পরিমলেরা এদেশে যুগে যুগে জন্মেছে, তাদেরকে বাঁচানোর জন্য হোসনে আরাদের আঁচল পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই পাতা ছিল। জাতিগত ভাবেই আমাদের সহ্যশক্তি অনেক বেশী। বৃটিশদের ২০০ বছর সহ্য করেছি, পাকিস্তানিদের সহ্য করেছি দুই যুগ। চার দশক ধরে সহ্য করছি লোভী-স্বার্থপর রাজনীতিকদের। তবে আশার কথা হচ্ছে- নির্যাতিতের পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায় তখন পরিমল-হোসনে আরাদের ধ্বংস অনিবার্য।
আমরা ১৯৪৭ এ ধ্বংস করেছি আমাদের মাটির প্রতি বৃটিশদের লালসা, ধ্বংস করেছি ১৯৭১ এ পাক হানাদারদের, ধ্বংস করেছি ৯০ তে স্বৈরশাসক এরশাদকে, এখনো লড়াই চলছে লোভী-স্বার্থপর রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে।
তবে এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি, যথেষ্ট প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে যাবতীয় নষ্টদের রুখে দেয়া সম্ভব। পরিমল-হোসনে আরা’র অশুভ হাত যতই শক্তিধর হোক না কেন আমরা চাইলে সে কালো হাত ভেঙ্গে, দুমড়ে-মুচড়ে দিতে পারি। হোক পরিমল গোপালগঞ্জের কুলাঙ্গার, হোক শেখ হাসিনা তার পাড়াতো ভগ্নি কিংবা হোসনে আরা অনেক ক্ষমতাধর লোকের পত্নী-ভগ্নি-আত্মিয়া; কিছুই আসে যায় না তাতে। প্রকৃতি কখনোই বাড়াবাড়ি পছন্দ করে না, প্রকৃতি নিজ থেকেই বাড়াবাড়ি থামিয়ে দেয়; পরিমল-হোসনে আরাদের বাড়াবাড়িও প্রকৃতি থামাবে, আমাদের কাজ প্রকৃতির হাতকে বেগবান করা।
পরিমল-হোসনে আরাদের কৃতকর্মই তাদেরকে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করবে যা ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। খুব সম্ভবত আজকের পর থেকে এদেশের আর কোন সচেতন হিন্দু পরিবার তাদের পুত্র সন্তানের নাম পরিমল রাখবে না, তেমনি কোন সচেতন মুসলিম পরিবার তাদের কন্যা সন্তানের নাম হোসনে আরা রাখবে না।
পরিমলের আর কি হবে? সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাবাস, নারী নির্যাতন আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি। পরিমল শুধুই একটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে পাশবিক নির্যাতন করেনি, সাথে সাথে সে পাশবিকতা করেছে ‘শিক্ষক’ নামের মহান পেশাটির সাথে, সে আরো পাশবিকতা করেছে আমাদের বিশ্বাস, মূল্যবোধ আর বিবেকের সাথে। প্রথমোক্ত অপরাধের সাজা হলেই কি বাদ বাকী অপরাধের মাফ হয়ে যাবে? এই ঘটনার পর থেকে আর কোন বাবা-মা তাদের আদরের মেয়েটিকে কোচিং সেন্টারে পাঠাবেন? শত-সহস্র পুরুষ শিক্ষকেরা কি এরপর থেকে অভিভাবকদের সন্দেহের দৃষ্টি এড়াতে পারবেন? আমাদের বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানে যথেষ্ট নয়, এই সত্য আমরা অনেক আগেই মেনে নিয়েছি।
কোচিং সেন্টার হোক কিংবা প্রাইভেট টিউশান দুই ক্ষেত্রেই এখনো পুরুষ শিক্ষকের হার নারী শিক্ষকদের তুলনায় কয়েকগুণ বেশী। এখন যদি মেয়ে শিক্ষার্থিদের অভিভাবকেরা পুরুষ শিক্ষকদের এড়িয়ে চলেন তো সেটা অস্বাভাবিক হবে না কিন্তু সেক্ষেত্রে মেয়ে শিক্ষার্থিদের পড়াশুনা বিপর্যস্ত হবে। ভাবলে অবাক লাগে, একজন কুলাঙ্গার পরিমল (বা পরিমলেরা) কিভাবে বহুমুখী সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে ফেলেছে! শুধু একজন পরিমলকে সামান্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না, চাই সামাজিক আন্দোলন, চাই দুর্বার প্রতিরোধ আর চাই গণ-সচেতনতা।
হোসনে আরা’র কথা আর কি বলব? এরকম স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়েও এই মহিলা যেভাবে ঘসেটি বেগমের মত আচরণ করল তাতে তার যাবতীয় অতীত ভালো কাজ মুছে গেল। এই ঘসেটি বেগমের সামান্যতম হলেও যদি লাজ-শরম থাকে সে নিজ থেকেই পদত্যাগ করবে, কিন্তু এই মহিলার নুন্যতম পর্যায়েরও হায়াবোধ আছে বলে মনে হয়না।
থাকলে সে মেয়েদেরকে পুলিশের মারের ভয় দেখাত না বরং মেয়েদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করত, অতএব তাকেও টেনে-হিঁচড়ে নামাতে হবে। পরিমলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে সোচ্চার আমাদের সবারই উচিত এই নব্য ঘসেটি বেগমকে ভিকারুন্নিসা নুনের প্রধানের গদি থেকে তুলে আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করা। পরিমলের অপকর্মের সহযোগী থাকলে পুলিশ তাদেরকেও খুঁজছে, আমি বুঝি না পুলিশ কি হোসনে আরা-কে চোখে দেখে না? এই নব্য ঘসেটি বেগম হোসনে আরা’র বিরুদ্ধে পরিমলের পাশবিকতায় সহযোগিতার অভিযোগ গঠন করা হোক, ফৌজদারি দণ্ডবিধিনুযায়ী শাস্তি দেয়া হোক।
আজ শনিবার ভিকারুন্নিসা নুন স্কুল ও কলেজের মেয়েরা তাদের মূল স্কুলের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে, বিকেলে শহীদ মিনারেও তাদের কর্মসূচি আছে। মেয়েরা তোমরা এগিয়ে যাও, সারা দেশ তোমাদের সাথে আছে।
প্রয়োজন মাফিক খবর দিও, সশরীরে অগুনতি সহযোদ্ধারা হাজির হয়ে যাবে, যেকোন সময়, যেকোন জায়গায়। তবু পরিমল-হোসনে আরা-দের সমূলে উৎখাত না করা পর্যন্ত তোমাদের আন্দোলন-সংগ্রাম যেন না থামে। হয়ত পরিমল-হোসনে আরা-দের শিকড় অনেক গভীরে, সুতরাং প্রতিরোধের ঝড়কে ততটাই তীব্র করতে হবে। বাঁধা আসবেই, তবু তোমরা থেমো না, তোমাদের সাহসী পদচারনার পথ ধরে জয় আসবেই।
by.........আমান ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।