ও গানওয়ালা, আর একটা গান গাও... আমার আর কোথাও যাবার নেই, কিচ্ছু করার নেই।
ছোটবেলায় নাটক সিনেমায় প্রায়ই রাজ রাজা-জমিদারদের নলা যুক্ত ফুলদানী সদৃশ একটি যন্ত্রে ফুঁক ফুঁক করে ধূমপান করতে দেখতাম। চাকর গোছের কেও সুন্দর করে আগুন জ্বালিয়ে সাজায় আধশোয়া মনিবকে একটা নল ধরিয়ে দিচ্ছে। বেশ বনেদি একটা ভাব!
যা হোক সে সময় তা টেনে দেখার কল্পনাও করতে পারতাম না। যুগ বদলায়।
আবার যেন ফিরেও আসে! তাই প্রমান করতে ঢাকায় এখন হুক্কার ছড়াছড়ি! যেখানে সেখানে "শিশা লাউঞ্জ"। তবে আমি একজন নিপাট হোমলি পারসন। সব কিছু ঘরে বসে করতে ভালবাসি। এই পোস্টে জানবেন বাসায় কিভাবে শিশা খাবেন, দাম কত ইত্যাদি। ।
ধারনা করা হয় এই উপমহাদেশে প্রথম মোঘল সম্রাট আকবরের পারস্য কবিরাজ আবুল ফতেহ্ জিলানী হুক্কার ডিজাইন উদ্ভাবন করেন। তামাক পোড়ানো ধোয়া, পানিতে পিউরিফাই এবং ঠান্ডা করে সেবন করার পদ্ধতি শুরু হয় তখন।
আরবীয়রা এটাকে Nargileh বলে। কাছাকাছি আরো কিছু শব্দ আছে Nargeela, Argeela, Argileh, Argilee। Nargileh শব্দটি পারসিয়ান শব্দ nārghile হতে উৎপত্তি।
ধারনা করা হয় এটা সংস্কৃতি শব্দ "নারিকিলা" এর পরিবর্তিত রুপ। দেখা যাচ্ছে, ঘুরে ফিরে আমাদের নারিকেলের হুক্কা থেকেই এই জিনিসের উৎপত্তি, নামকরণ।
বর্তমান যুগে সারা বিশ্বে Shisha/sheesha নামটা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কারন আমেরিকা-ইউরোপে এই নামটির প্রচলন বেশি। যদিও Shisha শব্দের অর্থ তামাক।
মতান্তরে shīshe মানে কাঁচ। হুক্কার নিচে পানির জারটা কাঁচের তৈরি হয়, সে কারনেও এই নামকরণ হতে পারে!
(হুক্কার কারিগর। ১৮৬০ সালে পূর্ব বাংলাতে তোলা।
ছবি: ব্রিটিশ মিউজিয়াম থেকে সংগ্রহ)
গ্রাম বাংলায় নারিকেলের খোল দিয়ে তৈরি হুক্কার সাথে সবার কম বেশি পরিচিত। যার সাথে কাঠের নলের উপর তামাক রাখার একটি কল্কে থাকে।
এর সাথে বিদেশী হুক্কা গঠন প্রণালী কিছুটা আলাদা হলেও কাজ এক। অনেকে বলে এই উপমহাদেশে কোন এক কালে এটা দিয়ে তামাক নয় শুধু গাঁজা খেতে ব্যবহার হত।
শিশার গঠনে সবার উপরে থাকে মাটি বা মার্বেলের তৈরি কল্কে। যার মধ্যে তামাক এবং জ্বলন্ত কয়লা থাকে। নিচে আছে কাঁচের তৈরি পানির জার।
মাঝে অংশে কারুকাজ করা স্টিলের পাইপ থাকে। যার নিচের অংশে ধোয়া টানার পাইপ এবং অপর দিকে একটি নির্গমন ভাল্ব সংযুক্ত। আছে একটি থালা। যার উপর ছাই পরে। কয়লা ধরার চিমটা।
ইত্যাদি।
যা হোক শিশা খেতে হলে তার গঠন প্রণালী খুব একটা জানার প্রয়োজন নেই। বরং আসুন জেনে নেই ঢাকাতে কোথায় শিশা কিনতে পাওয়া যায় এবং তার দাম কত। এবং ঘরে বসে খেতে হলে কি কি করতে হবে।
শিশা কিনতে ঢাকার নিউমার্কেটের পাশে দুবাই মার্কেটে চলে যান।
বড়গুলো ৩ হাজার টাকার মধ্যে পাবেন। মাঝারিটার দাম দেড় হাজার ছোটটা আরো কিছু কম।
তবে সমস্যা হচ্ছে ফ্লেভার (তামাক) কিনতে হলে বেশ ভাল টাকা খরচ করতে হয়। ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা মধ্যে বহু ফ্লেভার পাবেন।
এক প্যাকেট কিনলে বেশ কয়েকবার ব্যবহার করতে পারবেন।
শিশাতে কত যে ফ্লেভার আছে তা ধারনাই করতে পারবেন না। শিশা টানার মূল মজাই এখানে। আপনি সিগারেট খাচ্ছেন মোটামুটি দু একটা ব্র্যান্ডের। কিন্তু শিশার ফ্লেভার বলা যায় স্কাই ইজ দা লিমিট।
নিজেও কিছু রেসিপি দাড়া করাতে পারেন তামাকে এবং জারের পানিতে নানা রকম আইটেম মিক্স করে।
ইন্টারনেটে/ইউটিউবে এ বিষয়ে জটিল/মজার তথ্য পাবেন। ঘেটে দেখতে পারেন। নতুন কিছু বানাতে পারলে জানাতে ভুলবেন না।
আর লাগবে কয়লা। আগে দেশী কয়লা কষ্ট করে আগুন দিয়ে লাল
করে কল্কেতে বসাতে হত।
এখন চাইলে শিশাতে ব্যবহার করার জন্য আধুনিক কয়লা কিনতে পাওয়া যায়। দশ পিছের প্যাকেটের দাম ৫০০ টাকা যদিও। তবে এটা অনেকক্ষণ ধরে জ্বলবে, নিভে যাবার ঝামেলা নেই।
আর লাগবে কিছু ফয়েল পেপার। রাংতা কাগজের রোল কিনতে পাওয়া যায়।
চাইলে শিশা বেচার দোকান থেকে আলগা ৫০ টাকার কিনে নিতে পারেন।
স্টিলের রডটা বসানোর আগে নিচের জারে এমন পরিমান পানি দিন যাতে রডের নিচের মাথা পানিতে ডুবে থাকে। পানিতে মধু, মিস্টি যা বুদ্ধি আসে মিশিয়ে ট্রাই করতে পারেন। বাড়তি ব্লেন্ড ফ্লেভার পাবেন।
কল্কের গর্ততে মাঝারি পরিমান তামাক ফ্লেভার দিন।
যারা সিগারেট খোর, কড়া গন্ধ পছন্দ করেন তারা চাইলে কিছুটা সিগারেট মেশাতে পারেন। আবার গাঁজা প্রেমীদের পাল্লায় পরে অন্য কিছু মেশাবেন না যেন!
তারপর ছবির মত ফয়েল পেপার দিয়ে কল্কের উপরের বৃত্তটা ভাল মত মুড়িয়ে দিয়ে শলাকা দিয়ে দশ বারোটা ফুটা করুন। ব্যাস কল্কের কাজ শেষ। শিশার উপর এটাকে বসিয়ে দিন।
কেনা কয়লার সুবিধা এটার আকার ঠিক থাকে।
একটা ধরাইলেই এক কল্কে জ্বলে। ড্যাম হয় না।
চাইলে সাধারন কাঠ কয়লা/নারিকেলের শক্ত করে মোড়ানো ছোবড়া ব্যবহার করতে পারেন। তবে তাতে অনেক কাঠ খড় পুড়াতে হয়! হ্যাপা বেশি। যে কয়লাই ব্যবহার করেন না কেন তা ভাল করে লাল করে (চুলাতে বেস্ট তবে তাতে মায়ের হাতে ধরা খাবার সম্ভাবনা প্রবল থাকে) কয়লার টুকরোটি ফয়েলের উপর ছবির মত বসিয়ে দিন।
আগুন সেট হবার জন্য যার দম ভাল তাকে প্রথমে একটু জোরে টানতে দিন। যখন দেখবেন প্রতি টানে নিয়মিত ধোয়া বের হচ্ছে বুঝবেন শিশা তৈরি।
তারপর?.......
খাওয়া শেষে শিশার প্রতিটি অংশ আলাদা করে জারের পানি ফেলে পরিস্কার পানিতে ধুয়ে ফেলুন। তা নাহলে তামাকে বিশ্রি গন্ধ বসে যাবে।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ:
ধূমপান স্বাস্থের জন্য যতটা ক্ষতিকর তার চাইতে বাবা মার কাছে ধরা খাইলে বেশি ক্ষতি হবার আশংকা রয়েছে।
হিতোপদেশ:
শিশা খেতে চাইলে ঢাকার আনাচে কানাচে গড়ে ওঠা শিশা লাউঞ্জে যেয়ে অর্থ (নূন্যতম ৩০০ টাকা থেকে কয়েক হাজার টাকা) নষ্ট করার চেয়ে একবার কষ্ট করে কিনে নিয়া উত্তম। তাতে অর্থ এবং দৃষ্টির সাশ্রয় হবে।
বিতর্ক:
১. 'সিসা লাউঞ্জে' নতুন নেশা! -- তরুণ তরুণীদের নতুন নেশা।
২. শিশা লাউন্জে আমার এক সন্ধা (১৮+)
৩. Hookahs vs. Cigarettes
ভিডিও টিউটরিয়াল:
ইউটিউব।
(ডানে বামের গুলাও মাস্ট সি ভিডিও)
প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় কিছু ওয়েব সাইটঃ
১. হুক্কা কেনার/দেখার ভাল সাইট।
২. ফ্লেভার কেনার/দেখার সাইট।
৩. ফেসবুক গ্রুপ।
৪. উইকিপিডিয়া।
৫. আরো হুক্কা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।