আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

।। আমার হাইস্কুল।। পর্ব-৪।।

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা... আমরা তখন ক্লাশ সিক্সে পড়ি। ১৯৮০ সালের অক্টোবর- নভেম্বর মাস হবে। শীত আসি আসি করছে। আমাদের সঙ্গে পড়তো ফারুক মোল্লা। ফারুকের বড় বোন পূর্ণিমা আপা সে বছর আমাদের স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেবেন।

আর ফারুকের বড় ভাই জুবেরী আলম তখন আমাদের স্কুলের নিউ টেনের ছাত্র। আমাদের স্কুলের সবচেয়ে চৌকশ গোলরক্ষক জুবেরী আলম। তো লেইজার পিরিয়ডে আমরা সুজিতদাদের বাগানে গেছি প্রাকৃতিক কাজ সারতে। সেখান থেকে জীবেস স্যারের বাসার পেছন দিকটা দেখা যায়। হঠাৎ আমরা খেয়াল করলাম জীবেস স্যারের বাসার অন্দর মহলে সাংঘাতিক ভিড়।

আর একটা হৈ হল্লার শব্দ। আমরা ঘটনা জানার জন্যে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সেখানে হাজির হলাম। ইতোমধ্যে পূর্ণিমা আপাকে মেয়েরা ধরাধরি করে জীবেস স্যারের একেবারে সামনের ঘরের বসার রুমে এনে মাটিতে শুইয়ে দিয়েছে। ঘটনা কি? পূর্ণিমা আপা'র হঠাৎ কি হল? এর মধ্যে কে বা কারা যেনো আওয়াজ করলো, জীনের আছর। আর সেই অনুযায়ী, স্কুলে যারা জুতা স্যান্ডেল পড়ে আসে, তাদের সবার জুতা স্যান্ডেল পূর্ণিমা আপা'র চারপাশে ঢিবি দেওয়া হল।

আমরা তখনো স্কুলে স্যান্ডেল পড়া শিখি নাই। খালি পায়ের ছাত্র। আমরা পূর্ণিমা আপা'র অমন মুহূর্তে কোনো উপকার করতে পারলাম না। উল্টো, আমাদের লিলিপুটদের অনন্ত স্যার খামাখা ভিড় না করার নির্দেশ দিলেন। তবুও আমরা পরিস্থিতি'র উপর একটা নজর রাখার জন্য দূর থেকে দর্শক হলাম।

ফারুকের আপা'র এই দশায় ফারুক পূর্ণিমা আপা'র পাশে জুবেরী ভাই'র সঙ্গে বসার সুযোগ পেল। এর মধ্যে কে বা কারা যেনো সউদ্যোগে ওঁঝা আনতে গিয়েছিল। ওঁঝা আর কেউ নন। আমাদের অনন্ত স্যারের বাড়ির দক্ষিণ পাশে'র জটাবুড়ি। জটাবুড়ি নিঃসন্তান বিধবা।

ঝাড়ফুঁক তাবিজ-কবজ দিয়ে তার সংসার চলে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে জটাবুড়ি হাঁফাতে হাঁফাতে এসে হাজির হল। জটাবুড়ির নির্দেশে পূর্ণিমা আপাকে জীবেস স্যারের বাসার পেছনের নিমগাছ তলায় নেওয়া হল। আর স্যারের বাসায় ভিড় কমাতে মেইন দরজায় খিল মেরে দেওয়া হল। সৌভাগ্যবান কয়েকজন শুধু ভেতরে থাকার সুযোগ পেল।

জীবেস স্যারের বাসার ঠিক পশ্চিম পাশে স্কুলের সমান্তরাল উত্তর-দক্ষিণ লম্বা কুয়া। সেই কুয়ার ওপারে হেডস্যারের মরিচের ক্ষেত। উপায় না থেকে আমরা জীবনের নের্তৃত্বে সেই মরিচ ক্ষেতে চলে গেলাম। ওখান থেকে শুধু মানুষের ভিড়টা দেখা যায়। আর জটাবুড়ি'র চিৎকার শোনা যায়।

আমরা তবু সেই মরিচ ভিটায় ঠায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি দেখতে লাগলাম। জীবেস স্যারের স্ত্রীকে আমরা ডাকতাম কাকীমা। কাকীমা বেশ পরিপাটি ভদ্রমহিলা। বাসার প্রত্যেকটি জায়গা ঝাড়ু দেবার জন্য আলাদা আলাদা ঝাড়ুও ছিল তার। পেছনের উঠোন ঝাড়ু দেবার যে ঝাড়ু, সেই ঝাড়ু তখন জটাবুড়ি'র হাতে।

সেই ঝাড়ু দিয়ে জটাবুড়ি তার কেরামতি দেখাচ্ছেন। কি সব মন্ত্রতন্ত্র পড়ে জটাবুড়ি লাফ মেরে শূন্যে ওঠেন। মাটিতে নেমেই পূর্ণিমা আপা'র চুলে সাঁই সাঁই করে বারি মারেন। এভাবে কিছুক্ষণ চলার পরেই পূর্ণিমা আপা'র জ্ঞান ফিরলো। ততোক্ষণে ফারুক ভিড় ঠেলে ক্লাশরুমে পৌঁছেছে।

আমরা সবাই ফারুককে ঘিরে ধরলাম। ফারুক বললো, পূর্ণিমা আর অমাবস্যায় আপা'র মাঝে মাঝে এমন অবস্থা হয়। কিন্তু আগে সব সময় রাতের বেলায় হতো। এই প্রথম দিনের বেলায় ঘটলো আর তা স্কুলে থাকা অবস্থায়। পূর্ণিমা আপা খুব সুন্দরী ছিলেন।

আমাদের বেলায়েত স্যারের ছোটবোন নাসরীন আপা আর পূর্ণিমা আপা স্কুলের সবচেয়ে সুন্দরী নারী। আবার তারা দু'জনেই একসাথে পড়েন। তখন অনেকেই নাসরীন আপাকে পূর্ণিমা আপা'র এই জীনে ধরার বিষয় নিয়ে জেরা করেছিল। নাসরীন আপা বলেছিল, পূর্ণিমার যে জীনের আছর আছে তা সে জানতোই না। নাসরীন আপাও খুব ঘাবড়ে গিয়েছিল।

তো পূর্ণিমা আপা'র জীনের আছর ও জটাবুড়ি'র ঝাড়ু দিয়ে সুচিকিৎসা তখন স্কুলে একটা মজার বিষয়ে পরিনত হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আমাদের ক্লাশের মেয়েরা পড়া ঠিক মতো না পারলে নির্মল স্যার হেসে হেসে ওই ঝাড়ু চিকিৎসার রেফারেন্স টানতেন। মেয়েরা তখন ভয়ে জড়সড় হয়ে যেতো। আমাদের স্কুলের সবচেয়ে রসিক স্যার ছিলেন নির্মল স্যার। ক্লাশে আসার সময় চক-ডাস্টার আর রোলকল খাতার সঙ্গে সব সময় বেত নিয়ে ঢুকতেন।

কিন্তু সেই বেতের ব্যবহার তিনি একবার মাত্র করেছিলেন আমাদের গৌতমের উপর। বাকি সময় ওই বেত দিয়ে স্যার শুধু ভয় দেখাতেন। নির্মল স্যার আরেকটা কাজ করতেন। চক ছোট করে ভেঙে পড়া না পারা ছেলেটির উদ্দেশ্য মার্বেলের নিরীখ করতেন। আমাদের মোস্তফা একবার স্যারে ছোড়া চক টুপ করে গিলে ফেলেছিলেন।

স্যার একটু লজ্বা পেয়ে মোস্তফাকে ধমক মেরেছিলেন, এটা কী করলি? চমচম ছুড়ি নাই তো? এটা তো তোর খাবার কথা না? তুই হাইবেঞ্জের উপর দাঁড়া। গোটা ক্লাশের বাকি সময়টুকু মোস্তফা হাইবেঞ্জের উপর ঠায় দাঁড়িয়েছিল চক গেলার অপরাধে। নির্মল স্যার ক্লাশ থেকে বের হবার আগে আগে মোস্তফাকে ডেকে বললেন, তোর বাবাকে হাটের দিন আমার সঙ্গে দেখা করতে বলবি। মাস্তান হইছো, না? পরে আমরা যখন এসএসি পরীক্ষা দেব তখন মোস্তফা বয়স জালিয়াতি করে সেনাবাহিনীতে সেপাই পদে ঢুকে গেল। .......................চলবে........................... পর্ব ১, ২ ও ৩ লিংক এখানে Click This Link Click This Link Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।