An Engineer needs not to be a perfectionist or a fastidious intellect. An Engineer needs to be someone who can keep pursuing the goal with whatever resources available at a particular moment. প্রতিদিন অফিসে এসে যখন কিউবিকল এ বসি, সবার প্রথমে চোখ যায় কিউবিকলের দেয়ালে আটকিয়ে রাখা একটা কাগজের দিকে।
কিছু খুবই প্রিয় কথা লেখা কাগজটিতে। প্রায় বেশ কয়েকমাস আগে নটার নাটাই নামের এক ব্লগারের ব্লগে কথাগুলো পড়েছিলাম। কথাগুলো ভিতরে দাগ কেটে গিয়েছিলো দেখে প্রিন্ট করে চোখের সামনে রেখেছি। যখনই নিজেকে নিয়ে সন্দেহ হয়, নিজের কনফিডেন্সে আঘাত আসে তখনই লেখাটা পড়ি।
লেখাটিতে একটা প্যারা আছে এরকমঃ
" বেশিরভাগ মানুষ যথেষ্ট সৎ না, নিজের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করার জন্য। বেশিরভাগ মানুষ নিজেকে শ্রেয়তর ভাবতে চায়, সেজন্য তারা নিজেদেরকে শ্রেয়তর করার বদলে চোরের মতো নিজের কাছ থেকে নিজের সব সীমাবদ্ধতা ঢেকে ফেলে - খুব সহজ শর্টকাট - কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ তাই করে। "
কথাটি সত্যি। আমরা নিজেরা নিজেদের ভূলগুলো চোখে দেখিনা, কিন্তু নিজেকে অন্যদের চাইতে শ্রেষ্ঠ প্রমান করতে গিয়ে আমরা নিজেদের ভূলগুলো নিজের কাছে থেকে লুকিয়ে ফেলে অন্যের সমালোচনা করতে পছন্দ করি। এটা আমাদের হিপোক্র্যাটিক নেচারের একটা অংশ।
কয়েকদিন আগে ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, ""উল্টা-পাল্টা ড্রেস পরিহিত মেয়েদেরকে ইভ-টিজিং করার অনুমতি দেওয়া হোক " নামের একটা গ্রুপের মেম্বার ৬০০০ এর কাছাকাছি কিন্তু "Say no to ConocoPhillips in Bangladesh" নামের একটা গ্রুপের মেম্বার সংখ্যা ৭০০।
স্ট্যাটিস্টিক্স টা বেশ মজার আর দুঃখজনক। "
কথাটা বেশ তিক্ত। কিন্তু সত্যি। আমরা সোশাল ইশ্যু নিয়ে মাথা ঘামাইনা, সরকার কি করছে এইটা নিয়ে মাথা ঘামাইনা কিন্তু আমরা মেয়েদের পোষাক-আশাক নিয়ে উলটাপালটা গ্রুপ খুলে সেখানে মেয়েদের ছবি তুলে তাদের নিয়ে আরেক ধরনের টিজিং করি।
মন্তব্য গুলা পড়লে বুঝা যায় যে তারা শালিনতা রক্ষার ধ্বজ্জ্বাবাহি অশালিন মানসিকতার লোক।
আমরা কি করি? স্কুলের শিক্ষক দ্বারা, পরিচিত লোকেদের দ্বারা, অথবা রাস্তায় চলা বখাটে দের দ্বারা কোনো মেয়ে নির্যাতিত বাঁ অপমানিত হয় আমরা বসে বসে বাদাম খাই, খোসা ফেলাই, লবন চাটি আর আহা উহু করে বলি যে সব মেয়েদের ই দোষ। আমরা কেউ থামাতে যাই না, কেউ প্রতিবাদ করতে যাই না, সবাই চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায়ে থাকি আর ভাবি "আরে নাহ! যারা করছে আর শিকার হচ্ছে দোষটা তো তাদেরই!! আমরা তো করছিনা!! আমরা তো অনেক ভালো!!!"
একটা অন্যায় দেখে চুপ করে বসে থাকা মানে অন্যায়কে সাপোর্ট করা।
স্কুলে আমাদের একজন শিক্ষক ছিলেন। নুরুল ইসলাম স্যার।
কৃষিশিক্ষা পড়াতেন। একজন অসাধারণ শিক্ষক যিনি আমাদেরকে পড়ানোর পাশাপাশি জীবন সম্পর্কে অনেক শিক্ষা দিতেন। ক্লাস সিক্সে যখন আমরা ধানমন্ডি গভঃ বয়েজ এ পড়তাম তখন উনি ক্লাস নেয়ার সময় ফাকে ফাকে আমাদেরকে বিভিন্ন সোশাল ইস্যু সম্পর্কে গল্প বলতেন, বলতেন :
" তোরা যখন বড়ো হবি, আর যাই করিস না কেনো যৌতুক নিবি না। এক সময় বিয়ে করবি, ছেলেমেয়ের বাপ হবি। জীবনে যাই হোস না কেনো ন্যায়বান হবি।
তোরা অনেক ভালো ছাত্র হতে পারিস, কিন্তু তোরা যদি বৌ পিটাস, অন্যের হক মারিস, তোর সামনে কেউ অন্যায় করলে চুপ করে থাকিস, কেউ একটা মেয়েকে বিরক্ত করলে চোখ নিচু করে অন্যদিকে চলে যাস তাহলে বুঝবি , যে তোদের শিক্ষা বৃথা। তোরা ইঞ্জিনিয়ার বাঁ ডাক্তার হতে পারিস, কিন্তু তোরা মানুষ হস নাই।
যেখানেই যাবি না কেনো কথাগুলো কখনোই ভুলবি না। "
ক্লাস সিক্সের একটা ছেলে কতটা বুঝে? হয়তোবা বেশি না। কিন্তু এই শিক্ষা, এই নীতি ছোটবেলা থেকে তিনি সহ আমার জীবনের দেখা অনেক প্রিয় শিক্ষক তাদের ছাত্রদের কে দিয়ে যেতে চেস্টা করেছেন।
এই শিক্ষা গুলো অনেক জরুরী।
নুরুল ইসলাম স্যার কে স্কুল জীবনে পিছনে থেকে অনেক কিছু বলেছি, কিন্তু এখন যখন উনার কথা চিন্তা করি তখন শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায় এধরনের মানুষগুলোর জন্য। যাদের লক্ষ্য ছিলো মুখস্ত করে রেজাল্ট যুক্ত কিছু তোতাপাখি তৈরি করা না, কিছু মানুষ তৈরি করা যারা ভূল থেকে ঠিক টা আলাদা করতে শিখবে। যারা জীবনযুদ্ধে যখন নামবে তখন নিজেকে প্রশ্ন করবে, নিজের ভূলগুলো নিজে খুজে বের করবে, যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে, যারা হেরে ভেঙ্গে না পড়ে আবার দ্বিগুন জেদ নিয়ে নিজেদের লক্ষ্য কে পেতে যুদ্ধে নামবে, সর্বোপরি, তারা মানুষ হবে।
স্কুল থেকে বের হয়েছি ৮ বছরের বেশি হয়ে গেছে।
এখন যখন ফিরে তাকাই , তখন একটা কথা বার বার মনে হয়, কোথাও একটা ছোট্ট ভূল হয়ে গিয়েছে। আমরা শিক্ষার মূল উদ্দ্যেশ্য বুঝে উঠতে পারিনি। আমরা এখনো মানুষ হতে পারিনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।