আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ মানব সভ্যতার কলঙ্কের ৯৭ বছর

জুলাই ২৮ : এ গ্রহের মানুষের কাছে যুদ্ধ নতুন কিছু নয়। সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই এ গ্রহের মানুষ যুদ্ধ চেনে। যুদ্ধ সভ্যতার এক অনিবার্য অনুষঙ্গই বলে মনে হয়, সহস্রাধিক যুদ্ধের রক্তে সভ্যতার পৃষ্ঠা রঞ্জিতৃকিন্তু, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যেন অতীতের সব যুদ্ধ থেকেই আলাদা। এর কি কারণ? ধ্বংসযজ্ঞে বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল প্রয়োগ? প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংসকার্যে ব্যবহৃত হয়েছে বল্ট -অ্যাকশন রাইফেল, বেয়োনেট, ল্যুগার পিস্তল, ম্যাক্সিম মেশিন গান, মাসচিনেনজিউহর নামে মেশিন গান, বিগ বার্থা নামে আর্টিলারি, গ্রেনেড, লিটিল উইলি ট্যাঙ্ক, টর্পেডো, ধোঁওয়াবিহীন গান পাওডার এবং ওয়ারলেস কমিউনিকেশন। যার পরিনামে সর্বমোট ১ কোটি ষাট লক্ষ মানুষ মৃত্যুকে বরণ করতে বাধ্য হয় ।

রোববার। ২৮ জুন। বেলা ১০টা বেজে ১৫ মিনিট। গাভরিলো প্রিন্সেপ সারাজেভোর একটা ফুটপাতের ওপর ক্যাফেতে বসে স্যান্ডউইচ খাচ্ছিল। হঠাৎই তাঁর চোখ কালো রঙের একটি কনভাট্রিবল গাড়িতে আটকে যায়।

গাড়িতে আর্কডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দ বসে; পাশে আর্কডিউক-এর স্ত্রী সোফি। ড্রাইভার রং র্টান নিয়েছিল। এখন গাড়ি ব্যাক করছে। কাল বিলম্ব না করে প্রিন্সেপ উঠে দাঁড়িয়ে পিস্তল বের করে মাত্র ৫ ফুট দূর থেকে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি করে। এই মুহূর্তটিই সূত্রপাত করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের।

গুলি আর্কডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনাান্দের গলা ফুটো করে বেরিয়ে যায় ৃএবং সোফির পেট ভেদ করে। কজন পুলিশ গাভরিলো প্রিন্সেপকে জাপটে ধরে। গাভরিলো প্রিন্সেপ অস্ট্রিয় আর্কডিউক কে হত্যা করেছিল ২৮ জুন ১৯১৪। এর ঠিক একমাস পর ২৮ জুলাই অস্ট্রো -হাঙ্গেরিয় সাম্রাজ্য সার্বিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষনা করে। সার্বিয়ায় আরও অস্ট্রো -হাঙ্গেরিয় সৈন্য পাঠায়।

রাশিয়াও ভীষন পীড়ন করতে চাইছিল অষ্ট্রিয়াকে। রাশিয়ার সামনে সে সুযোগ এসে গেল। ১৯১৪ সালের জুলাই মাসের ২৯ তারিখে রাশিয়া অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয় সাম্রাজ্যেকে রুখে দিতে বলকানে সৈন্য সমাবেশ করতে থাকে। ৃএভাবে ইউরোপের অন্যান্য পরাশক্তিও এক এক করে বসনিয় সঙ্কটে জড়িয়ে পড়ে। তার কারণও ছিল।

একটা কারণ লাভালাভ। অন্য কারণ- উনিশ শতকের শেষ ভাগে ইউরোপ দুটি মহাজোটে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। একদিকে জার্মানি, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয় সাম্রাজ্য ও ইতালিকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় জোট ;অন্যদিকে ফ্রান্স, ব্রিটেন ও রাশিয়াকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় আঁতাত। ৩০ জুলাই জামার্নি অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের পক্ষে (জোটভূক্ত বলেই) জার্মানি যুদ্ধ ঘোষনা করে। প্রতিশোধ নিতে ফ্রান্সও ১ আগস্ট জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে।

জার্মানিও রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করল একই দিনে। প্রথম মহাযুদ্ধে এসব সুপ্ত ক্ষোভ নির্গত হতে থাকে। যে যুদ্ধে ত্রিপক্ষীয় আঁতাত হারিয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ সৈন্য। আর ত্রিপক্ষীয় জোট ৪০ লক্ষ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে হতাহতের পরিমান সর্বমোট ২ কোটি ৭০ লক্ষ।

এর মধ্যে ১ কোটি ৬০ লক্ষ মৃত। ২ কোটি দশ লক্ষ আহত। ১ কোটি ৬০ লক্ষ মৃত। এর মধ্যে সামরিক প্রায় ১ কোটি। প্রায় ৭০ লক্ষ সিভিলিয়ান।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।