আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কথা রাখেননি রিজওয়ানার বাবা......... কৃষ্ণের প্রেমে অভিশপ্ত বৃদ্ধা ডলির কান্না

কথা রাখেননি পরিবেশকন্যা বেলার সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের যুদ্ধাপরাধী বাবা সৈয়দ মহিবুল হাসান। যৌবনের উন্মাদনায় আগ্রাসী সুদর্শন কুখ্যাত রাজাকার মহিবুল হাসানের প্রেমকৃষ্ণে পা ফেলে একে একে অনেক নারীর হৃদয় ভেঙেছে। দহনে দহনে গেছে ব্যর্থ জীবন। হবিগঞ্জ শহর মাতিয়ে ষাটের দশকে তিনি সবার মুখে মুখে 'কৃষ্ণ মহিবুল' বলে পরিচিত হয়েছিলেন। কৃষ্ণের প্রেমনিবেদনের জাত-পাতের কথা ভুলে রিজওয়ানার বাবার সঙ্গে গভীর প্রেমে জড়িয়ে ছিলেন সংখ্যালঘু ডলি রায়।

টানা দুই বছর কৃষ্ণ প্রণয়লীলায় মেতে উঠেছিলেন প্রায় প্রকাশ্যে। কিন্তু রক্তে তাদের বিশ্বাসঘাতকতা। '৬৪ সালে রিজওয়ানার মা সুরাইয়াকে বিয়ে করলে প্রতারিত ডলি রায় সইতে পারেননি। বুঝতে পারেন কৃষ্ণের প্রেমকুঞ্জে পা দিয়ে মহিবুল তার জীবনটাকেই অভিশপ্ত করে দিয়েছেন। গভীর বেদনা-যন্ত্রণায় পাশের বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দেন আত্মহত্যার জন্য।

নিয়তি বলে কথা। মৃত্যু তাকে স্পর্শ করেনি। কোমর ভেঙে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়। ভাই অমল রায় মহিবুলের কলঙ্কিত জীবনের ছায়া থেকে দূরে সরে যান ডলি রায়কে নিয়ে। শ্রীমঙ্গলে গিয়ে বসত গড়েন।

হবিগঞ্জের বিষয়-সম্পত্তি বিক্রি করে অপমান, লজ্জা, ঘৃণায় চলে যান। বাবা-চাচাদের কীর্তি, পরিবেশদূষণের লজ্জায় বেলা-সুন্দরী রিজওয়ানা হবিগঞ্জে যেতে চান না। বাড়ি যান কম। লুকিয়ে। রাজাকারকন্যা বলে কত মন্তব্য শুনতে হয় তাই! ডলি রায়ের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ৭০ বছরের বৃদ্ধা বাকরুদ্ধ হয়ে কাঁদেন শুধু।

কিছুই বলেন না। ভাইপো শিবাজী রায় বলেন, পুরনো কথা বলে লাভ কী? সারা জীবন তো তিনি এ নিয়ে জ্বলছেনই। তিনি জানান, তার পিসি মহিবুলের নাম বললেই ঘৃণায় মুখ লুকান। কিছু বলেন না। এদিকে ১৫ বছর আগে কৃষ্ণ মহিবুল মারা গেলেও মানুষের মুখে ভাসে তার কুকীর্তির কথা।

একের পর এক নারী বদলই যার নেশা ছিল সেই মহিবুল এলাকায় 'কৃষ্ণ' নামে পরিচিত ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সৈয়দা রিজওয়ানার বাবাই শুধু নন, তার চাচা সৈয়দ বাবরুল হাসান দ্বিতীয় স্ত্রী এবং সেই ঘরের তিন সন্তানকে ৬০ বছরেও স্বীকৃতি দেননি। সরেজমিনে ঘুরে জানা যায় সৈয়দা রিজওয়ানার বাবা ও চাচাদের এসব অজানা কাহিনী। ১৯৬৪ সালের দিকে ডলি রায়ের ওই ঘটনায় তৎকালীন হবিগঞ্জ মহকুমাসহ আশপাশের এলাকায় তোলপাড় হয়। তবে তাদের পরিবারের সদস্যদের ভয়ে অনেকেই নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়েছেন।

ব্যতিক্রম বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হবিগঞ্জ জেলার ডেপুটি কমান্ডার ও সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌরপ্রসাদ রায়। সাহসী মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'মহিবুল সাবকে কৃষ্ণ নামেই চিনত তৎকালীন হবিগঞ্জবাসী। লম্পট প্রকৃতির লোক ছিলেন তিনি। অনেক মেয়ের সঙ্গেই তার সম্পর্ক ছিল। ডলি রায়ের জীবনটাই তো তিনি শেষ করে দিয়েছেন।

সারা জীবন কুমারীই রয়ে গেলেন। ' খোঁজ নিয়ে জানা যায়, '৬০-এর দশকে হবিগঞ্জে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন রিজওয়ানার বাবা সৈয়দ মহিবুল হাসান। থাকতেন শহরের পুরান মুন্সেফি এলাকায়। নিজের আকর্ষণীয় চেহারাকে পুঁজি করে মহিবুল বিভিন্ন সময় একাধিক সুন্দরী মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ওই সময়ই মহিবুলকে 'কৃষ্ণ' নামে ডাকতে শুরু করে হবিগঞ্জবাসী।

মহিবুলের প্রেমিকাদের একজন ছিলেন ডলি রায়। পাশাপাশি বাসায় থাকার সুবাদে 'ওয়াপদা'র হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা অমল রায়ের একমাত্র বোন ডলি রায়ের দিকে কুনজর পড়ে মহিবুলের। অন্য ধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে শুরুর দিকে মহিবুলের প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া দেননি সুন্দরী ডলি রায়। কিন্তু ছলেবলে-কৌশলে মহিবুল ডলি রায়কে তার প্রেমের ফাঁদে পা দিতে বাধ্য করান। ধর্মীয় দিক থেকে সমস্যা থাকার কারণে এ বিষয়টিতে ডলির পরিবারের সদস্যরা মেনে নিতে পারেননি।

তবে মহিবুলের মিথ্যে ভালোবাসায় অন্ধ হওয়ায় তার একাধিক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের বিষয়টি বিশ্বাস করতে চাইতেন না ডলি রায়। একপর্যায়ে ডলির বিষয়টি মেনে নিতে বাধ্য হন তার পরিবারের সদস্যরা। তবে ১৯৬৪ সালের দিকে মহিবুল হাসান রিজওয়ানার মা সুরাইয়া হাসানকে বিয়ে করলে ওই বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি ডলি। রাগে, ক্ষোভে, অভিমানে পাশের বাসার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তবে সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও কোমর ভেঙে সারা জীবনের জন্য তিনি পঙ্গুত্ববরণ করেন।

ওই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে ডলির ভাই অমল রায় পরে হবিগঞ্জের সব সম্পত্তি বিক্রি করে শ্রীমঙ্গলে গিয়ে স্থায়ী হয়েছিলেন। অন্যদিকে, স্বামীর স্বীকৃতি না পেয়ে প্রচণ্ড কষ্ট নিয়ে পাঁচ বছর আগে মারা যান সৈয়দা রিজওয়ানার চাচি রফিকুন্নেসা। সুনামগঞ্জের শ্রীহাইল গ্রামের মেয়ে সুন্দরী রফিকুন্নেসা ছিলেন রিজওয়ানাদের বাসার গৃহকর্মী। তার দিকে নজর পড়ে রিজওয়ানার চাচা সৈয়দ বাবরুল হাসানের। মিথ্যে প্রলোভন দেখিয়ে বাবরুল গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলেন রফিকুন্নেসার সঙ্গে।

পরে গোপনে রফিকুন্নেসাকে বিয়ে করেন বাবরুল। একে একে তিন সন্তানের মা হন রফিকুন্নেসা। তবে ওই পরিবারের কিংবা বাবরুলের কোনো স্বীকৃতি পাননি রফিকুন্নেসা এবং তার তিন সন্তান। সম্পত্তির অধিকার তো দূরের কথা, নামের আগে 'সৈয়দ' লিখতেও বাধা দেওয়া হয়েছে তাদের। রিজওয়ানা ও লিয়াকত হাসানদের ভয়ে অধিকার আদায়ের ব্যাপারে কোনো কথা বলারও সাহস দেখাননি অধিকারবঞ্চিতরা।

এ বিষয়ে রফিকুন্নেসার মেয়ের জামাতা নূর ইসলাম বলেন, 'কী বলব ভাই। আমরা গরিব মানুষ। আমাদের কি কথা বলা সাজে? তবে বাবরুল সাব মরার আগেও এ বিষয়টি অস্বীকার করতে পারেননি। তবে আমার স্ত্রী ও তার ভাই-বোনদের কোনো সম্পত্তি দেওয়া হয়নি। ' এদিকে সৈয়দ বাবরুল হাসানের ছেলে সৈয়দ লিয়াকত হাসান বলেন, 'আমার বাবার এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

আর এ কারণে আমি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। ' ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।