বাতি ঘরের আলোয় সবাই আলোকিত হউক সাত রঙের চা শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্য। গ্লাসের দিকে তাকালেই দেখা যায় ভিন্ন রঙে চায়ের সাতটি স্তর। দেশি বলেন আর বিদেশি বলেন, যে পর্যটকই শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে যান না কেন সাত রঙের চা না খেয়ে ফিরেছেন এমন কাউকেই পাওয়া যাবে না।
তবে সাধারণ চা বানানোর রহস্য সবার জানা থাকলেও তৈরির রহস্য সাধারণের কাছে অজানা। সাধারণ চা থেকে এটিতে স্বাদেও রয়েছে ভিন্নতা।
সাতটি স্তরের স্বাদ সাত রকম।
চায়ের রহস্য খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে এর আবিষ্কারকের কথা। তার নাম রমেশ রাম গৌড়। বয়স চল্লিশ।
স্থানীয়রা জানান, তিনিই প্রথম এক গ্লাসে সাত রঙের চা বানানোর কৌশল বের করেন।
এ চা তৈরির জন্য বর্তমানে তার সুনাম সারা দেশ জুড়েই। এক সময়ের টং দোকানের চা বিক্রেতা এখন দেশের ভিন্ন মাত্রার চা আবিষ্কারক। রমেশ ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চারকির প্রস্তাবও পেয়েছেন। তবে ব্যবসার কারণে তা ফিরিয়ে দিয়েছেন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় প্রতিদিনই শত শত পর্যটক তার তৈরি চার স্বাদ পরখ করতে ছুটে আসেন শ্রীমঙ্গলে।
বর্তমানে তার দু’টি দোকান। একটি শ্রীমঙ্গলের মণিপুরী অধ্যুষিত এলাকা রামনগরে এবং অন্যটি শহরের কালিঘাট রোডের ১৪ রাইফেল ব্যাটালিয়ন ক্যান্টিনে।
কথা হয় এম মুসলিম চৌধুরীর সঙ্গে। থাকেন শ্রীমঙ্গলেই। তিনি প্রতি সপ্তাহে এ চা খেতে আসেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাত রঙের চায়ের প্রতিটি স্তরেই স্বাদ ভিন্ন। খেলেও আসে চাঙ্গাভাব। যা সাধারণ চায়ের চেয়ে একটু বেশিই। ’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে দেশের বেশকিছু স্থানে এ চা তৈরি করে। দু-একটি জায়গায় খেয়েছিও।
তবে রমেশের চায়ের স্বাদ আর কোথাও পাইনি। ’
রমেশ রাম গৌড় বাংলানিউজকে জানান, ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার আটানিবাজার গ্রামে তার বাড়ি। সেখানে অংশীদার নিয়ে ব্যবসা করতেন। এক সময় অংশীদার তার সঙ্গে প্রতারণা করে বসে।
তাই ভাগ্য বদলের উদ্দেশ্যে ২০০০ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে স্ত্রী, তিন ছেলে, ২ মেয়েসহ মাত্র ১ হাজার ৫শ’ টাকা নিয়ে শ্রীমঙ্গলে চলে আসেন।
রামনগর মণিপুরী পাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে শহরের একটি দোকানের কর্মচারীর চাকরি নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করেন তিনি।
কিন্তু ব্যবসায়ী রমেশ চাকরিতে মন বসাতে পারছিলেন না কিছুতেই। তাই ওই বছরেই চাকরি ছেড়ে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই) সংলগ্ন কাকিয়াছড়া চা বাগানে একটি চা’র দোকান খুলে বসেন।
এরপর রমেশ রাম গৌড় ২০০২ সালে এক গ্লাসে দু’রঙা চা আবিষ্কার করে শ্রীমঙ্গলে তোলপাড় সৃষ্টি করে ফেলেন। একই পদ্ধতিতে পরে তিনি এক গ্লাসে সাত স্তরের সাত রঙের চা আবিষ্কার করেন।
চা তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান, শুধু ক্লোন টি এবং বিভিন্ন ধরনের মসলার সংমিশ্রণে এক গ্লাসে একাধিক স্তরের চা তৈরি করা হয়। বর্তমানে সেই চা স্তর ভেদে ৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়।
রমেশ রাম গৌড় বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে তার ছেলে রাজু রাম গৌড়, রাজিব রাম গৌড়, দীপ্ত রাম গৌড় ও ভাই মানিক রাম গৌড় চা তৈরি করে থাকেন। ব্যবসা এখন জমজমাট। তাই চায়ের দোকান থেকেই তিনি প্রতিবছর সরকারকে নিয়মিত রাজস্ব দিচ্ছেন বেশ বড় অংকের।
সূত্র : Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।