আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজব চিকিৎসা -সুমাইয়া বরকতউল্লাহ্

আমি সুমাইয়া বরকতউল্লাহ। ছাত্রী। লেখালেখি করা আমার ভীষণ পছন্দ। আমি ছড়া, গল্প লিখি। পত্রিকায় নিয়মিত লিখি।

লেখালেখি করে বেশ কয়েকটা পুরস্কারও পেয়েছি। শিশু অধিকার রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ (প্রিণ্ট মিডিয়া) পর পর ৩ বার জাতিসংঘ-ইউন আমার ভাইয়া ক্লাশ টেন-এর ছাত্র। ভীষণ ফাঁকিবাজ। তার খাওয়া-দাওয়া, খেলাধুলায় কোনো সমস্যা নেই, ক্লান্তিও নেই। তার যত সমস্যা পড়ালেখার সময়।

পড়তে বসলে তার সমস্যাগুলো একটা একটা করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। পেট ব্যথা। মিনিট বিশেক পড়েই সে হাত দুটো পেটে চেপে ধরে ধণুকের মতো বাঁকা হয়ে বসবে। মাথা ধরা। দুহাতে সমানে মাথার চুল টানবে।

বমি বমি ভাব। একটু পর পর উঠে গিয়ে বেসিনে উপুড় হয়ে ওয়াক, ওয়াক, থু' করবে। গা ঝিমঝিম। হাত ঝাড়বে, পা ঝাড়বে। এখান টিপ ওখানে টিপ বলবে।

তাতেও সুবিধে হলো না। মুখ বাঁকা করে লুঙ্গির গিটটা একটু খুলে এমন এক দেৌড়ে বাথরুমে গিয়ে বসবে যে, দেখলে মনে হবে তার পায়খানা বুঝি পড়ে গেল। বাথরুমে আধ ঘণ্টা। আব্বু অনেক চেষ্টা করলেন। কিন্তু রোগ আর ভাল হয় না।

ভাইয়াকে নিয়ে আব্বু পড়ে গেলেন খুব চিন্তায়। আব্বু এক ডাক্তার বন্ধুর সাথে আলাপ করলেন। ডাক্তার বললেন, আপনার ছেলের এসব লক্ষণ যদি শুধু পড়ার সময় দেখা দেয় তাহলে বুঝবেন এটা ”পড়ারোগ”। মানে, না পড়ার ফন্দি। এ রোগের ওষুধ তো আমি দিতে পারব না।

তবে ছেলের লণ বুঝে আপনিই এর চিকিৎসা করতে পারবেন। ’ আব্বু ডাক্তারের কাছ থেকে ফেরার পথে ফার্মাসি থেকে ব্যথানাশক মলম এনে রেখে দিলেন। পড়তে বসলাম। ওমনি ভাইয়ার মাথা আর পেট ব্যথা উঠল। বই বন্ধ করে মুখ বাঁকিয়ে উহ্, আহ্ শুরু করে দিল সে।

সাথে সাথে আব্বু মলম নিয়ে এসে বললেন, ‘বাবা তোমার কোন জায়গায় ব্যথা করে একবার খালি আমাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখাও। ’ ভাইয়া মুখ বাঁকিয়ে পেটে ও কপালে আঙুলে ইশারা করে দেখালেন। আব্বু প্যাকেট খুলে হাতের তালুতে মলম নিয়ে বললেন, বাবা, তুমি লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ো, চিকিৎসা হবে তোমার। ভাইয়া আব্বুর চোখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে শুয়ে পড়ল। আব্বু মলম হাতে নিয়ে একবার পেটে ও পরে কপালে শুরু করলেন ডলা।

এই সেই ডলা না। ডলা খেয়ে ভাইয়া বাঁকা হয়ে বলে, আব্বু, আব্বু আর না, হয়েছে, হয়েছ্ আমার ব্যথা শেষ। ডলা বন্ধ কর, প্লিজ। ‘ কতক্ষণ পরেই ভাইয়া কপাল ভাঁজ করে পেট চেপে ধরে বলে, ‘আব্বু, আমার বাথরুম পেয়েছে, বাথরুমে গেলাম। ’ বলেই সে চলে গেল বাথরুমে।

ফেরার আর খবর নেই তার। কমসে কম তিরিশ মিনিট। আব্বু রাগে গজ গজ করে বাথরুমের দরজায় টোকা দিয়ে বললেন, বাথরুমে এতক্ষণ কী করো তুমি? ভাইয়া ভেতর থেকে জবাব দিল, ‘আরও দেরি হবে আব্বু। ‘ আব্বু বললেন, ’বাথরুম করতে এত সময় লাগছে কেন তোমার? হেহ্? তুমি পড়ালেখা করবে কোন সময়? তাড়াতাড়ি বের হয়ে এসো। ‘ বাথরুমের ভেতর থেকে কোঁথ দিতে দিতে বলে, ‘আব্বু, পায়খানা ভীষণ কষা, কিলিয়ার হচেছ না, এখনো চাপ আছে।

‘ তারপর যখন সে বেরোলো তখন দেখা দিল আরেক সমস্যা। ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে এসে কোনোমতে বসল। পা ফুলে বালিশ। পা ঝিঁঝিঁ করছে। তখন তার পা টিপে দেওয়ার পালা।

সীসার মত ভারী তার পা দু'টো আমার ওপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলবে, টিপ, জোরে জোরে টিপ দে, মনে হচ্ছে পা দু’টি ফুলে ডোল হয়ে গেছে। তার পা টিপে দিতেই হয়; এছাড়া আমার কোনো উপায় থাকে না। এসব করে সে কখনোই কাশের পড়া কমপ্লিট করতে পারে না। আব্বু কয়েকদিন তাকে বেশ করে শাঁসালেন কিন্তু তার জটিল রোগগুলো আর ভালো হয় না। আব্বু অনেক খোঁজ করে ভাইয়ার জন্যে একজন রাগী ম্যাডাম ঠিক করলেন পড়ানোর জন্যে।

আমাকেও বললেন ম্যাডামের কাছে পড়তে। ‘খুব স্মার্ট ও বুদ্ধিমান ম্যাডাম। তিনি প্রথম প্রথম কিছুই বলেননি আমাদের। মনে হয় মেডাম আমাদের বুঝতে লাগলেন। ভাইয়াও ম্যাডামকে বুঝতে লাগল মনে মনে।

পড়ার সময় আগের মতো ভাইয়ার নানা সমস্যা দেখা দিতে লাগল। বাথরুমে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট করতে লাগল। ম্যাডাম খালি দেখছেন তার কান্ডকারখানা। কিছুদিন পরের ঘটনা। মেডাম পড়া ধরতেই ভাইয়ার প্রচন্ড মাথা ও পেট ব্যথা উঠল।

মেডাম তড়িঘড়ি পার্স খুলে একটা ট্যাবলেট বের করে বললেন, ‘আমি ল করছি তোমার ব্যথাটা খুবই খারাপ। সময় বুঝে না, খালি পড়ার সময় উঠে। আমি খুব দামি একটা ব্যথানাশক ট্যাবলেট এনেছি তোমার জন্য। যত বড় ব্যথাই হোক এ বড়ি খাওয়ার সাথে সাথে ব্যথা ভাল হয়ে যাবে। ‘ মেডামের কথায় ভাইয়া বড়িটি খেল।

কয়েক সেকেন্ড পরেই ভাইয়া বলে, ‘ম্যাডাম আমার পেট ব্যথাও নেই, মাথা ব্যথাও নেই। একদম ভালো হয়ে গেছি। ‘ ম্যাডাম বললেন, ‘এ বড়ি খাওয়ার পর আর ব্যাথা উঠবে না। তুমি কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ। এখন পড়ো।

‘ কিন্তু বাথরুম যে আর ছাড়ে না। আগের মতই বাথরুমে গিয়ে ত্রিশ পঁয়ত্রিশ মিনিট পার করে দিল ভাইয়া। আরেক দিন ভাইয়ার বাথরুম পেতেই ম্যাডাম ভাইয়ার হাতে একটা ট্যাবলেট দিয়ে বললেন, ‘এটা পড়ার সময় বাথরুম না পাওয়ার শক্তিশালী ট্যাবলেট। এটা খাওয়ার পর পড়ার টাইমে কখনো বাথরুম পাবে না। এ ট্যাবলেটে কাজ না হলে পেট অপারেশন করাতে হবে আর কি।

‘ এ কথা শুনে ভাইয়া চোখ বড় করে ট্যাবলেটটা পানি দিয়ে গডু গডু করে গিলে ফেলল। পড়ার সময় আর কখনো সমস্যার কথা বলে না, এমনকি বাথরুম পর্যন্ত পায় না ভাইয়ার। একদিন ভাইয়া ম্যাডামকে বলে, ‘ম্যাডাম আমি এখন একদম সুস্থ হয়ে গেছি, ব্যথা-ট্যথা কিচ্ছু নেই। ‘ এবার মন দিয়ে পড়ো, বললেন মেডাম। ভাইয়া এখন মন দিয়ে লেখাপড়া করে।

তার আর কোন সমস্যাই নেই। পরে জানতে পারলাম, মেডাম নাকি ভাইয়াকে ভিটামিন ট্যাবলেট খাইয়েছিলেন! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।