আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যৌন কেলেঙ্কারির দায়ে রাষ্ট্রদূত ঢাকায় ফেরত :: এরাই কোন এক সময় পরিমল ছিল আজ রাষ্ট্রদূত

ভালকে সমর্থন এবং খারাপকে বর্জন করতে শিখুন । যৌন কেলেঙ্কারির দায়ে জাপান থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত একেএম মজিবর রহমান ভূঁইয়াকে অবশেষে ঢাকায় ফেরত আসার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই তার ঢাকা এসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়ে বলে, পররাষ্ট্র ক্যাডারের কর্মকর্তা মজিবরকে আপাতত দপ্তরবিহীন অবস্থায় রাখা হতে পারে। টোকিও দূতাবাসে চাকরি করা একজন স্থানীয় নারী কমকর্তাকে যৌন হয়রানির দায়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া বা অন্য কোথাও বদলির সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।

টোকিও দূতাবাসের সাবেক সোশ্যাল সেক্রেটারি কিয়োকো তাকাহাসির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি রাষ্ট্রদূত মজিবরের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায় বলে সূত্র জানায়। তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম। তিনি রাষ্ট্রদূত মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করেন। এদিকে টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, ঢাকায় ফিরে যাওয়ার আদেশ পেয়ে মজিবর রহমান দেশে ফেরার প্রস্তুতি এরইমধ্যে সম্পন্ন করেছেন। মজিবর রহমান জাপান প্রবাসী বাংলাদেশিদের থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিয়েছেন।

২০১০ সালের ১৩ই আগস্ট টোকিওতে রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেন মজিবর রহমান। এর আগে তিনি ভূটানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তাকাহাসির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সিউল থেকে রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলাম মে মাসে ওই তদন্ত করেন। তদন্ত প্রতিবেদন তিনি ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান। জাপানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মজিবর রহমান রোববার টেলিফোনে বাংলানিউজকে বলেছিলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

কারা করছে জানি না। ’ তাকাহাসির অভিযোগপত্রে যা রয়েছে: বাংলানিউজের হাতে আসা তাকাহাসির অভিযোগপত্র থেকে আরও জানা যায়, তিনি এই অভিযোগপত্র জাপানে কর্মরত অন্য দেশের রাষ্ট্রদূতদের কাছেও তা পাঠিয়েছেন। জাপানি তরুণী তাকাহাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো কয়েক পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রদূত মজিবর রহমানের বিরুদ্ধে কয়েকদফা বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন। অভিযোগপত্রে জাপানি ওই তরুণী বলেন, চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি দূতাবাসের চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই রাষ্ট্রদূত তার সঙ্গে অযাচিত আচরণ করেন। এমনকি চাকরির ইন্টারভিউয়ের দিনও তাকে আপত্তিকর প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন।

দূতাবাসের সোশ্যাল সেক্রেটারি পদটি শূণ্য থাকায় তা নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেন রাষ্ট্রদূত। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি এ কে এম মজিবর রহমান চাকরি প্রার্থীদের ইন্টারভিউ নেন। তাকাহাসি অভিযোগ করেন, ইন্টারভিউয়েই রাষ্ট্রদূত তাকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি তাকাহাসিকে চুমু খেতে পারবেন কী না। এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি আবারও তাকাহাসিকে ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয়।

সেদিন রাষ্ট্রদূত তাকে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন করেন, যার ধরণ খুবই আপত্তিকর ছিল বলে তাকাহাসি উল্লেখ করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো অভিযোগপত্রে তাকাহাসি বলেন, শারীরিক সম্পর্কের দিকেই ইঙ্গিত ছিল রাষ্ট্রদূতের। তাকাহাসির বলেন, দূতাবাসে প্রথম যোগ করার দিন ২৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রদূত তার কক্ষে ডেকে নেন এবং কক্ষে প্রবেশের পর আমাকে জড়িয়ে ধরে আপত্তিকর অবস্থায় যেতে চান। তিনি বলেন, ‘২৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রদূত অফিসের কাজ ফেলে আমাকে নিয়ে টোকিও শহরতলীর একটি নদীর তীরে বেড়াতে যান। সেখানে তিনি আবারও আমার সঙ্গে আপত্তিকর কাজের প্রস্তাব দেন।

যা আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি। তিনি জোরজবরদস্তি করলে স্থানীয় একজন বাঙালি দূর থেকে আমাদের ছবি তোলেন। যা রাষ্ট্রদূততে ভীত করে তোলে। ’ তাকাহাসি অভিযোগ করেন এরপর প্রায়ই রাষ্ট্রদূত আমার সঙ্গে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দিতে থাকেন। তাকাহাসির কাছে প্রত্যাশা অনুযায়ী সাড়া না পেয়ে রাষ্ট্রদূত মার্চ মাসের শেষ দিকে তাকাহাসিকে বরখাস্ত করেন।

স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটিতেও বিষয়টি মুখরোচক আলোচনার জন্ম দেয়। এরপরই তাকাহাসি দূতাবাসের স্থানীয় কর্মকর্তাদের পরামর্শে ঢাকায় অভিযোগপত্র পাঠান। তাকাহাসি অভিযোগপত্রে আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার যদি আমার অভিযোগের সুরাহা না করে, তবে জাপানের আদালতে মামলা করবো। ’ তাকাহাসির অভিযোগ পাওয়ার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে শাঁখেরকরাতে পড়ে যায়। বিশেষত, একদিকে বিদেশে দেশের সম্মান, অপরদিকে দেশেও নেতিবাচক আলোচনা।

তবে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে যায়। এরপর সিউলের রাষ্ট্রদূত শহীদুল ইসলামকে টোকিও গিয়ে তদন্তের আদেশ দেওয়া হয়। মজিবর রহমানের জীবনী: মজিবর রহমান ১৯৮৬ বিসিএসের মাধ্যমে ১৯৮৯ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন মুজিবুর রহমান। চাকরি জীবনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন অণুবিভাগে চাকরি ছাড়াও তিনি টোকিও, তেহরান, নয়াদিল্লির বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন পদে চাকরি করেন।

টোকিওতে রাষ্ট্রদূত হওয়ার আগে তিনি ভুটানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সুত্র: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।