ভালবাসি মা-মাটি-দেশ। স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর সকাল। এক নতুন সূর্যোদয়ের।
সাধারণ মানুষ স্বভাবতই জ্ঞানী জনের উপর নির্ভরশীল। যারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত, যারা রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড পরিচালন করেন তাদের প্রতি তাদের রয়েছে একটি আলাদা শ্রদ্ধাবোধ।
তাদের উপরে সাধারণের আস্থাও অনেকখানি।
আর তাই সমাজের এই অসাধারণ লোকদের উপর একটু বাড়তি দায়িত্বও বর্তায় বৈ কি। যাতে তাদের কথায় কাজে সাধারণ লোকজন বিভ্রান্ত না হয়।
৯০ ভাগ মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষের এই দেশের সাধারণ মুসলমানরা ধর্ম কম্ম যে যাই করুক না কেন। ধর্মীয় বিধি-নিষেধ যথাসাধ্য মেনে চলার চেষ্টা করে।
ধর্মের ব্যাপারে তাদের যথেষ্ট আনুগত্যও প্রকাশ পায় যখন কেউ তাদের ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করে তখনকার প্রতিক্রিয়া দেখে।
সাধারণের ধর্মের প্রতি এই আনুগত্যের কারণেই এ দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায়ও ইসলামী ব্যাংকিং রয়েছে সুবিধাজনক অবস্থায়। এদের ধর্মের প্রতি আনুগত্য আরও বেশি প্রকাশ পায় যখন একদল মাওলানা ইসলামের হেফাজতের ডাক দিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন। তখন দেখা যায় লক্ষ লক্ষ লোক তাদের সাথে রাস্তায় নেমে এসেছে।
জামাতে ইসলাম যখন ইসলামের দাওয়াত দেয় তখন সাধারণ মানুষ তাদের যুদ্ধংদেহী মনোভাবও নিমিষেই ভুলে যায়।
এমনকি আওয়ামী লীগ যখন ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে তখন তারা ধর্ম গেল বলে রবও তোলে। যদিও আমার বিশ্লেষণে এ ক্ষেত্রে দায়টা আওয়ামীলীগেরই। কারণ সাধারণ মানুষ তো দুরের কথা আওয়ামীলীগের অনেক কর্মী নেতার কাছেও এই ধর্ম নিরপেক্ষতার বিষয়টি পরিষ্কার নয়। সেক্ষেত্রে তাদের প্রতিপক্ষ যদি এই ধর্ম নিরপেক্ষতাকে ধর্মহীনতা বলে প্রচার করতে শুরু করে তা মোকাবেলা করা যে লীগের সোনার ছেলেদের পক্ষে অসম্ভব তা বলাই বাহুল্য। যেহেতু তারা এখনো ক্ষমতার তলানি কুড়াতেই ব্যস্ত।
আর বামরা তো এদেশে অচ্ছুতই হয়ে গেছে তারা নাস্তিকের আদর্শের ধারক বলে। যদিও তারা জোর গলায় বলেন তারা নাস্তিক নন। তথাপিও এই মুসলমানদের আস্থা অর্জনে তারা যে কখনোই সক্ষম হননি ইতিহাসই তার সাক্ষ্য দেয়। এ ব্যর্থতার দায়ভারও নিশ্চয়ই সাধারণের নয়?
বাকি থাকল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। নেত্রী যতই অত্যাধুনিক হন না কেন তার দল ও তিনি নিজে যেভাবে জামাতের তোষণ করেন।
হালে যেভাবে হেফাজতের সাথে একাট্টা হয়েছেন তাতে এদেশের সাধারণ মুসলমানরা ইসলামের রক্ষাকর্তা হিসেবে নির্দ্বিধায় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলিয় জোটকে মেনে নেবে এটাই তো স্বাভাবিক। বিশেষ করে হেফাজতে ইসলাম যখন তাদের সনদ প্রদান করছে।
এ পর্যন্ত সবই এক রকম ঠিক ছিল, গোলটা বাধল তখনই, যখন দেখতে পাই জামাত-হেফাজতের দ্বারা সনদ প্রাপ্ত দলটিই আবার সুদের মহাজন ড. ইউনুসের স্বার্থ-সম্মান রক্ষার্থে ব্যকুল হয়ে উঠল। তাহলে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত এই আয়াতের কি হবে ? যেখানে আল্লাহ বলেন-
“অতঃপর তোমরা যদি তা (বকেয়া সুদ) না ছাড়, তবে জেনে রাখ এটা আল্লাহ তায়া’লা ও তার রসূলের সঙ্গে যুদ্ধ । কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই ।
এতে তোমরা অত্যাচার করবেনা, অত্যাচারিতও হবে না । (সূরা-বাঁকারা,আয়াত-২৭৯)
এ প্রশ্নের উত্তর নিশ্চয় বিজ্ঞ ব্যারিস্টারদের ঠোটস্ত। কারণ এর উত্তরও তো তাদের দিতে হবে। তবে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন এও বলেছেন-
“তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশ প্রত্যাখ্যান কর? সুতরাং তোমাদের যারা এরূপ করে তাদের প্রতিফল পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা গঞ্জনা এবং কিয়ামতের দিন তারা কঠিন তম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে” (সূরা বাকারাহ; আয়াত: ৮৫)।
যা হয়ত আমার প্রশ্নের সহজ উত্তর হিসেবেও গণ্য হতে পারে।
সুদ সম্পর্কে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেখানে স্পষ্ট বলেছেন: সুদ হল সত্তর প্রকার পাপের সমষ্টি । তার মাঝে সবচেয়ে নিম্নতম হল-আপন মায়ের সাথে ব্যভিচার করা ।
এরপরেও যারা সুদের কারবারির পক্ষ নিয়ে গলাবাজি করে তাদের আর যাই হোক ইসলামের রক্ষক বলতে বাধে বৈ কি? অন্তত আমার বিবেকে। পাঠক মাত্রই তার নিজের খবরটি জানেন।
হেফাজতে ইসলাম মাঠে নেমেছিল ইসলাম ও নবী (সঃ)এর বিরুদ্ধে কুটূক্তি কারী ব্লগারদের শাস্তি নিশ্চিত করতে।
এটা তাদের ঈমানি দায়িত্ব, সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা যখন মহানবী (সঃ) এর এই হাদিসটি জানতে পারি -
“রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লা’নত করেছেন, সুদ খোরের উপর, সুদ দাতার উপর, এর লেখকের উপর ও উহার সাক্ষী দ্বয়ের উপর এবং বলেছেন এরা সকলেই সমান । {মুসলিম/৩৯৪৮-যাবির (রা, আবু দাউদ/৩৩০০, তিরমীযী/১২০৯}
তখন জটিল ধাঁধায় পড়ে যাই, কেননা উপরোক্ত হাদিস অনুযায়ী। আর যেই হোক বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ইসলামের সবথেকে বড় সুহৃদ হিসেবে স্বিকৃত বেগম খালেদা জিয়া বা তার দলের পক্ষে- একজন সুদখোরকে সমর্থন দানের কোন সুযোগ নেই। যেখানে স্বয়ং হেফাজতে ইসলাম তাকে এবং তার দলকে সনদ প্রদান করে।
অথচ বাস্তবতা হল, এ দেশে ইসলামের রক্ষক-প্রচারক জামাত ইসলাম যে মহান নেত্রী ও তার দলের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে নিজেদের নিরাপদ ভাবে। হেফাজতে ইসলাম, ইসলাম রক্ষার্থে যার অধীনস্থতা স্বীকার করে নেয়াকেই সর্বোত্তম পন্থা বলে মনে করে। সেই ১৮ দলীয় জোট নেত্রী ও তার দল নির্দ্বিধায় সমর্থন করেন সুদি মহাজনকে। শুধু সমর্থনই নয় মহাজনের হারানো গৌরব ফিরিয়ে দিতেও আজ তারা বদ্ধ পরিকর। আরও যেটা মজার বিষয় তা হল, মাননীয় নেত্রী ও তার দলের এই সমর্থনের বিরুদ্ধে জামাত বা হেফাজতের নেই কোন বিরোধিতাও।
তাহলে বিষয়টি কি দাঁড়াল; মহিলা নেতৃত্বের মতই সুদের ক্ষেত্রটিকেও এবার তারা তাদের সুবিধা মত জায়েজ করে নিলো?
যদি তাই হয়, তাহলে আমার মত অভাজনদের বলার কিছুই নেই। আমরা বেকুবের দল শুধু অবাক হয়ে দেখি- হেফাজত, জোট, সুদি মহাজন সব আজ এক কাতারে। তাদের প্রতিপক্ষ ধর্ম নিরপেক্ষ মহাজোট। বলাই বাহুল্য এবারের সাধারণ নির্বাচনে এই ধর্মই হবে একমাত্র কার্ড। সরকারের অতিকথক নেতৃবৃন্দের তা মাথায় আছে তো? তারা কি জনসাধারণের কাছে পাল্টা প্রশ্নটি ছুঁড়ে দিতে সক্ষম হবে যে, সুদি মহাজনকে নিয়ে এ কেমন ইসলাম রক্ষা!
ভবিষ্যতই বলে দিবে আত্মঅহমিকা গ্রস্থ লিগ বাস্তবতা বুঝতে আদৌ কতটা সক্ষম হবে।
এ নিয়ে আমাদের কোন মাথাব্যথা নেই। আমাদের গোল বেধেছে যে জায়গাটিতে এসে তা হল- যুক্তরাষ্ট্রের ফিলিস্তিন দরদের মত বাংলাদেশে নতুন যে উপাখ্যানের জন্ম হল। সে একই সাথে একটি নতুন প্রশ্নেরও জন্ম দিল- ইসলামের আসল রক্ষক তাহলে কে?
সুধিজন, একটু যদি খোলাসা করে দিতেন, আমাদের বিভ্রান্তির অবসান হত। যতদূর জানি সব পরিবর্তিত হয়, হতে পারে। অপরিবর্তিত কেবল মহা পবিত্র আল কুরআন আর মহানবী (সঃ)র হাদিস।
তবু দেখি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর- ইউনুসের পক্ষে বিএনপি-জামায়াত পন্থি ২১৯ বিশিষ্ট নাগরিকের বিবৃতি। দয়া করে এ অভাজনের বিভ্রান্তি নিরসন করে বাধিত করুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।