জীবন চলা মানে প্রতিক্ষন জীবনান্তের দিকে এগিয়ে চলা আজ সন্ধ্যার কিছু আগে, সুগন্ধা নদীর তীর ধরে, ইকো পার্ক সংলগ্ন পীচ ঢালা পথে হাটছিলাম। জায়গাটি ঝালকাঠী শহরের এক প্রান্তে । খোলা প্রান্তরের অঢেল বাতাসের ছোয়ায় হাটতে বেজায় মজা লাগছিলো। আশেপাশের গাছ গুলিকে চেনার চেষ্টা করছিলাম। গামারী,শিশু,অর্জুন, বাবলা,চম্বল,আকাশমনি,কড়াই চালতা অনেক প্রকারের গাছ দেখলাম, অর্জুন গাছগুলি মনে হল নগ্ন ।
ছাল, বাকল, ভ্রমন পিয়াসীরা তুলে নিয়ে গেছে, কারন এর চামড়া সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে, সকালে খেলে, বুক ধরপর, হাত পা, ঘামা ইত্যাদি অসুবিধা দূর করে। আমি হাটা শেষ করে ফিরতি পথ ধরেছি । সূর্য অস্ত গেলেও, মেঘে আলোর প্রতিফলনের ফলে,চারিদিকে অনেক আভা, তখনও সবকিছু দৃশ্যমান করে রেখেছে । রাস্তার উপর দিয়ে একটা গুইসাপ চেরা জিহ্বা বার করতে করতে পার হতে দেখলাম । হঠাৎ, ঝোপের মধ্যে খুব চিকন শুরে মিঁউ মিঁউ ডাক শুনতে পেলাম, ভাবলাম ইকো পার্কের আসল অধিবাসী কোন বন বিড়ালের সদ্য প্রসূত কোন বাচ্চা হয়তো ।
সন্ধ্যায় মা বিড়াল হয়তো খাবারের সন্ধানে বেরিয়েছে । আর শিশুটি দুধ খাওয়ার জন্য মা কে খুঁজছে । দাড়াবো কিনা, দেখবো কিনা, দন্দ্বে পড়ে গেলাম, আমার কারনে যদি মা বিড়ালটি দূরে সরে যায়, তাহলে শিশুটির দুধ পেতে দেরি হয়ে যাবে । ভাবছি আর ভাবছি, শেষ পর্যন্ত কৌতুহলেরই জয় হলো । ঝোপ ঘেসে বসে পড়লাম, আমার গায়ের উত্তাপ অনুভব করে হোক বা অন্য কোন কারনেই হোক, দেখলাম টুকটুক করে গুটি গুটি পায়ে, একটা বিড়াল ছানা বেড়িয়ে এল, ওটার পিছনে আরেকটা, ওটার পিছনে আরও একটা ।
আর অবাক কান্ড এগুলো বন বিড়ালের ছানা নয়, আমাদের দেশী বিড়ালের ছানা। কেউ হয়তো উৎপাত ভেবে, বস্তায় করে এনে ফেলে গেছে, নিষ্পাপ শিশু গুলিকে দেখে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল । কোন নিষ্ঠুর যে, এগুলোকে মাতৃছাড়া করলো ? ওদিকে ওদের মা হয়তো ডেকে ডেকে সারা হচ্ছে । যাদের জন্য ভাবছি, তাদের অবশ্য ভাবনাচিন্তার কোন বালাই, নেই । একটা আর একটার উপর হামলে পড়ে খুনসুটিতে মেতে উঠেছে ।
হঠাৎ করে মায়ের কথা মনে পড়লে, কিছুক্ষণ মিঁউ মিঁউ করে মাকে ডেকে নিচ্ছে, তারপর আবার যে, কে, সেই । কি করা যায় ভাবছি, অন্ধকার ধীরে ধীরে তার থাবা বিস্তার করছে । এভাবে রেখে যেতে মন সায় দিচ্ছে না, কারন এদের মৃত্যু অবধারিত, হয় অভুক্ত থেকে মরবে, আর নাহয় গুই সাপ বা অন্য কোন কিছুর খাদ্যে পরিনত হবে। এমন সময় দেখলাম, বাবা, মা, মেয়ের একটা পরিবার এগিয়ে আসছে, হয়তো শপিং শেষ করে বাড়ী ফিরে যাচ্ছে, হাতে কয়েকটা ব্যাগ । কাছে এসে বিড়াল ছানা গুলো দেখে সবাই দাড়িয়ে পড়লো, মেয়েটি চিৎকার করে বলে উঠলো, বাহ কি সুন্দর বাচ্চা, মা, আমি বাচ্চা গুলি নেব ।
মহিলা অপ্রস্তুত ভাবে আমার দিকে তাকালেন, বললাম, বাচ্চাগুলোর মালিক আমি নই । আমিও এগুলোকে এখানে আবিস্কার করেছি । তখন মেয়েটির বাবা আপত্তি করলেন, এত ছোট বাচ্চা নিয়ে কি করবি ? এগুলোকে দুধ খাওয়াতে হবে, এরা ভাত খাবেনা । মেয়েটির কাছে মনে হলো এগুলি জ্যান্ত পুতুল, সে কিছুতেই এগুলো রেখে যাবেনা, বলল, আমাদের গরুর দুধ তো আছে, তাই খাওয়াবো । বাবা বললেন এতগুলো বাচ্চা নিয়ে কি করবি ? মেয়ের উত্তর বোধ হয় ঠোটের কাছেই ছিলো, ঝটপট বলে,ফেলল এই সাদাটা, আমি রাখবো ঐ সাদা কালো টা, নীপাকে, আর এই সাদা মাথা কালো লেজ আলাটা, সায়মাকে দেবো ।
বুঝা গেল বান্ধবীদের জন্যও ভাগ বাটোয়ারা করা সারা। যাদেরকে নিয়ে এত কিছু তাদের অবশ্য কোন ভ্রুক্ষেপ আছে বলে মনে হলোনা । বাবা মা কিছুক্ষণ মুখ চাওয়া চাওয়ি করে, মেয়ের জেদের কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিলেন । এখন সমস্যা হলো নেয়া যায় কি করে ? তারও সমাধান পাওয়া গেল । হাতে কিছু জিনিষ বহন করে, একটা ব্যগ খালি করা হল, তারপর ঝটপট বাচ্চা গুলিকে ধরে, ব্যগে ভরা হল ।
এরপর যে যার গন্তব্যে রওনা হলাম । ভাবলাম এক মা হারিয়ে ওরা তিন মা পেতে যাচ্ছে । একজনের নিষ্ঠুরতা আরেকজনের দয়ার কাছে কিভাবে হার মেনে গেল ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।