আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

The First Grader:যে ছবিটি আমাদের সবারই দেখা উচিত

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ এই প্রথম কোনও ছবি না দেখেই সেই ছবি সম্বন্ধে দু-চার কথা লিখছি। ছবিটি না-দেখার কয়েকটি কারণ আছে। প্রথমতঃ The First Grader ছবিটি সদ্য রিলিজ হয়েছে।

এ বছরের ১৩ মে। দ্বিতীয়তঃ এত অল্প সময়ে ছবিটির ৮০ টাকার ডিভিডি বাংলাদেশে সুলভ হওয়ার কথা না। তৃতীয়তঃ ইন্টারনেট থেকে ৪০০/৫০০ মেগা ডাউনলোড করে ছবি দেখার কথা ভাবতেই পারি না । আর সদ্য রিলিজ পাওয়া কোনও ছবি অনলাইনে লাইভ স্ট্রিমিং হয় কিনা তাও জানি না। তা হলে অদেখা একটি ছবি সম্বন্ধে লেখার কি কারণ? তারও কয়েকটি কারণ আছে।

প্রথম কারণ: The First Grader: ছবিটির বিষয়বস্তু গভীর মানবিক এবং বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় । দ্বিতীয় কারণটি ঈষৎ ভিন্ন। তা হল, The First Grader: ছবিটির প্রযোজক এবং পরিচালক ব্রিটিশ হলেও ছবিটির প্রেক্ষাপট আফ্রিকার কেনিয়া। ইউরোপ-আমেরিকার চেয়ে এশিয়া এবং আফ্রিকা ভিন্ন ঘরানার হওয়ায় আফ্রিকার কেনিয়ার প্রেক্ষাপটে একটি মানবিক ছবি সম্বন্ধে আমাদের কৌতূহলী হয়ে ওঠাই স্বাভাবিক। এবং ইরানি সামাজিক চলচ্চিত্রগুলি সম্বন্ধে আমাদের কৌতূহলের এও এক কারণ বলে মনে হয়।

The First Grader ছবিটির ব্রিটিশ পরিচালক জাস্টিন চাডইউক । ইন্টারনেট থেকে জানা গেল : ব্রিটেনে বেশ নামডাক আছে এঁর। এককালে কেনিয়াকে শোষন করেছিল ব্রিটেন । আর আজ? আজ একজন ঝানু ব্রিটিশ চলচ্চিত্র পরিচালক ১০৫ মিনিটে বিশ্বের কোটি কোটি চলচ্চিত্র দর্শকের সামনে এক অসাধারণ কেনিয় নাগরিককে তুলে ধরেছেন । The First Grader: ছবিটি সম্বন্ধে প্রথম কথা হল এটি নির্মিত হয়েছে একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে ।

এবং সেই ঘটনাটি যাঁকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে তাঁর নাম Kimani Maruge. ইনি সারাজীবন কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। Maruge -এর জন্ম ১৯২০ সালে। যদিও প্রমাণ হিসেবে দলিলপত্র দাখিল করতে পারেননি Maruge. তবে সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হল ১৯৫০ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন Maruge. যুদ্ধ করেছিলেন মাতৃভূমির স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। একটু আগেই বললাম: Maruge সারাজীবন কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

যে কারণে লেখা পড়া হয়নি তাঁর। যা হোক। ২০০৩ সালে কেনিয়া সরকার সবার জন্য বিনা বেতনে প্রাথমিক শিক্ষার ঘোষনা। ২০০৪ সালের ১২ জানুয়ারি Maruge প্রথম শ্রেণিতে ( ফাস্ট গ্রেড) ভর্তি হন। যখন Maruge -এর বয়স ৮৪! The First Grader ছবির একটি দৃশ্য।

৮৪ বছর বয়েসে Maruge ক্লাস করছেন। ২০০৫ সালে স্কুলের হেড বয় নির্বাচিত হন Maruge। । ঐ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এসে বিনা বেতনে প্রাইমারী শিক্ষার গুরুত্ব সম্বন্ধে ভাষণ দেন Maruge। এ জন্যে তাঁকে অবশ্য প্লেনে চেপে নিউ ইয়র্ক শহরে যেতে হয়েছিল! Kimani Maruge -এর চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রখ্যাত ব্রিটিশ অভিনেতা অলিভার লিটোনডো।

২০০৬ সালে প্রযোজক স্যাম ফিউয়ের এবং রিচার্ড হ্যারিস The First Grader: The True Story of Kimani N'gan'ga Maruge নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘের প্রামাণ্যচিত্র নিমার্ণ করেছিলেন । ব্রিটিশ অভিনেত্রী নাওমি হ্যারিস। ইনি The First Grader ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এরপর Maruge-এর জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। কেনিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের মতোই ... ২০০৭-২০০৮ সালের নির্বাচন উত্তর দাঙায় Maruge-এর খামারবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

সর্বশ্রান্ত হয়ে একটি উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন Maruge । উদ্বাস্তু শিবিরটি স্কুল থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে । সর্বশ্রান্ত হয়েও ঈশ্বরের ওপর কিংবা জীবনের ওপর অভিমান করে স্কুলে যাওয়া বাদ দেননি Maruge । ৮৮ বছর বয়েসে প্রতিদিন ৪ কিলোমিটার হেঁটে ক্লাসে যেতেন Maruge . এই কারণে আমাদের সবারই The First Grader ছবিটি দেখা উচিত ... ৮৮ বয়েসে ৪ কিলোমিটার হেঁটে Maruge স্কুলে যাচ্ছেন। এই ছবিটা দেখলে বুকটা কেমন হুহু করে ওঠে।

এরকম বিশুদ্ধ মানুষের জন্যই জীবন অর্থহীন বলে মনে হয় না ... The First Grader: ছবিটির বিষয়বস্তু গভীর মানবিক এবং বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয় । ২০০৯ সালে মারা যান Kimani Maruge। তাঁকে তাঁর খামারবাড়ির সামনে সমাহিত করা হয় ... তাঁর প্রতি রইল আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও সালাম। ছবি ও তথ্য : ইন্টারনেট।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।