তেরোর ব্লগ মানেই হাবিজাবি !! ১.
তখন ক্লাস ফোর নাকি ফাইভে। টিভিতে অথবা সিনেমাতে "অবজেকশন" শব্দটা শুনে শুনে আমি কিছুটা অভ্যস্ত। কিন্তু এইটার মানে জানতাম না। একদিন ইংলিশ স্যার ক্লাসে সেন্টেন্সের কয়টা পার্ট তা পড়াচ্ছিলো। বলছিলো সেন্টেন্স এর দুইটা পার্ট।
সাবজেক্ট আর অব....। স্যার অব বলে শেষ করে নাই আমি ভাবলাম এইটাই সেই অবজেকশন। ১ম বেঞ্চ থেকেই চিল্লায় চিল্লায় বললাম অবজেকশন !! এরপর কি হলো আর নাই বললাম।
২.
এইটাও ছোটবেলার গল্প। সেই বয়সেই কোনো একদিন আব্বু বার্থ সার্টিফিকেট নিয়ে আলোচনা করছিলো।
তখনো আমার বার্থ সার্টিফিকেট হয় নাই। বার্থ সার্টিফিকেট যেকোনো সময় করা যায় তা তো জানেনই। তখন আমি নতুন নতুন গোয়েন্দা গল্প পড়ে মাথা আউলাইছি। ঐখান থেকে আমার ডেথ সার্টিফিকেট নামক শব্দের পরিচয় ঘটেছে। তাই আলোচনার এক মুহূর্তে আমি আব্বুকে জিজ্ঞাসা করলাম আব্বু আমার ডেথ সার্টিফিকেট করবা কবে? আব্বু আমার এহেন শব্দচয়নে নিজে শব্দহীণ হয়ে পড়েছিলো।
৩.
ক্লাস এইটে উঠে আমার জীবনের অন্যতম শত্রুর আগমন ঘটে। সে এখন পর্যন্ত আমার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারে ছাড়া আমি প্রায় চলতেই পারি না। সে আর কেউ নয় আমার চশমা। আম্মু একদিন টের পেলো তার মেয়ে চোখে কিছু দেখে না।
উলটা পালটা অঙ্ক তুলে আনে। আমিও যদিও বলার চেষ্টা করেছি না চোখ তো ভালই আছে। কিন্তু তার ঠেলাঠেলিতে আমার ডাক্তারবাড়ি যাওয়াই লাগলো এবং তিনি আমার সাথে চশমার ইন এ রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস দিয়ে দিলেন। কোনো এক পড়ন্ত বিকেলে চশমার দোকান থেকে বের হয়ে জীবনে প্রথম বার চশমা পড়ে আমার উচ্ছ্বসিত চিৎকার "আব্বু !!!! দুনিয়াটা কে জানি পরিস্কার করে দিছে। এত পরিস্কার কেন সব কিছু !!"
৪.
চশমা পড়ে বাসায় আসলাম।
অইদিনই হয়তো এর কয়েকদিন পর আমার এক কাজিন আমার চশমা দেখতে আসলো। আসল উদ্দেশ্য আর কিছুই না চশমা পইড়া আসলে আমাকে কতটা আঁতেল লাগছিলো তা সামনাসামনি দেখার আগ্রহ আর কি। বুঝছি তো সবই। আমি তাকে ডাক্তারের নির্দেশ বললাম। ডাক্তার বলেছে যে," পারলে সবসময় চশমা পড়বা।
নইলে চোখ আরো নষ্ট হয়ে যাবে। " সে অত্যন্ত সিরিয়াস হয়ে(নট এক্টিং) বলে, "তাইলে তেরোপু ঘুমাইতে গেলেও পড়তে হবে! তাই না?!" প্রথমে ভাবলাম যে সে কি আমার দূরবস্থায় আমার সাথে মশকরা করছে?! কিন্তু না সে আসলেই জিজ্ঞাসা করছে। বললাম হ্যাঁ!! স্বপ্ন দেখতে হবে তো !
৫.
কোনো এক অজ্ঞাত কারণে দেখা যেতো যে নাইন-টেনে আমাদের যে ফ্রেন্ড সার্কেল ছিলো সবারই ছিলো কম বেশি চোখের সমস্যা। আমার চশমার পাওয়ার কম ছিলো। একজন চশমাই পড়তো না কারন তাকে দেখতে খারাপ লাগবে কিন্তু কিছুই দেখতো না।
আরো ২ জনের আমার মতই অবস্থা ছিলো। শুধু একজনের চোখ ভালো ছিলো। তাও আমরা কেউ সামনের বেঞ্চে বসতাম না। যার চোখ ভালো তার সাথে বসার জন্য সবার মারামারি লেগে যেতো । সে বোর্ড থেকে তুলতো আর আমরা সামনে পিছনে সবাই গোল হয়ে তার খাতা থেকে কপি করতাম।
৬.
একবার এক গুরুত্বপূর্ণ পারিবারিক আলোচনা। ফুপুর বর্তমান যে বাসায় সে বাসায় বিস্তর সমস্যা। পানি এর সমস্যা,বিদ্যুত এর সমস্যা আরো হাবিজাবি। সবাই নানান কথা বলছে। আমিও যোগ দিয়েছি আলোচনায়।
এখন সবাই নানান সমাধান বলছে এবং সমস্যা তুলে ধরছে। এখন আমারো তো কিছু বলতে হয়। তাই তাড়াতাড়ি খুব গম্ভীর গম্ভীর ভাব নিয়ে বললাম যে, "ফুপুর ও এখন একটা ভালো বাসা দরকার!" বলার পর হুঁশ হলো যে কি বললাম এইটা। মুরুব্বীরা বুঝতে না পারলেও দেখি যে কাজিন রা ঠিকই ফেক ফেক করে হাসতেছে।
৭.
ক্লাস নাইনে থাকতে কেমেস্ট্রি ক্লাসে স্যার আইসা ঘোষনা করলো কেউ একজন পরীক্ষায় চালাকি করছো।
কি ভাবছো আমি টের পাবো না। রচনামূলক লেখার কথা ছিলো ৫ টা। কেউ ৬ টা লেখছে। ভাবছো যে আমি মার্ক দিয়ে যাবো ? আমাদের মাঝে আলোচনা কে করতে পারে এই কাজটা? আমি তো বললাম আমি তো ৫ টাই পুরা লেখতে পারি নাই। আমি বাদ।
একজন বলে উঠলো কোন গাধা এই কাজ টা করলো। গাধার বাচ্চা একটা। গরু। নানান ভাবে ধিক্কার দিয়ে গেলো। অবশেষে পরের দিন খাতা পাইলাম।
দেখি যে সেই এই কাজ করে রাখছে।
৮.
কিছু কিছু স্যার রা থাকে তাদের কেউ মানে না। সবাই তার ক্লাসে ইচ্ছে মতো বদমাইশি করে। আমরাও করতাম। চিল্লা ফিল্লা কথা বলা সব হতো।
স্যার অবশ্য অনেক ভালো মানুষ তাই রক্ষা। একবার আমাদের কি জানি হলো আমরা কেউ "ছ" এবং "স" উচ্চারণ করতাম না। স্যারকে বলতাম ষার !! অবশ্য সবাইকে না। নাইন টেনের স্টুডেন্টদের জন্য স্পেশাল কোচিং হতো স্কুল থেকে। স্যার একদিন এসে দেখে যে চক নাই।
আমি বলি, "ষার আমি একটু বষেন। আমি ষক নিয়ে আষতেষী !!" স্যার শুধু বলে ঐ ফাজিল...ততক্ষনে আমি দৌড় দিয়ে চক খুঁজতে চলে গেছি। স্যার আসলেই অনেক ভালো মানুষ ছিলো। শুনেছি স্যারের ২টা বাবু হইছে এখন। বাবু গুলাও মনে হয় এখন বড় হয়ে গেছে।
ভালো থাকুক তারা সবাই।
৯.
আমার পড়াশোনা সব কিছু বেড়ে যায় পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিট আগে। এইটা পড়ি ঐটা পড়ি। এমনো দেখা গিয়েছে যে স্কুলে যাওয়ার পথে আমি রাস্তায় রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে নতুন উপপাদ্য পড়েছি। কোচিং এর পরীক্ষা নেয়ার সময় এমন হতো যে ম্যাডাম বলছে যে এখন এইটার উপর পরীক্ষা।
তাও আমি পড়ছি। ম্যাডাম বলে লেখা শুরু করো তাও পড়ছি। পরে ম্যাডাম হাত থেকে বই টেনে নিচ্ছে তাও টান দিয়ে উঁকি দিয়ে পড়ছি। ম্যাডাম পরে বিরক্ত হয়ে বলে যে, "তুই তো মরার সময়ে যম আসলেও বলবি আর ৫ মিনিট। পইড়া নেই।
"
১০.
আমাদের সকালে বিশ্রী রোদে পিটি করাতো। আমরা কেউ যেতে চেতাম না। কিন্তু যেতে তো হবেই। কিন্তু আবার চোরের তো অভাব ছিলো না। সবাই ব্যাগ রেখে চলে যায় যদি চুরি হয়ে যায় কিছু।
অবশেষে সিদ্ধান্তে আসা গেলো যে প্রতি ক্লাস থেকে একজন ক্যাপ্টেন ক্লাস পাহাড়া দিবে। যদিও আমি বাকি সব সময়েই ক্যাপ্টেন্সি তে ফাঁকিবাজী করতাম কিন্তু এই সময়ে আমার মত দায়িত্বশীল ক্যাপ্টেন আর মনে হয় কেউ নাই। ক্লাস পাহাড়া দিতেই হবে কারন নীচে তো যাবো না। কিন্তু এরপর দেখা গেলো যে আমি কেনো একলা পাহাড়া দিবো। আচ্ছা ঠিক আছে ১-২ জন সাথে থাকতেই পারে।
তারাও পাহাড়া দিলো। এরপর কয়েকদিন পর দেখা গেলো যে সবাই ই বলতে গেলে পাহাড়াই দিচ্ছে নীচে দশম শ্রেনীর সায়েন্স শাখার বলতে গেলে কেউই নাই। আর যারাও যাচ্ছে তারা রোদের ভয়ে নার্সারী কেজি দের লাইনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে কারন ওখানে ছায়া।
*আজকাল কেনো জানি আগের ছোটখাটো কথা গুলো অনেক মনে পড়ে। আর আমি নস্টালজিক পোস্ট দিয়ে ভরিয়ে ফেলছি।
অবশ্য আমার মেমোরীর ভরসা নাই। আজ মনে আছে আবার হঠাত কাল মনে পড়বে না। তাই ঠিক করলাম যা মনে পড়বে লিখে ফেলবো। এরপর অনেক দিন পর সব যখন একসাথে পড়বো তখন কেমন লাগবে তা জানার বেশ আগ্রহ অনুভূব করছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।