অভিলাসী মন চন্দ্রে না পাক, জোছনায় পাক সামান্য ঠাই সামার স্কুলে ইউনিভার্সিটি অফ জেনেভায় আসছি। কিন্তু ইন্টারনেটহীন আজব পরিস্থিতিতে অদ্ভুদ সময় পার করছি। তবে সুন্দর সুইজারল্যান্ড এবং এর বিভিন্ন শহর ও অঞ্চলের ছবি তুলছি অনেক। ক্যামেরা ও হাতের দুর্বলতার কারনে অধিকাংশ ছবিই ব্লগে দেবার মান অর্জনে ব্যার্থ হচ্ছে! তারপরেও যা জমছে তা দিয়েই বেশ কয়েকটা দুর্বল ব্লগ লেখা যাবে মনে হয়। আসলে এখানে সাবজেক্ট প্রচুর।
সাজানো গুছানো সবকিছু তাই চাইলেই ছবি তুলা যায় কিন্তু এর মধ্যে আবার একঘেয়েমি সৌন্দর্য্যও রয়েছে তাই সব একসাথে দেয়া যাবে না।
জেনেভা বিখ্যাত শহর। এখানের ৫৩% জনসংখ্যাই বিদেশী। ফ্রেঞ্চভাষী জেনেভায় প্রচুর আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রধান কার্যালয়। এর বিভিন্ন ক্যাফে এবং শপিং জোনগুলো বিখ্যাত।
তবে প্রচন্ড দাম!!!
আমি অবশ্য ম্যাকডোনাল্ডস আর কাবাবের উপর চলতেছি। আমার হোস্ট সুইস বৃদ্ধা একদিন ইন্ডিয়ান মশলা দিয়ে উজবেক স্যুপ বানিয়ে খুব আগ্রহ নিয়ে খাইয়েছে, কিন্তু এরপর থেকে ঘরে খাওয়ার প্রতি আমার আগ্রহ চলে গেছে। ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চের সময়টা স্বাভাবিকভাবে বাইরে মানে ক্লাসে থাকলেও এখন ডিনারের সময়ও বাইরে চলে যাই!!!!
যাওয়ার অনেকগুলো জায়গা আছে জেনেভায় তবে আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো "লাক লেমা" বা "লেক জেনেভা"। যদিও আমি নিভৃতেই সাচ্ছ্যন্দ বোধ করি কিন্তু বিশাল লেক জেনেভা বা এর আন্তর্জাতিক পরিবেশের মাঝেই এমন কিছু আছে যা আমার খুব ভাল লাগছে অথবা আমিই বোধহয় বদলে গেছি!
যাই হোক, আজকের ব্লগটা শুধু "লেক জেনেভা" নিয়ে! অন্য জায়গা বা টপিক অন্য ব্লগে হবে! ( ইন্টারনেট কানেকশন ফি'এর জন্য পরিবারের সাথে ব্যাপক আলোচনা হইতেছে, শীঘ্রই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি তখন হাত-পা খুলে ব্লগানো যাবে)
এখন কথা হবে ছবিতে ,
যে কোন শহরে ঢুকার পথে এর "নামসহ পথ নির্দেশক" আমার খুব ভাল লাগে। কৈ যাইতে পারতাম আর কৈ যাইতেছি এইরকম "লিকুইড" ভাবনা মাথায় চলে আসে।
শুরুতেই এরকম শিল্পের বিজ্ঞাপন দেখে ভালৈ লাগলো। মনে হলো এখানে পণ্যের কাছাকাছি রুপে হলেও শিল্প অন্তত জাগ্রত হয়েই বেঁচে আছে।
বাঁ দিকে তাকিয়ে প্রথমবারের মত দেখলাম "লেক জেনেভা" ও এর বিখ্যাত ফোয়ারাটিকে
ডানদিকে প্রেসিডেন্ট উইলসন হোটেলের গ্লাসে দেখলাম নিজেদের।
এরপর আমি চলে গেলাম থাকার জায়গায়। পরের দিন বিকেলে আবার আসলাম লেক জেনেভার পাড়ে।
প্রথমে মনে হলো, ধুর!!! সুইজারল্যান্ড ধনীদেশ দেখেই পাবলিক এদের সবকিছুতেই "আহা,আহা" করে। ধীরে ধীরে দেখতে দেখতে একটু একটু পরিবর্তন হৈল আমার ধারনার!
এমন পাল তোলা নৌকাগুলো দেখতে ভালৈ লাগে তবে দেশের নৌকাগুলার, মুলত আশুলিয়ার নৌকাগুলার কথা মনে পড়ে শুধু!
লেকের পাড়েই সড়কে সব বিখ্যাত হোটেলগুলো। এবং বিভিন্ন স্থাপনা।
লেক পাড়েই পার্ক। সেখানে আবার গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিত্বের স্মৃতিতে ভাস্বর্যও রয়েছে, এইটা বোধহয় অস্ট্রিয়ার হাবসবুর্গ পরিবারের কারো!
লেকটা কিন্তু রুপে-যৌবনে আমাদের আশুলিয়ার সাথে তুলনা যো্গ্যও নয়।
আশুলিয়ার বাতাসে যেই প্রানশক্তি তার কাছাকাছি হলেও আশুলিয়ার সেই সতেজভাবটা নেই তেমন কিন্তু রক্ষনাবেক্ষন ও সুযোগ-সুবিধা দিয়েই পার্থক্য তৈরী করে ফেলেছে সুইসরা। পাশাপাশি বিভিন্ন ওয়াটার স্পোর্টসও আছে। যেমন,
দুরের পাহাড় এই সামারেও সাদা হয়ে আছে,
এতক্ষন খুব পানিতে খুব ফাল পাড়তেছিল যেই ছেলেটা, ওর একটা ছবি তুলতে গেলাম আর তখনই বেচারার পতন!
লেকের পাড়ে মানুষ সব সাড়ি বদ্ধভাবে বসে থাকে, কিন্তু বাদামের খোসা বা ঝাল মুড়ির ঝোল লেগে থাকা নিউজপ্রিন্ট মিস করলাম!!!
আর মিস করলাম "ফিটিং বাজ" লোকগুলারে, এমন ফোয়ারা দেখাইয়াও যারা ট্যাকা কামাই করতো!!!
একটা হাঁস দেখলাম খুব মজা করে "নো টেনশন" মুডে পানিতে ঘুরতেছে।
লেক জেনেভার ট্রেডমার্ক হলো এই বিখ্যাত ফোয়ারাটা। এর পানি আসলেই অনেক অনেক উঁচুতে উঠে।
আমার মনে হচ্ছিল বিভিন্ন বিখ্যাত জায়গার ট্রেড মার্কের মত এটাও "অটো হিট" টাইপ কিছু, কিন্তু এই ফোয়ারার চুড়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে ভালই লাগে কিন্তু। আর ফোয়ারায় যদি রংধনু তৈরী হয় তখন কার না ভাল লাগে??
আরো অনেক ছবি তুলেছিলাম কিন্তু সেগুলোর কিছুর মান ভাল হয় নাই মানে এখানে দেয়ার মত হয় নাই আর কিছু ছবি সাইজে ৫০০ কেবি'র চেয়ে বড়।
যাই হোক, রাতের ১০টায় যখন সন্ধ্যার অন্ধকার নামলো, আমি ফিরে আসার প্রস্তুতি নিয়েছি। তখনই দেখলাম রাতের লেকটাও অত্যন্ত সুন্দর। এমনকি কারো কাছে রাতের লেকটাই বেশী ভাল লাগতে পারে!!! (তবে আমার দুর্বল ক্যামেরা ও হাতের কারনে তেমন ভাল হয় নাই ছবিগুলো!)
সেদিন আকাশে ছিল চমৎকার চাঁদ।
( ইশশ আজকে না জানি কি অবস্থা হবে!!!)
চাঁদ না থাকলেও কিন্তু লেক পাড়ের আলোকিত পথ-ঘাট এবং হোটেল ও এর উপর বসানো সাইনবোর্ডগুলো চারদিক আলোকিত করে রাখে। আমার খুব খুব মনে পড়ছিল বুড়িগঙ্গাকে। সদরঘাটে পাড়ের ঢাকাও কিন্তু এমনই আলোকিত!
ফোয়ারা ছাড়া এবং একটু কল্পনার আশ্রয় নিলে, উত্তরার ৫ নং সেক্টরের ২নং রোডের পাড় থেকে পূর্ব পাড়েও কিন্তু দেখতে এমনই লাগে। তাই না?
রাস্তাগুলো সেইরকম লাগে আমার কাছে। রাত ২-৩টায় মহাখালী (ফ্লাইওভার হবার আগে) অথবা রাত ২-৩টায় কুড়িল বিশ্বরোডও কিন্তু এমন সুন্দর লাগে!
আমাদের র্যাডিসন এর চেয়েও সুন্দর! তবে, এর নিচতলায় রয়েছে বিখ্যাত একটা ডিস্কো!
জেনেভার অন্যতম দেখার বিষয় হলো, আরব!!!!!!
ধনী আরব নর-নারীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত।
গরীব সাউথ আমেরিকান আর ধনী আরবদের জেনেভাজুড়েই উপস্থিতি চোখে পড়ে তবে লেক পাড়ে আরবদের রোলস রয়েস এবং বাঘের চামড়া রঙের জামাকাপড় পরা আরব খুব বেশী বেশী। মজার বিষয় হলো, এরা সৌদি থেকেই নিজেদের গাড়ী প্লেনে করে নিয়ে আসে যেই কদিন এখানে থাকে তার জন্য। অবশ্য বেশ কিছু রাশিয়ানও একই কাজ করে!
তবু লেক পাড়ে আরব শো চলে মোটামুটি। আরব নাম্বারপ্লেট সহ এরকম ফেরারী চোখে পড়বেই।
( হিংসায় নাকি জানি না তবে, অলস এবং শো-অফ করা আরবগুলারে দেখে আমার খুবই রাগ লাগছে)
যাই হোক, এই তো জেনেভা লেক।
অবশ্যই সুন্দর জায়গা। তবে তারচেয়ে সুন্দর করে রাখা হয়েছে একে। এখানে বেড়াতে এসে আমি অবশ্যই খুশী কিন্তু তবুও সব সৌন্দর্য্য দেখলে কেন জানি শুধু আমার দেশের সাথে তুলনা করি আর দুঃখ পাই! যাক, ব্যাপারস নাস! আমাদেরও হবে একদিন।
হবে কি!!! এখনই আছে, শুধু একটু দেখার মন নিয়া তাকাইলেই হয়! সুইজারল্যান্ড বইলাই মনের মাধুরী মিশাইয়া এর সৌন্দর্য্য খুঁজে দেখে মানুষ, না পাইলেও পায়!!! আর আমাদের নিজেদের থাকলেও দেখে না!!!!
অগাস্টের শেষ পর্যন্ত আছি এখানে সুতরাং আরো ছবি সহ ব্লগ লিখবো। নেটের কানেকশন পাইলে আরো বেশী বেশী ছবিও তুলবো নিশ্চয়ই।
আমি যেহেতু দর্শক আর সামু'র ব্লগারদের সাথে মিলে দেখার মজাই যেহেতু আলাদা তাই আজকে "লেক জেনেভা"টুকু শেয়ার করে ফেললাম। ছবির কোয়ালিটির জন্য মেজাজ খারাপ হলে একটু দোয়া কইরেন যেন শীঘ্রই একটা ভাল ক্যামেরা কিনতে পারি !!!
এই সব ভাবতে ভাবতেই এই লেক জেনেভা'কে বিদায় জানিয়ে আরেক বিরাট ঘটনা আমার সাময়িক বাসায় চলে আসলাম।
জায়গাটা খারাপ না ! না কি বলেন?
**** ছবিগুলো ভাল করে দেখতে আগ্রহী হলে নিচের "থাম্ব"গুলোর উপর ক্লিক করে বড় করে দেখুন। আরেকটু ভাল লাগতে পারে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।