আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৭ বছর ধরে সামহোয়্যার ইনে

.......অতঃপর মৃত্যুর প্রতীক্ষা সাত বছর আগে আমি কেমন ছিলাম, কোথায় ছিলাম, স্মরণ আছে। কারণ ৭ বছর আগে ঠিক এই রাতেই সামহোয়্যার ইনে নিবন্ধণ করি। সবার মাঝেই লেখক সত্ত্বা আছে কম-বেশি, অনেকের সেটা বেরিয়ে আসে ভেতরকার তাড়না থেকে। লিখলেই সেটি ছাপা হবে, প্রকাশক পাবেন সেটির নিশ্চয়তা যখন থাকেনা, তখন পাঠক পাওয়া হয়না। ব্লগে প্রায় শর্তহীন মুফতে পাঠক পাওয়ার বিষয়টি নাড়া দিয়েছিল সেদিন।

তবে পাঠক বা জনপ্রিয়তা পাবার চেয়ে ভেতরকার তাড়না, তাগদা গুলোকে কথামালার মাঝে দিতে পেরে একটা প্রশান্তি হত, শুধু এ জন্যই মাঝে মাঝে ব্লগে লেখা। ফেইসবুক, টুইটার জনপ্রিয় হবার সুবাদে অনেকেই অনুব্লগ লিখেন, তড়িত পাঠক ও পাঠ প্রতিক্রিয়া পাবার জন্য। তারপরেও মনে হয়না, ব্লগের প্রয়োজনীয়তা এতটুকু কমেছে। শাহবাগের আগেও ব্লগ বিদ্বেষী মানুষ ছিলেন, যারা সামাজিক যোগাযোগের ভিন্ন মাধ্যমে সক্রিয় থাকতেন। এখনো আলোড়ন তোলার জন্য ফেইসবুকই জনপ্রিয় মাধ্যম।

তবে সামহোয়্যার ইন কে "ছাগুর খোয়াড়" বলে উদ্ধতভঙ্গিতে নিন্দা করেন, তারাও স্বীকার করবেন, এটি সর্বাধিক পঠিত ও হিট প্রাপ্ত ব্লগ। এস্কিমো, নিঝুম মজুমদার বা রাগিব হাসানের মত খ্যাতিমান ব্লগাররা এখনও এখানে লিখেন বলে এই ব্লগের প্রাণ চলে যায়নি বলেই মনে করি। ব্লগকে আমি আক্ষরিক ব্লগ হিসেবেই লিখতাম। নিজের কষ্ট উপশমের একটা দৈনিক, তারপর কালক্রমে মাসিক, তারপর ত্রৈমাসিক স্থান। আমি জেনেছি নাস্তিক হবার পেছনে মানুষের যুক্তি, সাম্প্রদায়িক আক্রমণের শিকার হয়ে পাল্টা সাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠার কারণ, মানুষের গোপন রাগ, কষ্ট, ক্ষোভ, প্রতিপক্ষক গালি দেবার বিমলান্দের উপলক্ষগুলো।

শিখেছি হুট হাট প্রতিক্রিয়া দেখানো, বা সিদ্ধান্তে চলে আসাটা প্রায়শই অমঙ্গলজনক। নিষিদ্ধ কথা, না বলা কথা, নিজের কথাকে বিরুদ্ধবাদীদের মুখের ভাষায় লিখে স্যাটায়ার বলে চালিয়ে দেয়া যায়। কিংবা "ছাগু" ধরার জন্য কথার ফাঁদ পাতা। আমার বরং সচলেই চলে যাওয়া উচিৎ ছিল। খ্যাতিমান ব্লগারদের সান্নিধ্যে নিজের মতামতকে শুদ্ধ করার প্রয়োজন ছিল।

সেখানে বরং আদর্শিক উৎপাতটা বেশি। সামহোয়্যার ইনের সেই যুদ্ধ যুদ্ধ দিনগুলো ২০০৯ পরেই শেষ, সব যোদ্ধারা বিদায় নেয়াতে বরং শান্তিমত নিজের ছাইপাশ ভাবনা গুলো লেখা যায়। সুন্দর ভাষা প্রয়োগ করেও রাগ জানানো যায়, পরাজিত করা যায়, সেটার জন্য কাউকে গালি দেবার, পিতৃপুরুষের ধর্ম পরিচয়, বাবা-মার সামাজিক অবস্থানকে হেয় করার প্রয়োজন পড়েনা - এতটুকু মাথায় রাখলে ঝামেলা এড়ানো যায়। ফেইসবুক, ব্লগ যাই হোক সেটা দিয়ে বাস্তব জীবনকে কোনভাবেই প্রভাবিত করার পক্ষপাতী না আমি। দুটোর পরিসর ও প্রয়োজন আলাদা।

বাস্তব জীবনের যুদ্ধ, রুটি-রুজির দুশ্চিন্তা সামলিয়ে ব্লগে এসে নীতি-নৈতিকতা, বিচার-অবিচার, ধর্ম-অধর্মের পক্ষে রাতভর যুদ্ধ করার মত বিলাসিতায় আমি নিতান্তই অপারগ। সেটার জন্য সব্যসাচী মানুষ অনেক আছেন, তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন। সেখানে মূলধারার সচলায়তনের যুদ্ধে অংশ না নেয়া, বা ছাগুর খোয়াড়ে অনন্তকাল থেকে যাওয়া নিয়ে আমার কোন আক্ষেপ নেই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।