আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসুন আগে নিজেকে সংযত করি!!

অনেক কিছুই বলতে চাই। । বলা হয় উঠে না!ছন্দ হারিয়ে আমাদের নিরানন্দ জীবন। তবুও কিছু লিখতে চাই! ্কিছু দিন ধরে ফেসবুক আর ব্লগ গুলো ভরে গেছে মেয়েরা অশ্লীল না ছেলেরা বিকৃত,এই বিষয় নিয়ে নানান কথায়!একটা জিনিস বুঝতে পারলাম না,পরিমলের কাহিনী নিয়ে ফেসবুক জনতা দুই ভাগ হয়ে গেল!!কেউ বলে ছেলেরাই খারাপ,কেউ বলে মেয়েরা অশ্লিল!!আমাদের ধর্মে খুব সুন্দর করে এর প্রতিষেধক দেয়া আছে!ধর্ম মানলেই তো আর এইসব সমস্যা থাকে না!কিন্তু এই কথাটা কেউ বলে না??কেন?মৌলবাদী টাইটেল পাওয়ার ভয়ে??ভাই আমি কিন্তু মৌলবাদী না! নামাজ না পরেন,বাকি সব কিছু নাই বা মানলেন কিন্তু ভালো জিনিস গুলা তো নেন! এই বিষয়ে আমাদের কুরআনে বলা আছেঃ মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে।

নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। " সুরা আন-নূরঃ তাফসিরঃ এর অনুবাদ সাধারণত করা হয়, “দৃষ্টি নামিয়ে নেয়া বা রাখা। ”কিন্তু আসলে এ হুকুমের অর্থ সবসময় দৃষ্টি নিচের দিকে রাখা নয়। বরং এর অর্থ হচ্ছে, পূর্ন দৃষ্টিভরে না দেখা এবং দেখার জন্যদৃষ্টিকে স্বাধীনভাবে ছেড়ে না দেয়া। “দৃষ্টি সংযত রাখা” থেকে এ ...অর্থ ভালোভাবে প্রকাশ পায়।

অর্থাৎ যে জিনিসটি দেখা সঙ্গত নয় তার ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে হবে। এ জন্য দৃষ্টি নত করাও যায় আবার অন্য কোনো দিকে নজর ঘুরিয়েও নেয়া যায়। يَغُضُّوۡا مِنۡ এর মধ্যে (মিন) “কিছূ” বা “কতক” অর্থ প্রকাশ করছে। অর্থাৎ সমস্ত দৃষ্টি সংযত করার হুকুম দেয়া হয়নি বরং কোন কোন দৃষ্টি সংযত করতে বলা হয়েছে। অন্য কথায় বলা যায়, আল্লাহর উদ্দেশ্য এ নয় যে, কোন জিনিসই পূর্ণ দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয় বরং তিনি কেবল মাত্র একটি বিশেষগন্ডীর মধ্যে দৃষ্টির ওপর এ বিধি-নিষেধ যে জিনিসের ওপর আরোপ করা হয়েছে সেটি হচ্ছে, পুরুষদের মহিলাদরকে দেখা অথবা অন্যদের লজ্জাস্থানে দৃষ্টি দেয়া কিংবা অশ্লীল দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকা।

আল্লাহর কিতাবের এ হুকুমটির যে ব্যাখ্যা হাদীস করেছে তার বিস্তারিত বিবরণ নিচে দেয়া হলঃ .হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ বাজালী রা বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, হঠাৎ চোখ পড়ে গেলে কি করবো? বললেন, চোখ ফিরিয়ে নাও অথবা নামিয়ে নাও। (মুসলিম, আহমাদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, নাসাঈ) আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়ালা...হু আনহু রেওয়ায়াত করেছেন, নবী (সা.) আল্লাহর উক্তি বর্ণনা করেছেনঃ “দৃষ্টি হচ্ছে ইবলীসের বিষাক্ত তীরগুলোর মধ্য থেকে একটি তীর, যে ব্যক্তি আমাকে ভয় করে তা ত্যাগ করবে আমি তার বদলে তাকে এমন ঈমান দান করবো যার মিষ্টি সে নিজের হৃদয়ে অনুভব করবে”। (তাবারানী) আবু উমামাহ রা রেওয়ায়াত করেছেন, নবী (সা.) বলেন: “ যে মুসলমানের দৃষ্টি কোন মেয়ের সৌন্দর্যের ওপর পড়ে এবং এ দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, এ অবস্থায় আল্লাহ তার ইবাদাতে বিশেষ স্বাদ সৃষ্টি করে দেন। ” (মুসনাদে আহমাদ) ইমাম জা’ফর সাদেক তাঁর পিতা ইমাম মুহাম্মাদ বাকের থেকে এবং তিনি হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ আনসারী রা থেকে রেওয়ায়াত করেছেনঃ বিদায় হজ্জের সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চাচাত ভাই ফযল ইবনে আব্বাস রা (তিনি সে সময় ছিলেন একজন উঠতি তরুণ) মাশ্আরে হারাম থেকে ফেরার পথে নবী করীমের (সা.) সাথে তাঁর উটের পিঠে বসেছিলেন। পথে মেয়েরা যাচ্ছিল।

ফযল তাদেরকে দেখতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মুখের ওপর হাত রাখলেন এবং তাকে অন্যদিকে ফিরিয়ে দিলেন। (আবু দাউদ) এ বিদায় হজ্জেরই আর একটি ঘটনা। খাস্‌’আম গোত্রেরএকজন মহিলা পথে রসূলুল্লাহক (সা.) থামিয়ে দিয়ে হজ্জ সম্পর্কে একটি বিধান জিজ্ঞেস করছিলেন। ফযল ইবনে আব্বাস রা তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মুখ ধরে অন্য দিকে ফিরিয়ে দিলেন। (বুখারী, তিরমিযী, আবু দাউদ) এক: নিজের স্ত্রী বা মুহাররাম নারীদের ছাড়া কাউকে নজর ভরে দেখা মানুষের জন্য জায়েয নয়। একবারহঠাৎ নজর পড়ে গেলে ক্ষমাযোগ্য। কিন্তু প্রথম দৃষ্টিতে আকর্ষণীয় মনেহলে সেখানে আবার দৃষ্টিপাত করাক্ষমারযোগ্য নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরনের দেখাকে চোখের যিনা বলেছেন।

তিনি বলেছেন: মানুষ তার সমগ্র ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যিনা করে। দেখা হচ্ছে চোখের যিনা, ফুসলানো কন্ঠের যিনা, তৃপ্তির সাথে কথা শোনা কানের যিনা, হাত লাগানো ও অবৈধ উদ্দেশ্য নিয়া চলা হাত ও পায়ের যিনা। ব্যভিচারের এ যাবতীয় ভূমিকা যখন পুরোপুরি পালিত হয় তখন লজ্জাস্থানগুলো তাকে পূর্ণতা দান করে অথবা পূর্ণতা দান থেকে বিরত থাকে। (বুখারী, মুসলিম ও আবু দাউদ) হযরত বুরাইদাহ বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলীকে (রা.) বলেন: “হে আলী! এক নজরের পর দ্বিতীয় নজর দিয়ো না। প্রথম নজর তো ক্ষমাপ্রাপ্ত কিন্তু দ্বিতীয় নজরের ক্ষমা নেই।

”(আহমাদ, তিরমিযী, আবু দা দুই: যেসব অবস্থায় কোন স্ত্রীলোককে দেখার কোন যথার্থ প্রয়োজন থাকে কেবলমাত্র সেগুলোই দৃষ্টি সংযত করার হুকুমের বাইরে আছে। যেমন কোনো ব্যক্তি কোন মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। এ উদ্দেশ্য শুধুমাত্র মেয়েটিকে দেখার অনুমতি আছে। বরং দেখাটা কমপক্ষে মুস্‌তা...হাব তো অবশ্যই। মুগীরাহ ইবনে শু’বা রা বর্ণনা করেন, আমি এক জায়গায় বিয়ের প্রস্তাব দেই।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করেন, মেয়েটিকে দেখে নিয়েছো তো? আমি বলি, না। বলেন: “তাকে দেখে নাও। এর ফলে তোমাদের মধ্যে অধিকতর একাত্মতা সৃষ্টি হওয়ার আশা আছে। ’ (আহমদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, দারেমী) আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি কোথাও বিয়ের পয়গাম দেয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:“মেয়েটিকে দেখে নাও।

কারণ আনসারদের চোখে কিছু দোষ থাকে। ” (মুসলিম, নাসাঈ, আহমাদ) জাবের ইবনে আবদুল্লাহু (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “তোমাদের কেউ যখন কোন মেয়েকে বিয়েকরার ইচ্ছা করে তখন যতদূর সম্ভব তাকে দেখে নিয়ে এ মর্মে নিশ্চিন্ত হওয়া উচিত যে, মেয়েটির মধ্যে এমন কোন গুন আছে যা তাকে বিয়ে করার প্রতি আকৃষ্ট করে। ” (আহমাদ ও আবু দাউদ) মুসনাদে আহমাদে আবু হুমাইদাহর বর্ণনা উদ্ধৃত করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে রসূলুল্লাহ (সা.) এ উদ্দেশ্যে দেখার অনুমতিকে বর্ণনা করেছেন। অর্থাৎ এমনটি করার ক্ষতির কিছু নেই।

তাছাড়া মেয়েটির অজান্তেও তাকে দেখার অনুমতি দিয়েছেন। এ থেকেই ফকিহগণ প্রয়োজনের ক্ষেত্র অন্যভাবে দেখার বৈধতার বিধানও উদ্ভাবন করেছেন। যেমন অপরাধ অনুসন্ধান প্রসঙ্গে কোন সন্দেহজনক মহিলাকে দেখা অথবা আদালতে সাক্ষ্য দেবার সময় কাযীর কোন মহিলা সাক্ষীকে দেখা কিংবা চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের রুগিনীকে দেখা ইত্যাদি। তিন: দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশের এ অর্থও হতে পারে যে, কোন নারী বা পুরুষের সতরের প্রতি মানুষ দৃষ্টি দেবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: কোন পুরুষ কোন পুরুষের লজ্জাস্থানের প্রতি দৃষ্টি দেবে না এবং কোন নারী কোন নারীর লজ্জাস্থানের প্রতি দৃষ্টি দেবে না।

” (আহমাদ, মুসলিম, আবুদ দাউদ, তিরমিযী) হযরত আলী (রা.) রেওয়ায়াত করেছেন, নবী করীম (সা.) আমাকে বলেন: “কোন জীবিত বা মৃত মানুষের রানের ওপর দৃষ্টি দিয়ো না। ” সুতরাং প্রিয় ভাইয়েরা মেয়েদের পোষাক নিয়ে মাতামাতির আগে আসুন আমরা দৃষ্টি অবনত করি! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।