আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া.,..

সাপের শরীর হয়ে আঁধারের গাছ/ কুয়াশার বন্যায় ডুবো দেবী মাছ! ভ্রমন প্রায় শেষের পথে। ব্যাগ পত্র গুছিয়ে ফেলেছি। হোটেল ভাড়া মিটিয়ে তুষারের ব্যাংকে লাগেজ রেখে শেষবারের মত কুলাউড়া দেখতে বের হলাম। রাতের ট্রেনে ঢাকা ফিরবো। তাড়াহুড়ার কিছু নেই।

দুপুরে খেলাম কুলাউড়ার নতুন একটা হোটেল এ উয়ানে। । গত তিন দিন ধরে আমরা এখানে আছি। শান্তি মত খাব বলে একেকবার একেক হোটেলে যাই, ভাল মানের খাবার কোথাও পাইনা। সত্য বলতে কি মনের মত হয়না।

প্রথম দিন তো মাছরাঙার হোটেলে ভাত খেলাম। অর্ধেক চাল সিদ্ধ হইসে, অর্ধেক হয়নাই। মিশায়া দিছে। সে এক করুন অবস্থা। তরকারীতে তেল আর ঝাল থাকে বেশি অথচ কেন যেন কোন টেস্ট নাই।

তো এই শেষ বেলা খেতে যে হোটেলে গেলাম, দোতলায় রঙীন টিনের ছাদ, একদমই ঘরোয়া পরিবেশ। প্রচুর গরম তারপরও ভাল লাগছিল,খোলামেলা দেখে। এই হোটেলে নিজেদের পোষা কোয়েল পাখির রোস্ট করে, কোয়েল বিরিয়ানিও পাওয়া যায়। আমরা রোস্ট খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আর শেষ বারের মত খাওয়াটা তৃপ্তি করে খেলাম।

কি যে স্বাদ! উফফফ.. জীবনে ভুলবনা। গগনটিলায় যাচ্ছি। কুলাউড়ার একমাত্র চা বাগান। আর সব চা বাগানের মত এ জায়গাটাও অসাধারন। যত যাচ্ছি তত উঁচুতে উঠছে আমাদের গাড়ি।

শেষে নামলাম। পাহাড়ে যেমনটা থাকে আলো আর ছায়া। কোনও পাহাড়ে রোদ, কোনো পাহাড়ে ছায়া। কদিন ধরেই পাহাড় দেখছি চা বাগান দেখছি তবু এক কথায় আমরা সবাই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। ছবি তোলা চলছে ননস্টপ।

এর মধ্যে একটু ভাব নিতে চা গাছের উপর বসতে গেছি,আর ধপ ধপ ধপাস করে পড়ে গেলাম। সবাই তোলা বাদ দিয়ে হা হা হি হি করছিল। আমাদের ছায়ারা... রাতে খেলাম বৌদির হাতের রান্না। চাকাচাকা করল্লা ভাজি! দাদা স্যারের একমাত্র পুত্রের কোনো নাম নাই। তার মেজাজ মর্জির উপর নাম বদল হয়।

একেকজন একেক নামে ডাকে। উগ্র চৌধুরী, পাপাই, পুটুস কত্ত কি! কখনো কখনো রসগোল্লা চমচম... ট্রেন লেট। রাত সাড়ে এগারোটার ট্রেন একটার সময় কোনো রকমে হেলে দুলে আসলো। এর আগে একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেললাম। লাগেজ লক করার সময় নম্বর কেমনে কেমনে জানি উল্টা পাল্টা হয়ে গেল।

আধাঘন্টা ধরে নাম্বার মিলাইতেছি। লাগেজ আর খোলেনা। যে কোন জায়গা থেকে ফেরার পথে মন খারাপ হয়, আমার তো চিৎকার দিয়া কানতে মন চাইতেছে। এটা কি হইল! কারও দেখি কোনো মাথা ব্যাথা নাই। আমি একলা মুখ শুকনা কইরা ঘুরতেছি।

তুষার লাগেজের সামনে বসে গল্প করছে। এক হাতে চলছে নাম্বার মেলানো। হঠাৎ খটাশ করে শব্দ। খুলে গেছে। উহ আমার ভাইটা এত ভাল অবশেষে ট্রেনে চড়লাম,তুষার শ্রীমঙ্গলে নেমে যাবে,আমরা ফিরে আসবো।

বুকটা হুহু করছে এবার বলি কোথায় কোথায় গেলাম। সিলেটে এর আগের বছরই একবার গিয়েছিলাম। এবার অবশ্য তুষারের কুলাউড়ায় বদলির পর ঠিক করেছিলাম কুলাউড়ায় গিয়ে থাকতে হবে। ছোট্ট ছিমছাম একটা শহর। প্রথমদিন রেস্ট নিয়েই কাটালাম।

দুপুরে ঘুমের মধ্যে সারাক্ষন মাথার মধ্যে ট্রেনের ঝুমঝুম ছিল। পরদিন সবাই মিলে চললাম মাধবপুর লেক দেখতে। সেখান থেকে লাউয়াছড়া বনে গেলাম। খাসিয়া পল্লী পর্যন্ত গিয়ে ঘুরে আসলাম। বিকেলে রওনা হলাম মাধবকুন্ড দেখতে।

সাথে দুজন ভাইয়া ছিল তুষারের কলিগ, একজন প্রানীবিদ্যা আর একজন উদ্ভিদ বিদ্যার ছাত্র। লাউয়াছড়া গিয়ে পুরাই হুলস্থুল। যেসব গাছ আমরা চিনি উদ্ভিদ বিদ্যার ছাত্র আমাদের কনফিউজড করে দিচ্ছে। একটা উঁচু পাতা খসে যাওয়া নিম গাছ দেখিয়ে বললাম, ভাইয়া বলেন তো এটা কি গাছ? আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন পর অনেক ভাব নিয়ে তিনি বললেন এটা? এটা তো অর্জুন গাছ! আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম জগন্নাথের নামে মামলা হবে। (জগন্নাথ ইউনি) আসার পথে পুরোটা সময় তিনি জ্ঞান ঝাড়লেন আমাদের উপর।

পেপের দুধে আমাশা ভাল হয়। কোন গাছের রস খাইলে ত্বক ভাল হয়। আরো কত্ত কিছু! পুরাই জ্ঞানী হয়া গেলাম আর কি। পরদিন রওনা দিলাম জাফলঙের দিকে। জাফলঙে এই নৌকো ভাড়া করা হল শেষ মাথায় যাব তাই।

ভেতরে আমি ঢুকে বসে আছি। একমনে বরই মাখানো খাইতেছি এর আগের বার লালাখাল যাওয়া হয়নি। এবার যেতেই হবে। জামাইয়ের সাথে মন কষাকষি চলছে। সে কয় টাইম না পাইলে যামুনা।

আমি কই টাইম দরকার হইলে বানাইবা। তয় লালাখাল যাওন লাগবই লাগবো। লালাখালের পথে রওনা দিলাম, যখন কাছে এসে দাঁড়ালাম পানিতে হাত রাখলাম, মনে হল এর চেয়ে সুন্দর আর কি হতে পারে! লালাখালের নৌকোয় আমার দু'জন বাবা। একটা যা তা নৌকা। দুপুরের প্রচন্ড রোদ, ছাউনি নাই, পা রাখার জায়গায় কাঠ নাই।

ওদের নাকি সিডিউল, এই নৌকার বাইরে অন্য কোনো নৌকা চলবেনা। তিন সাড়ে তিন ঘন্টা পরপর একেকটা নৌকা একটা টিপ মারার সুযোগ পায়। সারাদিন প্রচন্ড রোদ। বাবুর মাথায় দেবার জন্য জামাইরে টুপি নিতে বলেছি, সে মেয়েমানুষের টুপি নিয়া হাজির। তাও এমন ছোট আমার মাথায় হয়না।

পুরায় ষড়যন্ত্র! গত রাতে ক্যামেরা বাবাজিকে খাবার দেয়া হয় নাই। ক্যামেরায় নাই এক ফোটা চার্জ। সমান তালে ঝাড়ি বর্ষন চলছে, ওরা আমারে ঝাড়ি দেয় আর আমি ওদের, আমি না হয় ভুইলা গেছি তাই বইলা তোমরা কেউ তো মনে করায় দিলানা। ফেরার পথে উৎলারপার ৭ নং পরিত্যক্ত গ্যাস ফিল্ড দেখতে গেলাম। আহা গ্যাসের কি সদ্ব্যবহার।

খালি ম্যাচ জালাও আর আগুন দেখো। সকাল থেকে বরই মাখানো, তেতুল মাখানো, ঝালমুড়ি মাখানো সমান তালে চলছে। যখন সামনে যা পাই আমি আর তুষার সেটার উপরেই ঝাপায় পড়তেছি। জামাই নাক সিঁটকায়, তাই সে খানাদানা হইতে বিতাড়িত। শাহ পরানের মাজারে আইসা থামলাম।

মির্জা ফখরুল দোয়া চাইয়া নাইমা আসলো। শাহজালালের মাজারে গেলাম দেখি সেখানেও ঐ ব্যাটা। এটা ছিল পুরাই ফ্যামিলি টুর। আব্বা আম্মা জামাই সব মাজারের ভেতর ঢুকলো আর আমি তুষার কে নিয়া মনিপুরি শাড়ি কিনতে মার্কেটে গেলাম। ফোনের পর ফোন,অত্যাচারে অতীষ্ট হয়ে মাজারের কাছে ফিরলাম।

শুরু হইল জামাইয়ের সাথে ঝগড়া। পাইসোটা কি তুমি? শাড়ী কিনতে পারি নাই শুনে জামাইয়ের মুখে তৃপ্তির হাসি। সবার মাথা ঠান্ডা করতে শেষে তুষার আইসক্রিম নিয়া আসলো,খাইতে খাইতে কুলাউড়ায় ফিরলাম। বাইরে সেদিন সূর্যটা অস্বাভাবিক সৌন্দর্য্য নিয়ে ডুবেছিল। দু চোখ মুহূর্তের জন্য বন্ধ করতে ইচ্ছে করছিলনা।

প্রান ভরে দেখার মত সুন্দর! আচ্ছা ! যাই দেখি তাই এত ভাল লাগে কেন? অ:ট: ছবি দিতে চেয়েছিলাম। আপলোড হয়না।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।