কমরেড সমর মুখার্জি আর নেই। শততম বর্ষ অতিক্রম করছিলেন। গত বছর ৭ই নভেম্বর শততম জন্মদিবসে সংবর্ধিত হয়েছিলেন। কিন্তু ১০০বছর পূর্ণ করা আর হলো না। চলে গেলেন গোটা দেশে সি পি আই (এম)-র প্রবীণতম সদস্য।
সাম্রাজ্যবাদবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু, আমৃত্যু শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে লড়াইয়ের মধ্যে দিয়েই যা শেষ হলো।
বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা তাঁকে তাড়া করে ফিরছিল। গত বুধবার সন্ধ্যায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে বিধাননগরের একটি বেসরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ১৮ই জুলাই, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ এখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যােগ করলেন। অকৃতদার কমরেড সমর মুখার্জির ভ্রাতুস্পুত্রসহ পরিবার-পরিজন বর্তমান।
এদিনই প্রয়াত কমরেড সমর মুখার্জির অঙ্গীকার অনুযায়ী মরদেহ তুলে দেওয়া হয় এন আর এস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে। তার আগে তাঁর দুটি চোখও দান করা হয়।
এদিন সকালে তাঁর মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। বহু বিশিষ্ট মানুষ ছুটে যান হাসপাতালে। খবর পেয়েই সি পি আই (এম)-র রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু হাসপাতালে চলে আসেন।
পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য নিরুপম সেন, রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মদন ঘোষ, রবীন দেব, শ্রীদীপ ভট্টাচার্যসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দও ছুটে আসেন। লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চ্যাটার্জি হাসপাতালে এসে শ্রদ্ধা জানান।
কমরেড সমর মুখার্জির জীবনাবসানে গভীর শোকজ্ঞাপন করেছেন সি পি আই (এম)-র সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাত। এদিন এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে প্রবীণ পার্টি সদস্য, আমাদের প্রিয় নেতা কমরেড সমর মুখার্জির মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তিনি ছিলেন পার্টি ও শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার অন্যতম কারিগর।
কিভাবে জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হয়, তার উদাহরণ তিনি তৈরি করেছেন। তাঁর অনবদ্য গুণাবলী, পার্টির প্রতি সম্পূর্ণ নিবেদিতপ্রাণ মনোভাব, সহজ-সরল জীবন ও আত্মপরায়ণহীনতার জন্য তিনি সর্বদা স্মরণীয় থাকবেন। আমাদের তাঁর উদাহরণকে অনুকরণ করে চলা উচিত।
শোক জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সেদেশের প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা হায়দর আকবর খান রণো, মনজুরুল আহসান খান। মেনন এক শোকবার্তায় বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদানের কথা আমরা কখনই ভুলবো না।
প্রয়াত কমরেড সমর মুখার্জিকে একজন আদর্শ কমিউনিস্ট হিসাবে ব্যাখ্যা করে বিমান বসু এদিন বলেন, সমর মুখার্জির গোটা জীবনটাই ছিল পার্টির জন্য, বলা যায় পার্টিই ছিল তাঁর জীবন। রাজনীতির শুরুর জীবনে স্বদেশী আন্দোলনের সোপান বেয়েই তিনি কমিউনিস্ট রাজনীতির ধারায় এসেছিলেন। ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন দিয়েই তিনি শুরু করেছিলেন বামপন্থী রাজনীতি। তিনি ছিলেন সারা দেশের একজন অগ্রগণ্য কমিউনিস্ট নেতা। সংসদীয় রাজনীতিতে তিনি দেশের শ্রমিকশ্রেণীর কথাই বলেছেন।
সাংসদ হিসাবেও তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়। সমর মুখার্জি এভাবেই হয়ে উঠেছিলেন কমরেড সমর মুখার্জি। মানবিকতার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অনন্য। তিনি নিজে এপার বাংলার মানুষ হয়েও ওপার বাংলার হতশ্রী মানুষদের জন্য ছিল তাঁর দরদী ভূমিকা। একজন কমিউনিস্ট হিসাবে আদর্শ জীবনযাপনের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন দৃষ্টান্ত স্বরূপ।
থাকতেন পার্টির কমিউনে। নিরুপম সেন কমরেড সমর মুখার্জির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি ছিলেন একজন আদর্শ কমিউনিস্ট। সকলের কাছেই শ্রদ্ধেয়। সহজ–সরল জীবনধারায় অভ্যস্ত এই কমিউনিস্ট নেতা নিজের চারিত্রিক গুণাবলীর জন্য অনন্য এক জায়গা করে নিয়েছিলেন সর্বত্রই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।