আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাব- অল্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবিষ্যত

শোয়াইব জিবরান বিশ্ববিদ্যলয়েরও কি জাতপাত, বর্গ পরিচয় রয়েছে? অবশ্যই রয়েছে। বিশ্বে এ জাতপাতটি নির্ধারিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার মান দিয়ে, তার ছাত্র-শিক্ষকের পড়ালেখা গবেষণার পরিমান নিয়ে। সে হিসেবে অক্সফোর্ড কেমব্রিজ যে জাতের আর বাংলাদেশে যারা ছাত্র ভর্তি করতে আসে তারা একই জাতের নয়। বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জাত নির্ধারিত হয় তার রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক গুরুত্ব দিয়ে। রাজনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশে সবচেয়ে অভিজাত বিশ্ববিদ্যলয়গুলো হলো ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যলয়।

এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জাগলে বাংলাদেশের রাজনীতির চেহারা পাল্টে যায়। আর অর্থনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশের অভিজাত বিশ্ববিদ্যলয় হলো বেসকরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তার ভবনগুলো চকচকে, ক্লাশরুমগুলো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। শিক্ষার্থীরা আসেন প্রাডো পাজেরো চড়ে। তাদের পিতৃপরিচয়ও উচ্চবর্ণের।

এর বাইরে আছে দুটো বিশ্ববিদ্যালয়- জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। এ দুটোর ক্যাম্পাসের অবস্থান ঢাকার প্রান্তে গাজীপুরে। এগুলোর ক্যাম্পাসে নেই কোন ছাত্র, চেহারা ও আকারও হত দরিদ্র। যেহেতু ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী নেই সুতরাং তার রাস্তা অবরোধ করতে পারে না, গাড়ি ভাংচুর করতে পারে না তাই রাজনৈতিক বিবেচনায় তাদের গুরুত্ব শূন্য। কিন্তু এ দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ই পড়ায় বাংলাদেশের সিংহভাগ শিক্ষার্থীদের।

প্রথমটি মূলত নিয়ন্ত্রণকরাী আর দ্বিতীয়টি নিয়ন্ত্রণ ও পাঠদানকারী। দ্বিতীয়টি অর্থাৎ বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা এ মুহূর্তে প্রায় পাঁচ লক্ষ। এ বিশাল সংখ্যার শিক্ষার্থীরা থাকেন বাংলাদেশের প্রান্তে-প্রান্তে, আনাচে-কানাচে। তাদের পরিচয়ও প্রান্তিক জনের। অধিকাংশই সুবিধা বঞ্চিত, দরিদ্র ঘরের।

এক সময় টাকা পয়সা বা সুযোগের অভাবে পড়াশুনা করার সুযোগ করতে পারেননি। কেউ কেউ আগে প্রথাগত স্কুলে ভর্তি হলেও শেষপর্যন্ত পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারেননি। ঝরে পড়েছেন। একটি দোকান দিয়েছেন বা কোথাও ছোট চাকুরি করছেন। এখন জীবনের প্রান্ত বেলায় আবার পড়ছে এসেছেন।

ঘরে বসেই পড়া যায়। খরচও অল্প। প্রান্তিক মানুষদের প্রান্তবর্গের এ বিশ্ববিদ্যালয়টি তার প্রতিষ্ঠার ২০ বৎসর ইতোমধ্যে পার করেছে। এ হিসেবে তার পাশ করা শিক্ষার্থীও সংখ্যা অর্ধকোটি ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিবার এ বিশ্ববিদ্যালয়টি সংবাদ শিরোনাম হয় তার উপাচার্য সংকট নিয়ে।

এ মুহুর্তে প্রায় পাঁচলক্ষ শিক্ষার্থী আর প্রায় একহাজার শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারি এ বিশ্ববিদ্যালয়টি গভীর সংকটে নিপতিত। সংকট একই। উপাচার্য সংকট। এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রতিবারই উপাচার্য আসেন অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারা বিখ্যাত থাকেন তাদের রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে।

আর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেই ব্যতিক্রম বাদে বিখ্যাত হয়ে যান দুনীীতি স্বেচ্ছাচারিতার কারণে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যরা কেন্দ্র থেকে আসেন পিকনিক মুড নিয়ে। তারা এসে প্রথমেই যে কাজটি করেন তাহলো একটি নতুন পাজেরো গাড়ি কেনেন। আর ক্যাম্পাসে প্রাসাদোপম উপাচার্য ভবনটির দখল গ্রহণ করেন। তারপর করতে থাকেন সংস্কার কাজ।

বলা যায় হেরেমখানা বানানোর আয়োজন। কেউ ভেতরে বানান আ¯ত নদী। তাতে ছাড়েন স্পিডবোড আর রাজহাঁস। কেউ এসে করতে থাকেন হাঁসমুরগী, গরুপালন কর্মসূচি। আর ক্যাম্পাসে যেহেতু কোন ছাত্র-ছাত্রী নেই।

সুতরাং ভয় নেই কোন আন্দোলন ভাংচুরের। ফলে পড়ালেখা নিয়ে থাকে না কোন চিন্তাভাবনা। দূর গ্রামের একজন শিক্ষার্থী ভতি হন এক বা দু’বছরের কোর্সে। তার কোর্স চলতে থাকে অনন্তকাল ধরে। শেষ আর হয় না।

প্রতিবাদও করতে পারেন না প্রান্তবর্তী বলে। আর এদিকে উপাচার্য ঘুরতে থাকেন নতুন কেনা আর পুরাতন থাকা পাজেরো বহর নিয়ে- সপরিবারে। আর অফিসে এসে বক্তৃতা দিতে থাকেন তার ফেলে আসা বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাস নিয়ে। আর বলতে থাকেন আপনারা নি¤œবর্গের নি¤œবর্গের! প্রথম কিছুদিন তার নিজদলের স্তাবকবাহিনী থাকেন তাকে ঘিরে। চলতে থাকে স্বেচ্ছাচার।

কিন্তু শিঘ্রই তাদের মধ্যে দেখা দেয় অর্ন্তকলহ । তারা ভাগ হতে থাকেন। দাঁড়ান একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে। কথা বলতে শুরু করেন গোপনে প্রকাশ্যে মিডিয়ায়। বের হতে থাকে কা-কারখানার খবর।

হেডলাইন হয়ে য়ায় এ বিশ্ববিদ্যালয়টি তার দুনীর্তি আর স্বেচ্চারিতার জন্য। তারপর একসময় পালাতে বাধ্য হন মহান অধিপতি। আক্ষরিক অর্থেই তারা পালিয়ে যান। আক্ষরিক অর্থেই রাতের আঁধারে। গত জোট সরকারের আমলে রাতের আঁধারে এক উপাচার্য পালিয়ে গেলে তার বিশ্ববিদ্যালয় তাকে গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়।

তার শিক্ষক শিক্ষার্থীরা পত্রিকায় কলাম লিখে জানান এদের ভার নিতে অপারগ সে বিশ্ববিদ্যালয়। মামলা হয় তার নামে। পালিয়ে বেড়ান তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। সর্বশেষ উপাচার্যও একরাতে চলে যেতে বাধ্য হন তার নিজ দলের একাশেংর আন্দেলনে। যাবার সময় তিনি নাকি দায়িত্ব পর্যন্ত কাউকে বুঝিয়ে দিয়ে যাননি ।

দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ যথারীতি তার বিরুদ্ধে। আক্ষরিক অর্থেই বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন নেতৃত্বশূন্য। থমকে আছে এর সকল কাজ। চলছে না কোন কিছুই। থমকে আছে কয়েকমাস ধরে।

কোন পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হচ্ছে না। পরীক্ষক বা টিউটর কেউ পাচ্ছেন না সম্মানী, আটকে আছে শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারিদের নিয়োগ-পদোন্নতি। সবচেয়ে বড় কথা কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই। বাংলাদেশ এখন গুজবের রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন শোনা যাচ্ছে ঢাকা থেকে অমুক আসছেন তমুক আসছেন।

অগ্রিম দৌড়াচ্ছেন স্তাবকবাহিনী। তারপর শোনা যাচ্ছে না অমুকের আসা তমুক ঠেকিয়ে দিচ্ছে। এখন নতুন করেন অমুক দৌড়ে নেমেছেন। ফাইল যাচ্ছে ফাইল ফিরে আসছে। কিন্তু আটকে যাচ্ছে সাব অল্টার্ন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত।

বিশ্ববিদ্যালয়টিও আক্ষরিক অর্থেই হয়ে পড়েছে সাব- অল্টার্ন। একদিন নবপ্রভাতে হয়ত আসবেন নতুন অধিপতি। তারপর ইতিহাস কি ঘুরতে থাকবে চক্রাকার? কী হবে এ সাব-অল্টার্নদের এ সাব অল্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়টির ভবিষ্যত ? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।