আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

।। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ও অন্যান্য।।

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা... বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৩০ বছর পর ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যাত্রা শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের জনবল মোট ৫১ জন যাদের মধ্যে ২৪ কর্মকর্তা এবং ২৭ জন কর্মচারী। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে দুইটি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট এবং জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল। এর মধ্যে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অনুমোদিত পদ ৬৯৩টি।

যার মধ্যে কর্মকর্তা ৮২জন এবং কর্মচারী ৬১১ জন। আর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের অনুমোদিত পদ ৩২টি। যার মধ্যে কর্মকর্তা ১২ জন ও কর্মচারী ২০ জন। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় মোট ২,৬৫,৪৩৫ টি আবেদনের প্রেক্ষিতে এপ্রিল ২০১২ পর্যন্ত ১,৬৭,৬৬৪ টি মুক্তিযোদ্ধা সাময়িক সনদপত্র ইস্যু করেছে। এর মধ্যে যেসব মুক্তিযোদ্ধারা সরকারি ভাতা পাচ্ছেন সেই চিত্র হল: (ক) সম্মানী ভাতা প্রাপ্ত (সমাজ কল্যাণ বিভাগের মাধ্যমে) মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যাঃ ১,৫০,০০০ জন।

(খ) ভাতা প্রাপ্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা (কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে) সংখ্যাঃ ৫,৩৬৬ জন। (গ) ভাতা প্রাপ্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা (কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে) পরিবারের সংখ্যাঃ ২,৫০২ জন। (ঘ) ভাতা প্রাপ্ত (কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে) বীর শ্রেষ্ঠ পরিবারের সংখ্যাঃ ০৭ জন। (ঙ) রেশন প্রাপ্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সংখ্যাঃ ৭,৮৩৮ জন। সম্মানী ভাতা হিসেবে প্রতি বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মাসিক ২০০০/- (দুই হাজার) টাকা হারে প্রদান করা হচ্ছে।

বর্তমানে সারা দেশে ১,৫০,০০০ (এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এ ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এ খাতে বছরে ৩৬০ (তিনশো ষাট) কোটি টাকা সরকারের ব্যয় হচ্ছে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৬৭৬ জনকে রাষ্ট্রীয় খেতাব দেওয়া হয়। বর্তমানে রাষ্ট্রীয় খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুত্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৬৮০ জন। বীরশ্রেষ্ঠ ৭ জন।

বীর উত্তম ৭০ জন। (সর্বশেষ বীর উত্তম খেতাব পান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামাল উদ্দিন আহমদ ১ লা এপ্রিল ২০১০ তারিখে)। বীর বিক্রম ১৭৭ জন। আর বীর প্রতীক ৪২৬ জন। সর্বশেষ বীর প্রতীক খেতাব পান তারামন বিবি।

বর্তমানে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার মাসিক ২০০ টাকা, বীর উত্তম ১৫০ টাকা, বীর বিক্রম ১২৫ টাকা এবং বীর প্রতীক ১০০ টাকা হারে সম্মানী ভাতা পাচ্ছিলেন। ২০১১ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে বিভিন্ন বাহিনীর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু বেসামরিক খেতাবপ্রাপ্ত ২১৭ জন মুক্তিযোদ্ধা আগের হারেই সম্মানী পাচ্ছিলেন। আজ ২২ জুলাই ২০১৩, সোমবার সরকার খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ‘খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা প্রদান নীতিমালা ২০১৩’-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদের সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানান, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার মাসিক সম্মানী ভাতা হিসেবে ১২ হাজার টাকা, বীর উত্তম ১০ হাজার টাকা, বীর বিক্রম আট হাজার টাকা ও বীর প্রতীক ছয় হাজার টাকা করে পাবেন। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা ও তাদের পরিবার (পরিবারের সদস্য সংখ্যার হিসেবে) চাল, আটা, চিনি, ভোজ্য তেল এবং ডাল সরকারি রেশন হিসেবে প্রতি মাসে পান। আর সরকারি/আধাসরকারি দপ্তর, স্বায়ত্ব শাসিত/আধা স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা/প্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেশনের চাকুরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এবং সন্তান না পাওয়া গেলে পুত্র-কন্যার পুত্র-কন্যাদের জন্য ৩০% কোটা সংরক্ষণের সুবিধা ভোগ করেন। এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ভর্তির ক্ষেত্রে ৫% কোটা সুবিধা ভোগ করেন। আর এসব বিষয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মনিটরিং করে থাকে।

আর মুক্তিযোদ্ধা গণকর্মচারীদের সরকারি চাকুরিতে অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৭ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৫৯ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল, যুদ্ধাহত ও শহীদ পরিবারের রাষ্ট্রীয় সম্মানীভাতা বাবদ মোট ১০ ক্যাটাগরি রয়েছে। এই ১০ ক্যাটাগরির সুযোগ সুবিধার ধরনও ভিন্ন ভিন্ন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সাড়ে সাত কোটি বাঙালি ছিল এই ভূখণ্ডে। রাজাকার, আলবদর, আলসামস, জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের দোসরদের বাদ দিলে বাকি সবাই এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহন করেছিল।

দেশ স্বাধীনের পর মুক্তিযুদ্ধের সনদের নামেই প্রথমে দেশে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বর্তমান হিসেব অনুযায়ী সনদপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা মাত্র ১,৬৭,৬৬৪ (এক লাখ সাতষট্টি হাজার ছয়শো চৌষাট্টি) জন। এখনো মুক্তিযোদ্ধা অনুসন্ধান কার্যক্রম চলছে। তাহলে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি থেকে এই বাছাই করার বেআক্কেল দায়িত্বটা কেন সরকার নিল? অনেক জামায়াত রাজাকার পরিবারের সদস্যরাও এই সনদ পেয়েছে। এভাবে একটা জাতিকে হাজার ভাবে ভাগ করে কখনো উন্নয়ন সম্ভব নয়।

ভাগ যতো বেশি, যারা ভাগ করার দায়িত্বে আছেন, তাদের পকেট ততো ভারী হয়। এটাই বাংলাদেশে বিগত ৪২ বছর ধরে চলে আসছে। শুধুমাত্র ভাগ করে রাখতে পারলেই চতুর রাজনীতিবিদদের আতলামী করার সুযোগটি থাকে বেশি। বাংলাদেশ আর কতো এই বৈষম্য বয়ে বেড়াবে? মুক্তিযুদ্ধকালীন দেশের সেই সাত কোটি মানুষ কি অপরাধ করেছিল যে সনদ প্রদানের নামে এই অনিয়ম ৪২ বছর ধরে চলতে থাকবে? রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করার জন্য এটা একটি অবলম্বন। মুখে আমরা মুক্তিযুদ্ধের অনেক বুলি ছাড়ি।

আর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি স্থায়ী ব্যবসা খোলা হয়েছে স্বয়ং রাষ্ট্রীয় তাবেদারীতে। যা নিয়ে সুস্থ মাথায় চিন্তা করার একটি মানুষও কি দেশে নেই? যদি মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করতে চান, তাহলে বাকী সাত কোটি মানুষ কেন বৈষম্যের শিকার? আর আমরা সবাই খুব চেতনার পতাকা উড়াই? চেতনা খালি মুখে হয় না। একজন সাংসদ চুরি-চামারির বাইরে মাসে কতো টাকা রাষ্ট্রীয় ভাতা পান? আর ৪২ বছর পরে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ২০০ টাকার সম্মানী বাড়িয়ে করলেন ১২ হাজার!! আহারে আমার দরদ!! আর কতো মুক্তিযুদ্ধ বিক্রি করবেন আপনারা? এবার থামুন। তারমধ্যে আবার আওয়ামী লীগ বিএনপি ভাগাভাগি তো আছেই। এভাবেই বাংলাদেশকে আমাদের নষ্ট রাজনীতি তীলে তীলে ভাগ করে দিচ্ছে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।