আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

▓▓▓▒░ আমার অনিচ্ছাকৃত অভিশাপ সমূহ ░▒▓▓▓


চট্টগ্রামে মা- আমি লেখাপড়ার জন্য ঢাকা। লেখা পড়াও এক এমন বিষয়ে যেখানে কথায় কথায় হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়। আমি আটকাতে পারিনা। এমন অবস্থায় আমার হিমশিম খেতে হয়। মা বাসায় কিছু ছাত্র পড়ান- সেখান থেকে আমাকে কিছু টাকা দিতেন- আমি সেটা দিয়ে কোন রকমে চলতাম।

কেরো কাছে হাত পাততে বাবা না করে গিয়েছিলেন- তাই আমি কারো কাছে ই হাত পাতিনি। দরকার হলে না খেয়ে থেকেছি। মেসে থাকতাম- খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা ছিল হোটেলে- যখন টাকা থাকত তখন চা খেয়ে টাকা জমাতাম। এমন এক সময় আমি বাবা মারা যাবার ঠিক ২ মাস পড়ে প্রথম বারের মত সেমিষ্টারে ফেল করি। করার কারন বাবা মারা যাবার পর আমি ৩টা প্রজেক্ট জমা দিতে পারিনি।

সেগুলা ছাড়া আমাকে পাশ করানো সম্ভব হয়নি। ম্যডামের পায়ে ধরে কেদেছি- দয়া করে ও পাশ করিয়ে দেয়নি। আমি যে দিন ফেল করলাম- তার ঠিক পরের দিন আমি আমাদের কমন রুমে বসে ছিলাম- এমন সময় সেখানে আমাদের এক ক্লাস সিনিয়র এক ভাই এসে আমাকে টিটকারি মারতে থাকে- আমি যে ফেল করলাম সেটা নিয়ে। অনেক কষ্ট মনে নিয়ে ও আমি কিছু বলিনি- বিশ্বাস করবেন না- সে রাতে আমি ঘুমাতে ও পারিনি। নিজের ঊপর রাগ হচ্ছিল খুব।

মনে হয় এর পর আমি বেশ কয়েকদিন সেই বড় ভাইয়ের ক্ষতি কামনা করেছি। ব্যাপারটা সেখানেই শেষ হতে পারত- কিন্তু ঠিক ১ মাস পরে যখন আমি শুনি সেই বড় ভাইয়ের বাবা হার্ট এটাকে মারা গেছেন তখন আমি নিজের কান কে ও বিশ্বাস করতে পারিনি। নিজের উপর খুব গর্ব হচ্ছিল- কাঊকে বলিনি- কিন্তু নিজের এই ক্ষমতা দেখে আমি নিজেই অভিভুত হই- কিন্তু- তার ঠিক ২ সপ্তাহ পড়ে যখন সেই বড় ভাইয়ের কষ্টের কথা শুনি তখন আমার চোখে পানি এসে যায়। সেই সেমিষ্টার সহ আরও একটা সেমিষ্টার সেই বড় ভাই ফেল করেছিল- প্রাইভেটে পড়েও ফেল করে নজির স্থাপন করেছিলেন তিনি। এখন ও তিনি অনেক কষ্টে আছেন।

ঊনার শেষ সম্বল ঊনার ভিটা থেকে ঊনার চাচা রা ঊনাকে উচ্ছেদ করেছেন শুনে আমি খুব কষ্ট পেয়েছিলাম বিশ্বাস করেন। এর প্রের ঘটনায় আসি- এটা বাবা মারা যাবার ২ বছর পরের ঘটনা- তখন আমার অবস্থা অনেক শোচনীয়- হেন কোন কাজ নাই আমি তখন করিনাই- বিভিন্ন অফিসে জব করা- সময় পেলে বিভিন্ন দোকানে পার্টটাইম সেলস মেনের চাকরি- কি না করেছি আমি । অনেক অনেক কষ্ট এই ঢাকা শহরে সেই সময় বুঝেছি। এই সময় আমাদের এক সিনিয়র ভাই কাজ করার জন্য উনার অফিসে ডাকে। আমি ও খুশি মনে যাই।

সেমিস্টার ফি দেবার জন্য ১২০০০ টাকা খুব দরকার ছিল। তাই গেলাম। গিয়ে শুনি একটা বাড়ির মডেল বানাতে হবে- উনি আমাকে ১০০০০ টাকা দেবেন। আমি না করিনাই। এই সময় এই টাকা আমার কাছে অনেক কিছু।

উনাকে খুশি মনে কাজ করে দিই। সাথে আরও দুই জন কে সাথে নিই। কারন এই কাজ এক জনে করা যায় না। কাজ শেষে উনি আমাকে আর পেমেন্ট দেন না। ৩ দিন চলে যায়-৫ দিন চলে যায়-১০ দিন যায়- টাকা দেবার নাম নেই।

এদিকে আমি যাদের নিয়ে কাজ করেছিলাম তারা আমাকে টাকার জন্য চাপ দেয়। আমি নিরুপায় হয়ে জমানো টাকা থেকে ওদের টাকা দিই। কিন্তু সেই টাকা ১৫ দিন হয়ে গেলেও উনি আমাকে দেন না। আমি ঊনার অফিসে যাই- উনি আমাকে যা তা বলেন। আমি সেখানে সবার সামনে উনাকে যা তা বলি।

চলে আসি মাথা গরম করে। এদিকে সেমিস্টারের টাকা দেবার সময় ঘনিয়ে আসছে। কি করি কি করি। শেষে আমি আবার উনার কাছে মাফ চেয়ে টাকা টা চাইলাম- উনি দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলেন আমাকে। সেই দিন থেকে আমি উনাকে ঘৃণা করি।

কিন্তু ঘটনা আমি টের পাই ১ বছর পরে। আমি উনার অফিসের পাশেই একটা অফিসে চাকরি পাই। সেখানেই শুনি সেই বড় ভাই ঊনার সর্বস্ব হারিয়েছেন শেয়ারে। এখন উনি পাগলা গারদে আছেন। টাকার শোক সইতে না পেরে ড্রাগ নিয়ে নিয়ে পাগল হয়ে গেছেন উনি।

কষ্ট হয় মানুষটাকে দেখলে এখন। মাঝে একবার আমি উনাকে দেখতে গিয়েছিলাম উনার বাসায়। মাঝে মাঝে উনাকে বাসায় আনা হয়। কিন্তু তিনি কাঊকে চিনতে পারেন না। গালাগালি করেন কেঊ সামনে গেলে।

তারপর আসি তিন নম্বর ঘটনায়- এটা মাত্র ১১ মাস আগের ঘটনা- আমার থিসিস চলছে- এবং আমার অভাবের পাল্লা অনেক বেশী ভারী এই সময়। টাকা পয়সা জোগার করলাম প্রায় ৪৫০০০ থিসিস কমপ্লিট করার জন্য। এমন সময় আমার মনিটর টা নষ্ট হয়ে গেল। আমি নিরুপায় হয়ে যে কাজ কোনদিন করিনি সেটাই করলাম। পাশের রুমের একটা ছেলের কাছে তার মনিটর ধার চাইলাম।

সে দিল আমাকে তবে শর্ত দিল এটা আমাকে খুব তারাতাড়ি দিতে হবে। আমি ও রাজি হলাম। মাত্র ১৫ দিন বাকি তখন থিসিস জমা দেবার। আর ঠিক ৭ দিন পর সে এসে ওর মনিটর দাবি করল- আমি বললাম আর মাত্র ৮ টা দিন- আমাকে ধার দে- আমি তোকে খাইয়ে দেব থিসিস এর পর। এখন আমার মনিটর কেনার টাকা নাই।

ও শুনলোনা। শেষে ঝগড়া করে আমার সামনে থেকে চলন্ত মনিটর খুলে নিয়ে চলে গেল- যখন আমার মনিটর ছাড়া চলবেই না। আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে- মানুষ এরকম হতে পারে? আমি বিশ্বাস করিনি আগে। তারপর মন খারাপ করে বসে ছিলাম একদিন। পরদিন ভাগ্য ক্রমে হাজার তিনেক টাকা পেয়ে যাই- একজন আমাকে বাকি তে কাজ করিয়ে নিয়েছিল।

আমি টাকা টা পেয়েই একটা সেকেন্ড হ্যান্ড মনিটর কিনে কাজ শুরু করি- এবং করুণাময়ের অসীম দয়ায় আমি জীবনে প্রথম বারের মত প্রথম হই। এটাই আমার জীবনের প্রথম ও শেষ বার কোন পরীক্ষায় প্রথম হওয়া। আমি খুশিতে যখন লাফাচ্ছি তখন সেই বন্ধু আমাকে ফোন দিল। ফোন দিয়ে যা বলল আমি শুনে হতবাক- সে মনিটর টা বাসায় নিয়ে গিয়ে আর ওপেন করতে পারেনি। সেটা কোন এক অজানা কারনে নষ্ট হয়ে গেছে।

পড়ে ও মেকানিক এর কাছে নিয়ে গিয়েছিল- সে বলেছে এটা কোন এক যায়গায় বাড়ি খেয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। সে আমার কাছে মাফ চেয়েছিল- কিন্তু আমি খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম আমার এই কুক্ষমতার জন্য। এটা কি ভাল? আমার মনে হয়না। আমার যারা ক্ষতি করে- তাদের খারাপের জন্য আমি খানিক ক্ষন প্রার্থনা করি ঠিক- কিন্তু সেটা আমার মন থেকে আসেনা- কিন্তু মানুষ গুলো ঠিক কষ্ট পায়- আমার শুনে খুব খারাপ লাগে। খুব।

কিন্তু করার কিছুই থাকেনা সেই সময়। তাই এখন মানুষ থেকে কিছুটা দূরে দূরে থাকি। কেউ খারাপ চাইলেও তার ভাল চাই। জানিনা নিজেকে কতদিন ভাল রাখতে পারব। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।