্থানের কাছে অস্ত্র সরবরাহ বাড়াতে পারে। অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অধিকারে থাকার বিষয়টিতে আপত্তি রয়েছে চীনের। চীন ওই প্রদেশকে দক্ষিণ তিব্বত বলে দাবি করে থাকে। অনেক বাংলাদেশীর ক্ষোভ হলো এখানে যে, ভারত যদি বাংলাদেশকে বিরাট আকারে সামরিক পশ্চাৎভূমি হিসেবে ব্যবহার করে তার নিজস্ব লজিস্টিক সমস্যা মেটানোর জন্য তাহলে তার প্রত্যাঘাত আসবে চীনের কাছ থেকে। তবে এমন আতঙ্ক ব্যাপক নয়।

দীর্ঘদিনের ভারতবিরোধী সন্দেহভাজন ও সাধারণ বাংলাদেশীদের মধ্যে ভারত নিয়ে যে উষ্মা রয়েছে ভারত তা সঠিকভাবেই প্রশমিত করছে। আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীদের ওপর পরিচালিত সামপ্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, অল্প সংখ্যক মানুষই ভারতবিদ্বেষী, আর প্রায় অর্ধেকই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ককে স্বাগত জানায়। ঢাকায় তরুণ গবেষকদের একই ধরনের একটি সেমিনারে এই সপ্তাহে এই রকম মনোভাব দেখা গেছে- যদিও ভারতীয় সীমান্তে গুলি করে হত্যা বন্ধ হয় নি। যাহোক ভারতের সবচেয়ে ঝুঁকি হলো- তারা শেখ হাসিনার ওপর বড় বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। আর তিনি ক্রমেই স্বৈরাচারী হয়ে উঠছেন।

বিরোধীরা জাতীয় সংসদের অধিবেশন বয়কট করছেন। হরতাল-ধর্মঘট মাঝেমধ্যেই হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্নীতি যে মাত্রায় আছে বাংলাদেশে দুর্নীতি তাকে ছাড়িয়ে গেছে। জুন মাসে সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে নগ্নভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে তার সরকার দিয়ে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এটা করা হবে।

শেখ হাসিনা তার প্রয়াত পিতাকে ‘সহস্রাব্দের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ প্রচারণার মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিই গড়ে তুলছেন। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দল গড়ার বাসনা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। একইভাবে, ১৯৭১ সালের ঘটনায় আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধাপরাধ আদালতে বিচারকাজ শুরু হচ্ছে। বিচারের চেয়ে এখানে বেশি উদ্দেশ্য বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংস করা।

এ কথা কেউ বলবে না যে, ভারতের এই মিত্রের হাতে ক্ষমতা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ২০১৩ সালে যে ভোট হওয়ার কথা আছে তাতে শেখ হাসিনার পতন হতে পারে অথবা তার আগেই রাজপথের আন্দোলনে একই পরিণতি ঘটতে পারে তার। তখন তার স্থানে আসতে পারেন তার ঘোরশত্রু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রধান খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার পরিবারও দুর্নীতিগ্রস্ত এবং শেখ হাসিনা যতটা ভারতপন্থি তারা ততটাই ভারতবিরোধী। কিন্তু খালেদা জিয়া বা তার অনুসারীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ না করাটা ভারতের জন্য অবশ্যই একটি অদূরদর্শিতা।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যখন বাংলাদেশ সফরে আসবেন তখন তাকে ব্যাপক অর্থেই সম্পর্ক উন্নয়নে পদক্ষেপ নিতে হবে না হলে একদিন সবকিছুই নস্যাৎ হয়ে যাবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।