কদিন ধরেই খুব মন খারাপ। প্রবাসের ব্যস্ত জীবনও পারছেনা মন কে বুঝাতে। মেঘ-বৃষ্টির এই আবহাওয়া বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে ফেলে আসা সময়, সম্পর্ক আর দেশের কথা। দেশে এখন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে রোজা আর ঈদ এর প্রস্তুতি। ছোটবেলায় এ সময়টাতে ইফতার, নতুন জামা, জুতো, দাদী বাড়ি- নানি বাড়ি তে যাওয়া - এর মধ্যেই চিন্তা সিমীত ছিল।
শুধু কি তাই! কবে মা জামা কিনে দিবে, ক'টা জামা হবে, সাথে কি কিনতে হবে, একেবারে উত্তেজনার শেষ ছিল না। ঈদের দিন এর কথা আর কি বলব। কতক্ষণে দেখা হবে সব গুরুজনদের সাথে, ঈদী (সালামী) কত পেলাম, সেটা দিয়ে কি করব, নানা রকমের প্ল্যান করতাম। ঈদের পরদিন অবধারিত ভাবে বড় মামার বাসায় সবাই আসবে। বড় মামির সেই রোস্ট, কাস্মিরী আঁচার, চাইনিজ ভেজিটেবিল, কাবাব, নানুর বানানো সেমাই - আহা! ২ বছর আগে এরকম ঈদের পরদিন ছিলাম ক্লাসে।
বারবার এই সব সুস্বাদু খাবার, আমাদের সব খালাতো-মামাতো ভাইবোনদের চেচামেচি সব যেন কানে বেজে যাচ্ছিলো।
আজও হয়তোবা সে সব মনে করেই খারাপ লাগছে। কিন্তু না। এখানেই আজ চিন্তা থেমে থাকে না। এখন মনে হয় একটু বড় হয়েছি।
এখন বাজার-দর আর তার সাথে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কটা বুঝতে শিখেছি। রোজা শুরু হওয়ার আগেই দ্রব্যমূল্য নিয়ে খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে, দেখতে পাচ্ছি। যানজট, জনগণের নানা দূর্ভোগ এসব তো মনে হয় আমাদের সাধারণ জীবনের অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। নিরাপত্তার কথা আর নাই বা বললাম।
তারপর ভাবি, তবে কেন এই মন খারাপ? আসলে মন খারাপ হয় যখন নিজের এই নিরাপদ জীবন এ ল্যাপটপ-এ বসে হাইস্পীড ইন্টারনেট কানেকশন দিয়ে এসব লিখছি, সেই একই সময়ে আমার আপন জনরা সোনার বাংলায় জীবনের হাজার টা জটিলতা মোকাবিলা করেও প্রতিনিয়ত যানজট আর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
আজ আমি শিক্ষিত হয়েও পারলাম না তাদের জন্য কিছু করতে। দেশে ফেরত যাওয়ার কথা ভাবতেও ইচ্ছা করে না। যেখানে সততা, যোগ্যতা এসব এর তেমন মূল্য নেই, কি হবে আজকের সেই বাংলায় ফেরত যেয়ে?
লিখতে লিখতেই বুঝতে পারছি আসলে নিজের ভিতরে আজ এক দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। পারছিনা আমি কোনোভাবেই সেই দ্বন্দ্ব মিটাতে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।