আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রেসিডেন্টও স্বজন হারিয়েছেন, ন্যায়বিচার পেলাম না

আপনাদের সমর্থন আমাকে লিখার প্রেরনা যোগায়। লক্ষ্মীপুরের আলোচিত এডভোকেট নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এ এইচ এম বিপ্লবকে প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ক্ষমা করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন নিহতের স্ত্রী শাহিন রাশিদা ইসলাম। বলেছেন, ন্যায়বিচার পাইনি। প্রেসিডেন্ট ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে আমাদের বঞ্চিত করেছেন। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে, প্রেসিডেন্ট নিজেও আপনজন হারিয়েছেন।

তার বিচারও চাইছেন। কিন্তু তিনিই কিভাবে আরেক স্বজনহারা স্ত্রী আর সন্তানের ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করে অপরাধীকে ক্ষমা করে দিলেন! শাহিন রাশিদা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রেসিডেন্ট যদি আমার স্বামীর ঘাতককে ক্ষমা করে দিতে পারেন, তাহলে তার স্ত্রী হত্যার অপরাধীকেও তো তাই করতে পারেন। নিশ্চয়ই তা করবেন না? তাহলে আমাদের ক্ষেত্রে কেন তিনি ন্যায়বিচার করলেন না? এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনায় করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। গতকাল রাজধানীতে শাহিন রাশিদা ইসলাম তার বাসায় এ প্রসঙ্গে মানবজমিন-এর সঙ্গে কথা বলেন। তার মতে, যারা মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেনি- সৎ ও সমাজে একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিতজনকে জঘন্যভাবে খুন করে পার পেয়ে গেল।

রাষ্ট্র আইনের শাসনকে বিবেচনা করলে তা হতো না। তিনি বলেন, এডভোকেট নুরুল ইসলাম একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। কিন্তু তাই বলে কোন বিনিময় চাননি বেঁচে থাকতে। এমনকি তার সন্তানদেরও তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বলে আলাদা কোন সুবিধা নিতে দেননি। সবাইকে দেশের নাগরিক হিসেবে সমান চোখে দেখেছেন।

সেই লোকটিকে যারা খুন করলো, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও তো তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে ন্যায়বিচার পেতে পারতেন। অথচ স্বাধীন দেশে খুনিরা রাষ্ট্রের কাছে ক্ষমা পেয়ে গেল। তিনি জানান, ক্ষমাপ্রাপ্ত অপরাধী লক্ষ্মীপুরের সন্ত্রাসী ও সরকারি দল আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতা, পৌরসভার মেয়র আবু তাহেরের ছেলে। এ রকম দুর্ধর্ষ অপরাধীকে ক্ষমা করে দেয়ার পর সঙ্গত কারণেই আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। দিন কাটছে চরম আতঙ্কে।

স্বামীকে হারিয়েছি। এখন সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে ভয় হচ্ছে। নিজের জন্যও ভয় লাগছে। এখন হয়তো আমাদেরও মৃত্যুর পরোয়ানা হাতে নিয়ে ঘুরতে হবে। আতঙ্কের জীবন কি জীবন হতে পারে? শাহিন বলেন, অপরাধীর শাস্তির আশায় এত বছর অপেক্ষায় ছিলাম।

পাইনি। উল্টো অপরাধীর ক্ষমা দেখতে হয়েছে। আমি আমার সন্তানদের কি জবাব দেবো? তারা সবার ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। যখন নুরুল ইসলাম নিহত হন, তখন তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মাত্র ৩০০ টাকা ছিল। এ অবস্থায় আমি প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলাম- কিভাবে তার আমানত এই সন্তানদের মানুষ করব আর সংসার চালাবো।

সেই থেকে অনেক কষ্টে সংসার টেনে নিয়ে আসছি আজ পর্যন্ত। ভাবছিলাম, তাকে যারা খুন করেছে তাদের শাস্তি হতে দেখবো। কিন্তু তা হলো না। এর বিচারের ভার তিনি আল্লাহ তায়ালার ওপর ছেড়ে দিয়ে মন্তব্য করেন, দেশে আইন আছে বলে মনে হয় না। যে ক্ষমতায় থাকে তার স্বার্থেই আইন ব্যবহার হয়।

আমরা এই সংস্কৃতির শিকার হয়েছি। এদিকে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এড. নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার ফাঁসির আসামিকে ক্ষমার খবর ছড়িয়ে পড়লে শাহিন রাশিদা ইসলামের মতো নিহত ছাত্রদল নেতা ফিরোজ ও নিহত যুবলীগ নেতা কামালের পরিবারের সদস্যরাও শঙ্কা প্রকাশ করেন। এই দুই মামলায় বিপ্লব যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ডাদেশ মওকুফের খবরে লক্ষ্মীপুরের সাধারণ মানুষের মাঝেও চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

আর আওয়ামী লীগ নেতাদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। জেলা শ্রমিক দল নেতা ইকবাল হোসেন ছুট্টু জানান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান এম এ তাহের ও তার পুত্র বিপ্লব লক্ষ্মীপুরে আধিপত্য বিস্তার করে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ক্ষমা পাওয়ার পর আবারও লক্ষ্মীপুর সেই সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হতে পারে। জেলা বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড. আহমেদ ফেরদৌস মানিক জানান, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যে কাউকে ক্ষমা করার অধিকার রাখেন। কিন্তু এড. নুরুল ইসলাম হত্যা একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা।

এই মামলার ফাঁসির দণ্ডাদেশ মওকুফ করায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ আইনের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। এই ক্ষমায় খুনিরা উৎসাহিত হবে। জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এম আলাউদ্দিন বলেন, আইনের লড়াইয়ে বেরিয়ে আসতে পারলে আজকের এই বিতর্ক সৃষ্টি হতো না। প্রসঙ্গত, ২০০০ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর রাতে লক্ষ্মীপুর শহরের মজুপুরস্থ নিজ বাসা থেকে জেলা বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক এড. নুরুল ইসলামকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।

এটি তখন দেশজুড়ে আলোচিত ঘটনা ছিল। ২০০৩ সালে এই মামলার রায়ে বিপ্লব সহ ৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও ৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারিক আদালত। দীর্ঘ ১০ বছর সময়ের বেশি পলাতক থাকার পর চলতি বছরের ৪ঠা এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করে ফাঁসির দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামি এ এইচ এম বিপ্লব। এর পর তার পিতা লক্ষ্মীপুর পৌর মেয়র এম এ তাহের পুত্র বিপ্লবের প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ই জুলাই এই সাজা মওকুফের আদেশ কার্যকর হয়।

সুত্রঃ Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।