ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তাপসী রাবেয়া হলে অবৈধভাবে প্রবেশ করে এক ছাত্রীকে পিটিয়েছেন এক শিক্ষিকা। গত বৃহস্পতিবার রাতে হলে অবস্থান করে ওই প্রভাষক ছাত্রীকে মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাপসী রাবেয়া হলের ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রী ও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের শিক্ষিকা আলেয়া ফেরদৌসী ওরফে রত্না হলের ১৩৪ নম্বর কক্ষে যান। ওই কক্ষে ছাত্রলীগের উত্তরবঙ্গ পক্ষের জ্যেষ্ঠ ও প্রভাবশালী কর্মী নাজমুন নাহার ওরফে মুন থাকেন। সেখানে শিক্ষিকা রত্নার নেতৃত্বে মুন, চৈতি ও লিজা নৈশভোজের আয়োজন করেন।
ভোজে প্রতিপক্ষ ময়মনসিংহ পক্ষের ছাত্রলীগের কর্মী নিলুফার ইয়াসমিন চৌধুরী ওরফে মুন্নিকে দাওয়াত করা হয়। উত্তরবঙ্গ পক্ষ করা না-করা নিয়ে মুন্নির সঙ্গে রাত ১২টার দিকে মুন, চৈতি ও লিজার উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। একপর্যায়ে শিক্ষক রত্নাসহ অন্য ছাত্রীরা মুন্নিকে মারধর করেন।
রাত দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা, প্রক্টর ও হাউস টিউটর হলে গেলে ছাত্রী ও নেতা-কর্মীরা তাঁদের কাছে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেন। গত শুক্রবার সকাল নয়টার দিকে হল প্রাধ্যক্ষের নেতৃত্বে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা তাপসী রাবেয়া হলে যান।
তাঁরা সেখানে উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীদের বক্তব্য শোনেন।
মারধরের শিকার মুন্নি অভিযোগ করেন, ‘আমাকে দাওয়াত দিয়ে ওই কক্ষে নিয়ে রত্না ম্যাম ও মুনসহ ওই পক্ষের ছাত্রলীগের কর্মীরা উত্তরবঙ্গ পক্ষে যোগ দিতে চাপ দেন। একপর্যায়ে মুন আমাকে বিপদে ফেলার উদ্দেশ্যে আমার মোবাইল ফোন নিয়ে তাঁদের কিছু ব্যক্তিগত ও অশালীন কথা রেকর্ড করেন। পরে সেগুলো আমাকে শুনিয়ে রত্না ম্যাম বলেন, “তোর এত বড় সাহস! তুই আমার ব্যক্তিগত কথা রেকর্ড করেছিস। তুই বল, উত্তরবঙ্গ পক্ষ করবি কি না? না করলে এই রেকর্ডের কথা বলে তোকে হলছাড়া করব।
”’ মুন্নি আরও অভিযোগ করেন, ‘আমি তাঁদের কথায় রাজি না হওয়ায় তাঁরা আমার চুলের মুঠি ধরে চড়, থাপড় ও লাথি মারেন। ’
ছাত্রলীগের অভিযুক্ত কর্মী মুন বলেন, ‘মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মুন্নি আমাদের ব্যক্তিগত কথাবার্তা তার মোবাইলে রেকর্ড করে আমাদের মানহানি করতে চেয়েছিল। এ জন্য রত্না ম্যাম তাকে সতর্ক করে দিয়েছেন এবং রেকর্ডটি নষ্ট করে ফেলেছেন। ’ তাপসী রাবেয়া হলের সাধারণ ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুন তাঁর ইচ্ছামতো ডাইনিং-ক্যান্টিন পরিচালনা করে আসছেন।
হলের খাবারের মান ভালো না হওয়ায় আবাসিক শিক্ষার্থীরা ডাইনিংয়ে খেতে রাজি না হলে মুন শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ দেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরা মুন ও শিক্ষিকা রত্নার এ আচরণে শাস্তি দাবি করেন।
শিক্ষিকা রত্না বলেন, ‘মুন্নিকে শাসন করেছি এবং সতর্ক করেছি। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ’ ছাত্রী হলে আপনার রাত্রিযাপন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের লঙ্ঘন কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, বেআইনি।
’ তবে ওই রাতে তিনি বাসায় চলে যান বলে দাবি করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুজ্জামান বলেন, ‘এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন। রত্না ম্যাডাম ও মুন ছাত্রলীগের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। ’
তাপসী রাবেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ আয়শা সিদ্দিকা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই শিক্ষিকার হলে অবস্থান করা বেআইনি হয়েছে। তাঁকে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়েছে।
কিন্তু তিনি লুকিয়ে বেড়াচ্ছেন। ’ ছাত্রলীগের কর্মী মুনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ওর আচরণ শিষ্টাচারবহির্ভূত। সব জেনেও কিছু বলতে পারছি না। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে!’ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।