আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইবিএস-এ ভ্রান্তি নয়

সাহিল মাহমুদ ঢাকার একটি মেডিকেল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। পরীক্ষার সময় পড়াশুনার চাপ যতটা না তাকে কাবু করে তার চেয়ে বেশি কাবু করে বারবার প্রাকৃতির ডাকে সাড়া দেয়ার সমস্যা। পরীক্ষার সময়টা বেশিরভাগ সময়ই বাথরুমে কাটে তার। সাথে থাকে পেট মোচড়ানোর মত ব্যথা। মলের সাথে শ্লেষ্মা থাকে।

মলত্যাগের পর পেট ব্যথা কমে গেলেও মনে হয় পুরোপুরি মলত্যাগ হয় নি। কিছু সময় পর আবারো ছুটতে হয় বাথরুমে। এ সমস্যা নিয়ে সে প্রচন্ড হতাশ। জীবন মনে হয় বিষাদ। ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে সাহিল আইবিএসে আক্রান্ত বলে জানান।

ডাক্তারের শিখিয়ে দেয়া ব্যবস্থা গ্রহণ করে এখন সে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছে। ইরিটেবল বাওল সিন্ড্রোম সংক্ষেপে আইবিএস মারাত্মক কোন রোগ না হলেও জীবনকে করে তোলে অস্বস্তিকর, বিষাদময়। আমেরিকায় প্রতি পাঁচ জনে একজন এ রোগে আক্রান্ত। আমাদের দেশে এ রোগে আক্রান্তের সঠিক পরিসংখ্যান জানা না গেলেও এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক। এ রোগের চিকি?সা নিয়ে রাস্তাঘাটে অসংখ্য বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে।

না জানার কারণে এ প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে সর্বনাশের শিকার হন অনেকেই। অন্ত্রের নড়াচড়ার তারতম্যের কারণে এ রোগটি দেখা দেয়। তবে কেন এ রোগটি হয় তার সঠিক কারণ জানা না গেলেও কিছু কিছু ফ্যাক্টর এ রোগের লক্ষণ বাড়ায়ে দেয়। কারোও বিশেষ ধরণের খাবার খেলে এ সমস্যা বাড়ে। তবে চকলেট, দুধ, অ্যালকোহল, কিছু কিছু ফলমুল খেলে সমস্যা বেড়ে যায়।

মানসিক অবসাদ, দুচিন্তা, ভয়-ভীতি এ রোগের লক্ষণ বাড়ায় বহুগুন। মেয়েরা পুরুষের চেয়ে বেশি এ রোগে আক্রান্ত হয়, এ সংখ্যা পুরুষের দ্বিগুন। কারণ সাধারনত হরমোন। মাসিকের সময় ও আগে-পরে এ সমস্যা বেশি দেখা দেয়। আক্রান্ত ব্যক্তির পেটে ব্যথা থাকে, সাথে থাকে ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিণ্য।

৩-৪ দিনে ১-২ বার মলত্যাগ করলে কোষ্ঠকাঠিণ্য আক্রান্ত বলে ধরে নেয়া যায়। আবার কারোও কারোও ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিণ্য অলটারনেটিভলি হয়ে থাকে। মলের সাথে মিউকাস বা শ্লেষ্মা থাকে। বারবার মলত্যাগের ইচ্ছা জাগে। মলত্যাগের পর পেটব্যথা কমে যায়।

কয়েকটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে আইবিএসে আক্রান্ত ব্যক্তির বারবার মলত্যাগ করলেও ওজন কিন্তু হ্রাস পায় না, শরীর ভাঙ্গে না। মলের সাথে শ্লেষ্মা গেলেও রক্ত পড়ে না, ব্যক্তি রক্তশূন্যতায় ভোগে না। জেগে থাকলে বারবার মলত্যাগের ইচ্ছা হলেও মলত্যাগের জন্য ঘুম থেকে ওঠতে হয় না। যদি আইবিএসের লক্ষণের সাথে এ উপসর্গগুলো থাকে তবে বুঝতে হবে এটা আইবিএস নয়, অন্য কোন রোগ। দেরী না করে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

আইবিএস নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষার রেজাল্ট নরমাল আসে। কিন্তু জটিল ও মারাত্মক কিছু রোগের লক্ষণ এ রোগের মত হওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি যে সত্যিই আইবিএসে আক্রান্ত তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছু পরীক্ষা করা হয়। এ রোগ নির্মুলে কোন ওষুধ নেই। তবে উপসর্গ দুর করতে কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন ২০ গ্রাম ইসবগুল কোষ্ঠকাঠিণ্য যতটা দুর করতে পারে আঁশজাতীয় খাবার তা পারে না। তবে এটি কিন্তু পেটব্যথা কমাতে পারেনা। আঁশযুক্ত খাবার খেলে অনেকসময় সমস্যা কমার পরিবর্তে বাড়ে। তাই ধীরে ধীরে আঁশযুক্ত খাবারের পরিমান বাড়াতে হবে। ল্যাকটুলোজ সেবন করা যেতে পারে।

ডায়রিয়া হলে আঁশজাতীয় খাবার পরিহারের পাশাপাশি লোপিরামাইড, কোডেইন ওষুধ সেবন করা যায়। পেটব্যথা দুর করতে বুটাপেন, টাইমোনিয়াম ওষুধ সেবন করতে হবে। এন্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ যেমন এসএসআরআই-ফ্লুঅক্সিটিন, টিসিএ-এমিট্রিপটিলিন, নরট্রিপটিলিন সেবনে এ সমস্যা দুর হয়। তবে তা চিকি?সকের পরামর্শে সেবন করতে হবে। চকলেট, সফট ড্রিংকস-কোলা, সালাদ, ব্রকোলি, ফুলকপি পরিহার করাই ভাল।

প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে হবে। কোন বেলার খাবার বাদ দিবেন না। প্রচুর পানি ও তরল খাবার পান করুন। নিয়মিত ব্যয়াম করুন। এ রোগটি শরীরে কোন খারাপ প্রভাব ফেলে না।

তাই এ রোগ নিয়ে দুচিন্তা করবেন না। এ রোগকে স্বাভাবিক মেনে নিয়ে জীবন-যাপন করুন। হাসিখুশি থাকুন। মলত্যাগের ইচ্ছা জাগলেই বাথরুমে যাবেন না। মনকে অন্যদিকে ডাইভার্ট করার জন্য কোন কাজ করুন।

দেখবেন বাথরুমে না গিয়েও থাকতে পাচ্ছেন। এভাবে ধীরে ধীরে এক সময় দেখবেন বারবার বাথরুমের সমস্যা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। শ্লেষ্মাযুক্ত মল হলেই মেট্রোনিডাজল সেবন করতে থাকেন অনেকেই। আইবিএসে মেট্রোনিডাজল সেবন করে কোন উপকার পাওয়া যায় না। অহেতুক এ ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকুন।

আইবিএসে আক্রন্তরা বারবার চিকি?সক পরিবর্তন করেন। এতে শুধু খরচ বাড়ে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।